poet
stringclasses
137 values
category
stringclasses
21 values
poem
stringlengths
9
18.7k
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
প্রকৃতিমূলক
চপল পায় কেবল ধাই, কেবল গাই পরীর গান, পুলক মোর সকল গায়, বিভোল মোর সকল প্রাণ। শিথিল সব শিলার পর চরণ থুই দোদুল মন, দুপুর-ভোর ঝিঁঝির ডাক, ঝিমায় পথ, ঘুমায় বন। বিজন দেশ, কুজন নাই নিজের পায় বাজাই তাল, একলা গাই, একলা ধাই , দিবস রাত, সাঁঝ সকাল। ঝুঁকিয়ে ঘাড় ঝুম-পাহাড় ভয় দ্যাখায়, চোখ পাকায়; শঙ্কা নাই, সমান যাই, টগর-ফুল-নূপুর পায়, কোন্ গিরির হিম ললাট ঘামল মোর উদ্ভবে, কোন্ পরীর টুটুল হার কোন্ নাচের উৎসবে। খেয়াল নাই-নাই রে ভাই পাই নি তার সংবাদই, ধাই লীলায়,-খিলখিলাই বুলবুলির বোল সাধি। বন-ঝাউয়ের ঝোপগুলায় কালসারের দল চরে, শিং শিলায়-শিলার গায়, ডালচিনির রং ধরে। ঝাঁপিয়ে যাই, লাফিয়ে ধাই, দুলিয়ে যাই অচল-ঠাঁট, নাড়িয়ে যাই, বাড়িয়ে যাই- টিলার গায় ডালিত-ফাট। শালিক শুক বুলায় মুখ থল-ঝাঁঝির মখ্মলে, জরির জাল আংরাখায় অঙ্গ মোর ঝলমলে। নিম্নে ধাই, শুনতে পাই ‘ফটিক জল।’হাঁকছে কে, কণ্ঠাতেই তৃষ্ণা যার নিক না সেই পাঁক ছেঁকে। গরজ যার জল স্যাঁচার পাতকুয়ায় যাক না সেই, সুন্দরের তৃষ্ণা যার আমরা ধাই তার আশেই। তার খোঁজেই বিরাম নেই বিলাই তান-তরল শ্লোক, চকোর চায় চন্দ্রমায়, আমরা চাই মুগ্ধ-চোখ। চপল পায় কেবল ধাই উপল-ঘায় দিই ঝিলিক, দুল দোলাই মন ভোলাই, ঝিলমিলাই দিগ্মিদিক।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
স্বদেশমূলক
কোন্ দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল? কোন্ দেশেতে চলতে গেলেই দলতে হয় রে দুর্বা কোমল? কোথায় ফলে সোনার ফসল, সোনার কমল ফোটেরে? সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রেকোথায় ডাকে দোয়েল-শ্যামা ফিঙে নাচে গাছে গাছে? কোথায় জলে মরাল চলে, মরালী তার পাছে পাছে? বাবুই কোথা বাসা বোনে, চাতক বারি যাচে রে? সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে!
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
প্রকৃতিমূলক
আমারে লইয়া সুখী হও তুমি ওগো দেবী শবাসনা, আর খুঁজিও না মানব-শোনিত, আর তুমি খুঁজিও না। আর মানুষের হৃত্ পিণ্ডটা নিওনা খড়গে ছিঁড়ে, হাহকার তুমি তুলো না গো আর সুখের নিভৃত নীড়ে। এই দেখ আমি উঠেছি ফুটিয়া উজলি পুষ্পসভা, ব্যথিত ধরার হৃত্ পিণ্ডটি আমি যে রক্তজবা। তোমার চরণে নিবেদিত আমি, আমি যে তোমার বলি, দৃষ্টি-ভোগের রাঙ্গা খর্পরে রক্ত কলিজা-কলি। আমারে লইয়া খুশি হও ওগো, নম দেবি নম নম, ধরার অর্ঘ্য করিয়া গ্রহণ, ধরার শিশুরে ক্ষম।
সিকান্দার আবু জাফর
প্রেমমূলক
আমার জবাব পেলাম। তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি কিনা? না!আমরা যে সমাজের জীব তারই ধারায় তুমি ভাসমান তৃণ। ইতিহাস পরিবর্তনের দিন এলে হৃদয় নিয়ে তুমি খেলবেনা, আমি জানি।
সিকান্দার আবু জাফর
নীতিমূলক
হাটে-মাঠে-গঞ্জে-ঘাটে সুদূর গাঁয়ের পথে নদীর তীরে, বালুর চরে, সমুদ্র সৈকতে ছড়িয়ে আছে জীবন যেন আনন্দে আটখানা তুমিই যে তার ভাগ নেবে না তোমার শুধু মানা। ও-জঙ্গলে দোয়েল নাচে, শালিক ডাকে গাছে ঘুঘুর ছানা মিটমিটিয়ে হয়তো চেয়ে আছে বুলবুলিটার লাল টুপিটা দেখার নেশায় মেতে, টুনটুনি-বৌ আবাক হয়ে রাখে দু চোখ পেতে, ও-জঙ্গলে বাতাস মিঠে, মিঠে ফুলের হাসি তারও চেয়ে মধুর মিঠে বাঁশের পাতার বাঁশি তবুও তোমার ও-দিকটাতে যেতে বিষম মানা, ছাতিম গাছে লুকিয়ে আছে মুণ্ডু কাটা ডানা। সাগর দিঘির তীরে তীরে ধান সবুজের মেলা কচি ধানের হাজার শীষে সোনা রোদের খেলা। ফড়িং-পায়ের নাচন কেড়ে নাচে মেঘের মায়া। জল-পুকুরে আকাশ দেখে নিজের সুনীল কায়া। মাছরাঙা তার রাঙা ঠোঁটের পরখ করে ধার সাগর-দিঘির চতুর্দিকে খোলা খুশির দ্বার, তবু তোমার ও-দিকটাতে যেতে বিষম মানা জলের দানো হঠাৎ রেগে দিতেই পারে হানা। দক্ষিণে যাও বারণ আছে, পশ্চিমে যাও মানা উত্তরে যাও নিষেধ আছে, পুবে আগল টানা। সবাই যখন হাসে-খেলে বন্ধ তোমার খেলা একলা তোমার চতুর্দিকেই ভয়ের থাবা মেলা। পালিয়ে যাবে কেবল তখন হার মেনে সব মানা তুমি যখন সাহস করে হবে হার-না-মানা।
সিকান্দার আবু জাফর
মানবতাবাদী
জনতার সংগ্রাম চলবেই,আমাদের সংগ্রাম চলবেই।হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানে বাঁচবার অধিকার কাড়তে দাস্যের নির্মোক ছাড়তে অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ চলবেই চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই।প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে হ’ক না আঁধার নিশ্ছিদ্র আমরা তো সময়ের সারথী নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।দিয়েছি তো শান্তি আরও দেবো স্বস্তি দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরও দেবো অস্থি প্রয়োজন হ’লে দেবো একনদী রক্ত। হ’ক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত, অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে একদিন সে-পাহাড় টলবেই। চলবেই চলবেই আমাদের সংগ্রাম চলবেইমৃত্যুর ভর্ৎসনা আমরা তো অহরহ শুনছি আঁধার গোরের ক্ষেতে তবু তো’ ভোরের বীজ বুনছি। আমাদের বিক্ষত চিত্তে জীবনে জীবনে অস্তিত্বে কালনাগ-ফণা উৎক্ষিপ্ত বারবার হলাহল মাখছি, তবু তো ক্লান্তিহীন যত্নে প্রাণে পিপাসাটুকু স্বপ্নে প্রতিটি দণ্ডে মেলে রাখছি। আমাদের কি বা আছে কি হবে যে অপচয়, যার সর্বস্বের পণ কিসে তার পরাজয় ? বন্ধুর পথে পথে দিনান্ত যাত্রী ভূতের বাঘের ভয় সে তো আমাদের নয়।হতে পারি পথশ্রমে আরও বিধ্বস্ত ধিকৃত নয় তবু চিত্ত আমরা তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী চলবার আবেগেই তৃপ্ত। আমাদের পথরেখা দুস্তর দুর্গম সাথে তবু অগণিত সঙ্গী বেদনার কোটি কোটি অংশী আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি সকল বিরোধ-বিধ্বংসী। এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল কোনোদিন আমরা যে ভাঙবোই মুক্ত প্রাণের সাড়া জানবোই, আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে নূতন সূর্যশিখা জ্বলবেই। চলবেই চলবেই আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
নবারুণ ভট্টাচার্য
মানবতাবাদী
যে পিতা সন্তানের লাশ সনাক্ত করতে ভয় পায় আমি তাকে ঘৃণা করি- যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হয়ে আছে আমি তাকে ঘৃণা করি- যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না আমি তাকে ঘৃণা করি- আটজন মৃতদেহ চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে আমি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছি আট জোড়া খোলা চোখ আমাকে ঘুমের মধ্যে দেখে আমি চীৎকার করে উঠি আমাকে তারা ডাকছে অবেলায় উদ্যানে সকল সময় আমি উন্মাদ হয়ে যাব আত্মহ্ত্যা করব যা ইচ্ছা চায় তাই করব।কবিতা এখনই লেখার সময় ইস্তেহারে দেয়ালে স্টেনসিলে নিজের রক্ত অশ্রু হাড় দিয়ে কোলাজ পদ্ধতিতে এখনই কবিতা লেখা যায় তীব্রতম যন্ত্রনায় ছিন্নভিন্ন মুখে সন্ত্রাসের মুখোমুখি-ভ্যানের হেডলাইটের ঝলসানো আলোয় স্থির দৃষ্টি রেখে এখনই কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায় ’৩৮ ও আরো যা যা আছে হত্যাকারীর কাছে সব অস্বীকার করে এখনই কবিতা পড়া যায়লক-আপের পাথর হিম কক্ষে ময়না তদন্তের হ্যাজাক আলোক কাঁপিয়ে দিয়ে হত্যাকারীর পরিচালিত বিচারালয়ে মিথ্যা অশিক্ষার বিদ্যায়তনে শোষণ ও ত্রাসের রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে সামরিক-অসামরিক কর্তৃপক্ষের বুকে কবিতার প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হোক বাংলাদেশের কবিরাও লোরকার মতো প্রস্তুত থাকুক হত্যার শ্বাসরোধের লাশ নিখোঁজ হওয়ার স্টেনগানের গুলিতে সেলাই হয়ে যাবার জন্য প্রস্তত থাকুক তবু কবিতার গ্রামাঞ্চল দিয়ে কবিতার শহরকে ঘিরে ফেলবার একান্ত দরকার। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না আমি আমার দেশকে ফিরে কেড়ে নেব বুকের মধ্যে টেনে নেব কুয়াশায় ভেজা কাশ বিকেল ও ভাসান সমস্ত শরীর ঘিরে জোনাকি না পাহাড়ে পাহাড়ে জুম অগণিত হৃদয় শস্য, রূপকথা ফুল নারী নদী প্রতিটি শহীদের নামে এক একটি তারকার নাম দেব ইচ্ছে মতো ডেকে নেব টলমলে হাওয়া রৌদ্রের ছায়ায় মাছের চোখের মত দীঘি ভালোবাসা-যার থেকে আলোকবর্ষ দুরে জন্মাবধি অচ্ছুৎ হয়ে আছি- তাকেও ডেকে নেব কাছে বিপ্লবের উৎসবের দিন।হাজার ওয়াট আলো চোখে ফেলে রাত্রিদিন ইনটারোগেশন মানি না নখের মধ্যে সূঁচ বরফের চাঙড়ে শুইয়ে রাখা মানি না পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা যতক্ষণ রক্ত ঝরে নাক দিয়ে মানি না ঠোঁটের ওপরে বুট জ্বলন্ত শলাকায় সারা গায় ক্ষত মানি না ধারালো চাবুক দিয়ে খন্ড খন্ড রক্তাক্ত পিঠে সহসা আ্যালকোহল মানি না নগ্নদেহে ইলেকট্রিক শক কুৎসিৎ বিক্রত যৌন অত্যাচার মানি না পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা খুলির সঙ্গে রিভলবার ঠেঁকিয়ে গুলি মানি না কবিতা কোন বাধাকে স্বীকার করে না কবিতা সশস্ত্র কবিতা স্বাধীন কবিতা নির্ভীক। চেয়ে দেখো মায়কোভস্কি হিকমেত নেরুদা আরাগঁ এলুয়ারতোমাদের কবিতাকে আমরা হেরে যেতে দিইনি বরং সারাটা দেশ জুড়ে নতুন একটা মহাকাব্য লেখবার চেষ্টা চলছে গেরিলা ছন্দে রচিত হতে চলেছে সকল অলংকার। গর্জে উঠুক দল মাদল প্রবাল দ্বীপের মত আদিবাসী গ্রাম রক্তে লাল নীলক্ষেত শঙ্খচূড়ের বিষ-ফেনা মুখে আহত তিতাস বিষাক্ত মৃত্যুসিক্ত তৃষ্ঞায় কুচিলা টণ্কারের সূর্য অন্ধ উৎক্ষিপ্ত গান্ডীবের ছিলা তীক্ষ্ম তীর হিংস্রতম ফলা- ভাল্লা তোমার টাঙ্গি পাশ ঝলকে ঝলকে বল্লম চর-দখলের সড়কি বর্শা মাদলের তালে তালে রক্তচক্ষু ট্রাইবাল টোটেম বন্দুক কুরকি দা ও রাশি রাশি সাহস এত সাহস যে আর ভয় করে না আরো আছে ক্রেন, দাঁতালো বুলডজার বনভয়ের মিছিল চলামান ডাইনামো টারবাইন লেদ ও ইনজিন ধ্বস-নামা কয়লার মিথেন অন্ধকারে কঠিন হীরার মতো চোখ আশ্চর্য ইস্পাতের হাতুড়ি ডক জুটমিল ফার্ণেসের আকাশে উত্তোলিত সহস্র হাত না ভয় করে না ভয়ের ফ্যাকাশে মুখ কেমন অচেনা লাগে যখন জানি মৃত্যু ভালোবাসা ছাড়া কিছু নয়। আমাকে হ্ত্যা করলে বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাব আমার বিনাশ নেই- বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আশ্বাস হয়ে ফিরে আসব আমার বিনাশ নেই- সুখে থাকব, দুঃখে থাকব সন্তান-জন্মে সৎকারে বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন।
নবারুণ ভট্টাচার্য
মানবতাবাদী
একটা কথায় ফুলকি উড়ে শুকনো ঘাসে পড়বে কবে সারা শহর উথাল পাথাল, ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে কাটবে চিবুক                     চিড় খাবে বুক লাগাম কেড়ে ছুটবে নাটক শুকনো কুয়োয়                 ঝাঁপ দেবে সুখ জেলখানাতে স্বপ্ন আটক একটা ব্যথা বর্শা হয়ে মৌচাকেতে বিঁধবে কবে ছিঁড়বে মুখোশ         আগ্নেয় রোষ জুলবে আগুন           পুতুল নাচে ভাঙবে গরাদ              তীব্র সাহস অনেক ছবি             টুকরো কাচে একটা কুঁড়ি বারুদগন্ধে মাতাল করে ফুটবে কবে সারা শহর উথাল পাথাল ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে। (adsbygoogle=window.adsbygoogle||[]).push({});
নবারুণ ভট্টাচার্য
স্বদেশমূলক
কিছু একটা পুড়ছে আড়ালে, বেরেতে, তোষকের তলায়, শ্মশানে কিছু একটা পুড়েছেই আমি ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছি বিড়ি ধরিয়েছে কেউ কেউ উবু হয়ে ফুঁ দিচ্ছে উনুনে কেউ চিতায় তুলে দিয়েছে আন্ত্রিক রোগে মৃত শীর্ণতম শিশু ওলট পালট খাচ্ছে জ্বলন্ত পাখি কোথাও গ্যাসের সিলিণ্ডার ফেটেছে কোথাও কয়লাখনিতে, বাজির কারখানায় আগুন কিছু একটা পুড়ছে চার কোনা ধরে গেছে জ্বলন্ত মশারি নেমে আসছে ঘুমের মধ্যে কিছু একটা পুড়ছে ক্ষুধায় পুড়ছে নাড়ি, অন্ত্রেরা ভালোবাসায় পুড়ছে যুবক পুড়ছে কামনার শরীর, তুষ, মবিলে ভেজানো তুলো কিছু একটা পুড়ছেই হল্‌কা এসে লাগছে আঁচের ইমারত, মূল্যবোধ, টাঙানো বিশাল ছবি প্রতিশ্রুতি, টেলিভিশন, দুপ্তপ্রাপ্য বই কিছু একটা পুড়ছে আমি হাতড়ে হাতড়ে দেখছি কী পুড়ছে কিছু একটা পুড়ছে কী ছুঁয়ে হাতে ফোস্কা পড়ছে কিছু একটা পুড়ছে, গনগন করছে চুপ করে পুড়ছে, মুখ বুজে পুড়ছে ঝড় যদি ওঠে তাহলে কিন্তু দপ করে জ্বলে উঠবে কিছু একটা পুড়ছে বলছি দমকলের গাড়ি, নাভিকুণ্ডল, সূর্য কিছু একটা পুড়ছে প্রকাশ্যে, চোখের ওপর মানুষের মধ্যে স্বদেশ!
নবারুণ ভট্টাচার্য
মানবতাবাদী
আমি সেই মানুষ যার কাঁধের ওপর সূর্য ডুবে যাবে। বুকের বোতামগুলো নেই বহুরাত কলারটা তোলা ধুলো ফ্যা ফ্যা আস্তিন হাওয়াতে চুল উড়িয়ে পকেট থেকে আধখানা সিগারেট বার করে বলব দাদা একটু ম্যাচিসটা দেবেন? লোকটা যদি বেশি ভদ্র হয় সিগারেট হাতে রেখে এগিয়ে দেবে দেশলাই আর আমি তার হাতঘড়িটার দিকে তাকাব, চোখে জ্বলে উঠবে রেডিয়াম ম্যায়নে তুঝসে মহববত করকে সনম—লেন দেনখবরের কাগজ নয় পুলিশের খাতায় আমার দুটো ছবি থাকবে—একটা হাসিমুখ, একটা সাইড ফেস তার নিচে লেখা ম্যাচ কেস পেট ভরে পেট্রোল খেয়ে হল্লা গাড়ি ছুটবে আমার খোঁজে হেঁটমুণ্ডু শহর আমাকে খুঁজবে আমি সেই মানুষ বুকের বোতামগুলো নেই বহু রাত যার কাঁধের ওপর সূর্য ডুবে যাবে।তিরিশ হাজার লোক ভাসছে নোনা জলের ধাক্কায় তাদের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে সেই জন্যে আমার একটা মোটরগাড়ি চাই। লোড শেডিং-এ গলে যাচ্ছে বরফ রেফ্রিজারেটরে মর্গের মধ্যে মড়ার চারপাশে বরফ গলছে সবুজ টিকটিকির মতো সতর্ক থাকুন বসন্ত আসছে কিন্তু আমার একটা মোটরগাড়ি চাই।পাখা বন্ধ করে দিয়েছি অসাড় নভেম্বরে উইণ্টার প্যালেস এসে দখল করছে আমাকে বেড়ে যাচ্ছে কোলেসটেরল, বমন, বুলেটের বরাদ্দ মোমবাতি না থাকলে একটা হরিজনকে ধরে জ্বালিয়ে দাও তবুও আমার একটা মোটরগাড়ি চাই।রেশমী সূর্যের প্যারাসুটে ঝুলে একদিন ঈশ্বর নেমে আসবেন কলকাতায় আমার, আমার বৌয়ের, আমার বাচ্চার মাথায় এবং আরও যত হেঁটমুণ্ডু—ছিন্ন বা বিচ্ছিন্ন সবের ওপরে ঝরবে ক্ষমার পারমাণবিক ভস্ম ভাই, আমার একটা মোটরগাড়ি চাই। কমরেড, আমার একটা মোটরগাড়ি চাই সার, আমার একটা মোটরগাড়ি চাই ঝকঝকে, রঙচঙে, ফাটাফাটি একটা মোটরগাড়ি।এই মোটরগাড়ির চাকার তলাতেই ঘিলু আর রক্ত ছিটিয়ে অপেক্ষা করছে আমার নিয়তি ।
নবারুণ ভট্টাচার্য
চিন্তামূলক
নিয়নের বেশ্যাদের ফসফোরাস ছায়ার মধ্যে আশ্চর্য ক্রেন ছিঁড়ে খাচ্ছে শহরের শিরা-উপশিরা গল গল করে বয়ে যাচ্ছে, জমে থাকছে শহরের রক্ত অলৌকিক ভিক্ষাপাত্রের মতো চাঁদ দাঁতে কামড়ে ছুটে যাচ্ছের রাতের কুকুর আমি একটা ফাঁকা এম্বুলেন্স পাক খাচ্ছি উদ্ভট শহরে আমার জন্যে সবুজ চোখ জ্বলো ভাগ্য বা নিয়তি যাকে আমি নিয়ে যাব তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না সারা দেহ হা করে দিয়েছে স্ট্যাবকেস সাদা সাদা অজ্ঞান মোহিনী নাসের মতো বাড়ি এই অসুস্থ শহরের প্রত্যেকটা ম্যানহোলে অন্ধকারে ঝলসে উঠছে ছুরি আমার সাহসের মাংস ফালি ফালি করে দেবে বলে আমাকে হুকের থেকে ছাল ছাড়িয়ে টাঙিয়ে দেবে মহাবিশ্বে গলাকাটা অবস্থায় আমিও শান দিয়ে নিয়েছি আমার দুধৰ্দাত ও বাঘনখে ভীষণ রোখ আমার এই রহস্যের ভাগ আমাকে দিতে হবে সব ভাগাভাগির শেষে আমাকে থাকতে হবে ফাঁকা ঘরে আমাকে আঁকড়ে থাকবে অনাথ আশ্রমের শেষ প্রার্থনা মৃত বলে কেউ আমাকে ঘোষণা করলেও জেগে থাকবে আমার চোখের হীরা কিন্তু এখন নিয়নের বেশ্যাদের ফসফোরাস ছায়ার মধ্যে আশ্চর্য ক্রেন ছিঁড়ে খাচ্ছে শহরের শিরা-উপশিরা
নবারুণ ভট্টাচার্য
প্রেমমূলক
আমার ভালোবাসায় যে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল সেই মেয়েটি এখন আত্মহত্যা করছে। নীল ও বিন্দু বিন্দু আমার কপালে ঘাম তার কাছে আমি গভীর সার্থকতা ছিলাম আমার তরফে কিছু প্রবঞ্চ নাও বুঝি ছিল অথবা সে কোনোদিনও সমুদ্র দেখেনি। সে এখন আত্মহত্যা করছে তার আঙুল, লুকোনো নরম রক্ত, সাদা গলা এখনও বেঁচে আছে শুধু তার চোখের পলক পড়ছে না। স্থির সম্মতির মতো অপলক আয়নায় সে এখনও বেঁচে আছে কোনোদিনও সমুদ্র দেখেনি। আমাদের একইসঙ্গে সমুদ্রে যাওয়ার কথা ছিল সে এখনও বেঁচে আছে এখনও হয়তো যাওয়া যায় নীল ও তুষারকণা আমার কপালে ঘাম। এখনও তাকে সারারাত্রি চুমু খাওয়া যায় এমনকী মৃত্যুর পরেও তাকে সারারাত চুমু খাওয়া যায় ঘুমন্ত তাকে এত সুন্দর দেখাত আরও গভীর ঘুমে সৌন্দর্য আরও জন্ম নেয় কিন্তু সে এখনও বেঁচে আছে শুধু তার চোখের পলক পড়ছে না। তার আঙুল কঁপিছে দ্বিধায় ও বিভিন্ন কোণে বসানো পাথরে নরম রক্ত নিভে যাচ্ছে ভয়ে সাদা গলার মধ্যে স্বচ্ছ বাতাস ও রাত্রি আমি এই ঢেউ ও ঝড়ের বিপদসঙ্কেতের কাছে কিছু না এত ফেনা আর গভীর অন্ধকার প্রবালদ্বীপের মধ্যে সামুদ্রিক অশ্বের হ্রেষায় আমার নিজের ঠোঁট নিজেরই অচেনা। অতল সার্থকতা ছিলাম মৃত্যু, মরে যাওয়া, মরণের মতো নীল ও বিন্দু বিন্দু আমার কপালে মুহূর্ত। আমার ভালোবাসায় যে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল সেই মেয়েটি এখন আত্মহত্যা করছে।
নবারুণ ভট্টাচার্য
চিন্তামূলক
কে আমার হৃদ্‌পিণ্ডের ওপরে মাথা রেখে ঘুমোয় কে আমাকে দুধ ও ভাতের গন্ধ দিয়ে আড়াল করে কে আমার মাটি যেখানে আমি বৃষ্টির মতো শুষে যাই আমি যখন দূষিত আকাশে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে উড়ি আমার পালকে ছাই জমে জমে ধূসর হয়ে যায় তখন আমার সামনে সবুজ গাছ হয়ে ওঠে কে কে আমাকে চোখের পাতা বন্ধ করে আড়াল করে কে আমাকে আগুন দিয়ে মশালের মতো জ্বালায় কে আমার পৃথিবী যার ভেতরে আমি লাভার মতো ফুটতে থাকি আমি যখন পথ থেকে গলিতে তাড়া খেতে খেতে দৌড়ই আমার পায়ের তলায় হাইওয়ে, আলপথ সব ফুরিয়ে যায় তখন আমার সামনে আশ্রয় হয়ে ওঠে কে এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমার ওপরে অনেক অত্যাচার করতে হবে এত অত্যাচার করার ক্ষমতা, দুর্ভাগ্যবশত, কোনো শোষক, নিপীড়ক বা রাষ্ট্রমেশিন এখনও জানে না যখন জানবে তখন আমার প্রশ্নের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে আমি প্রশ্নগুলোকে ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগোতেই থাকব আমাকে দেখা যাক বা না যাক প্রশ্নগুলো ফেটে অনেক সপ্তর্ষিমণ্ডল আকাশে দেখা যাবে।
নবারুণ ভট্টাচার্য
চিন্তামূলক
আমার এ কুষ্ঠরোগ সারানো কি কলকাতা শহরের কাজ যার হাইড্রেণ্টে জল নেই। তাই আমি অকুতোভয়ে চেটে নিই তেজস্ক্রিয় ধুলো জিভের ঝাড়নে যাতে করে টেবিল সব সময় ফিটফাট থাকে বোঝা যায় না কিছুতে এটা কুষ্ঠরোগীর টেবিল।আমার সংগ্রহে আছে অকিঞ্চিৎকর কিছু ছায়াপথ, তারা সাইকেল-রিকশায় ছেঁড়া চেনের চাবুক যা আমার হৃদ্‌পিণ্ডে রক্তাক্ত আছড়ায় এবং বিশেষ গোপন কিছু ন্যাপথলিনের তৈরি চাঁদ যা আমি প্রস্রাবাগার থেকে সংগ্রহ করে আমার মেঘের পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে রেখে দিয়েছি।অলৌকিক কোনো অতলস্পর্শে আমার এ ব্যাধি সেরে গেলে আমি গাছের আয়নায় সবুজ ছায়া ফেলব মায়াময় এবং সেই অরণ্যে আমাকে চিতার মতো সুন্দর দেখাবে।আমার এ কুষ্ঠরোগ সারানো কি কলকাতা শহরের কাজ যার হাইড্রেণ্টে জল নেই। তাই আমি অকুতোভয়ে চেটে নিই তেজস্ক্রিয় ধুলো জিভের ঝাড়নে যাতে করে টেবিল সব সময় ফিটফাট থাকে বোঝা যায় না কিছুতে এটা কুষ্ঠরোগীর টেবিল।আমার সংগ্রহে আছে অকিঞ্চিৎকর কিছু ছায়াপথ, তারা সাইকেল-রিকশায় ছেঁড়া চেনের চাবুক যা আমার হৃদ্‌পিণ্ডে রক্তাক্ত আছড়ায় এবং বিশেষ গোপন কিছু ন্যাপথলিনের তৈরি চাঁদ যা আমি প্রস্রাবাগার থেকে সংগ্রহ করে আমার মেঘের পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে রেখে দিয়েছি।অলৌকিক কোনো অতলস্পর্শে আমার এ ব্যাধি সেরে গেলে আমি গাছের আয়নায় সবুজ ছায়া ফেলব মায়াময় এবং সেই অরণ্যে আমাকে চিতার মতো সুন্দর দেখাবে।
নবারুণ ভট্টাচার্য
মানবতাবাদী
যুবকেরা গেছে উৎসবে যুবতীরা গেছে ভোজসভায় অরণ্য গেছে বনানীর খোঁজে গরীব জুটেছে শোকসভায়। গয়নারা গেছে নীরব লকারে বন্যপ্রাণীরা অভয়ারণ্যে বিমান উড়েছে আকাশের খোঁজে গরীবরা শুধু হচ্ছে হন্যে। পুরুষেরা গেছে নিভৃত মিনারে গর্ভবতীরা প্রসূতিসদনে কুমিরেরা গেছে নদীর কিনারে গরীব জমছে নানা কোণে কোণে। বিপ্লব গেছে নেতাদের খোঁজে যুবকেরা গেছে উৎসবে যুবতীরা গেছে বিশিষ্ট ভোজে গরীবের হায় কী হবে?
নবারুণ ভট্টাচার্য
মানবতাবাদী
(বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্রদ্ধাপদেষু)গাঢ় আঁধার দুমড়ে ভেঙে কোথায় চলেছিস আগুন খেতে যাচ্ছি আমি, তোদের বাবার কী এই দেশেতে কবির জন্ম দগ্ধ অভিশাপ মাকড়কূলে সিংহ হেন, ভস্মে ঢালার ঘি।যাবজ্জীবন হেলায় থাকি, প্রসাদ করে তুচ্ছ জিভের ওপর গনগনে আঁচ কয়লা রেখে দি মূষিক কবি, শৃগাল কবি ওড়ায় ন্যাড়া পুচ্ছ আগুন ক্ষেতের শস্য দেহ ভস্মে সঁপে দি।প্রতিষ্ঠানের প্রসাদ বিষ্ঠা হেলায় ঠেলে ফেলে কবি থাকেন কাঠের চিতায় এমন আঁকি পট অবহেলায় অবোধ এবং খেলায় এলেবেলে কবির চিতায় পাপতরাসী গাথে তাহার মঠ।ঘেন্না করি অবজ্ঞাতে বুটের পেরেক, চামড়া আগুন হতে গেছেন তিনি, স্বর্ণপ্রভ কাঠ ঘেন্না করি রাতবিরেতে আছেন যেমন—আমরা দুস্থ ইতর ভাষাবিহীন নগ্ন এ তল্লাটগণ্ডি ভেঙে আগুন মেঙে কোথায় চলেছিস যেথায় খুশি যাচ্ছি আমি, তোদের বাবার কী এই দেশেতে কবির জন্ম দগ্ধ অভিশাপ বেশ্যাকূলে সীতার সামিল, ভস্মে ঢালার ঘি।
ইসমাইল হোসেন সিরাজী
স্বদেশমূলক
হউক সে মহাজ্ঞানী মহা ধনবান, অসীম ক্ষমতা তার অতুল সম্মান, হউক বিভব তার সম সিন্ধু জল হউক প্রতিভা তার অক্ষুণ্ন উজ্জ্বল হউক তাহার বাস রম্য হর্ম্য মাঝে থাকুক সে মণিময় মহামূল্য সাজে হউক তাহার রূপ চন্দ্রের উপম হউক বীরেন্দ্র সেই যেন সে রোস্তম শত শত দাস তার সেবুক চরণ করুক স্তাবক দল স্তব সংকীর্তন।কিন্তু যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হিত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিৎ জানাও সে নরাধমে জানাও সত্বর, অতীব ঘৃণিত সেই পাষণ্ড বর্বর।
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
……………..তারাখণ্ড সমুদ্রে পড়েছে তার আগে আকাশে লম্বা আগুনের ল্যাজ–একপলক তার আগে ঝলকে সাদা গাছপালা ভূখণ্ড পাহাড়–একপলক উড়তে উড়তে ফ্রিজ করছে সরীসৃপ পাখি পৃথিবী ধ্বংসের ঠিক একপলক দেরি মৃত্যুর আগের স্বপ্নে এই দৃশ্য ফিরে আসে, সেই থেকে, সব পাখিদেরই [সম্পর্ক: প্রাচীন উল্কা: ডাইনোসর বিলুপ্তি]
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
যতবার বেল বাজে ভাবি তুমি এলেদরজা খুলে দেখি,অন্য কেউমনে ঢেউ ওঠে, মনে মরে যায় ঢেউ
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
গাছেদের নাম গাছ ধুলোদের নাম ধুলো নদীদের নাম বলতে পারবে গ্রামবাসীরা কিন্তু ঘরের নাম ঘর দাওয়ার নাম দাওয়া দাওয়ার ধারে মেয়েটির নাম কী? তা জানতে হলে তোমাকে নৌকো বাইতে হবে গুন টানতে হবে কাঠ কাটতে যেতে হবে বনে ডাকাতের হাতে পড়তে হবে বেড়া ডিঙিয়ে পৌঁছতে হবে দাওয়ায় দাওয়া ডিঙিয়ে ঘরে ঘরের মধ্যে সে যখন আঁকড়ে নেবে তোমায় তার ঘূর্ণির মধ্যে তলিয়ে যাওয়া সেই সময়টায় গাছের উপর আছড়ে পড়বে গাছ ধূলোর ভেতর থেকে পাকিয়ে উঠবে ধুলিস্তম্ভ গ্রামের উপর আছড়ে পরবে নদী তোমার মনে থাকবে না তোমার নাম ছিল পথিক…
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
স্নেহসবুজ দিন তোমার কাছে ঋণবৃষ্টিভেজা ভোর মুখ দেখেছি তোরমুখের পাশে আলো ও মেয়ে তুই ভালোআলোর পাশে আকাশ আমার দিকে তাকা–তাকাই যদি চোখ একটি দীঘি হোকযে-দীঘি জ্যো‌ৎস্নায় হরিণ হয়ে যায়হরিণদের কথা জানুক নীরবতা–নীরব কোথায় থাকে জলের বাঁকে বাঁকেজলের দোষ? — নাতো! হাওয়ায় হাত পাতো!হাওয়ার খেলা? সেকি! মাটির থেকে দেখি!মাটিরই গুণ? — হবে! কাছে আসুক তবে!কাছে কোথায়? — দূর! নদী সমুদ্দুরসমুদ্র তো নোনা ছুঁয়েও দেখবো নাছুঁতে পারিস নদী– শুকিয়ে যায় যদি?শুকিয়ে গেলে বালি বালিতে জল ঢালিসেই জলের ধারা ভাসিয়ে নেবে পাড়াপাড়ার পরে গ্রাম বেড়াতে গেছিলামগ্রামের কাছে কাছে নদীই শুইয়ে আছেনদীর নিচে সোনা ঝিকোয় বালুকণাসোনা খুঁজতে এসে ডুবে মরবি শেষেবেশ, ডুবিয়ে দিক ভেসে উঠবো ঠিকভেসে কোথায় যাবো? নতুন ডানা পাবোনামটি দেবো তার সোনার ধান, আরবলবোঃ শোন, এই কষ্ট দিতে নেইআছে নতুন হাওয়া তোমার কাছে যাওয়াআরো সহজ হবে কত সহজ হবেভালোবাসবে তবে? বলো কবে ভালোবাসবে?কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুনস্নেহসবুজ দিন তোমার কাছে ঋণবৃষ্টিভেজা ভোর মুখ দেখেছি তোরমুখের পাশে আলো ও মেয়ে তুই ভালোআলোর পাশে আকাশ আমার দিকে তাকা–তাকাই যদি চোখ একটি দীঘি হোকযে-দীঘি জ্যো‌ৎস্নায় হরিণ হয়ে যায়হরিণদের কথা জানুক নীরবতা–নীরব কোথায় থাকে জলের বাঁকে বাঁকেজলের দোষ? — নাতো! হাওয়ায় হাত পাতো!হাওয়ার খেলা? সেকি! মাটির থেকে দেখি!মাটিরই গুণ? — হবে! কাছে আসুক তবে!কাছে কোথায়? — দূর! নদী সমুদ্দুরসমুদ্র তো নোনা ছুঁয়েও দেখবো নাছুঁতে পারিস নদী– শুকিয়ে যায় যদি?শুকিয়ে গেলে বালি বালিতে জল ঢালিসেই জলের ধারা ভাসিয়ে নেবে পাড়াপাড়ার পরে গ্রাম বেড়াতে গেছিলামগ্রামের কাছে কাছে নদীই শুইয়ে আছেনদীর নিচে সোনা ঝিকোয় বালুকণাসোনা খুঁজতে এসে ডুবে মরবি শেষেবেশ, ডুবিয়ে দিক ভেসে উঠবো ঠিকভেসে কোথায় যাবো? নতুন ডানা পাবোনামটি দেবো তার সোনার ধান, আরবলবোঃ শোন, এই কষ্ট দিতে নেইআছে নতুন হাওয়া তোমার কাছে যাওয়াআরো সহজ হবে কত সহজ হবেভালোবাসবে তবে? বলো কবে ভালোবাসবে?কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
অতীতের দিকে উঠে চলে যুদ্ধ শব, হাজার হাজার শিখরের উপরে তুষার তাদের পিছনে আলো জ্বেলে বসে আছে ছোট ছোট বাড়ি স্বামীপুত্র হারানো সংসার
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
একসময় মনে হত কোনওদিন তোমাকে পাব না একসময় মনে হত ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায় আজকে শেষবার আমি তোমাকে পেলাম কালকের পর থেকে আমাকে নেবে না আর তুমি দুপুর ফুরিয়ে এল। এইবার ফিরে আসবে বাড়ির সবাই। আর একবার, আর একবার, এসো__ প্রথম দিনের মতো আবার পুড়িয়ে করো ছাই !
জয় গোস্বামী
রূপক
শবগাছ, হাত-মেলা মানুষ তার সামনে দিয়ে জলধারা চলে গেছে শেষ প্রান্তে, বহুদূর ভোরের ভিতরে স্বল্প আলোকিতমুখ গুহাটির গলা অব্দি জল… ওই পারে দিন এপারে সমাপ্তি কবি, যার মুখ সূর্যাস্তরঙিন!
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
আমি যখন ছোট ছিলাম খেলতে যেতাম মেঘের দলে একদিন এক মেঘবালিকা প্রশ্ন করলো কৌতুহলে“এই ছেলেটা, .                         নাম কি রে তোর?” আমি বললাম, .                          “ফুসমন্তর !”মেঘবালিকা রেগেই আগুন, “মিথ্যে কথা । নাম কি অমন হয় কখনো ?” .                      আমি বললাম, “নিশ্চয়ই হয় । আগে আমার গল্প শোনো ।”সে বলল, “শুনবো না যা- সেই তো রাণী, সেই তো রাজা সেই তো একই ঢাল তলোয়ার সেই তো একই রাজার কুমার পক্ষিরাজে শুনবো না আর । .                               ওসব বাজে ।”আমি বললাম, “তোমার জন্য নতুন ক’রে লিখব তবে ।”সে বলল, “সত্যি লিখবি ? বেশ তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে। মনে থাকবে ? লিখেই কিন্তু আমায় দিবি ।” আমি বললাম, “তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী ।”লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দু-চার পাতা হঠাৎ তখন ভুত চাপল আমার মাথায়-খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে গিয়েই দেখি, চেনা মুখ তো একটিও নেই এ-তল্লাটেএকজনকে মনে হল ওরই মধ্যে অন্যরকম এগিয়ে গিয়ে বলি তাকেই ! “তুমি কি সেই ? মেঘবালিকা তুমি কি সেই ?”সে বলেছে, “মনে তো নেই আমার ওসব মনে তো নেই ।” আমি বললাম, “তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে-” সে বলল, “সঙ্গে আছে ? ভাসিয়ে দাও গাঁয়ের ঝিলে ! আর হ্যাঁ, শোন-এখন আমি মেঘ নই আর, সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায় ।” বলেই হঠাৎ এক পশলায়- চুল থেকে নখ- আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে- .                        অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে মিলিয়ে গেল খরস্রোতায় মিলিয়ে গেল দূরে কোথায় দূরে দূরে…।“বৃষ্টি বলে ডাকে আমায় বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়-” আপন মনে বলতে বলতে আমিই কেবল বসে রইলাম ভিজে একশা কাপড়জামায় গাছের তলায় .                         বসে রইলাম বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্যএমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি আমায় চিনতে পেরে বলল, “তাতে মন খারাপের কি হয়েছে ! যাও ফিরে যাও-লেখ আবার । এখন পুরো বর্ষা চলছে তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ ব্যস্ত তুমিও যাও, মন দাও গে তোমার কাজে- বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাব তোমার কাছে ।”এক পৃথিবী লিখবো আমি এক পৃথিবী লিখবো বলে ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাঁধলাম গহন বনে সঙ্গী শুধু কাগজ কলমএকাই থাকব । একাই দুটো ফুটিয়ে খাব— .                    দু এক মুঠো ধুলো বালি-যখন যারা আসবে মনে .                   তাদের লিখব লিখেই যাব !এক পৃথিবীর একশোরকম স্বপ্ন দেখার সাধ্য থাকবে যে-রূপকথার— সে রূপকথা আমার একার ।ঘাড় গুঁজে দিন .                       লিখতে লিখতে ঘাড় গুঁজে রাত .                      লিখতে লিখতে মুছেছে দিন—মুছেছে রাত যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হল, .                    মনে পড়ল সাল কি তারিখ, বছর কি মাস সেসব হিসেব .                       আর ধরিনি লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি এক পৃথিবী লিখব বলে একটা খাতাও .                       শেষ করিনি ।সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল খাতার উপর আজীবনের লেখার উপর বৃষ্টি এল এই অরণ্যে বাইরে তখন গাছের নিচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত এ-গাছ ও-গাছ উড়ছে পাখি বলছে পাখি, “এই অরণ্যে কবির জন্যে আমরা থাকি ।” বলছে ওরা, “কবির জন্য আমরা কোথাও আমরা কোথাও আমরা কোথাও হার মানিনি—”কবি তখন কুটির থেকে তাকিয়ে আছে অনেক দূরে বনের পরে, মাঠের পরে নদীর পরে সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, সেই যেখানে কেউ যায়নি কেউ যায় না কোনদিনই— আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে সেই দেশে সেই ঝরনাতলায় এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ায় সোনায় মোড়া মেঘহরিণী— কিশোর বেলার সেই হরিণী ।কবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুনআমি যখন ছোট ছিলাম খেলতে যেতাম মেঘের দলে একদিন এক মেঘবালিকা প্রশ্ন করলো কৌতুহলে“এই ছেলেটা, .                         নাম কি রে তোর?” আমি বললাম, .                          “ফুসমন্তর !”মেঘবালিকা রেগেই আগুন, “মিথ্যে কথা । নাম কি অমন হয় কখনো ?” .                      আমি বললাম, “নিশ্চয়ই হয় । আগে আমার গল্প শোনো ।”সে বলল, “শুনবো না যা- সেই তো রাণী, সেই তো রাজা সেই তো একই ঢাল তলোয়ার সেই তো একই রাজার কুমার পক্ষিরাজে শুনবো না আর । .                               ওসব বাজে ।”আমি বললাম, “তোমার জন্য নতুন ক’রে লিখব তবে ।”সে বলল, “সত্যি লিখবি ? বেশ তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে। মনে থাকবে ? লিখেই কিন্তু আমায় দিবি ।” আমি বললাম, “তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী ।”লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দু-চার পাতা হঠাৎ তখন ভুত চাপল আমার মাথায়-খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে গিয়েই দেখি, চেনা মুখ তো একটিও নেই এ-তল্লাটেএকজনকে মনে হল ওরই মধ্যে অন্যরকম এগিয়ে গিয়ে বলি তাকেই ! “তুমি কি সেই ? মেঘবালিকা তুমি কি সেই ?”সে বলেছে, “মনে তো নেই আমার ওসব মনে তো নেই ।” আমি বললাম, “তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে-” সে বলল, “সঙ্গে আছে ? ভাসিয়ে দাও গাঁয়ের ঝিলে ! আর হ্যাঁ, শোন-এখন আমি মেঘ নই আর, সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায় ।” বলেই হঠাৎ এক পশলায়- চুল থেকে নখ- আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে- .                        অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে মিলিয়ে গেল খরস্রোতায় মিলিয়ে গেল দূরে কোথায় দূরে দূরে…।“বৃষ্টি বলে ডাকে আমায় বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়-” আপন মনে বলতে বলতে আমিই কেবল বসে রইলাম ভিজে একশা কাপড়জামায় গাছের তলায় .                         বসে রইলাম বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্যএমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি আমায় চিনতে পেরে বলল, “তাতে মন খারাপের কি হয়েছে ! যাও ফিরে যাও-লেখ আবার । এখন পুরো বর্ষা চলছে তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ ব্যস্ত তুমিও যাও, মন দাও গে তোমার কাজে- বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাব তোমার কাছে ।”এক পৃথিবী লিখবো আমি এক পৃথিবী লিখবো বলে ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাঁধলাম গহন বনে সঙ্গী শুধু কাগজ কলমএকাই থাকব । একাই দুটো ফুটিয়ে খাব— .                    দু এক মুঠো ধুলো বালি-যখন যারা আসবে মনে .                   তাদের লিখব লিখেই যাব !এক পৃথিবীর একশোরকম স্বপ্ন দেখার সাধ্য থাকবে যে-রূপকথার— সে রূপকথা আমার একার ।ঘাড় গুঁজে দিন .                       লিখতে লিখতে ঘাড় গুঁজে রাত .                      লিখতে লিখতে মুছেছে দিন—মুছেছে রাত যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হল, .                    মনে পড়ল সাল কি তারিখ, বছর কি মাস সেসব হিসেব .                       আর ধরিনি লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি এক পৃথিবী লিখব বলে একটা খাতাও .                       শেষ করিনি ।সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল খাতার উপর আজীবনের লেখার উপর বৃষ্টি এল এই অরণ্যে বাইরে তখন গাছের নিচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত এ-গাছ ও-গাছ উড়ছে পাখি বলছে পাখি, “এই অরণ্যে কবির জন্যে আমরা থাকি ।” বলছে ওরা, “কবির জন্য আমরা কোথাও আমরা কোথাও আমরা কোথাও হার মানিনি—”কবি তখন কুটির থেকে তাকিয়ে আছে অনেক দূরে বনের পরে, মাঠের পরে নদীর পরে সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, সেই যেখানে কেউ যায়নি কেউ যায় না কোনদিনই— আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে সেই দেশে সেই ঝরনাতলায় এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ায় সোনায় মোড়া মেঘহরিণী— কিশোর বেলার সেই হরিণী ।কবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুন
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
শান্তির পতাকা। ঘাড়ে পোঁতা। কিন্তু তার ছুঁচালো লোহার দণ্ড ঘাড়ে ঢুকে থামে না--এগোয়। খোঁজে শিরদাঁড়া--ইলেকট্রোড। পায়। ছোঁয়। গর্ত করে আর দিন চলে যায় শতলক্ষ বছরের পার তারপর যারা আসে, তারা দেখে বসে আছে একটু মনুষ্যমূর্তি, কাঁধে পাখি-- দুজনই অঙ্গার!
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
এতই অসাড় আমি, চুম্বনও বুঝিনি । মনে মনে দিয়েছিলে, তাও তো সে না-বোঝার নয়- ঘরে কত লোক ছিল, তাই ঋণ স্বীকার করিনি । ভয়, যদি কোন ক্ষতি হয় । কী হয়? কী হতে পারতো? এসবে কী কিছু এসে যায়? চোখে চোখ পড়ামাত্র ছোঁয়া লাগলো চোখের পাতায়- সেই তো যথেষ্ট স্বর্গ- সেই স্পর্শ ভাবি আজ; সেই যে অবাক করা গলা অন্ধকারে তাও ফিরে আসে… স্বর্গ থেকে আরো স্বর্গে উড়ে যাও আর্ত রিনিঝিনি প্রথমে বুঝিনি, কিন্তু আজ বলো, দশক শতক ধ’রে ধ’রে ঘরে পথে লোকালয়ে স্রোতে জনস্রোতে আমাকে কি একাই খুঁজেছো তুমি? আমি বুঝি তোমাকে খুঁজিনি?
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
নিজের মুখের দিকে তাকাতে পারিনা আয়নায়... এ মুখ সে দেখেছিল।একদা দিনের পর দিন এই মুখ চোখ মেলে তাকিয়ে থেকেছে তার দিকেআজ কেউ এই মুখ অ্যাসিডে গলিয়ে দিয়ে যাকযেন আর চেনাই না যায়।
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
এখন আঙরা-কালো কাঠকয়লা থেকে বাষ্প উড়ছে। সবদিকে মাথা দিয়ে ঢুঁসো মারি, বাতাসের অদৃশ্য দেওয়াল ফেটে ফেটে গলগল আগুন ওঠে। ও নিয়তিপুরুষ, এরপর অর্ধেক সিংহের রূপে তোমার বিপুল অবয়ব থাম ভেঙে একদিন আমার জানুতে আছড়ে পড়ে-- আমার কলমে, নখে, ছিন্নভিন্ন হয়।
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
শিরচ্ছেদ, এখানে, বিষয়। মাটি তাই নরম, কোপানো। সমস্ত প্রমাণ শুষছে ভয় কখনো বোলো না কাউকে কী জানো, বা, কতদূর জানো।
জয় গোস্বামী
রূপক
বাদুড় বৃষ্টির মধ্যে দেবদারু গাছ ছেড়ে যায় বাদুড় আমার রক্ত খেয়ে আকাশে পালায় পালিয়ে বাঁচে না রাত্রে দেখা যায় বাদুড় চাঁদের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে পেট থেকে রক্ত, রক্ত নয়, বালি ওগরায়
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
গাছেদের নাম গাছ ধুলোদের নাম ধুলো নদীদের নাম বলতে পারবে গ্রামবাসীরা কিন্তু ঘরের নাম ঘর দাওয়ার নাম দাওয়া দাওয়ার ধারে মেয়েটির নাম কী? তা জানতে হলে তোমাকে নৌকো বাইতে হবে গুন টানতে হবে কাঠ কাটতে যেতে হবে বনে ডাকাতের হাতে পড়তে হবে বেড়া ডিঙিয়ে পৌঁছতে হবে দাওয়ায় দাওয়া ডিঙিয়ে ঘরে ঘরের মধ্যে সে যখন আঁকড়ে নেবে তোমায় তার ঘূর্ণির মধ্যে তলিয়ে যাওয়া সেই সময়টায় গাছের উপর আছড়ে পড়বে গাছ ধূলোর ভেতর থেকে পাকিয়ে উঠবে ধুলিস্তম্ভ গ্রামের উপর আছড়ে পরবে নদী তোমার মনে থাকবে না তোমার নাম ছিল পথিক…আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে? আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।চলে যায় দিন আমাদের অসুখে ধারদেনাতে রাত্তিরে দুভায়ে মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে।সবদিন হয়না বাজার, হলে হয় মাত্রাছাড়া – বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা।কিন্তু পুঁতব কোথায়? ফুল কি হবেই তাতে? সে অনেক পরের কথা টান দিই গঞ্জিকাতে।আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে? আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।মাঝে মাঝে চলেও না দিন বাড়ি ফিরি দুপুররাতে ; খেতে বসে রাগ চড়ে যায় নুন নেই ঠান্ডা ভাতে।রা.গ চড়ে মাথায় আমার আমি তার মাথায় চড়ি, বাপব্যাটা দুভায়ে মিলে সারা পাড়া মাথায় করি।করি তো কার তাতে কী? আমরা তো সামান্য লোক। আমাদের ভাতের পাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
রূপক
তোরা সব উঠে গেলি পাহাড়ে ঝোলানো সরু ব্রীজে- তোদের ধূসর জামা, ছেঁড়া-ছেঁড়া নীল-সাদা টুপি ভেসে ভেসে এলো আর হোটেলের সারাঘর ভিজে- প্যাগোডার মতো ছাদ – তার পাশ দিয়ে চুপি চুপিএমন বিব্রত, সিক্ত ঘরখানি লক্ষ করে তিনখানি ঝাউ । সার বেঁধে উঠে যাওয়া পাইনের সবুজ রিবনে যে-কটি জলের কণা ছিল, তারা হাওয়া লেগে বাতাসে উধাও … এমন বাতাস যার কোনোদিন ওঠেনি জীবনেসে দ্যাখে : আকাশ থেকে নেমে এসে একজন লামা মুন্ডিত মাথায় একা বসেছেন তাঁর শুভ্র মঠের শিখরে রূপোলী ঝলকে জ্বলছে দূরের ঝুলন্ত ব্রীজ, ভাসমান নীল-সাদা জামা একজন মুগ্ধ শুধু বসে আছে হোটেলের ঘরে ।কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুনতোরা সব উঠে গেলি পাহাড়ে ঝোলানো সরু ব্রীজে- তোদের ধূসর জামা, ছেঁড়া-ছেঁড়া নীল-সাদা টুপি ভেসে ভেসে এলো আর হোটেলের সারাঘর ভিজে- প্যাগোডার মতো ছাদ – তার পাশ দিয়ে চুপি চুপিএমন বিব্রত, সিক্ত ঘরখানি লক্ষ করে তিনখানি ঝাউ । সার বেঁধে উঠে যাওয়া পাইনের সবুজ রিবনে যে-কটি জলের কণা ছিল, তারা হাওয়া লেগে বাতাসে উধাও … এমন বাতাস যার কোনোদিন ওঠেনি জীবনেসে দ্যাখে : আকাশ থেকে নেমে এসে একজন লামা মুন্ডিত মাথায় একা বসেছেন তাঁর শুভ্র মঠের শিখরে রূপোলী ঝলকে জ্বলছে দূরের ঝুলন্ত ব্রীজ, ভাসমান নীল-সাদা জামা একজন মুগ্ধ শুধু বসে আছে হোটেলের ঘরে ।কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন
জয় গোস্বামী
শোকমূলক
স্নান করে উঠে কতক্ষণ ঘাটে বসে আছে এক উন্মাদ মহিলা মন্দিরের পিছনে পুরনো বটগাছ। ঝুরি। ফাটধরা রোয়াকে কুকুর। অনেক বছর আগে রথের বিকেলে নৌকো থেকে ঝাঁপ দিয়ে আর ওঠেনি যে-দস্যি ছেলেটা এতক্ষণে, জল থেকে সে ওঠে, দৌড় মারে, ঝুরি ধরে খুব দোল খায় সারা গা শ্যাওলায় ভরা, একটা চোখ মাছে খেয়ে গেছে কেউ তাকে দেখতে পায় না, মন্দিরের মহাদেবও ঢুলছে গাঁজা খেয়ে সেই ফাঁকে, এরকম দুপুরবেলায়– সে এসে মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা ক’রে যায়।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম। অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন। মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন। এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন। দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্‍কার করবে সেল দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন। কবিত্ব ফুড়ুত্‍ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন। নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন। দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন। সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন। এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
দুখানি জানুর মতো খোলা হাড়িকাঠ মুখ রাখো তাতে চোখের পলক ফেলতে মাথা ছিঁটকে চলে যাবে সামনের মাঠে
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
সে তাই চন্দ্র ও সূর্য দুটি হাত রেখে ক্রিয়াশীল আগ্নেয়গিরিকে ভেদ করে পৃথিবীর সঙ্গে মিলতে চায়-- জিহ্বাহীন মুখ থেকে অতৃপ্ত রমণশব্দ মেঘ ফেটে গেলে--শোনা যায়।
জয় গোস্বামী
স্বদেশমূলক
১ বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, রক্ত গড়িয়ে পড়ছে… কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : “রবি রে…” উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটি প্রকাণ্ড হাহাকার ঘুরে উঠল… কে রবি? কে পুষ্পেন্দু? ভরত? কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে? কাকে আর পাওয়া যায় নি? কাকে শেশ দেখা গেছে ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে? রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সর লাশেদের ভিড়ে… ২ …বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে… পিছনে কুকুর ছুটছে ধর্, ধর্… পিছনে শেয়াল তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে রাজ অনুচর এই রক্ত ধরে রাখতে হবে এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে গড়ে উঠবে সারি সারি কারখানা ঘর তারপর চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজবে এ কাজ না যদি পার, রাজা তাহলে বণিক এসে তোমার গা থেকে শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে ৩ আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে প্রাণচিহ্নময় জনপদে আমার গুরুত্ব ছিল… গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে রাস্তার দুপশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর মাঠে আমার গুরুত্ব ছিল… আজ আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত হাড়িকাঠে! ৪ অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে সূর্য উঠে আসে বন্ধ থাকা ইশ্কুলের গায়ে ও মাথায় রোদ পড়ে রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা কোদালে, বেলচায় রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে… ৫ …না, না, না, না, না— না বলে চিত্কার করছে গাছ না বলে চিত্কার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া না বলে চিত্কার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা ভ্যান গাড়ি আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ ভেবে দেখছি না বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে আমরা কি বিচারে বসতে পারি? ৬ তুমি কি খেজুরি? তুমি ভাঙাবেড়া? সোনাচূড়া তুমি? বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে । আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে । ৭ আমরা পালিয়ে আছি আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই ইটভাটায় মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধ্যেয় বেরোই মন্টুর আড়তে— মল্লিকের বাইকের পিছন-সিটে বসে আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায় চলে যাই, যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই । লোক মারতে হবে । আপাতত ইটভাঁটায় লুকিয়ে রয়েছি… অস্ত্র নিয়ে… কখন অর্ডার আসে, দেখি । ৮ পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা । সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল । ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে রক্তিম পতাকটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে দখল করেছ মুক্তাঞ্চল পতাকাটি সেই রক্তবক্ষ পেতে ধারণ করলেন । তোমার কি মনে পড়ছে রাজা শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ? মনে পড়ছে আঠারো বছর আগে তিয়েন-আন-মেন? ৯ ভাসছে উপুর হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পড়া কালো প্যান্ট । কোন বাড়ির ছেলে? নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে তার মধ্যে নবই তো মাথা । একদিন নব-র মাথাও গড়াবে খালের জলে, ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা এ এক পুরনো চক্র । এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা তাঁদের কি হবে? উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে সেসব গর্দান আর মাথা এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখ আজ সে চক্র ভাঙার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম— ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা । ১০ অপূর্ব বিকেল নামছে । রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে । রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় । শোকাহত বাড়িটিতে শুধু এক কাক এসে বসে । ডাকতে সাহস হয় না তারও । অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন । যদি ঘুম ভেভে যায় তাঁর!
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
কিন্তু আগুনের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াবার কথাটা মনে থাকে যেন! মাটি ফেটে তলিয়ে যাবার কথাটা যেন মনে থাকে ভূমিকম্পের ফাটল থেকে হাত বেরিয়ে আসা আর মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে, ডিঙি মেরে, সূর্যের পেটে মুখ ঢুকিয়ে দেওয়া কয়েক যুগ পরে, সূর্য নিভে আকাশ থেকে খসে পড়ল যখন তখন, আর কিছু না পেয়ে, খিদের চোটে, পরস্পরকে খেয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবার কথাটাও মনে থাকে যেন…
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
ওই যে বাড়ির তীরে কবর ওঠানো তার ছায়াচরে ঘুমে শুরু হই আমার অতীতকাল জলে ডাক দিলো: ‘ওরে লগ্নে লগ্নে ফেরী ছেড়ে যায়’ গৃহমুণ্ডে যে-বায়স নুড়িমুখে বসে তার ‘কা’ ধ্বনিতে সকাল অজ্ঞান খেলনা দুর্গের সামনে যতবার হাবাখেলা উত্থাপন করি, বাজে টাকা যতই পালাতে যাই, ছাদ ভেঙে মাথায় পড়ে ততবার হতভাগ্য যশ সখার আঙুল শুষে পদ্মিনী খেলেন, ফলে তুমিও ঝিনুকে ঢুকে খুন মা বাবার সঙ্গে বসে বশবর্তী এ কবিতা সকাতরে পড়া অসম্ভব ওই যে উঠোন থেকে গৃহরক্ত বয়ে আসে সবার দরজায় কাদা, পা পিছলে আসুন রাস্তায় পলায়মান ভবিষ্যৎকাল, আর হাত পায়ে বেড়ি আর পিছনে কুকুর কালপুরুষের কাঁধে উড়ে বসে কাক, সেও তারা ফেলে ফেলে ভরছে ব্রহ্মাণ্ড কলস ওই যে ছায়ার তীরে শোয়ানো কবর, তার বাড়ি-তীরে বালি ঝুরঝুর পূর্বের আকাশ, মত্ত, পাশে এসে দাঁড়ালেন ও আমার ভয় ভেঙে চুর
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
তাত লেগে চোখ খুলল। বালিস্তর ঠেলে বেরিয়ে এলাম। পাহাড় তুষারহীন গাছেরা দণ্ডায়মান কাঠ জনপদ লোহা ইট কংক্রিটের কালো স্তূপ মাটি ফ্যাকাসে হলদেটে সূর্য বিরাট চাকার মতো ছড়িয়ে রয়েছে ৭০০ কোটি বছরের পরের আকাশে সমস্ত জ্বালানি পুড়ে শেষ। বালির সমুদ্রখাতে আমি হাত জোড় করে দাঁড়াই আমার কপালে এসো, ঝরে পড়ো, রৌদ্র নয়--সূর্য-পোড়া ছাই!
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
শান্তি শান্তি শান্তি শান্তি যখন সোনালী পাগলিনী তীরে বসে বসে খায় সূর্যাস্ত একের পর এক হা সমুদ্র জলরাশি শুকিয়ে রক্তাভ বালিখাত পিছনে শহর মরা ইটকাঠ ইটকাঠ স্তূপ ভোর দ্বিপ্রহর ধ্বংস, সন্ধ্যা বা নিশীথকাল শেষ বাতাসে গর্জনশীল সোনাগুঁড়ো বালিগুঁড়ো শুষে শান্তি শান্তি শান্তি ডাকে তীরে যে-সহিংস পাগলিনী সূর্যেরা কেবলই অস্তে চলে তার গণ্ডূষে গণ্ডূষে…
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
সিদ্ধি, জবাকুসুম সংকাশ মাথার পিছনে ফেটে পড়ে দপ করে জ্বলে পূর্বাকাশ (…?) মাথায় রক্ত চড়ে সিদ্ধি, মহাদ্যুতি–তার মুখে চূর্ণ হয় যশের হাড়মাস হোমাগ্নিপ্রণীত দুটি হাত আমাতে সংযুক্ত হয়, বলে: বল তুই এই জলেস্থানে কী চাস? কেমনভাবে চাস? আমি নিরুত্তর থেকে দেখি সূর্য ফেটে পড়ে পূর্ণ ছাই ছাই ঘুরতে ঘুরতে পুনঃপুন এক সূর্য সহস্র জন্মায় সূর্যে সূর্যে আমি দেখতে পাই ক্ষণমাত্র লেখনী থামছে না গণেশ, আমার সামনে বসে লিপিবদ্ধ করছেন আকাশ চক্রের পিছনে চক্রাকার ফুটে উঠছে ব্রহ্মাজগৎ এ দৃশ্যের বিবরণকালে হে শব্দ, ব্রহ্মের মুখ, আমি শরীরে আলোর গতি পাই তোমাকেও এপার ওপার ভেদ করি, ফুঁড়ে চলে যাই…
জয় গোস্বামী
রূপক
আমার মায়ের নাম বাঁকাশশী, আমার শ্যামের নাম ছায়া আমার তরঙ্গ মানে খোলা বাড়ি–ছাদ থেকে যার নীচে পড়ে হানাহানি খেলা– আমার সম্পূর্ণ ভুল চারত আকাশ খুঁড়লে বালি আমার বাবার মুখে পান, গায়ে চাদরে উল্কারা সরে যায় মা, নীচে, সমুদ্রে খসে পড়ে।
জয় গোস্বামী
রূপক
আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো : ‘এই জীবন নিয়ে তুমি কি করেছো এতদিন ?’— তাহলে আমি বলবোএকদিন বমি করেছিলাম, একদিন ঢোঁক গিলেছিলাম, একদিন আমি ছোঁয়া মাত্র জল রুপান্তরিত হয়েছিল দুধে, একদিন আমাকে দেখেই এক অপ্সরার মাথা ঘুরে গিয়েছিল একদিন আমাকে না বলেই আমার দুটো হাত কদিনের জন্য উড়ে গেছিল হাওয়ায়একদিন মদ হিসেবে ঢুকেছিলাম এক জবরদস্ত মাতালের পেটে, একদিন সম্পূর্ণ অন্যভাবে বেরিয়ে এসেছিলাম এক রূপসীর শোকাশ্রুরুপে, আর তৎক্ষণাৎ আহা উহু আহা উহু করতে করতে আমাকে শুষে নিয়েছিল বহুমূল্য মসলিন একদিন গায়ে হাত তুলেছিলাম একদিন পা তুলেছিলাম একদিন জিভ ভেঙিয়েছিলাম একদিন সাবান মেখেছিলাম একদিন সাবান মাখিয়েছিলাম যদি বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করুন আমার মৃত্যুকেএকদিন কা কা করে ডেকে বেরিয়েছিলাম সারাবেলা একদিন তাড়া করেছিলাম স্বয়ং কাকতাড়ুয়াকেই একদিন শুয়োর পুষেছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন ছাগল একদিন দোদোমা ফাটিয়েছিলাম, একদিন চকলেট একদিন বাঁশি বাজিয়েছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন রাধাকেও একদিন আমার মুখ আমি আচ্ছা ক’রে গুঁজে দিয়েছিলাম একজনের কোলে আর আমার বাকি শরীরটা তখন কিনে নিয়েছিল অন্য কেউ কে তা আমি এখনো জানি না যদি বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করো গিয়ে তোমার…একদিন আমার শরীর ছিল তরুণ পাতায় ভরা আর আমার আঙুল ছিল লম্বা সাদা বকফুল আমার চুল ছিল একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ হাওয়া এলেই যেখানে খুশি উড়ে যাবে, কেবল সেইজন্য— একদিন মাঠের পর মাঠে আমি ছিলাম বিছিয়ে রাখা ঘাস তুমি এসে শরীর ঢেলে দেবে, কেবল সেইজন্য— আর সমস্ত নিষেধের বাইরে ছিল আমার দুটো চোখ এ নদী থেকে ও নদী থেকে সেই সে নদীতে কেবলই ভেসে বেড়াতো তারাসেই রকমই কোনো নদীর উপর, রোগা একটা সাঁকোর মতো একদিন আমি পেতে রেখেছিলাম আমার সাষ্টাঙ্গ শরীর যাতে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারে লোক কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই যাতে ওপার থেকে এপারে চলে আসতে পারে লোক কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াইসেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন এপার থেকে ওপারে চলে গিয়েছিল আসগর আলি মণ্ডলরা বাবুল ইসলামরা সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন ওপার থেকে এপারে চলে এসেছিল তোমার নতুন শাড়ি-পরা মা, টেপ-জামা-পরা আমার সান্তুমাসীএকদিন সংবিধান লিখতে লিখতে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল আমার দুপুরের ভাত-ঘুম মতো এসেছিল একটু আর সেই ফাঁকে কারা সব এসে ইচ্ছে মতো কাটাকুটি করে গিয়েছে দেহি পদপল্লব মুদারম্‌একদিন একদম ন্যাংটো হয়ে ছুটতে ছুটতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে আমি পেশ করেছিলাম বাজেট একদিন হাঁ করেছিলাম একদিন হাঁ বন্ধ করেছিলাম কিন্তু আমার হা-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না কিন্তু আমার না-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল নাএকদিন দুই গাল বেয়ে ঝরঝর ক’রে রক্তগড়ানো অবস্থায় জলে কাদায় ধানক্ষেত পাটক্ষেতের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে আমি খুঁজে ফিরেছিলাম আমার উপড়ে নেওয়া চোখএকদিন পিঠে ছরা-গাঁথা অবস্থায় রক্ত কাশতে কাশতে আমি আছড়ে এসে পরেছিলাম দাওয়ায় আর দলবেঁধে, লণ্ঠন উঁচু করে, আমায় দেখতে এসেছিল গ্রামের লোকএকদিন দাউদাউ ক’রে জ্বলতে থাকা ঝোপঝাড় মধ্য থেকে সারা গায়ে আগুন নিয়ে আমি ছুটে বেরিয়েছিলাম আর লাফ দিয়েছিলাম পচা পুকুরে পরদিন কাগজে সেই খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম উত্তেজিত হয়েছিলাম। অশ্রুপাত করেছিলাম, লোক জড়ো করেছিলাম, মাথা ঘামিয়েছিলাম আর সমবেত সেই মাথার ঘাম ধরে রেখেছিলাম দিস্তে দিস্তে দলিলে—যাতে পরবর্তী কেউ এসে গবেষণা শুরু করতে পারে যে এই দলিলগুলোয় আগুন দিলে ক’জনকে পুড়িয়ে মারা যায়মারো মারো মারো স্ত্রীলোক ও পুরুষলোকের জন্যে আয়ত্ত করো দু ধরনের প্রযুক্তি মারো মারো মারো যতক্ষণ না মুখ দিয়ে বমি করে দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড মারো মারো মারো যতক্ষণ না পেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পেটের বাচ্চা মারো মারো মারো মারো মারো-ও-ও-ওএইখানে এমন এক আর্তনাদ ব্যবহার করা দরকার যা কানে লাগলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে মাথার খুলি এইখানে এমন এক সঙ্গম ব্যাবহার করা দরকার যার ফলে অর্ধেক শরীর চিরকালের মতো পুঁতে যাবে ভূগর্ভে আর দ্রুত কয়লা হয়ে যাবে এইখানে এমন এক থুতু নিক্ষেপ করা দরকার যে-থুতু মুখ থেকে বেরোনো মাত্রই বিদীর্ণ হবে অতিকায় নক্ষত্ররুপে এইখানে এমন এক গান ব্যাবহার করা দরকার যা গাইবার সময় নায়ক-নায়িকা শূনে উঠে গিয়ে ভাসতে থাকবে আর তাদেরহাত পা মুণ্ডু ও জননেন্দিয়গুলি আলাদা আলাদা হয়ে আসবে ও প্রতিটি প্রতিটির জন্যে কাঁদবে প্রতিটি প্রতিটিকে আদর করবে ও একে অপরের নিয়ে কী করবে ভেবে পাবে না, শেষে পূর্বের অখণ্ড চেহারায় ফিরে যাবে এইখানে এমন এক চুম্বন-চেষ্টা প্রয়োগ করা দরকার, যার ফলে ‘মারো’ থেকে ‘ও’ অক্ষর ‘বাচাও’ থেকে ‘ও’ অক্ষর তীব্র এক অভিকর্ষজ টানে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে পরস্পরের দিকে ছুটে যাবে এবং এক হয়ে যেতে চাইবে আর আবহমানকালের জন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার মুখ আকাশের দিকে উত্তোলিত তাদের গোল হয়ে থাকা হাঁ একটি অনন্ত ‘ও’ ধ্বনিতে স্তব্ধ হয়ে থাকবেআজ যদি আমায় জিগ্যেস করো শত শত লাইন ধ’রে তুমি মিথ্যে লিখে গিয়েছো কেন ? যদি জিগ্যেস করো একজন কবির কাজ কী হওয়া উচিত কেন তুমি এখনো শেখোনি ?—তাহলে আমি শুধু বলবো একটি কণা, বলবো, বালির একটি কণা থেকে  আমি জন্মেছিলাম, জন্মেছিলাম লবণের একটি দানা থেকে—আর অজানা অচেনা এক বৃষ্টিবিন্দু কত উঁচু সেই গাছের পাতা থেকেও ঠিক দেখতে পেয়েছিল আমাকে আর ঝরেও পড়েছিল আমার পাশে—এর বেশি আমি আর কিচ্ছু জানি না……আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো কোন্‌ ব্যূহ কোন্‌ অন্ধকুপ রাষ্টের কোন্‌ কোন্‌ গোপন প্রণালীর ভেতর তুমি ঘুরে বেরিয়েছো তুমি বেড়াতে গিয়েছো কোন্‌ অস্ত্রাগারে তুমি চা খেয়েছো এক কাপ তুমি মাথা দিয়ে  ঢুঁসিয়েছো কোন্‌ হোর্ডিং কোন্‌ বিজ্ঞাপন কোন্‌ ফ্লাইওভার তোমার পায়ের কাছে এসে মুখ রেখেছে কোন্‌ হরিণ তোমার কাছে গলা মুচড়ে দেওয়ার আবেদন এনেছে কোন্‌ মরালতাহলে আমি বলবো মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর আমি কেবল উড়েই বেড়াইনি হাজার হাজার বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় আমি লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে বেরিয়েছি মাঠে আর জনপদেআজ যদি আমায় জিগ্যেস করো : তুমি একই বৃন্তে ক’টি কুসুম তুমি শাণ্ডিল্য না ভরদ্বাজ তুমি দুর্লভ না কৈবর্ত তুমি ব্যাটারি না হাত-বাক্স তুমি পেঁপে গাছ না আতা গাছ তুমি চটি পায়ে না জুতো পায়ে তুমি চণ্ডাল না মোছরমান তুমি মরা শিলা না জ্যান্ত শিলাতা হলে আমি বলবো সেই রাত্রির কথা, যে-রাত্রে শান্ত ঘাসের মাঠ ফুঁড়ে নিঃশব্দে নিঃশব্দে চতুর্দিকে মাটি পাথর ছিটকোতে ছিটকোতে তীব্রগতিতে আমি উড়তে দেখেছিলাম এক কুতুন মিনার, ঘূর্ণ্যমান কুতুব মিনার কয়েক পলকে শূনে মিলিয়ে যাবার আগে আকাশের গায়ে তার ধাবমান আগুনের পুচ্ছ থেকে আমি সেদিন দুদিকে দু’হাত ভাসিয়ে দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম ফেনায় তোলপাড় এই সময় গর্ভে……আজ আমি দূরত্বের শেষ সমুদ্রে আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায় আজ আমি সমুদ্রের সেই সূচনায় আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায় যা-কিছু শরীর অশরীর তা-ই আজ আমার মধ্যে জেগে উঠছে প্রবল প্রাণ আজ আমি দুই পাখনায় কাটতে কাটতে চলেছি সময় অতীত আর ভবিষ্যৎ দুই দিকে কাটতে কাটতে চলেছি সময় এক অতিকায় মাছ আমার ল্যাজের ঝাপটায় ঝাপটায় গড়ে উঠছে জলস্তম্ভ ভেঙে পরছে জলস্তম্ভ আমার নাক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ফোয়ারায় উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে জ্বলন্ত মেঘপুঞ্জ আমার নাসার উপরকার খড়্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি যার অপরপ্রান্ত উঠে গেছে অনেক অনেক উপরে এই পৃথিবী ও সৌরলোকের আকর্ষণসীমার বাইরে যেখানে প্রতি মুহূর্তে ফুলে ফুলে উঠছে অন্ধকার ঈথার সেইখানে, একটি সৌরদ্বীপ থেকে আরেক সৌরদ্বীপের মধ্যপথে দুলতে দুলতে, ভাসতে ভাসতে চলেছে একটি আগ্নেয় নৌকা……এর বেশি আর কিছুই আমি বলতে পারবো নাকবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুনআজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো : ‘এই জীবন নিয়ে তুমি কি করেছো এতদিন ?’— তাহলে আমি বলবোএকদিন বমি করেছিলাম, একদিন ঢোঁক গিলেছিলাম, একদিন আমি ছোঁয়া মাত্র জল রুপান্তরিত হয়েছিল দুধে, একদিন আমাকে দেখেই এক অপ্সরার মাথা ঘুরে গিয়েছিল একদিন আমাকে না বলেই আমার দুটো হাত কদিনের জন্য উড়ে গেছিল হাওয়ায়একদিন মদ হিসেবে ঢুকেছিলাম এক জবরদস্ত মাতালের পেটে, একদিন সম্পূর্ণ অন্যভাবে বেরিয়ে এসেছিলাম এক রূপসীর শোকাশ্রুরুপে, আর তৎক্ষণাৎ আহা উহু আহা উহু করতে করতে আমাকে শুষে নিয়েছিল বহুমূল্য মসলিন একদিন গায়ে হাত তুলেছিলাম একদিন পা তুলেছিলাম একদিন জিভ ভেঙিয়েছিলাম একদিন সাবান মেখেছিলাম একদিন সাবান মাখিয়েছিলাম যদি বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করুন আমার মৃত্যুকেএকদিন কা কা করে ডেকে বেরিয়েছিলাম সারাবেলা একদিন তাড়া করেছিলাম স্বয়ং কাকতাড়ুয়াকেই একদিন শুয়োর পুষেছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন ছাগল একদিন দোদোমা ফাটিয়েছিলাম, একদিন চকলেট একদিন বাঁশি বাজিয়েছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন রাধাকেও একদিন আমার মুখ আমি আচ্ছা ক’রে গুঁজে দিয়েছিলাম একজনের কোলে আর আমার বাকি শরীরটা তখন কিনে নিয়েছিল অন্য কেউ কে তা আমি এখনো জানি না যদি বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করো গিয়ে তোমার…একদিন আমার শরীর ছিল তরুণ পাতায় ভরা আর আমার আঙুল ছিল লম্বা সাদা বকফুল আমার চুল ছিল একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ হাওয়া এলেই যেখানে খুশি উড়ে যাবে, কেবল সেইজন্য— একদিন মাঠের পর মাঠে আমি ছিলাম বিছিয়ে রাখা ঘাস তুমি এসে শরীর ঢেলে দেবে, কেবল সেইজন্য— আর সমস্ত নিষেধের বাইরে ছিল আমার দুটো চোখ এ নদী থেকে ও নদী থেকে সেই সে নদীতে কেবলই ভেসে বেড়াতো তারাসেই রকমই কোনো নদীর উপর, রোগা একটা সাঁকোর মতো একদিন আমি পেতে রেখেছিলাম আমার সাষ্টাঙ্গ শরীর যাতে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারে লোক কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই যাতে ওপার থেকে এপারে চলে আসতে পারে লোক কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াইসেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন এপার থেকে ওপারে চলে গিয়েছিল আসগর আলি মণ্ডলরা বাবুল ইসলামরা সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন ওপার থেকে এপারে চলে এসেছিল তোমার নতুন শাড়ি-পরা মা, টেপ-জামা-পরা আমার সান্তুমাসীএকদিন সংবিধান লিখতে লিখতে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল আমার দুপুরের ভাত-ঘুম মতো এসেছিল একটু আর সেই ফাঁকে কারা সব এসে ইচ্ছে মতো কাটাকুটি করে গিয়েছে দেহি পদপল্লব মুদারম্‌একদিন একদম ন্যাংটো হয়ে ছুটতে ছুটতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে আমি পেশ করেছিলাম বাজেট একদিন হাঁ করেছিলাম একদিন হাঁ বন্ধ করেছিলাম কিন্তু আমার হা-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না কিন্তু আমার না-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল নাএকদিন দুই গাল বেয়ে ঝরঝর ক’রে রক্তগড়ানো অবস্থায় জলে কাদায় ধানক্ষেত পাটক্ষেতের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে আমি খুঁজে ফিরেছিলাম আমার উপড়ে নেওয়া চোখএকদিন পিঠে ছরা-গাঁথা অবস্থায় রক্ত কাশতে কাশতে আমি আছড়ে এসে পরেছিলাম দাওয়ায় আর দলবেঁধে, লণ্ঠন উঁচু করে, আমায় দেখতে এসেছিল গ্রামের লোকএকদিন দাউদাউ ক’রে জ্বলতে থাকা ঝোপঝাড় মধ্য থেকে সারা গায়ে আগুন নিয়ে আমি ছুটে বেরিয়েছিলাম আর লাফ দিয়েছিলাম পচা পুকুরে পরদিন কাগজে সেই খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম উত্তেজিত হয়েছিলাম। অশ্রুপাত করেছিলাম, লোক জড়ো করেছিলাম, মাথা ঘামিয়েছিলাম আর সমবেত সেই মাথার ঘাম ধরে রেখেছিলাম দিস্তে দিস্তে দলিলে—যাতে পরবর্তী কেউ এসে গবেষণা শুরু করতে পারে যে এই দলিলগুলোয় আগুন দিলে ক’জনকে পুড়িয়ে মারা যায়মারো মারো মারো স্ত্রীলোক ও পুরুষলোকের জন্যে আয়ত্ত করো দু ধরনের প্রযুক্তি মারো মারো মারো যতক্ষণ না মুখ দিয়ে বমি করে দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড মারো মারো মারো যতক্ষণ না পেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পেটের বাচ্চা মারো মারো মারো মারো মারো-ও-ও-ওএইখানে এমন এক আর্তনাদ ব্যবহার করা দরকার যা কানে লাগলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে মাথার খুলি এইখানে এমন এক সঙ্গম ব্যাবহার করা দরকার যার ফলে অর্ধেক শরীর চিরকালের মতো পুঁতে যাবে ভূগর্ভে আর দ্রুত কয়লা হয়ে যাবে এইখানে এমন এক থুতু নিক্ষেপ করা দরকার যে-থুতু মুখ থেকে বেরোনো মাত্রই বিদীর্ণ হবে অতিকায় নক্ষত্ররুপে এইখানে এমন এক গান ব্যাবহার করা দরকার যা গাইবার সময় নায়ক-নায়িকা শূনে উঠে গিয়ে ভাসতে থাকবে আর তাদেরহাত পা মুণ্ডু ও জননেন্দিয়গুলি আলাদা আলাদা হয়ে আসবে ও প্রতিটি প্রতিটির জন্যে কাঁদবে প্রতিটি প্রতিটিকে আদর করবে ও একে অপরের নিয়ে কী করবে ভেবে পাবে না, শেষে পূর্বের অখণ্ড চেহারায় ফিরে যাবে এইখানে এমন এক চুম্বন-চেষ্টা প্রয়োগ করা দরকার, যার ফলে ‘মারো’ থেকে ‘ও’ অক্ষর ‘বাচাও’ থেকে ‘ও’ অক্ষর তীব্র এক অভিকর্ষজ টানে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে পরস্পরের দিকে ছুটে যাবে এবং এক হয়ে যেতে চাইবে আর আবহমানকালের জন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার মুখ আকাশের দিকে উত্তোলিত তাদের গোল হয়ে থাকা হাঁ একটি অনন্ত ‘ও’ ধ্বনিতে স্তব্ধ হয়ে থাকবেআজ যদি আমায় জিগ্যেস করো শত শত লাইন ধ’রে তুমি মিথ্যে লিখে গিয়েছো কেন ? যদি জিগ্যেস করো একজন কবির কাজ কী হওয়া উচিত কেন তুমি এখনো শেখোনি ?—তাহলে আমি শুধু বলবো একটি কণা, বলবো, বালির একটি কণা থেকে  আমি জন্মেছিলাম, জন্মেছিলাম লবণের একটি দানা থেকে—আর অজানা অচেনা এক বৃষ্টিবিন্দু কত উঁচু সেই গাছের পাতা থেকেও ঠিক দেখতে পেয়েছিল আমাকে আর ঝরেও পড়েছিল আমার পাশে—এর বেশি আমি আর কিচ্ছু জানি না……আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো কোন্‌ ব্যূহ কোন্‌ অন্ধকুপ রাষ্টের কোন্‌ কোন্‌ গোপন প্রণালীর ভেতর তুমি ঘুরে বেরিয়েছো তুমি বেড়াতে গিয়েছো কোন্‌ অস্ত্রাগারে তুমি চা খেয়েছো এক কাপ তুমি মাথা দিয়ে  ঢুঁসিয়েছো কোন্‌ হোর্ডিং কোন্‌ বিজ্ঞাপন কোন্‌ ফ্লাইওভার তোমার পায়ের কাছে এসে মুখ রেখেছে কোন্‌ হরিণ তোমার কাছে গলা মুচড়ে দেওয়ার আবেদন এনেছে কোন্‌ মরালতাহলে আমি বলবো মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর আমি কেবল উড়েই বেড়াইনি হাজার হাজার বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় আমি লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে বেরিয়েছি মাঠে আর জনপদেআজ যদি আমায় জিগ্যেস করো : তুমি একই বৃন্তে ক’টি কুসুম তুমি শাণ্ডিল্য না ভরদ্বাজ তুমি দুর্লভ না কৈবর্ত তুমি ব্যাটারি না হাত-বাক্স তুমি পেঁপে গাছ না আতা গাছ তুমি চটি পায়ে না জুতো পায়ে তুমি চণ্ডাল না মোছরমান তুমি মরা শিলা না জ্যান্ত শিলাতা হলে আমি বলবো সেই রাত্রির কথা, যে-রাত্রে শান্ত ঘাসের মাঠ ফুঁড়ে নিঃশব্দে নিঃশব্দে চতুর্দিকে মাটি পাথর ছিটকোতে ছিটকোতে তীব্রগতিতে আমি উড়তে দেখেছিলাম এক কুতুন মিনার, ঘূর্ণ্যমান কুতুব মিনার কয়েক পলকে শূনে মিলিয়ে যাবার আগে আকাশের গায়ে তার ধাবমান আগুনের পুচ্ছ থেকে আমি সেদিন দুদিকে দু’হাত ভাসিয়ে দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম ফেনায় তোলপাড় এই সময় গর্ভে……আজ আমি দূরত্বের শেষ সমুদ্রে আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায় আজ আমি সমুদ্রের সেই সূচনায় আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায় যা-কিছু শরীর অশরীর তা-ই আজ আমার মধ্যে জেগে উঠছে প্রবল প্রাণ আজ আমি দুই পাখনায় কাটতে কাটতে চলেছি সময় অতীত আর ভবিষ্যৎ দুই দিকে কাটতে কাটতে চলেছি সময় এক অতিকায় মাছ আমার ল্যাজের ঝাপটায় ঝাপটায় গড়ে উঠছে জলস্তম্ভ ভেঙে পরছে জলস্তম্ভ আমার নাক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ফোয়ারায় উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে জ্বলন্ত মেঘপুঞ্জ আমার নাসার উপরকার খড়্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি যার অপরপ্রান্ত উঠে গেছে অনেক অনেক উপরে এই পৃথিবী ও সৌরলোকের আকর্ষণসীমার বাইরে যেখানে প্রতি মুহূর্তে ফুলে ফুলে উঠছে অন্ধকার ঈথার সেইখানে, একটি সৌরদ্বীপ থেকে আরেক সৌরদ্বীপের মধ্যপথে দুলতে দুলতে, ভাসতে ভাসতে চলেছে একটি আগ্নেয় নৌকা……এর বেশি আর কিছুই আমি বলতে পারবো নাকবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুন
জয় গোস্বামী
রূপক
হে অশ্ব, তোমার মুণ্ড টেবিলে স্থাপিত। রাত্রিবেলা হাঁ করা মুখ থেকে ধোঁয়া ঝরে আর সে-ধোঁয়ার মধ্যে চতুষ্পদ কবন্ধ তোমার সারারাট ছুটোছুটি করে!
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই। ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে। অনেকদিন ধ’রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এর পচন নেই। বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না। রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে। আমি জানি, মৃতদেহটা আমার। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন। আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরে গিয়ে পা কামড়ে ধ’রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে টেনে বার করব আমি।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
একদম ফুটন্ত জল ঢেলে দিয়ে গায়ে উদভ্রান্ত কুকুর ছুটল রাস্তায় রাস্তায় চলন্ত অটোর সঙ্গে একবার ধাক্কা লাগে গায়ের ওপরে এসে পড়া রিকশাওয়ালার লাথি খায় উদভ্রান্ত কুকুর ছুটছে রাস্তায় রাস্তায় জ্বালাপোড়া থামাতে পারছে না জ্বালাপোড়া থামাতে পারছে না
জয় গোস্বামী
রূপক
সমুদ্র তো বুড়ো হয়েছেন পিঠের ওপরে কতো ভারী দ্বীপ ও পাহাড় অভিযাত্রী, তোমার নৌকাই খেলনার প্রায় সংকোচ কোরো না তুমি, ওইটুকু ভার অনায়াসে সমুদ্রকে দিয়ে দেওয়া যায়!
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
চোখ, চলে গিয়েছিল, অন্যের প্রেমিকা, তার পায়ে। যখন, অসাবধানে, সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি— বাইরে নেমেছে বৃষ্টি। লন্ঠন নামানো আছে টেবিলের নীচে, অন্ধকারে মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে লুকোনো পায়ের ফর্সা আভা…অন্যায় চোখের নয়। না তাকিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। সত্যিই ছিল না? কেন?—হুহু করে বৃষ্টিছাট ঢুকে আসে ঘরে সত্যিই ছিল না? কেন?—কাঁটাতারে ঝাঁপায় ফুলগাছ সত্যিই ছিল না? কেন?—অনধিকারীর সামনে থেকেসমস্ত লুকিয়ে নেয় নকশা-কাটা লেসের ঝালর… এখন থেমেছে বৃষ্টি। এখন এ-ঘর থেকে উঠে গেছে সেও। শুধু, ফিরে আসছে হাওয়া। শুধু, এক অক্ষমের চোখের মতন মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই। তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি। এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার – আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে … জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো। তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে। আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার? শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা; সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে, জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোস্নার ধারণা দেব ব’লে এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি। দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত – যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে; সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার… পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায়।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
আমি যখন ছোট ছিলাম খেলতে যেতাম মেঘের দলে একদিন এক মেঘবালিকা প্রশ্ন করলো কৌতুহলে ‘এই ছেলেটা, নাম কি রে তোর?’ আমি বললাম, ফুস মন্তর মেঘবালিকা রেগেই আগুন, মিথ্যে কথা, নাম কি অমন হয় কখনো? আমি বললাম, নিশ্চয়ই হয়, আগে আমার গল্প শোনো সে বলল, শুনবো না যাঃ, সেই তো রাণী সেই তো রাজা সেই তো একই ঢাল তলোয়ার সেই তো একই রাজার কুমার পক্ষিরাজে শুনবো না আর ওসব বাজে। আমি বললাম, তোমার জন্য নতুন করে লিখব তবে। সে বলল, সত্যি লিখবি! বেশ তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে। মনে থাকবে? লিখেই কিন্তু আমায় দিবি। আমি বললাম, তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী। লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দু চার পাতা হঠাৎ তখন ভুত চাপলো আমার মাথায় খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে গিয়েই দেখি, চেনা মুখ তো একটিও নেই এ তল্লাটে একজনকে মনে হল ওরই মধ্যে অন্যরকম এগিয়ে গিয়ে বলি তাকেই তুমি কি সেই মেঘবালিকা, তুমি কি সেই? সে বলেছে, মনে তো নেই। আমার ওসব মনে তো নেই আমি বললাম, তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে। সে বলল, সঙ্গে আছে? ভাসিয়ে দাও গাঁয়ের ঝিলে। আর হ্যা, শোন, এখন আমি মেঘ নই আর সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়। বলেই হঠাৎ এক পশলায় আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে মিলিয়ে গেল দূরে কোথায়, দূরে দূরে…। বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়…. বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়….আপন মনে বলতে বলতে আমিই কেবল বসে রইলাম ভিজে এক-সা কাপড় জামায় গাছের তলায় বসে রইলাম বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্য… এমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি আমায় চিনতে পেরে বলল তাতে মন খারাপের কি হয়েছে? যাও ফিরে যাও-লেখ আবার এখন পুরো বর্ষা চলছে, তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ ব্যস্ত তুমিও যাও, মন দাও গে তোমার কাজে। বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাব তোমার কাছে। এক পৃথিবী লিখবো আমি এক পৃথিবী লিখবো বলে ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাঁধলাম গহিন বনে সঙ্গী শুধু কাগজ কলম একাই থাকব, একাই দুটো ফুটিয়ে খাব ধুলোবালি দু এক মুঠো যখন যারা আসবে মনে তাদের লিখব, লিখেই যাব। এক পৃথিবীর একশ রকম স্বপ্ন দেখার সাধ্য থাকবে যে রূপকথার সে রূপকথা আমার একার। ঘাড় গুজে দিন লিখতে লিখতে ঘাড় গুজে রাত লিখতে লিখতে মুছেছে দিন মুছেছে রাত যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হল মনে পড়ল, সাল কি তারিখ, বছর কি মাস সেসব হিসেব আর রাখি নি। লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি এক পৃথিবী লিখব বলে একটা খাতাও শেষ করিনি। সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল খাতার উপর, আজীবনের লেখার উপর বাইরে তখন গাছের নিচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত এ গাছ ও গাছ উড়ছে পাখি, বলছে পাখি এই অরণ্যে কবির জন্যে আমরা থাকি বলছে ওরা, কবির জন্য আমরা কোথাও, আমরা কোথাও, আমরা কোথাও হার মানিনি। কবি তখন কুটির থেকে, তাকিয়ে আছে অনেক দূরে বনের পরে মাঠের পরে নদীর পরে সেই যেখানে সারা জীবন বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি পড়ে সেই যেখানে কেউ যায়নি, কেউ যায় না কোনদিনই আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে সেই দেশে সেই ঝর্ণা তলায় এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায় সোনায় মোড়া মেঘ হরিণী কিশোর বেলার সেই হরিণী।
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
ওই কালস্রোত। আমি সিমেন্ট বাঁধানো পাড় থেকে হাত ডোবাই। আমার আঙুল গলে যায়। কব্জি, বাহু গলে যায়। ঘাড়ের উপরে মুণ্ডু নিয়ে আমি হাত-পা-কাটে জগন্নাথ নদী-নালা আঁকা এক ঘুরন্ত বলের পিঠে বসে থাকি। শূন্যে পাক খাই।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
ডোন্ট গেট হার্ট। আই অ্যাম ইন এ রিলেশনশিপ।খুব শান্ত,নির্বিকারভাবে বলল এই কথা।বঁড়শি ততদিনে গেঁথে গেছে আমূল আমার টাকরায়ভুলব,ভুলে যাব,ভুলতে হবেই আমাকে--এই কথা ভেবে-ভেবে প্রাণপণ সাঁতরে চলেছি নদীজলেছাড়াতে পারছি না মাগো ছাড়াতে পারছি না হুইলের সুতো ঠিক তাড়া করে আসছেই পিছনেআটবছর চিনি তাকে।সে-ও খুব শান্ত নির্বিকারভাবে শক্ত হাতে ধরে আছে ছিপ...
জয় গোস্বামী
স্বদেশমূলক
তোমাকে কাদার মধ্যে কাদাপাখি মনে করলাম। মাছ খুঁজছ? লম্বা সরু ঠোঁট দিয়ে আমার খাবার জোগাড় করছ বুঝি? ওগো ও জননী পাখি, আমি স্বপ্নে ডাকি তোমার মা নাম তোমার জরায়ু-কলসী এখন তো শুকনো, শুধু বালিমাটি ভরা বুড়ি, তবু আমাকে একবার, হাত পা মুড়ে তোমার ডিমের মধ্যে শুয়ে থাকতে দেবে?
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
মিত্রা দিদি, তোমাকে নিয়ে কাব্য লেখেনি কোন পুরুষ কোন দিন। গলির মোড়ে বাজেনি সম্মিলিত শীৎকার, বখাটে ছেলেদের। তোমাকে দেখতে আসেনি পাত্রপক্ষ, এসেছিল শুধু মেপে নিতে, তোমার বুক, চুল, নিতম্ব যাবতীয় সব শারিরিক। কত বার গেছ তুমি কামরূপ-কামাক্ষা ? কত বার ছুঁয়েছ তুমি কাম পীঠে সিঁদুর ? কত বার পাল্টেছ জ্যোতিষি তুমি ? কত বার করিয়েছ জাদুটোনা ? কত যুগ উপবাসী তুমি ঢেলেছ দুগ্ধ, সুগঠিত শিবলিঙ্গে ? সে খবর জানে শুধু, একলা রাতের পাশ বালিশ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রমিত্রা দিদি, তোমাকে নিয়ে কাব্য লেখেনি কোন পুরুষ কোন দিন। গলির মোড়ে বাজেনি সম্মিলিত শীৎকার, বখাটে ছেলেদের। তোমাকে দেখতে আসেনি পাত্রপক্ষ, এসেছিল শুধু মেপে নিতে, তোমার বুক, চুল, নিতম্ব যাবতীয় সব শারিরিক। কত বার গেছ তুমি কামরূপ-কামাক্ষা ? কত বার ছুঁয়েছ তুমি কাম পীঠে সিঁদুর ? কত বার পাল্টেছ জ্যোতিষি তুমি ? কত বার করিয়েছ জাদুটোনা ? কত যুগ উপবাসী তুমি ঢেলেছ দুগ্ধ, সুগঠিত শিবলিঙ্গে ? সে খবর জানে শুধু, একলা রাতের পাশ বালিশ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রমিত্রা দিদি, তোমাকে নিয়ে কাব্য লেখেনি কোন পুরুষ কোন দিন। গলির মোড়ে বাজেনি সম্মিলিত শীৎকার, বখাটে ছেলেদের। তোমাকে দেখতে আসেনি পাত্রপক্ষ, এসেছিল শুধু মেপে নিতে, তোমার বুক, চুল, নিতম্ব যাবতীয় সব শারিরিক। কত বার গেছ তুমি কামরূপ-কামাক্ষা ? কত বার ছুঁয়েছ তুমি কাম পীঠে সিঁদুর ? কত বার পাল্টেছ জ্যোতিষি তুমি ? কত বার করিয়েছ জাদুটোনা ? কত যুগ উপবাসী তুমি ঢেলেছ দুগ্ধ, সুগঠিত শিবলিঙ্গে ? সে খবর জানে শুধু, একলা রাতের পাশ বালিশ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রমিত্রা দিদি, তোমাকে নিয়ে কাব্য লেখেনি কোন পুরুষ কোন দিন। গলির মোড়ে বাজেনি সম্মিলিত শীৎকার, বখাটে ছেলেদের। তোমাকে দেখতে আসেনি পাত্রপক্ষ, এসেছিল শুধু মেপে নিতে, তোমার বুক, চুল, নিতম্ব যাবতীয় সব শারিরিক। কত বার গেছ তুমি কামরূপ-কামাক্ষা ? কত বার ছুঁয়েছ তুমি কাম পীঠে সিঁদুর ? কত বার পাল্টেছ জ্যোতিষি তুমি ? কত বার করিয়েছ জাদুটোনা ? কত যুগ উপবাসী তুমি ঢেলেছ দুগ্ধ, সুগঠিত শিবলিঙ্গে ? সে খবর জানে শুধু, একলা রাতের পাশ বালিশ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
আমার স্বপ্নের পর স্বপ্ন হল আরো বেলা যেতে আমাকে ধ্বংসের পর ধ্বংসক্ষেত্রে বর্ণনার শেষে শান্তি নেমে চলে গেল, মৃতদেহ টপকে টপকে, দূর তেপান্তরে… তার, গা থেকে স্ফুলিঙ্গ হয়ে তখনও ঝলক দিচ্ছে রক্ত আর উল্লাসের ছিটে। দিগন্তে মেঘের কুণ্ড। থেমে থাকা ঝড়… আমাকে দৃশ্যের পর দৃশ্যের ওপিঠে এইমতো এঁকে রাখছেন এক মুণ্ডহীন চিত্রকর!
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
ও প্রীতি, দীর্ঘ ঈ, হস্ব্র ই-কারের ডানা দুদিকে অর্ধেক মোড়া চিঠিতে বসেছ, নিতে বলেছ। নেবো না। ডানা মেলে উড়ে যাও, প্রীতি দূরে দীর্ঘ ঐ জল পার হয়েএকপিঠ ডাঙা ঐ যে উঠেছে, চর জানা বা অজানা কত সব পরিবার ঘর ছাইবে, ঘর ছাইল, যাও, ঐ চরে গিয়ে নামো, হাত লাগাও বসতির কাজে, আমিও তোমার পিছে উড়ে যাই সকলের সঙ্গে গিয়ে বসি পুরোনো পাড়ার লোক দেখে যাই বসে-বসে আলিঙ্গন, আলিঙ্গন, আজ একাদশী, এখন বন্যার জল নেমে গেছে, ছেলেরা কাঠাম তুলছে জল থেকে ঝাঁপাঝাঁপি নদীপাড় পোহাচ্ছে রোদ্দুর, খালাসীর কড়াইতে ছ্যাঁকছোঁক শুকনো লঙ্কা শুকনো কাশি, ঝাল তরকারি ভাঙা আস্ত দুটো লঞ্চ গায়ে লেখা লম্বা নাম “দুর্গতিনাশিনী’ আর “জয় মা অভয়া’ … মা ভেসে গেছেন কালকে, শুভ নমস্কার, প্রীতি, হ্যা, শুভ বিজয়া!
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
”তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই (বা নব্বইয়ের বেশি) তোমাকে হতেই হবে একদম প্রথম তার বদলে মাত্র পঁচাশি! পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম? এই জন্য আমি রোজ মুখে রক্ত তুলে খেটে আসি? এই জন্যে তোমার মা কাক ভোরে উঠে সব কাজকর্ম সেরে ছোটবেলা থেকে যেতো তোমাকে ইস্কুলে পৌঁছে দিতে? এই জন্য কাঠফাটা রোদ্দুরে কি প্যাচপ্যাচে বর্ষায় সারাদিন বসে থাকতো বাড়ির রোয়াকে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে? তারপর ছুটি হতে, ভিড় বাঁচাতে মিনিবাস ছেড়ে অটো-অলাদের ঐ খারাপ মেজাজ সহ্য করে বাড়ি এসে, না হাঁপিয়ে, আবার তোমার পড়া নিয়ে বসে পড়তো, যতক্ষণ না আমি বাড়ি ফিরে তোমার হোমটাস্ক দেখছি, তারপরে আঁচলে মুখ মুছে ঢুলতো গিয়ে ভ্যাপসা রান্নাঘরে? এই জন্যে? এই জন্যে হাড়ভাঙা ওভারটাইম করে তোমার জন্য আন্টি রাখতাম? মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার হপ্তায় তিনদিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল? বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার? শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে পাঠিয়েছি, জানিস না, কিরকম খরচাপাতি তার? ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম! কারো অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার। রোজ যে যাস, দেখিস না কত সব বড় বড় বাড়ি ও পাড়ায় কত সব গাড়ি আসে, কত বড় গাড়ি করে বাবা মা-রা ছেলেমেয়েদের নিতে যায়? আর ঐ গাড়ির পাশে, পাশে না পিছনে- ঐ অন্ধকারটায় রোজ দাঁড়াতে দেখিস না নিজের বাবাকে? হাতে অফিসের ব্যাগ, গোপন টিফিন বাক্স, ঘেমো জামা, ভাঙা মুখ – দেখতে পাসনা? মন কোথায় থাকে? ঐ মেয়েগুলোর দিকে? যারা তোর সঙ্গে পড়তে আসে? ওরা তোকে পাত্তা দেবে? ভুলেও ভাবিস না! ওরা কত বড়লোক! তোকে পাত্তা পেতে হলে থাকতে হবে বিদেশে, ফরেনে এন আর আই হতে হবে! এন আর আই, এন আর আই! তবেই ম্যাজিক দেখবি কবিসাহিত্যিক থেকে মন্ত্রী অব্দি একডাকে চেনে আমাদেরও নিয়ে যাবি, তোর মাকে, আমাকে মাঝে মাঝে রাখবি নিজের কাছে এনে তার জন্য প্রথম হওয়া দরকার প্রথমে তাহলেই ছবি ছাপবে খবর কাগজ আরো দরজা খুলে যাবে, আরো পাঁচ আরো পাঁচ আরো আরো পাঁচ পাঁচ পাঁচ করেই বাড়বে, অন্য দিকে মন দিস না, বাঁচবি তো বাঁচার মত বাঁচ! না বাপী না, না না বাপী, আমি মন দিই না কোনোদিকে না বাপী না, না না আমি তাকাই না মেয়েদের দিকে ওরা তো পাশেই বসে, কেমন সুগন্ধ আসে, কথা বলে, না না বাপী পড়ার কথাই দেখি না, উত্তর দিই, নোট দিই নোট নিই যেতে আসতে পথে ঘাটে কত ছেলে মেয়ে গল্প করে না বাপী না, আমি মেয়েদের সঙ্গে মিশতে যাই না কখোনো যেতে আসতে দেখতে পাই কাদা মেখে কত ছেলে বল খেলছে মাঠে কত সব দুষ্টু ছেলে পার্কে প্রজাপতি ধরছে চাকা বা ডাঙ্গুলি খেলছে কত ছোটোলোক না, আমি খেলতে যাই না কখোনো খেলতে যাইনি। না আমার বন্ধু নেই না বাপী না, একজন আছে, অপু, একক্লাসে পড়ে ও বলে যে ওর বাবাও বলেছে প্রথম হতে বলেছে, কাগজে ছবি, ওর বাবা, ওকে …. হ্যাঁ বাপী হ্যা, না না বাপী, অপু বলেছে পড়াশোনা হয়নি একদম বলেছে ও ব্যাক পাবে, ব্যাক পেলে ও বলেছে, বাড়িতে কোথায় বাথরুম সাফ করার অ্যাসিড আছে ও জানে, হ্যাঁ বাপী হ্যা, ও বলেছে, উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..”আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র”তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই (বা নব্বইয়ের বেশি) তোমাকে হতেই হবে একদম প্রথম তার বদলে মাত্র পঁচাশি! পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম? এই জন্য আমি রোজ মুখে রক্ত তুলে খেটে আসি? এই জন্যে তোমার মা কাক ভোরে উঠে সব কাজকর্ম সেরে ছোটবেলা থেকে যেতো তোমাকে ইস্কুলে পৌঁছে দিতে? এই জন্য কাঠফাটা রোদ্দুরে কি প্যাচপ্যাচে বর্ষায় সারাদিন বসে থাকতো বাড়ির রোয়াকে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে? তারপর ছুটি হতে, ভিড় বাঁচাতে মিনিবাস ছেড়ে অটো-অলাদের ঐ খারাপ মেজাজ সহ্য করে বাড়ি এসে, না হাঁপিয়ে, আবার তোমার পড়া নিয়ে বসে পড়তো, যতক্ষণ না আমি বাড়ি ফিরে তোমার হোমটাস্ক দেখছি, তারপরে আঁচলে মুখ মুছে ঢুলতো গিয়ে ভ্যাপসা রান্নাঘরে? এই জন্যে? এই জন্যে হাড়ভাঙা ওভারটাইম করে তোমার জন্য আন্টি রাখতাম? মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার হপ্তায় তিনদিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল? বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার? শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে পাঠিয়েছি, জানিস না, কিরকম খরচাপাতি তার? ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম! কারো অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার। রোজ যে যাস, দেখিস না কত সব বড় বড় বাড়ি ও পাড়ায় কত সব গাড়ি আসে, কত বড় গাড়ি করে বাবা মা-রা ছেলেমেয়েদের নিতে যায়? আর ঐ গাড়ির পাশে, পাশে না পিছনে- ঐ অন্ধকারটায় রোজ দাঁড়াতে দেখিস না নিজের বাবাকে? হাতে অফিসের ব্যাগ, গোপন টিফিন বাক্স, ঘেমো জামা, ভাঙা মুখ – দেখতে পাসনা? মন কোথায় থাকে? ঐ মেয়েগুলোর দিকে? যারা তোর সঙ্গে পড়তে আসে? ওরা তোকে পাত্তা দেবে? ভুলেও ভাবিস না! ওরা কত বড়লোক! তোকে পাত্তা পেতে হলে থাকতে হবে বিদেশে, ফরেনে এন আর আই হতে হবে! এন আর আই, এন আর আই! তবেই ম্যাজিক দেখবি কবিসাহিত্যিক থেকে মন্ত্রী অব্দি একডাকে চেনে আমাদেরও নিয়ে যাবি, তোর মাকে, আমাকে মাঝে মাঝে রাখবি নিজের কাছে এনে তার জন্য প্রথম হওয়া দরকার প্রথমে তাহলেই ছবি ছাপবে খবর কাগজ আরো দরজা খুলে যাবে, আরো পাঁচ আরো পাঁচ আরো আরো পাঁচ পাঁচ পাঁচ করেই বাড়বে, অন্য দিকে মন দিস না, বাঁচবি তো বাঁচার মত বাঁচ! না বাপী না, না না বাপী, আমি মন দিই না কোনোদিকে না বাপী না, না না আমি তাকাই না মেয়েদের দিকে ওরা তো পাশেই বসে, কেমন সুগন্ধ আসে, কথা বলে, না না বাপী পড়ার কথাই দেখি না, উত্তর দিই, নোট দিই নোট নিই যেতে আসতে পথে ঘাটে কত ছেলে মেয়ে গল্প করে না বাপী না, আমি মেয়েদের সঙ্গে মিশতে যাই না কখোনো যেতে আসতে দেখতে পাই কাদা মেখে কত ছেলে বল খেলছে মাঠে কত সব দুষ্টু ছেলে পার্কে প্রজাপতি ধরছে চাকা বা ডাঙ্গুলি খেলছে কত ছোটোলোক না, আমি খেলতে যাই না কখোনো খেলতে যাইনি। না আমার বন্ধু নেই না বাপী না, একজন আছে, অপু, একক্লাসে পড়ে ও বলে যে ওর বাবাও বলেছে প্রথম হতে বলেছে, কাগজে ছবি, ওর বাবা, ওকে …. হ্যাঁ বাপী হ্যা, না না বাপী, অপু বলেছে পড়াশোনা হয়নি একদম বলেছে ও ব্যাক পাবে, ব্যাক পেলে ও বলেছে, বাড়িতে কোথায় বাথরুম সাফ করার অ্যাসিড আছে ও জানে, হ্যাঁ বাপী হ্যা, ও বলেছে, উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..”আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র”তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই (বা নব্বইয়ের বেশি) তোমাকে হতেই হবে একদম প্রথম তার বদলে মাত্র পঁচাশি! পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম? এই জন্য আমি রোজ মুখে রক্ত তুলে খেটে আসি? এই জন্যে তোমার মা কাক ভোরে উঠে সব কাজকর্ম সেরে ছোটবেলা থেকে যেতো তোমাকে ইস্কুলে পৌঁছে দিতে? এই জন্য কাঠফাটা রোদ্দুরে কি প্যাচপ্যাচে বর্ষায় সারাদিন বসে থাকতো বাড়ির রোয়াকে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে? তারপর ছুটি হতে, ভিড় বাঁচাতে মিনিবাস ছেড়ে অটো-অলাদের ঐ খারাপ মেজাজ সহ্য করে বাড়ি এসে, না হাঁপিয়ে, আবার তোমার পড়া নিয়ে বসে পড়তো, যতক্ষণ না আমি বাড়ি ফিরে তোমার হোমটাস্ক দেখছি, তারপরে আঁচলে মুখ মুছে ঢুলতো গিয়ে ভ্যাপসা রান্নাঘরে? এই জন্যে? এই জন্যে হাড়ভাঙা ওভারটাইম করে তোমার জন্য আন্টি রাখতাম? মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার হপ্তায় তিনদিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল? বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার? শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে পাঠিয়েছি, জানিস না, কিরকম খরচাপাতি তার? ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম! কারো অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার। রোজ যে যাস, দেখিস না কত সব বড় বড় বাড়ি ও পাড়ায় কত সব গাড়ি আসে, কত বড় গাড়ি করে বাবা মা-রা ছেলেমেয়েদের নিতে যায়? আর ঐ গাড়ির পাশে, পাশে না পিছনে- ঐ অন্ধকারটায় রোজ দাঁড়াতে দেখিস না নিজের বাবাকে? হাতে অফিসের ব্যাগ, গোপন টিফিন বাক্স, ঘেমো জামা, ভাঙা মুখ – দেখতে পাসনা? মন কোথায় থাকে? ঐ মেয়েগুলোর দিকে? যারা তোর সঙ্গে পড়তে আসে? ওরা তোকে পাত্তা দেবে? ভুলেও ভাবিস না! ওরা কত বড়লোক! তোকে পাত্তা পেতে হলে থাকতে হবে বিদেশে, ফরেনে এন আর আই হতে হবে! এন আর আই, এন আর আই! তবেই ম্যাজিক দেখবি কবিসাহিত্যিক থেকে মন্ত্রী অব্দি একডাকে চেনে আমাদেরও নিয়ে যাবি, তোর মাকে, আমাকে মাঝে মাঝে রাখবি নিজের কাছে এনে তার জন্য প্রথম হওয়া দরকার প্রথমে তাহলেই ছবি ছাপবে খবর কাগজ আরো দরজা খুলে যাবে, আরো পাঁচ আরো পাঁচ আরো আরো পাঁচ পাঁচ পাঁচ করেই বাড়বে, অন্য দিকে মন দিস না, বাঁচবি তো বাঁচার মত বাঁচ! না বাপী না, না না বাপী, আমি মন দিই না কোনোদিকে না বাপী না, না না আমি তাকাই না মেয়েদের দিকে ওরা তো পাশেই বসে, কেমন সুগন্ধ আসে, কথা বলে, না না বাপী পড়ার কথাই দেখি না, উত্তর দিই, নোট দিই নোট নিই যেতে আসতে পথে ঘাটে কত ছেলে মেয়ে গল্প করে না বাপী না, আমি মেয়েদের সঙ্গে মিশতে যাই না কখোনো যেতে আসতে দেখতে পাই কাদা মেখে কত ছেলে বল খেলছে মাঠে কত সব দুষ্টু ছেলে পার্কে প্রজাপতি ধরছে চাকা বা ডাঙ্গুলি খেলছে কত ছোটোলোক না, আমি খেলতে যাই না কখোনো খেলতে যাইনি। না আমার বন্ধু নেই না বাপী না, একজন আছে, অপু, একক্লাসে পড়ে ও বলে যে ওর বাবাও বলেছে প্রথম হতে বলেছে, কাগজে ছবি, ওর বাবা, ওকে …. হ্যাঁ বাপী হ্যা, না না বাপী, অপু বলেছে পড়াশোনা হয়নি একদম বলেছে ও ব্যাক পাবে, ব্যাক পেলে ও বলেছে, বাড়িতে কোথায় বাথরুম সাফ করার অ্যাসিড আছে ও জানে, হ্যাঁ বাপী হ্যা, ও বলেছে, উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..”আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র”তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই (বা নব্বইয়ের বেশি) তোমাকে হতেই হবে একদম প্রথম তার বদলে মাত্র পঁচাশি! পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম? এই জন্য আমি রোজ মুখে রক্ত তুলে খেটে আসি? এই জন্যে তোমার মা কাক ভোরে উঠে সব কাজকর্ম সেরে ছোটবেলা থেকে যেতো তোমাকে ইস্কুলে পৌঁছে দিতে? এই জন্য কাঠফাটা রোদ্দুরে কি প্যাচপ্যাচে বর্ষায় সারাদিন বসে থাকতো বাড়ির রোয়াকে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে? তারপর ছুটি হতে, ভিড় বাঁচাতে মিনিবাস ছেড়ে অটো-অলাদের ঐ খারাপ মেজাজ সহ্য করে বাড়ি এসে, না হাঁপিয়ে, আবার তোমার পড়া নিয়ে বসে পড়তো, যতক্ষণ না আমি বাড়ি ফিরে তোমার হোমটাস্ক দেখছি, তারপরে আঁচলে মুখ মুছে ঢুলতো গিয়ে ভ্যাপসা রান্নাঘরে? এই জন্যে? এই জন্যে হাড়ভাঙা ওভারটাইম করে তোমার জন্য আন্টি রাখতাম? মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার হপ্তায় তিনদিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল? বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার? শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে পাঠিয়েছি, জানিস না, কিরকম খরচাপাতি তার? ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম! কারো অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার। রোজ যে যাস, দেখিস না কত সব বড় বড় বাড়ি ও পাড়ায় কত সব গাড়ি আসে, কত বড় গাড়ি করে বাবা মা-রা ছেলেমেয়েদের নিতে যায়? আর ঐ গাড়ির পাশে, পাশে না পিছনে- ঐ অন্ধকারটায় রোজ দাঁড়াতে দেখিস না নিজের বাবাকে? হাতে অফিসের ব্যাগ, গোপন টিফিন বাক্স, ঘেমো জামা, ভাঙা মুখ – দেখতে পাসনা? মন কোথায় থাকে? ঐ মেয়েগুলোর দিকে? যারা তোর সঙ্গে পড়তে আসে? ওরা তোকে পাত্তা দেবে? ভুলেও ভাবিস না! ওরা কত বড়লোক! তোকে পাত্তা পেতে হলে থাকতে হবে বিদেশে, ফরেনে এন আর আই হতে হবে! এন আর আই, এন আর আই! তবেই ম্যাজিক দেখবি কবিসাহিত্যিক থেকে মন্ত্রী অব্দি একডাকে চেনে আমাদেরও নিয়ে যাবি, তোর মাকে, আমাকে মাঝে মাঝে রাখবি নিজের কাছে এনে তার জন্য প্রথম হওয়া দরকার প্রথমে তাহলেই ছবি ছাপবে খবর কাগজ আরো দরজা খুলে যাবে, আরো পাঁচ আরো পাঁচ আরো আরো পাঁচ পাঁচ পাঁচ করেই বাড়বে, অন্য দিকে মন দিস না, বাঁচবি তো বাঁচার মত বাঁচ! না বাপী না, না না বাপী, আমি মন দিই না কোনোদিকে না বাপী না, না না আমি তাকাই না মেয়েদের দিকে ওরা তো পাশেই বসে, কেমন সুগন্ধ আসে, কথা বলে, না না বাপী পড়ার কথাই দেখি না, উত্তর দিই, নোট দিই নোট নিই যেতে আসতে পথে ঘাটে কত ছেলে মেয়ে গল্প করে না বাপী না, আমি মেয়েদের সঙ্গে মিশতে যাই না কখোনো যেতে আসতে দেখতে পাই কাদা মেখে কত ছেলে বল খেলছে মাঠে কত সব দুষ্টু ছেলে পার্কে প্রজাপতি ধরছে চাকা বা ডাঙ্গুলি খেলছে কত ছোটোলোক না, আমি খেলতে যাই না কখোনো খেলতে যাইনি। না আমার বন্ধু নেই না বাপী না, একজন আছে, অপু, একক্লাসে পড়ে ও বলে যে ওর বাবাও বলেছে প্রথম হতে বলেছে, কাগজে ছবি, ওর বাবা, ওকে …. হ্যাঁ বাপী হ্যা, না না বাপী, অপু বলেছে পড়াশোনা হয়নি একদম বলেছে ও ব্যাক পাবে, ব্যাক পেলে ও বলেছে, বাড়িতে কোথায় বাথরুম সাফ করার অ্যাসিড আছে ও জানে, হ্যাঁ বাপী হ্যা, ও বলেছে, উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..”আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
রূপক
আজ কী নিশ্চিত কী বিদ্যুৎ কী হরিণ এই দৌড় কী প্রান্তর, কী উড়ে যাওয়া ধুলো এই হাত কী ময়ূর এই নৃত্য কী কূপ কী বন্ধ কী জিভ-বেরিয়ে-পড়া এই ঈর্ষা কী অবধারিত কবর সব গর্ত আর পশ্চাদ্বাবনরত পিশাচদের কী হঠাৎ তলিয়ে যাওয়া আজ কী সম্রাজ্ঞী এই ছন্দ শয়তানও যাকে কেনবার কথা কল্পনা করে না
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
তুমি ছাড়া একা-একা কী করে গীতবিতান খুলি? এই গান নয়,ওই গান ওই গান নয়,এই গানএইভাবে, গাওয়া নয়,শুধু গান পড়ার বাগানক্রমশ দুপুর থেকে এ খেলায় গড়াত বিকেল কখন যে এসেছে গোধূলিপুরনো দুপুর আজ পুড়ে মরে গেছে বাতাসে বাতাসে ওড়ে সেইসব গানের খেলার ভস্ম আর ধূলি
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
তোমার হাসির শুভ্র রঙের বাতাসে নিজেই তো আলো হয়ে উঠেছে একজনসে বোঝেনি ওই রং এত ক্ষণস্থায়ী হতে পারেআলো হতে পারে এত দ্রুত অস্তগামীপরাজয়,পতন ও অনিশ্চয়তার হাতে ধরা পড়ে সেইজন চেয়ে আছে সম্পর্কের ভাঙন-নিশীথেযে-সম্পর্ক ফিরে আসবে না কোনও বর্ষা,কোনও গ্রীষ্ম,শীতে...
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে? আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে। চলে যায় দিন আমাদের অসুখে ধারদেনাতে রাত্তিরে দুভায়ে মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে। সবদিন হয়না বাজার, হলে হয় মাত্রাছাড়া - বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা। কিন্তু পুঁতব কোথায়? ফুল কি হবেই তাতে? সে অনেক পরের কথা টান দিই গঞ্জিকাতে। আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দু : খ করে? আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে। মাঝে মাঝে চলেও না দিন বাড়ি ফিরি দুপুররাতে ; খেতে বসে রাগ চড়ে যায় নুন নেই ঠান্ডা ভাতে। রাগ চড়ে মাথায় আমার আমি তার মাথায় চড়ি, বাপব্যাটা দুভায়ে মিলে সারা পাড়া মাথায় করি। করি তো কার তাতে কী? আমরা তো সামান্য লোক। আমাদের ভাতের পাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
.         মেঘ বলতে আপত্তি কি ? .           বেশ, বলতে পরি .        ছাদের ওপর মেঘ দাঁড়াতো .           ফুলপিসিমার বাড়ি .          গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন .          তখন মানে ? কবে ? আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে .          ছাদের থেকে হাতছানি দিতো .          ক্যারাম খেলবি ? … আয় … .   সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায় .           সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয় .             হ্যাঁ, জোচ্চুরি হতো আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত।.    ঘুরিয়ে দিতে জানতো খেলা শক্ত ঘুঁটি পেলে .   জায়গা মত সরিয়ে নিতো আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে শুধু আঙ্গুল ? … বোর্ডের উপর লম্বা ফ্রকের ঝুল .   ঝপাং ফেলে ঘটিয়ে দিতো ঘুঁটির দিক ভুল .        এই এখানে … না ওখানে .. .           এই এইটা না ঐটা .      ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে নিলো ঘুঁটির বাক্সটা .           ঘুঁটির ও সেই প্রথম মরণ .              প্রথম মরা মানে ? বুঝবে শুধু তারাই … যারা ক্যারাম খেলা জানে।চলেও গেলো কদিন পরে .. মেঘ যেমন যায় কাঠফাটা রোদ দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘের জায়গায় খেলা শেখাও, খেলা শেখাও, হাপিত্যেস কাক কলসিতে ঠোঁট ডুবিয়ে ছিলো, জল তো পুড়ে খাক খাক হওয়া সেই কলসি আবার পরের বছর জলে … .        ভরল কেমন তোমায় ? … .       ধ্যাত্, সেসব কি কেউ বলে ? ….   আত্মীয় হয় .. আত্মীয় হয় ? আত্মীয় না ছাই .    সত্যি করে বল এবার, সব জানতে চাই দু এক ক্লাস এর বয়স বেশি, গ্রীষ্ম ছুটি হলে ঘুরেও গেছে কয়েক বছর, এই জানে সক্কলে আজকে দগ্ধ গ্রীষ্ম আমার তোমায় বলতে পারি মেঘ দেখতাম, ছাদের ঘরে, ফুলপিসিমার বাড়ি।কবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুন.         মেঘ বলতে আপত্তি কি ? .           বেশ, বলতে পরি .        ছাদের ওপর মেঘ দাঁড়াতো .           ফুলপিসিমার বাড়ি .          গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন .          তখন মানে ? কবে ? আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে .          ছাদের থেকে হাতছানি দিতো .          ক্যারাম খেলবি ? … আয় … .   সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায় .           সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয় .             হ্যাঁ, জোচ্চুরি হতো আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত।.    ঘুরিয়ে দিতে জানতো খেলা শক্ত ঘুঁটি পেলে .   জায়গা মত সরিয়ে নিতো আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে শুধু আঙ্গুল ? … বোর্ডের উপর লম্বা ফ্রকের ঝুল .   ঝপাং ফেলে ঘটিয়ে দিতো ঘুঁটির দিক ভুল .        এই এখানে … না ওখানে .. .           এই এইটা না ঐটা .      ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে নিলো ঘুঁটির বাক্সটা .           ঘুঁটির ও সেই প্রথম মরণ .              প্রথম মরা মানে ? বুঝবে শুধু তারাই … যারা ক্যারাম খেলা জানে।চলেও গেলো কদিন পরে .. মেঘ যেমন যায় কাঠফাটা রোদ দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘের জায়গায় খেলা শেখাও, খেলা শেখাও, হাপিত্যেস কাক কলসিতে ঠোঁট ডুবিয়ে ছিলো, জল তো পুড়ে খাক খাক হওয়া সেই কলসি আবার পরের বছর জলে … .        ভরল কেমন তোমায় ? … .       ধ্যাত্, সেসব কি কেউ বলে ? ….   আত্মীয় হয় .. আত্মীয় হয় ? আত্মীয় না ছাই .    সত্যি করে বল এবার, সব জানতে চাই দু এক ক্লাস এর বয়স বেশি, গ্রীষ্ম ছুটি হলে ঘুরেও গেছে কয়েক বছর, এই জানে সক্কলে আজকে দগ্ধ গ্রীষ্ম আমার তোমায় বলতে পারি মেঘ দেখতাম, ছাদের ঘরে, ফুলপিসিমার বাড়ি।কবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুন
জয় গোস্বামী
রূপক
তুমি কি বিশ্বাসহন্তা? না, তুমি বিশ্বাসী? তোমার পিছনে ঘুরছে জাঁতা ও আগুনচক্র তোমার সম্মুখে উড়ছে সোনার পতঙ্গ আর ডানামেলা বাঁশি… মাঝখানে অশ্বত্থগাছ। মাঝখানে দড়ি আর ফাঁসি।
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
মা এসে দাঁড়ায় জানালায় নিম্নে স্রোত, নদী জল থেকে লাফিয়ে উঠছে এক একটা আগুনজ্বলা সাপ আমি সে-নদীর থেকে তুলে নিতে আসি আমি শিকলবাঁধা বাঁশি আকাশের উঁচু জানলায় মা এসে দাঁড়ায় সরে যায়।
জয় গোস্বামী
রূপক
ভাঙা বাড়ি। চারিদিকে ঘাস। এখানে কি কেউ বাস করে? জড়বুদ্ধি ক্রোধ, হাহাকার জমে জমে পিণ্ড হয় ঘরে বন্ধু না–বন্ধুর জ্যান্ত লাশ হাত নাড়ে জানলার ভিতরে জানলার এপারে লম্বা ঘাস পোকামাকড়ের ঝাঁক চলাচল করে!
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
শরীর তো আছে। কিন্তু শরীরের মধ্যে আর অস্থিগুলি নেই। নরম উলের বল গড়িয়ে চলেছি পা দিয়ে যে দিকে মারবে,সেদিকেই যাব অগ্নিকুন্ডে গিয়ে পড়লে হতভম্ব বসে থাকব।বলব না : জ্বলেছি।
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
আর কারো ময়ূর যাবে না আমার সম্পূর্ণ খাতা–সাপ এবার যে ‘দ’ আকার বাজ পড়ে, তাতে সাপগুলো দগ্ধে পুড়ে ঝলসে এঁকেবেঁকে জীবন পেয়েছে ওদের আমি খালে বিলে পাহাড়ে জঙ্গলে ছেড়ে দিই, ওদেরকে দেখে ময়ুরেরা ধড়ফড় দৌড়য় আর দেহ থেকে শত শত চোখ খসে পড়ে রাত্রিবেলা আমার খাতায় মাথা তোলে হানাবাড়ি, চাঁদ দেখি তার ছাদে ও পাঁচিলে ঝটপট লাফিয়ে উঠছে ওইসব ঝাঁঝরা ময়ূর
জয় গোস্বামী
রূপক
অন্ধকার আকাশবাতি এই সড়কে নয়ন ফাটল, খাদ, গর্ত–সব ধসে পড়ার সুযোগ পার ক’রে আর মাটির ওপর ফুটে বেরোনো দাঁত ব্যর্থ ক’রে, নিশিজাগর, জলের নীচে শয়ন! জলে তৈরী সড়ক, তাতে আকাশবাতি ফেলে রাস্তা দ্যাখে অন্ধ–পাশে এক সন্ধ্যাকাশ দুই সঙ্গী হাঁটে, তাদের গমনপথ থেকে কাঁটা, কামড়, গরল আদি গুপ্তকীট নাশ!
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
চোখ, চলে গিয়েছিল, অন্যের প্রেমিকা, তার পায়ে। যখন, অসাবধানে, সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি— বাইরে নেমেছে বৃষ্টি। লন্ঠন নামানো আছে টেবিলের নীচে, অন্ধকারে মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে লুকোনো পায়ের ফর্সা আভা…অন্যায় চোখের নয়। না তাকিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। সত্যিই ছিল না? কেন?—হুহু করে বৃষ্টিছাট ঢুকে আসে ঘরে সত্যিই ছিল না? কেন?—কাঁটাতারে ঝাঁপায় ফুলগাছ সত্যিই ছিল না? কেন?—অনধিকারীর সামনে থেকেসমস্ত লুকিয়ে নেয় নকশা-কাটা লেসের ঝালর… এখন থেমেছে বৃষ্টি। এখন এ-ঘর থেকে উঠে গেছে সেও। শুধু, ফিরে আসছে হাওয়া। শুধু, এক অক্ষমের চোখের মতন মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রচোখ, চলে গিয়েছিল, অন্যের প্রেমিকা, তার পায়ে। যখন, অসাবধানে, সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি— বাইরে নেমেছে বৃষ্টি। লন্ঠন নামানো আছে টেবিলের নীচে, অন্ধকারে মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে লুকোনো পায়ের ফর্সা আভা…অন্যায় চোখের নয়। না তাকিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। সত্যিই ছিল না? কেন?—হুহু করে বৃষ্টিছাট ঢুকে আসে ঘরে সত্যিই ছিল না? কেন?—কাঁটাতারে ঝাঁপায় ফুলগাছ সত্যিই ছিল না? কেন?—অনধিকারীর সামনে থেকেসমস্ত লুকিয়ে নেয় নকশা-কাটা লেসের ঝালর… এখন থেমেছে বৃষ্টি। এখন এ-ঘর থেকে উঠে গেছে সেও। শুধু, ফিরে আসছে হাওয়া। শুধু, এক অক্ষমের চোখের মতন মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রচোখ, চলে গিয়েছিল, অন্যের প্রেমিকা, তার পায়ে। যখন, অসাবধানে, সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি— বাইরে নেমেছে বৃষ্টি। লন্ঠন নামানো আছে টেবিলের নীচে, অন্ধকারে মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে লুকোনো পায়ের ফর্সা আভা…অন্যায় চোখের নয়। না তাকিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। সত্যিই ছিল না? কেন?—হুহু করে বৃষ্টিছাট ঢুকে আসে ঘরে সত্যিই ছিল না? কেন?—কাঁটাতারে ঝাঁপায় ফুলগাছ সত্যিই ছিল না? কেন?—অনধিকারীর সামনে থেকেসমস্ত লুকিয়ে নেয় নকশা-কাটা লেসের ঝালর… এখন থেমেছে বৃষ্টি। এখন এ-ঘর থেকে উঠে গেছে সেও। শুধু, ফিরে আসছে হাওয়া। শুধু, এক অক্ষমের চোখের মতন মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএবার লক্ষ্মীশ্রী মুছে গেছে লেগেছে কি তীব্র রূপটান এইবার পথে বেরোলেই সকলের চক্ষু টানটানবাড়ি ফিরে সেই এক সংসার সেই এক সাধারণ স্বামী আজ শান্ত, কাল উদাসীন বই নিয়ে আছে তো আছেই অভিযোগ করাই বোকামীঅবশ্য মানুষটা ভালোই নেশা নেই, ঠিক সময়ে ফেরে অসুখ হলে উতলাও হয় ছুটি নেয়, সেবা যত্ন করে আমি ছাড়া অন্যকে জানে না তাতেই কি সব হয়, বলুন ?সব কিসে হয় মা জননী ? বলো সে-কারণগুলি খুঁজি এই বাড়ি ছাড়া অন্য বাড়ি গেলে সব পেয়ে যেতে বুঝি ?সারাদিন সেই এক সংসার সেই এক জানালা আর ছাদ কাজের লোকের তদারকি ন’টাও ও বেরিয়ে গেলেই সমস্যা ও স্মৃতিকথা-সহ সেই একই শ্বশুর শাশুড়িসে কবে কলেজবেলা ছিল ছিল কত সাইকেল-যুবক তাদের ফিরিয়ে দেওয়া ছিল সুন্দর ফিরিয়ে-দেওয়াগুলি আজ মনে পড়ে কি পড়ে না আজ বুঝি কুড়িতেই বুড়ি !কুড়ি নয় তিনের কোঠায় । এইবার ঝরে যাবে ধার— দিন, বুঝি দিন চলে গেল চোখ থেকে মুগ্ধতা পাবার । কদিন, কয়েকদিন পরে কেউ যদি না তাকায় আর ?আজ আরও ছোট হোক চুল খাটো হোক অঙ্গের বসন আরো যত্নে মাজা হোক ত্বক আরো তীব্র বাঁকা হোক ভুরু এইবার পথে বেরোলেই কী জিনিস বেরিয়েছে, গুরু !এইতো লক্ষ্মীশ্রী মুছে গেছে আজ থেকে জেল্লা মার-মার আজ থেকে স্বাধীনতা জারি কাল ছিলে বধুমাতা, আজ নারীমাংস, নারীমাংস, নারী…পথে পথে সহস্র পুরুষ মনে মনে নোংরা করবে তোকে তাই নিয়ে অবুঝের মতো গর্ব হবে তোর, হতভাগীআমি কবি, দুর্বল মানুষ কী ভাবে বাঁচাব তোকে, ভাবি… চোখ, চলে গিয়েছিল, অন্যের প্রেমিকা, তার পায়ে। যখন, অসাবধানে, সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি— বাইরে নেমেছে বৃষ্টি। লন্ঠন নামানো আছে টেবিলের নীচে, অন্ধকারে মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে লুকোনো পায়ের ফর্সা আভা…অন্যায় চোখের নয়। না তাকিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। সত্যিই ছিল না? কেন?—হুহু করে বৃষ্টিছাট ঢুকে আসে ঘরে সত্যিই ছিল না? কেন?—কাঁটাতারে ঝাঁপায় ফুলগাছ সত্যিই ছিল না? কেন?—অনধিকারীর সামনে থেকেসমস্ত লুকিয়ে নেয় নকশা-কাটা লেসের ঝালর… এখন থেমেছে বৃষ্টি। এখন এ-ঘর থেকে উঠে গেছে সেও। শুধু, ফিরে আসছে হাওয়া। শুধু, এক অক্ষমের চোখের মতন মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএবার লক্ষ্মীশ্রী মুছে গেছে লেগেছে কি তীব্র রূপটান এইবার পথে বেরোলেই সকলের চক্ষু টানটানবাড়ি ফিরে সেই এক সংসার সেই এক সাধারণ স্বামী আজ শান্ত, কাল উদাসীন বই নিয়ে আছে তো আছেই অভিযোগ করাই বোকামীঅবশ্য মানুষটা ভালোই নেশা নেই, ঠিক সময়ে ফেরে অসুখ হলে উতলাও হয় ছুটি নেয়, সেবা যত্ন করে আমি ছাড়া অন্যকে জানে না তাতেই কি সব হয়, বলুন ?সব কিসে হয় মা জননী ? বলো সে-কারণগুলি খুঁজি এই বাড়ি ছাড়া অন্য বাড়ি গেলে সব পেয়ে যেতে বুঝি ?সারাদিন সেই এক সংসার সেই এক জানালা আর ছাদ কাজের লোকের তদারকি ন’টাও ও বেরিয়ে গেলেই সমস্যা ও স্মৃতিকথা-সহ সেই একই শ্বশুর শাশুড়িসে কবে কলেজবেলা ছিল ছিল কত সাইকেল-যুবক তাদের ফিরিয়ে দেওয়া ছিল সুন্দর ফিরিয়ে-দেওয়াগুলি আজ মনে পড়ে কি পড়ে না আজ বুঝি কুড়িতেই বুড়ি !কুড়ি নয় তিনের কোঠায় । এইবার ঝরে যাবে ধার— দিন, বুঝি দিন চলে গেল চোখ থেকে মুগ্ধতা পাবার । কদিন, কয়েকদিন পরে কেউ যদি না তাকায় আর ?আজ আরও ছোট হোক চুল খাটো হোক অঙ্গের বসন আরো যত্নে মাজা হোক ত্বক আরো তীব্র বাঁকা হোক ভুরু এইবার পথে বেরোলেই কী জিনিস বেরিয়েছে, গুরু !এইতো লক্ষ্মীশ্রী মুছে গেছে আজ থেকে জেল্লা মার-মার আজ থেকে স্বাধীনতা জারি কাল ছিলে বধুমাতা, আজ নারীমাংস, নারীমাংস, নারী…পথে পথে সহস্র পুরুষ মনে মনে নোংরা করবে তোকে তাই নিয়ে অবুঝের মতো গর্ব হবে তোর, হতভাগীআমি কবি, দুর্বল মানুষ কী ভাবে বাঁচাব তোকে, ভাবি…
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
যত কটু বাক্য সব মুখ বুজে সয়ে গেছি,শুধু তুমি আছো বলে কত ঝড়-জলে খবর নিয়েছঃআমি ঠিক আছি কি না আজ বললেঃ সব কিছুই লষ্ট ফর এভার আমি সে-হারানোটুকু হাতে নিয়ে বসেছি এবার
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
এইখানে টান দাও এই এত ঠাণ্ডায় ওই কোলে ঠাই দাও সজনী ও সজনী দেখিতে না দেখিতে, কিলবিলে দিঘিতে আমাকে ডোবাল মম আত্মীয়স্বজনই আজ উঠে দেবী তোরে সকাতরে বলি হে অধমে খাওয়াও তব হাড়মাস গলিয়ে সঙ্গী ও সাথীরা, ছেলে-পিলে-নাতিরা পেট ফুলে উল্টিয়ে ছিল সবকজনই ওঠে আজ ঠ্যাংকাটা, কে উঠে ঘোড়ার মাথা কে ছেলে কে মেয়ে ওরা -অলিঙ্গ অযোনি শৃঙ্গী না শঙ্খিনী তুমি কি মানুষ নও? দেখি, হাত দিয়ে দেখি-এ কী, এত উষ্ণ! কী গরম কী গরম, আনন্দে হে চরম একাকার হয়ে যায় দিন-রাত-রজনী নয়দ্বার ফেটে পড়ে মাথায় নৃত্য করে ছ-জন্ম ন-জন্ম নয়-ছয়-জননী…..আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএইখানে টান দাও এই এত ঠাণ্ডায় ওই কোলে ঠাই দাও সজনী ও সজনী দেখিতে না দেখিতে, কিলবিলে দিঘিতে আমাকে ডোবাল মম আত্মীয়স্বজনই আজ উঠে দেবী তোরে সকাতরে বলি হে অধমে খাওয়াও তব হাড়মাস গলিয়ে সঙ্গী ও সাথীরা, ছেলে-পিলে-নাতিরা পেট ফুলে উল্টিয়ে ছিল সবকজনই ওঠে আজ ঠ্যাংকাটা, কে উঠে ঘোড়ার মাথা কে ছেলে কে মেয়ে ওরা -অলিঙ্গ অযোনি শৃঙ্গী না শঙ্খিনী তুমি কি মানুষ নও? দেখি, হাত দিয়ে দেখি-এ কী, এত উষ্ণ! কী গরম কী গরম, আনন্দে হে চরম একাকার হয়ে যায় দিন-রাত-রজনী নয়দ্বার ফেটে পড়ে মাথায় নৃত্য করে ছ-জন্ম ন-জন্ম নয়-ছয়-জননী…..আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএইখানে টান দাও এই এত ঠাণ্ডায় ওই কোলে ঠাই দাও সজনী ও সজনী দেখিতে না দেখিতে, কিলবিলে দিঘিতে আমাকে ডোবাল মম আত্মীয়স্বজনই আজ উঠে দেবী তোরে সকাতরে বলি হে অধমে খাওয়াও তব হাড়মাস গলিয়ে সঙ্গী ও সাথীরা, ছেলে-পিলে-নাতিরা পেট ফুলে উল্টিয়ে ছিল সবকজনই ওঠে আজ ঠ্যাংকাটা, কে উঠে ঘোড়ার মাথা কে ছেলে কে মেয়ে ওরা -অলিঙ্গ অযোনি শৃঙ্গী না শঙ্খিনী তুমি কি মানুষ নও? দেখি, হাত দিয়ে দেখি-এ কী, এত উষ্ণ! কী গরম কী গরম, আনন্দে হে চরম একাকার হয়ে যায় দিন-রাত-রজনী নয়দ্বার ফেটে পড়ে মাথায় নৃত্য করে ছ-জন্ম ন-জন্ম নয়-ছয়-জননী…..আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএইখানে টান দাও এই এত ঠাণ্ডায় ওই কোলে ঠাই দাও সজনী ও সজনী দেখিতে না দেখিতে, কিলবিলে দিঘিতে আমাকে ডোবাল মম আত্মীয়স্বজনই আজ উঠে দেবী তোরে সকাতরে বলি হে অধমে খাওয়াও তব হাড়মাস গলিয়ে সঙ্গী ও সাথীরা, ছেলে-পিলে-নাতিরা পেট ফুলে উল্টিয়ে ছিল সবকজনই ওঠে আজ ঠ্যাংকাটা, কে উঠে ঘোড়ার মাথা কে ছেলে কে মেয়ে ওরা -অলিঙ্গ অযোনি শৃঙ্গী না শঙ্খিনী তুমি কি মানুষ নও? দেখি, হাত দিয়ে দেখি-এ কী, এত উষ্ণ! কী গরম কী গরম, আনন্দে হে চরম একাকার হয়ে যায় দিন-রাত-রজনী নয়দ্বার ফেটে পড়ে মাথায় নৃত্য করে ছ-জন্ম ন-জন্ম নয়-ছয়-জননী…..আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলেকরো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করোকরেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি ভেসে যাচ্ছিল–ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে; –’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলেকবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।।কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুনঅতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলেকরো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করোকরেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি ভেসে যাচ্ছিল–ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে; –’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলেকবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।।কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
১ দলে দলে মোটর বাইকে ঢুকে পড়ে কারা ঢুকে পড়ে ভোর বেলা কারা ঢুকে পড়ে জানা যায় না কিন্তু তারই পরে এ গ্রামে, ও গ্রামে, ঘরে ঘরে অবাধে কৃষক-রক্ত ঝরে জাগ্রত কৃষক রক্ত ঝরে ২ অস্ত্র প্রয়োগের অধিকারী তুমি আর তোমার ক্যাডার আমরা শুধু খুন হতে পারি মুখ বুজে খুন হতে পারি এই একমাত্র অধ
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
রাত্রে অসম্ভব ভয় করে মনে পড়ে তোমাকে প্রবলপ্রবল প্রবলগত আট বছরের প্রত্যেকটা মাধুর্যের দিন ফিরে এসে মন ছিঁড়ে খায়কী করে সমস্তটুকু মুছে ফেলব বলো?তোমার প্রেমিক,তিনি আমাকে কি সাহায্য করবেন তোমারই মতন?ওষুধের স্ট্রিপ শেষ,চোখ খুলে বসে থাকি একা বিছানায়----রাত্রি কেটে যায়
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
আমি একটা ভারী বোঝা।তুমি বয়ে চলেছিলে আমায়। আমি কিছু বুঝিনি তখন। যখন সটান ছুড়ে ফেললে আস্তাকুঁড়ে তখন বুঝলাম।জঞ্জাল!জঞ্জাল!জঞ্জালে আগুন দিল কারা?ঘুরে ঘুরে ধোঁয়া উঠছে আজ শেষ-হওয়া সম্পর্ক পুড়ে পুড়ে...
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
অন্ধ চলেছেন। খঞ্জ, চলেছেন। লাঠি পুরনো বন্ধুর মতো চলেছে তাঁদের সঙ্গে। হাত কাটা। ন্যাড়া মাথা। ঘেয়ো। অষ্টাবক্র। ব্যান্ডেজ জড়ানো চাকাঅলা কাঠের বাক্সের মধ্যে বসা-- সকলকে নিয়ে এই ধীরগতি মিছিলও চলেছে অতিকায় মেঘের চাঙড় ফেটে ফেটে গনগনে অস্তরশ্মি বেরোচ্ছে তখন ঢাল বেয়ে ঢাল বেয়ে সকলেই ওই চুল্লির ভিতরে নেমে যেতে ব্যান্ডেজ, কাপড়, কাঠ, চাকা, ক্ষয়গ্রস্ত হাড়, আর খণ্ড খণ্ড না-মেটা বাসনা কতরকমের সব রঙিন পালক হয়ে ছিটকে ছিটকে উঠেছে আকাশে আমলকীতলার মাঠে, এখনো একেকদিন, সেইসব রঙ ভেসে আসে
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
কীভাবে এলাম এই শহরে, সে মস্ত ইতিহাস! হামাগুড়ি দিয়ে আর ট্রেনের পিছনে ট্রেন ধরে রেললাইনে হাতেপায়ে তালা ও শিকল বেঁধে শুয়ে ট্রেন এসে পড়ামাত্র চক্ষের নিমিষে ড্রাইভারের কেবিনের জানলা দিয়ে জনতার প্রতি হাত নেড়ে টুপির ভেতর থেকে পায়রা খরগোশ ধরে, ছেড়ে, মাথার এদিক দিয়ে রড ঢুকিয়ে ওদিকে বার করে সম্মোহন করে নিজ সহকারিণীকে বাক্সে ভরে সে-বাক্সের চারদিকে ঢুকিয়ে ষোলোটা তরোয়াল টুং টাং লাইটার জ্বেলে বাক্সটি পুড়িয়ে ছাই করে উড়ো মন্ত্র বলতে বলতে নেমে গিয়ে নিজে সে-মেয়েকে দর্শক আসন থেকে বাহু ধরে মঞ্চে তুলে এনে ম্যাজিকে প্রমাণ করে আমি হচ্ছি পয়লা নম্বর তবেই শেষমেষ ডেকে জায়গা দিল আমাকে, শহর। এখন ম্যাজিকই ধ্যান, জ্ঞান, বুদ্ধি, বাঁচামরা পেশা ভোর থেকে হাতসাফাই, নিজের জিভ কেটে জোড়া দেওয়া সন্ধ্যায় হাজির হওয়া মঞ্চে মঞ্চে ভরাভর্তি শো-এ রাত্রিবেলা বাড়ি আসা ধুঁকে ধুঁকে করতালি সয়ে ভোর থেকে প্র্যাকটিস শুরু, প্রত্যহ দাঁত দিয়ে ওই কামড়ানো বুলেটে ধরা প্রাণ একবার ফসকালে শেষ, মনে রেখো, ও ম্যাজিশিয়ান!
জয় গোস্বামী
রূপক
খটখট লাফাঝাঁপি, খাট ও টেবিল ঘিরে বাঁধ-- মুখ নিচু ক'রে ওরা মেঝেতে স্ফুলিঙ্গ পান করে পা নামাই খাট থেকে--মোজাইকে সূর্য দেখা দেয় রক্তাভ কটাহে দু পা, ক্রুশে বেঁধা দুটি হাতে ডানার ফোয়ারা আমি, জানলা দিয়ে বেরিয়ে এলাম নীচে দূর মর্ত্যলোকে--কাঠের মহিষ, ঘোড়া, কাঠের মেষকূল তাদের পায়ের নীচে ঘূর্ণমান--রক্তবর্ণ লোহার প্রান্তর
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
কী বুঝেছে সে-মেয়েটি ? সে বুঝেছে রাজুমামা মায়ের প্রেমিক। কী শুনেছে সে-মেয়েটি ? সে শুনেছে মায়ের শীৎকার। কী পেয়েছে সে-মেয়েটি ?–সে পেয়েছে জন্মদিন ? চুড়িদার, আলুকাবলি–কু-ইঙ্গিত মামাতো দাদার। সে খুঁজেছে ক্লাসনোট, সাজেশন– সে ঠেলেছে বইয়ের পাহাড় পরীক্ষা, পরীক্ষা সামনে–দিনে পড়া, রাতে পড়া– ও পাশের ঘর অন্ধকার অন্ধকারে সে শুনেছে চাপা ঝগড়া, দাঁত নখ, ছিন্ন ভিন্ন মা আর বাবার।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
ফাল্গুনের ক্ষত, যাও, অন্ধকারে পায়ে কুশ ফুটে তারা চিনে চিনে ফিরে এসো । এরপর ক্ষুদ্ধ হিম শুরু হয়ে যাবে এই শুয়ে থাকো পুরনো মরুতে । সারারাত্রি জেগে তুমি তৈরি করে নেবে না পিদিম ? কারো পা তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে, আজ এই জলে তার একগাছি চুলও যদি ভেসে থাকে নেমে তাই ধরে ধরে তলায় সবুজ দেশ কাকে বলে ‘ছোটকাকী ফিরে এসো ঘরে ?’ কপালে জ্বলন্ত টিকলি, প্রায় সব খুলে রেখে লুকিয়ে সাঁতার সেও তো দিয়েছে আর তেমনই লুকিয়ে তুমি ওই শিরীষের ফাঁক দিয়ে দেখেছিলে সোনামাছ । চলে গেছে বেড়া গায়ে গায়ে ফাল্গুনের ক্ষত যাও অন্ধকারে কুশ ফুটে পায়ে ফিরে এসো ; তারা চিনে চিনে দিন ঠিক করো মাঘের তিরিশে বন্যা বেশি হলে তুমি সেই কবে জেলে নৌকো ও-বাড়ির গেটে বেঁধে দিয়ে এসেছিলে ? মনে করবার আগে দূর থেকে চিতা নদীর ওপারে একা জ্বলে ওঠে । শুকনো পিণ্ডের দলা চেটে পালায় শৃগাল । তুমি চাইছো যে পিদিম আমি তৈরি করেছি তা । বলো কে তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে কবে চুলে তার মেখে দিলে বালি ? পা কিছু পাচ্ছে না, শুধু ঘোলা জল ঘোলা জল, পালাবার সমস্ত প্রণালী বাইরে ফেলে রেখে এসে দেখি আমি, ঘরে নেই কনে ! শয্যায় জ্বলন্ত টিকলি, অন্য কোণে ফুলের মুকুটে সামান্য সিঁদুর চিহ্ন । তবে এতদূর নামা ভুল ? এই রাতে তীরে উঠে তারা দেখে দেখে তাকে খুঁজে দেখো । নয়তো হঠাৎ কি কারণে হিম শুরু হয়ে যাবে বুঝতেও পারবে না । এই মরুর পুরনো খসখসে বাতাস এসে জানাচ্ছে এখন সেই ট্রাইসাইকেল ষোল বাই দুই ডি-তে এ-ঘরে ও-ঘর বেড়াতো যে-ছেলে ভাইকে পা ধরে তুলত জলভর্তি ড্রাম থেকে, তার কথা শোনো আজ এই ফাল্গুনরাতে । কী শুনবে ? দূরে কলাবাগানের ধারে লাল ফ্ল্যাগ নীল ফ্ল্যাগ রুবি ঘোষ ভিকট্রিস্ট্যান্ডে এসো । ওই পারে শ্মশানে ঘুমোচ্ছে লোক, চিতা নেই । এখন নদীর মধ্যে নামা উচিত হবে না, তবু উঁচু থেকে দেখা যাবে জলের তলায় মোরগেরা– তাদের ঠ্যাং বাঁধা, গলা উড়ে গেছে । নিচু ক্লাসে মেয়েটির সাথে তখন সে পোড়াত বাজি, আর কিছুদূরে উঁচু অন্ধকার জেল ককিয়ে উঠতো রাত্রে, এই কথা বুঝিয়ে, যে, এরা নিশ্বাস নেবে না আর । সেই সব দিনেই তো মেয়েটির মুখের ঘামতেল জ্বলেছে লজ্জায়, তুমি সামনে এলে । পাশাপাশি দেখতে না লাফানো শকুন দিনের বেলা ছিঁড়ে নিতো ছেলেদের শব থেকে মাংস আর জামা ? সে-সব ক্ষতেরা নেই । শুধু দাগ খাঁ খাঁ করছে চারদিকের রাতে । মাঠে আসলাম তার কারণ, এইবার তৈরী করেছি পিদিম । এবার দেহের চর্বি ঢেলে দিই ওতে । যতটুকু দাহ্যগুণ এখনো রয়েছে তাও ওই মৃত জ্বলে মেশবার আগেই দেশলাই জ্বেলে ধরিয়ে দি রক্ত হাড় চর্বি শেষবার… পরে যত খুশী ছাই মরুতে উড়ুক, আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না হিম ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রফাল্গুনের ক্ষত, যাও, অন্ধকারে পায়ে কুশ ফুটে তারা চিনে চিনে ফিরে এসো । এরপর ক্ষুদ্ধ হিম শুরু হয়ে যাবে এই শুয়ে থাকো পুরনো মরুতে । সারারাত্রি জেগে তুমি তৈরি করে নেবে না পিদিম ? কারো পা তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে, আজ এই জলে তার একগাছি চুলও যদি ভেসে থাকে নেমে তাই ধরে ধরে তলায় সবুজ দেশ কাকে বলে ‘ছোটকাকী ফিরে এসো ঘরে ?’ কপালে জ্বলন্ত টিকলি, প্রায় সব খুলে রেখে লুকিয়ে সাঁতার সেও তো দিয়েছে আর তেমনই লুকিয়ে তুমি ওই শিরীষের ফাঁক দিয়ে দেখেছিলে সোনামাছ । চলে গেছে বেড়া গায়ে গায়ে ফাল্গুনের ক্ষত যাও অন্ধকারে কুশ ফুটে পায়ে ফিরে এসো ; তারা চিনে চিনে দিন ঠিক করো মাঘের তিরিশে বন্যা বেশি হলে তুমি সেই কবে জেলে নৌকো ও-বাড়ির গেটে বেঁধে দিয়ে এসেছিলে ? মনে করবার আগে দূর থেকে চিতা নদীর ওপারে একা জ্বলে ওঠে । শুকনো পিণ্ডের দলা চেটে পালায় শৃগাল । তুমি চাইছো যে পিদিম আমি তৈরি করেছি তা । বলো কে তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে কবে চুলে তার মেখে দিলে বালি ? পা কিছু পাচ্ছে না, শুধু ঘোলা জল ঘোলা জল, পালাবার সমস্ত প্রণালী বাইরে ফেলে রেখে এসে দেখি আমি, ঘরে নেই কনে ! শয্যায় জ্বলন্ত টিকলি, অন্য কোণে ফুলের মুকুটে সামান্য সিঁদুর চিহ্ন । তবে এতদূর নামা ভুল ? এই রাতে তীরে উঠে তারা দেখে দেখে তাকে খুঁজে দেখো । নয়তো হঠাৎ কি কারণে হিম শুরু হয়ে যাবে বুঝতেও পারবে না । এই মরুর পুরনো খসখসে বাতাস এসে জানাচ্ছে এখন সেই ট্রাইসাইকেল ষোল বাই দুই ডি-তে এ-ঘরে ও-ঘর বেড়াতো যে-ছেলে ভাইকে পা ধরে তুলত জলভর্তি ড্রাম থেকে, তার কথা শোনো আজ এই ফাল্গুনরাতে । কী শুনবে ? দূরে কলাবাগানের ধারে লাল ফ্ল্যাগ নীল ফ্ল্যাগ রুবি ঘোষ ভিকট্রিস্ট্যান্ডে এসো । ওই পারে শ্মশানে ঘুমোচ্ছে লোক, চিতা নেই । এখন নদীর মধ্যে নামা উচিত হবে না, তবু উঁচু থেকে দেখা যাবে জলের তলায় মোরগেরা– তাদের ঠ্যাং বাঁধা, গলা উড়ে গেছে । নিচু ক্লাসে মেয়েটির সাথে তখন সে পোড়াত বাজি, আর কিছুদূরে উঁচু অন্ধকার জেল ককিয়ে উঠতো রাত্রে, এই কথা বুঝিয়ে, যে, এরা নিশ্বাস নেবে না আর । সেই সব দিনেই তো মেয়েটির মুখের ঘামতেল জ্বলেছে লজ্জায়, তুমি সামনে এলে । পাশাপাশি দেখতে না লাফানো শকুন দিনের বেলা ছিঁড়ে নিতো ছেলেদের শব থেকে মাংস আর জামা ? সে-সব ক্ষতেরা নেই । শুধু দাগ খাঁ খাঁ করছে চারদিকের রাতে । মাঠে আসলাম তার কারণ, এইবার তৈরী করেছি পিদিম । এবার দেহের চর্বি ঢেলে দিই ওতে । যতটুকু দাহ্যগুণ এখনো রয়েছে তাও ওই মৃত জ্বলে মেশবার আগেই দেশলাই জ্বেলে ধরিয়ে দি রক্ত হাড় চর্বি শেষবার… পরে যত খুশী ছাই মরুতে উড়ুক, আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না হিম ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রফাল্গুনের ক্ষত, যাও, অন্ধকারে পায়ে কুশ ফুটে তারা চিনে চিনে ফিরে এসো । এরপর ক্ষুদ্ধ হিম শুরু হয়ে যাবে এই শুয়ে থাকো পুরনো মরুতে । সারারাত্রি জেগে তুমি তৈরি করে নেবে না পিদিম ? কারো পা তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে, আজ এই জলে তার একগাছি চুলও যদি ভেসে থাকে নেমে তাই ধরে ধরে তলায় সবুজ দেশ কাকে বলে ‘ছোটকাকী ফিরে এসো ঘরে ?’ কপালে জ্বলন্ত টিকলি, প্রায় সব খুলে রেখে লুকিয়ে সাঁতার সেও তো দিয়েছে আর তেমনই লুকিয়ে তুমি ওই শিরীষের ফাঁক দিয়ে দেখেছিলে সোনামাছ । চলে গেছে বেড়া গায়ে গায়ে ফাল্গুনের ক্ষত যাও অন্ধকারে কুশ ফুটে পায়ে ফিরে এসো ; তারা চিনে চিনে দিন ঠিক করো মাঘের তিরিশে বন্যা বেশি হলে তুমি সেই কবে জেলে নৌকো ও-বাড়ির গেটে বেঁধে দিয়ে এসেছিলে ? মনে করবার আগে দূর থেকে চিতা নদীর ওপারে একা জ্বলে ওঠে । শুকনো পিণ্ডের দলা চেটে পালায় শৃগাল । তুমি চাইছো যে পিদিম আমি তৈরি করেছি তা । বলো কে তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে কবে চুলে তার মেখে দিলে বালি ? পা কিছু পাচ্ছে না, শুধু ঘোলা জল ঘোলা জল, পালাবার সমস্ত প্রণালী বাইরে ফেলে রেখে এসে দেখি আমি, ঘরে নেই কনে ! শয্যায় জ্বলন্ত টিকলি, অন্য কোণে ফুলের মুকুটে সামান্য সিঁদুর চিহ্ন । তবে এতদূর নামা ভুল ? এই রাতে তীরে উঠে তারা দেখে দেখে তাকে খুঁজে দেখো । নয়তো হঠাৎ কি কারণে হিম শুরু হয়ে যাবে বুঝতেও পারবে না । এই মরুর পুরনো খসখসে বাতাস এসে জানাচ্ছে এখন সেই ট্রাইসাইকেল ষোল বাই দুই ডি-তে এ-ঘরে ও-ঘর বেড়াতো যে-ছেলে ভাইকে পা ধরে তুলত জলভর্তি ড্রাম থেকে, তার কথা শোনো আজ এই ফাল্গুনরাতে । কী শুনবে ? দূরে কলাবাগানের ধারে লাল ফ্ল্যাগ নীল ফ্ল্যাগ রুবি ঘোষ ভিকট্রিস্ট্যান্ডে এসো । ওই পারে শ্মশানে ঘুমোচ্ছে লোক, চিতা নেই । এখন নদীর মধ্যে নামা উচিত হবে না, তবু উঁচু থেকে দেখা যাবে জলের তলায় মোরগেরা– তাদের ঠ্যাং বাঁধা, গলা উড়ে গেছে । নিচু ক্লাসে মেয়েটির সাথে তখন সে পোড়াত বাজি, আর কিছুদূরে উঁচু অন্ধকার জেল ককিয়ে উঠতো রাত্রে, এই কথা বুঝিয়ে, যে, এরা নিশ্বাস নেবে না আর । সেই সব দিনেই তো মেয়েটির মুখের ঘামতেল জ্বলেছে লজ্জায়, তুমি সামনে এলে । পাশাপাশি দেখতে না লাফানো শকুন দিনের বেলা ছিঁড়ে নিতো ছেলেদের শব থেকে মাংস আর জামা ? সে-সব ক্ষতেরা নেই । শুধু দাগ খাঁ খাঁ করছে চারদিকের রাতে । মাঠে আসলাম তার কারণ, এইবার তৈরী করেছি পিদিম । এবার দেহের চর্বি ঢেলে দিই ওতে । যতটুকু দাহ্যগুণ এখনো রয়েছে তাও ওই মৃত জ্বলে মেশবার আগেই দেশলাই জ্বেলে ধরিয়ে দি রক্ত হাড় চর্বি শেষবার… পরে যত খুশী ছাই মরুতে উড়ুক, আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না হিম ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রফাল্গুনের ক্ষত, যাও, অন্ধকারে পায়ে কুশ ফুটে তারা চিনে চিনে ফিরে এসো । এরপর ক্ষুদ্ধ হিম শুরু হয়ে যাবে এই শুয়ে থাকো পুরনো মরুতে । সারারাত্রি জেগে তুমি তৈরি করে নেবে না পিদিম ? কারো পা তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে, আজ এই জলে তার একগাছি চুলও যদি ভেসে থাকে নেমে তাই ধরে ধরে তলায় সবুজ দেশ কাকে বলে ‘ছোটকাকী ফিরে এসো ঘরে ?’ কপালে জ্বলন্ত টিকলি, প্রায় সব খুলে রেখে লুকিয়ে সাঁতার সেও তো দিয়েছে আর তেমনই লুকিয়ে তুমি ওই শিরীষের ফাঁক দিয়ে দেখেছিলে সোনামাছ । চলে গেছে বেড়া গায়ে গায়ে ফাল্গুনের ক্ষত যাও অন্ধকারে কুশ ফুটে পায়ে ফিরে এসো ; তারা চিনে চিনে দিন ঠিক করো মাঘের তিরিশে বন্যা বেশি হলে তুমি সেই কবে জেলে নৌকো ও-বাড়ির গেটে বেঁধে দিয়ে এসেছিলে ? মনে করবার আগে দূর থেকে চিতা নদীর ওপারে একা জ্বলে ওঠে । শুকনো পিণ্ডের দলা চেটে পালায় শৃগাল । তুমি চাইছো যে পিদিম আমি তৈরি করেছি তা । বলো কে তীরের বালি মাড়িয়ে দৌড়েছে কবে চুলে তার মেখে দিলে বালি ? পা কিছু পাচ্ছে না, শুধু ঘোলা জল ঘোলা জল, পালাবার সমস্ত প্রণালী বাইরে ফেলে রেখে এসে দেখি আমি, ঘরে নেই কনে ! শয্যায় জ্বলন্ত টিকলি, অন্য কোণে ফুলের মুকুটে সামান্য সিঁদুর চিহ্ন । তবে এতদূর নামা ভুল ? এই রাতে তীরে উঠে তারা দেখে দেখে তাকে খুঁজে দেখো । নয়তো হঠাৎ কি কারণে হিম শুরু হয়ে যাবে বুঝতেও পারবে না । এই মরুর পুরনো খসখসে বাতাস এসে জানাচ্ছে এখন সেই ট্রাইসাইকেল ষোল বাই দুই ডি-তে এ-ঘরে ও-ঘর বেড়াতো যে-ছেলে ভাইকে পা ধরে তুলত জলভর্তি ড্রাম থেকে, তার কথা শোনো আজ এই ফাল্গুনরাতে । কী শুনবে ? দূরে কলাবাগানের ধারে লাল ফ্ল্যাগ নীল ফ্ল্যাগ রুবি ঘোষ ভিকট্রিস্ট্যান্ডে এসো । ওই পারে শ্মশানে ঘুমোচ্ছে লোক, চিতা নেই । এখন নদীর মধ্যে নামা উচিত হবে না, তবু উঁচু থেকে দেখা যাবে জলের তলায় মোরগেরা– তাদের ঠ্যাং বাঁধা, গলা উড়ে গেছে । নিচু ক্লাসে মেয়েটির সাথে তখন সে পোড়াত বাজি, আর কিছুদূরে উঁচু অন্ধকার জেল ককিয়ে উঠতো রাত্রে, এই কথা বুঝিয়ে, যে, এরা নিশ্বাস নেবে না আর । সেই সব দিনেই তো মেয়েটির মুখের ঘামতেল জ্বলেছে লজ্জায়, তুমি সামনে এলে । পাশাপাশি দেখতে না লাফানো শকুন দিনের বেলা ছিঁড়ে নিতো ছেলেদের শব থেকে মাংস আর জামা ? সে-সব ক্ষতেরা নেই । শুধু দাগ খাঁ খাঁ করছে চারদিকের রাতে । মাঠে আসলাম তার কারণ, এইবার তৈরী করেছি পিদিম । এবার দেহের চর্বি ঢেলে দিই ওতে । যতটুকু দাহ্যগুণ এখনো রয়েছে তাও ওই মৃত জ্বলে মেশবার আগেই দেশলাই জ্বেলে ধরিয়ে দি রক্ত হাড় চর্বি শেষবার… পরে যত খুশী ছাই মরুতে উড়ুক, আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না হিম ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
রূপক
ছাদে জড়ভরত সন্তান। তার গলা লম্বা হয়ে জল খেতে যায় দূরের পুকুরে রাস্তায়, বাদাড়ে নিশি থেকে থেকে ডাকে শেষরাত্রে, মেঘের আলপথে একটি কঙ্কাল ফেরিওয়ালা হেঁকে যায়: চাই, দই চাই… ছাদে জড়ভরত সন্তান, তার খটখটে তেষ্টায় সঙ্গ দিতে পুকুরে মুখ দিয়ে আমি খাই– জলের বদলে রক্ত–খাই…
জয় গোস্বামী
ব্যঙ্গাত্মক
পরির পাশে পরির বোন, দাঁড়িয়ে আছে কতক্ষণ।জ্বর থেকে তো উঠল কাল, রোদের তাপে মুখটি লাল।লম্বা লাইন ইস্কুলের, দাও দারোয়ান গেট খুলে।পরির পাশে পরির মা-ও, বলছে, ঠাকুর রোদ কমাও,আবার অসুখ করবে ওর নষ্ট হবে একবছর।বয়স কত ? বয়ঃক্রম ? সেসব ভাবার সময় কম।ভর্তি হবার জন্য আজ, টেষ্টে বসাই পরির কাজ।পরি তো নয়, পরির বোন, পাঁচ বছরের কম এখন।এদিক তাকায়, ওদিক চায়; গোরু বসছে গাছতলায়একটা কুকুর দৌড়ে যায়, ট্যাক্সি গাড়ি পাশ কাটায়গাড়ি থামায় নীল পুলিশ… কী ভাবছিস রে ? কী ভাবছিস ?এ বি সি ডি, ওয়ান টু আর ভুল করিস না, খবরদার !ভুল করিস না লক্ষ্মীটি, ‘ছি’ দেবে কাকপক্ষিটি।ভুল করিস না, ধরছি পা’য় মা কী করে মুখ দেখায়।না যদি পাস অ্যাডমিশন, কোন চুলোতে যাই তখন।পাশের বাড়ির বাপটুও, দেখবি কেমন দেয় দুয়ো।চায় না তো মা আর কিছুই, নম্বর চায়-আনবি তুই।নাম হবে তোর খুব বড়, নামের পাশে নম্বরওবাড়তে বাড়তে সাতশো মন, না হবে তোর যতক্ষণদাঁড়িয়ে থাকবি, দাঁড়িয়ে থাক, লাল সাদা আর নীল পোশাক।পরির দিদি, পরির বোন কতক্ষণ আর কতক্ষণওই খুলেছে, ওই তো, চল, রোদ পোড়া সব পরির দলটুম্পি, টিমা, মম, টোকাই মাথায় মাথায় পিন ঢোকাই।ফুটকড়াই, ফুটকড়াই, ঠিক ডাটা ঠিক ফিড করাই।ব্যস, হয়েছে প্রোগ্রামিং, তিড়িং বিড়িং তিড়িং বিংবন্ধ এখন, জোর সে চল, কোর্সে কোর্সে এগিয়ে চলঊর্ধ গগনে বাজে মাদল মাথার ওপর যাঁতার কল ফুটফুটে সব ছাত্রীদল ছাত্রদল চল রে চল এই তো চাই, ফুটকড়াই।পরির পাশে পরির বোন, দাঁড়িয়ে আছে কতক্ষণ।জ্বর থেকে তো উঠল কাল, রোদের তাপে মুখটি লাল।লম্বা লাইন ইস্কুলের, দাও দারোয়ান গেট খুলে।পরির পাশে পরির মা-ও, বলছে, ঠাকুর রোদ কমাও,আবার অসুখ করবে ওর নষ্ট হবে একবছর।বয়স কত ? বয়ঃক্রম ? সেসব ভাবার সময় কম।ভর্তি হবার জন্য আজ, টেষ্টে বসাই পরির কাজ।পরি তো নয়, পরির বোন, পাঁচ বছরের কম এখন।এদিক তাকায়, ওদিক চায়; গোরু বসছে গাছতলায়একটা কুকুর দৌড়ে যায়, ট্যাক্সি গাড়ি পাশ কাটায়গাড়ি থামায় নীল পুলিশ… কী ভাবছিস রে ? কী ভাবছিস ?এ বি সি ডি, ওয়ান টু আর ভুল করিস না, খবরদার !ভুল করিস না লক্ষ্মীটি, ‘ছি’ দেবে কাকপক্ষিটি।ভুল করিস না, ধরছি পা’য় মা কী করে মুখ দেখায়।না যদি পাস অ্যাডমিশন, কোন চুলোতে যাই তখন।পাশের বাড়ির বাপটুও, দেখবি কেমন দেয় দুয়ো।চায় না তো মা আর কিছুই, নম্বর চায়-আনবি তুই।নাম হবে তোর খুব বড়, নামের পাশে নম্বরওবাড়তে বাড়তে সাতশো মন, না হবে তোর যতক্ষণদাঁড়িয়ে থাকবি, দাঁড়িয়ে থাক, লাল সাদা আর নীল পোশাক।পরির দিদি, পরির বোন কতক্ষণ আর কতক্ষণওই খুলেছে, ওই তো, চল, রোদ পোড়া সব পরির দলটুম্পি, টিমা, মম, টোকাই মাথায় মাথায় পিন ঢোকাই।ফুটকড়াই, ফুটকড়াই, ঠিক ডাটা ঠিক ফিড করাই।ব্যস, হয়েছে প্রোগ্রামিং, তিড়িং বিড়িং তিড়িং বিংবন্ধ এখন, জোর সে চল, কোর্সে কোর্সে এগিয়ে চলঊর্ধ গগনে বাজে মাদল মাথার ওপর যাঁতার কল ফুটফুটে সব ছাত্রীদল ছাত্রদল চল রে চল এই তো চাই, ফুটকড়াই।পরির পাশে পরির বোন, দাঁড়িয়ে আছে কতক্ষণ।জ্বর থেকে তো উঠল কাল, রোদের তাপে মুখটি লাল।লম্বা লাইন ইস্কুলের, দাও দারোয়ান গেট খুলে।পরির পাশে পরির মা-ও, বলছে, ঠাকুর রোদ কমাও,আবার অসুখ করবে ওর নষ্ট হবে একবছর।বয়স কত ? বয়ঃক্রম ? সেসব ভাবার সময় কম।ভর্তি হবার জন্য আজ, টেষ্টে বসাই পরির কাজ।পরি তো নয়, পরির বোন, পাঁচ বছরের কম এখন।এদিক তাকায়, ওদিক চায়; গোরু বসছে গাছতলায়একটা কুকুর দৌড়ে যায়, ট্যাক্সি গাড়ি পাশ কাটায়গাড়ি থামায় নীল পুলিশ… কী ভাবছিস রে ? কী ভাবছিস ?এ বি সি ডি, ওয়ান টু আর ভুল করিস না, খবরদার !ভুল করিস না লক্ষ্মীটি, ‘ছি’ দেবে কাকপক্ষিটি।ভুল করিস না, ধরছি পা’য় মা কী করে মুখ দেখায়।না যদি পাস অ্যাডমিশন, কোন চুলোতে যাই তখন।পাশের বাড়ির বাপটুও, দেখবি কেমন দেয় দুয়ো।চায় না তো মা আর কিছুই, নম্বর চায়-আনবি তুই।নাম হবে তোর খুব বড়, নামের পাশে নম্বরওবাড়তে বাড়তে সাতশো মন, না হবে তোর যতক্ষণদাঁড়িয়ে থাকবি, দাঁড়িয়ে থাক, লাল সাদা আর নীল পোশাক।পরির দিদি, পরির বোন কতক্ষণ আর কতক্ষণওই খুলেছে, ওই তো, চল, রোদ পোড়া সব পরির দলটুম্পি, টিমা, মম, টোকাই মাথায় মাথায় পিন ঢোকাই।ফুটকড়াই, ফুটকড়াই, ঠিক ডাটা ঠিক ফিড করাই।ব্যস, হয়েছে প্রোগ্রামিং, তিড়িং বিড়িং তিড়িং বিংবন্ধ এখন, জোর সে চল, কোর্সে কোর্সে এগিয়ে চলঊর্ধ গগনে বাজে মাদল মাথার ওপর যাঁতার কল ফুটফুটে সব ছাত্রীদল ছাত্রদল চল রে চল এই তো চাই, ফুটকড়াই।পরির পাশে পরির বোন, দাঁড়িয়ে আছে কতক্ষণ।জ্বর থেকে তো উঠল কাল, রোদের তাপে মুখটি লাল।লম্বা লাইন ইস্কুলের, দাও দারোয়ান গেট খুলে।পরির পাশে পরির মা-ও, বলছে, ঠাকুর রোদ কমাও,আবার অসুখ করবে ওর নষ্ট হবে একবছর।বয়স কত ? বয়ঃক্রম ? সেসব ভাবার সময় কম।ভর্তি হবার জন্য আজ, টেষ্টে বসাই পরির কাজ।পরি তো নয়, পরির বোন, পাঁচ বছরের কম এখন।এদিক তাকায়, ওদিক চায়; গোরু বসছে গাছতলায়একটা কুকুর দৌড়ে যায়, ট্যাক্সি গাড়ি পাশ কাটায়গাড়ি থামায় নীল পুলিশ… কী ভাবছিস রে ? কী ভাবছিস ?এ বি সি ডি, ওয়ান টু আর ভুল করিস না, খবরদার !ভুল করিস না লক্ষ্মীটি, ‘ছি’ দেবে কাকপক্ষিটি।ভুল করিস না, ধরছি পা’য় মা কী করে মুখ দেখায়।না যদি পাস অ্যাডমিশন, কোন চুলোতে যাই তখন।পাশের বাড়ির বাপটুও, দেখবি কেমন দেয় দুয়ো।চায় না তো মা আর কিছুই, নম্বর চায়-আনবি তুই।নাম হবে তোর খুব বড়, নামের পাশে নম্বরওবাড়তে বাড়তে সাতশো মন, না হবে তোর যতক্ষণদাঁড়িয়ে থাকবি, দাঁড়িয়ে থাক, লাল সাদা আর নীল পোশাক।পরির দিদি, পরির বোন কতক্ষণ আর কতক্ষণওই খুলেছে, ওই তো, চল, রোদ পোড়া সব পরির দলটুম্পি, টিমা, মম, টোকাই মাথায় মাথায় পিন ঢোকাই।ফুটকড়াই, ফুটকড়াই, ঠিক ডাটা ঠিক ফিড করাই।ব্যস, হয়েছে প্রোগ্রামিং, তিড়িং বিড়িং তিড়িং বিংবন্ধ এখন, জোর সে চল, কোর্সে কোর্সে এগিয়ে চলঊর্ধ গগনে বাজে মাদল মাথার ওপর যাঁতার কল ফুটফুটে সব ছাত্রীদল ছাত্রদল চল রে চল এই তো চাই, ফুটকড়াই।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
স্তুপের তলায় রাখো ঘাসলতাপাতা এনেছি বলির পশু, ছাগ সে ভুলে গিয়েছে তার গত শিরচ্ছেদ অথচ গলায় তার এখনো মালার মতো দাগ
জয় গোস্বামী
রূপক
গাছের জন্মান্ধ। দীপ, জন্ম থেকে গাছ। দীপজন্মে যাই আমি--চোখ বাঁধা-- মাথায় শিখার তীব্র নাচ।
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
যেভাবে বৃষ্টির জল তোড়ে বয়ে যায় ঢালুদিকে সেইভাবে, আমার জীবন আজ অধোগামী।সালোয়ার একটু উঁচু ক’রে তুমি সেই জল ভেঙে ভেঙে রাস্তা পার হয়ে গেলে— এত যত্নে, সাবধানে, যেন বা জলের গায়ে আঘাত না লাগে!পড়ন্ত জীবন শুধু মনে রাখবে অপরূপ চলে যাওয়াটিকে।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রযেভাবে বৃষ্টির জল তোড়ে বয়ে যায় ঢালুদিকে সেইভাবে, আমার জীবন আজ অধোগামী।সালোয়ার একটু উঁচু ক’রে তুমি সেই জল ভেঙে ভেঙে রাস্তা পার হয়ে গেলে— এত যত্নে, সাবধানে, যেন বা জলের গায়ে আঘাত না লাগে!পড়ন্ত জীবন শুধু মনে রাখবে অপরূপ চলে যাওয়াটিকে।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রযেভাবে বৃষ্টির জল তোড়ে বয়ে যায় ঢালুদিকে সেইভাবে, আমার জীবন আজ অধোগামী।সালোয়ার একটু উঁচু ক’রে তুমি সেই জল ভেঙে ভেঙে রাস্তা পার হয়ে গেলে— এত যত্নে, সাবধানে, যেন বা জলের গায়ে আঘাত না লাগে!পড়ন্ত জীবন শুধু মনে রাখবে অপরূপ চলে যাওয়াটিকে।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রযেভাবে বৃষ্টির জল তোড়ে বয়ে যায় ঢালুদিকে সেইভাবে, আমার জীবন আজ অধোগামী।সালোয়ার একটু উঁচু ক’রে তুমি সেই জল ভেঙে ভেঙে রাস্তা পার হয়ে গেলে— এত যত্নে, সাবধানে, যেন বা জলের গায়ে আঘাত না লাগে!পড়ন্ত জীবন শুধু মনে রাখবে অপরূপ চলে যাওয়াটিকে।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
রূপক
আমার বিদ্যুৎমাত্র আশা তার দিকে, রাত্রি হলে, ধীরে ধীরে মুখ ঘুরিয়েছে মেঘের পিছনে রাখা পুরোনো কামান কালো, গোল গলা দিয়ে উঠে আসে অগ্নিরঙ থুতু– বহুজনে পোড়ানো সম্মান কে আমার লেখা শোনে? এও রক্তমাখা ভগবান!
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
– …অনামিকা কই? কাজল কোনদিকে গেল? সায়ন কোথায়? পিছনে তাকিয়ে দেখি সঙ্গে কেউ নেই প্রান্তরের মধ্যে এক যূপকাষ্ঠ—অর্ধেক প্রোথিত— ধারে কাছে কোনও ধড় নেই মুণ্ডুরা উধাও । ধুলোয় শোওয়ানো আছে খাঁড়া । চেনে চেনে লাগে বড় । ইতি পূর্বে দেখা হয়েছে কি? সত্তর – একাত্তর – বাহাত্তর সালে এঁদের দেখেছি বটে । তারপর কি কোখাও দেখিনি? হ্যাঁ মনে পড়েছে । লালাবাজারে এই খাঁড়া ঝোলানো রয়েছে । যূপকাষ্ঠ আছে মহাকরণের বুদ্ধিঘরে ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র– …অনামিকা কই? কাজল কোনদিকে গেল? সায়ন কোথায়? পিছনে তাকিয়ে দেখি সঙ্গে কেউ নেই প্রান্তরের মধ্যে এক যূপকাষ্ঠ—অর্ধেক প্রোথিত— ধারে কাছে কোনও ধড় নেই মুণ্ডুরা উধাও । ধুলোয় শোওয়ানো আছে খাঁড়া । চেনে চেনে লাগে বড় । ইতি পূর্বে দেখা হয়েছে কি? সত্তর – একাত্তর – বাহাত্তর সালে এঁদের দেখেছি বটে । তারপর কি কোখাও দেখিনি? হ্যাঁ মনে পড়েছে । লালাবাজারে এই খাঁড়া ঝোলানো রয়েছে । যূপকাষ্ঠ আছে মহাকরণের বুদ্ধিঘরে ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র– …অনামিকা কই? কাজল কোনদিকে গেল? সায়ন কোথায়? পিছনে তাকিয়ে দেখি সঙ্গে কেউ নেই প্রান্তরের মধ্যে এক যূপকাষ্ঠ—অর্ধেক প্রোথিত— ধারে কাছে কোনও ধড় নেই মুণ্ডুরা উধাও । ধুলোয় শোওয়ানো আছে খাঁড়া । চেনে চেনে লাগে বড় । ইতি পূর্বে দেখা হয়েছে কি? সত্তর – একাত্তর – বাহাত্তর সালে এঁদের দেখেছি বটে । তারপর কি কোখাও দেখিনি? হ্যাঁ মনে পড়েছে । লালাবাজারে এই খাঁড়া ঝোলানো রয়েছে । যূপকাষ্ঠ আছে মহাকরণের বুদ্ধিঘরে ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র– …অনামিকা কই? কাজল কোনদিকে গেল? সায়ন কোথায়? পিছনে তাকিয়ে দেখি সঙ্গে কেউ নেই প্রান্তরের মধ্যে এক যূপকাষ্ঠ—অর্ধেক প্রোথিত— ধারে কাছে কোনও ধড় নেই মুণ্ডুরা উধাও । ধুলোয় শোওয়ানো আছে খাঁড়া । চেনে চেনে লাগে বড় । ইতি পূর্বে দেখা হয়েছে কি? সত্তর – একাত্তর – বাহাত্তর সালে এঁদের দেখেছি বটে । তারপর কি কোখাও দেখিনি? হ্যাঁ মনে পড়েছে । লালাবাজারে এই খাঁড়া ঝোলানো রয়েছে । যূপকাষ্ঠ আছে মহাকরণের বুদ্ধিঘরে ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
কী দোষ জানলাম না,শুধু খারিজ হলামতোমার যা ইচ্ছে হল,তাই করলে, বুড়ো লোকটার দিকে ঘুরেও দেখলে নাএখনও তোমার কথা আমাকে জিজ্ঞেস করে লোকে-- আমি বলিঃ সে আমার এককালের চেনাকী দোষ জানলাম না,শুধু খারিজ হলাম ভুলে থাকবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাই একটুও পারি নাসাহায্য তো এককালে করেছ অনেক এখন উপায় বলো তোমাকে ভোলবারআমাকে সাহায্য করো,আর কখনও বলব না-- কথা দিচ্ছি, এই শেষবার!
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
হিংসার উপরে কালো ঘাস নীচে হাড়, মাটি জমা খুলি কারোর জানার কথা নয় মালসার মতো গোল পৃথিবী মুখের কাছে ধ’রে ভেতরের হাড় মাটি কয়লা তেল লোহা ফেলে দিয়ে, ফাঁকা ওই করোটিতে আমি রাত্রিভোর সশব্দ খাঁকারে রক্ত, দমকে দমকে রক্ত, ফেলি তলায় আকাশ বয়ে যায়
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
একসময় মনে হত কোনওদিন তোমাকে পাব না একসময় মনে হত ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায় আজকে শেষবার আমি তোমাকে পেলাম কালকের পর থেকে আমাকে নেবে না আর তুমি দুপুর ফুরিয়ে এল। এইবার ফিরে আসবে বাড়ির সবাই। আর একবার, আর একবার, এসো__ প্রথম দিনের মতো আবার পুড়িয়ে করো ছাই !আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএকসময় মনে হত কোনওদিন তোমাকে পাব না একসময় মনে হত ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায় আজকে শেষবার আমি তোমাকে পেলাম কালকের পর থেকে আমাকে নেবে না আর তুমি দুপুর ফুরিয়ে এল। এইবার ফিরে আসবে বাড়ির সবাই। আর একবার, আর একবার, এসো__ প্রথম দিনের মতো আবার পুড়িয়ে করো ছাই !আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএকসময় মনে হত কোনওদিন তোমাকে পাব না একসময় মনে হত ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায় আজকে শেষবার আমি তোমাকে পেলাম কালকের পর থেকে আমাকে নেবে না আর তুমি দুপুর ফুরিয়ে এল। এইবার ফিরে আসবে বাড়ির সবাই। আর একবার, আর একবার, এসো__ প্রথম দিনের মতো আবার পুড়িয়ে করো ছাই !আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রএকসময় মনে হত কোনওদিন তোমাকে পাব না একসময় মনে হত ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায় আজকে শেষবার আমি তোমাকে পেলাম কালকের পর থেকে আমাকে নেবে না আর তুমি দুপুর ফুরিয়ে এল। এইবার ফিরে আসবে বাড়ির সবাই। আর একবার, আর একবার, এসো__ প্রথম দিনের মতো আবার পুড়িয়ে করো ছাই !আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
কী বুঝেছে সে-মেয়েটি ? সে বুঝেছে রাজুমামা মায়ের প্রেমিক।কী শুনেছে সে-মেয়েটি ? সে শুনেছে মায়ের শীৎকার।কী পেয়েছে সে-মেয়েটি ?–সে পেয়েছে জন্মদিন ? চুড়িদার, আলুকাবলি–কু-ইঙ্গিত মামাতো দাদার।সে খুঁজেছে ক্লাসনোট, সাজেশন– সে ঠেলেছে বইয়ের পাহাড়পরীক্ষা, পরীক্ষা সামনে–দিনে পড়া, রাতে পড়া– ও পাশের ঘর অন্ধকারঅন্ধকারে সে শুনেছে চাপা ঝগড়া, দাঁত নখ, ছিন্ন ভিন্ন মা আর বাবার।কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুনকী বুঝেছে সে-মেয়েটি ? সে বুঝেছে রাজুমামা মায়ের প্রেমিক।কী শুনেছে সে-মেয়েটি ? সে শুনেছে মায়ের শীৎকার।কী পেয়েছে সে-মেয়েটি ?–সে পেয়েছে জন্মদিন ? চুড়িদার, আলুকাবলি–কু-ইঙ্গিত মামাতো দাদার।সে খুঁজেছে ক্লাসনোট, সাজেশন– সে ঠেলেছে বইয়ের পাহাড়পরীক্ষা, পরীক্ষা সামনে–দিনে পড়া, রাতে পড়া– ও পাশের ঘর অন্ধকারঅন্ধকারে সে শুনেছে চাপা ঝগড়া, দাঁত নখ, ছিন্ন ভিন্ন মা আর বাবার।কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
ঠিক সময়ে অফিসে যায়? ঠিক মতো খায় সকালবেলা? টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি? না ক্যান্টিনেই টিফিন করে? জামা কাপড় কে কেচে দেয়? চা করে কে আগের মতো? দুগগার মা ক’টায় আসে? আমায় ভোরে উঠতে হত সেই শার্টটা পরে এখন? ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা? নিজের তো সব ওই পছন্দ আমি অলিভ দিয়েছিলাম কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে? দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে শিবমন্দির, জানলা থেকে দেখতে পেতাম রিক্সা থামল অফিস থেকে বাড়িই আসে? নাকি সোজা আড্ডাতে যায়? তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও বন্ধুরা সব আসে এখন? টেবিলঢাকা মেঝের ওপর সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায় টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি তখন তো আর হুঁশ থাকে না রাতবিরেতে কে আর দেখবে। কেন, ওই যে সেই মেয়েটা। যার সঙ্গে ঘুরত তখন। কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা? সে তো কবেই সরে এসেছে! বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি অত কান্ড সামলাবে কে! মেয়েটা যে গণ্ডগোলের প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম কে তাহলে সঙ্গে আছে? দাদা বৌদি? মা ভাইবোন! তিন কূলে তো কেউ ছিল না এক্কেবারে একলা এখন। কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়? কে ডেকে দেয় সকাল সকাল? রাত্তিরে কে দরজা খোলে? ঝক্কি পোহায় হাজার রকম? কার বিছানায় ঘুমোয় তবে কার গায়ে হাত তোলে এখন কার গায়ে হাত তোলে এখন?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রঠিক সময়ে অফিসে যায়? ঠিক মতো খায় সকালবেলা? টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি? না ক্যান্টিনেই টিফিন করে? জামা কাপড় কে কেচে দেয়? চা করে কে আগের মতো? দুগগার মা ক’টায় আসে? আমায় ভোরে উঠতে হত সেই শার্টটা পরে এখন? ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা? নিজের তো সব ওই পছন্দ আমি অলিভ দিয়েছিলাম কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে? দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে শিবমন্দির, জানলা থেকে দেখতে পেতাম রিক্সা থামল অফিস থেকে বাড়িই আসে? নাকি সোজা আড্ডাতে যায়? তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও বন্ধুরা সব আসে এখন? টেবিলঢাকা মেঝের ওপর সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায় টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি তখন তো আর হুঁশ থাকে না রাতবিরেতে কে আর দেখবে। কেন, ওই যে সেই মেয়েটা। যার সঙ্গে ঘুরত তখন। কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা? সে তো কবেই সরে এসেছে! বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি অত কান্ড সামলাবে কে! মেয়েটা যে গণ্ডগোলের প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম কে তাহলে সঙ্গে আছে? দাদা বৌদি? মা ভাইবোন! তিন কূলে তো কেউ ছিল না এক্কেবারে একলা এখন। কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়? কে ডেকে দেয় সকাল সকাল? রাত্তিরে কে দরজা খোলে? ঝক্কি পোহায় হাজার রকম? কার বিছানায় ঘুমোয় তবে কার গায়ে হাত তোলে এখন কার গায়ে হাত তোলে এখন?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রঠিক সময়ে অফিসে যায়? ঠিক মতো খায় সকালবেলা? টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি? না ক্যান্টিনেই টিফিন করে? জামা কাপড় কে কেচে দেয়? চা করে কে আগের মতো? দুগগার মা ক’টায় আসে? আমায় ভোরে উঠতে হত সেই শার্টটা পরে এখন? ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা? নিজের তো সব ওই পছন্দ আমি অলিভ দিয়েছিলাম কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে? দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে শিবমন্দির, জানলা থেকে দেখতে পেতাম রিক্সা থামল অফিস থেকে বাড়িই আসে? নাকি সোজা আড্ডাতে যায়? তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও বন্ধুরা সব আসে এখন? টেবিলঢাকা মেঝের ওপর সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায় টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি তখন তো আর হুঁশ থাকে না রাতবিরেতে কে আর দেখবে। কেন, ওই যে সেই মেয়েটা। যার সঙ্গে ঘুরত তখন। কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা? সে তো কবেই সরে এসেছে! বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি অত কান্ড সামলাবে কে! মেয়েটা যে গণ্ডগোলের প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম কে তাহলে সঙ্গে আছে? দাদা বৌদি? মা ভাইবোন! তিন কূলে তো কেউ ছিল না এক্কেবারে একলা এখন। কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়? কে ডেকে দেয় সকাল সকাল? রাত্তিরে কে দরজা খোলে? ঝক্কি পোহায় হাজার রকম? কার বিছানায় ঘুমোয় তবে কার গায়ে হাত তোলে এখন কার গায়ে হাত তোলে এখন?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রঠিক সময়ে অফিসে যায়? ঠিক মতো খায় সকালবেলা? টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি? না ক্যান্টিনেই টিফিন করে? জামা কাপড় কে কেচে দেয়? চা করে কে আগের মতো? দুগগার মা ক’টায় আসে? আমায় ভোরে উঠতে হত সেই শার্টটা পরে এখন? ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা? নিজের তো সব ওই পছন্দ আমি অলিভ দিয়েছিলাম কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে? দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে শিবমন্দির, জানলা থেকে দেখতে পেতাম রিক্সা থামল অফিস থেকে বাড়িই আসে? নাকি সোজা আড্ডাতে যায়? তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও বন্ধুরা সব আসে এখন? টেবিলঢাকা মেঝের ওপর সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায় টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি তখন তো আর হুঁশ থাকে না রাতবিরেতে কে আর দেখবে। কেন, ওই যে সেই মেয়েটা। যার সঙ্গে ঘুরত তখন। কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা? সে তো কবেই সরে এসেছে! বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি অত কান্ড সামলাবে কে! মেয়েটা যে গণ্ডগোলের প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম কে তাহলে সঙ্গে আছে? দাদা বৌদি? মা ভাইবোন! তিন কূলে তো কেউ ছিল না এক্কেবারে একলা এখন। কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়? কে ডেকে দেয় সকাল সকাল? রাত্তিরে কে দরজা খোলে? ঝক্কি পোহায় হাজার রকম? কার বিছানায় ঘুমোয় তবে কার গায়ে হাত তোলে এখন কার গায়ে হাত তোলে এখন?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
১দলে দলে মোটর বাইকে ঢুকে পড়ে কারা ঢুকে পড়ে ভোর বেলা কারা ঢুকে পড়ে জানা যায় না কিন্তু তারই পরে এ গ্রামে, ও গ্রামে, ঘরে ঘরে অবাধে কৃষক-রক্ত ঝরে জাগ্রত কৃষক রক্ত ঝরে২অস্ত্র প্রয়োগের অধিকারী তুমি আর তোমার ক্যাডার আমরা শুধু খুন হতে পারি মুখ বুজে খুন হতে পারি এই একমাত্র অধআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১দলে দলে মোটর বাইকে ঢুকে পড়ে কারা ঢুকে পড়ে ভোর বেলা কারা ঢুকে পড়ে জানা যায় না কিন্তু তারই পরে এ গ্রামে, ও গ্রামে, ঘরে ঘরে অবাধে কৃষক-রক্ত ঝরে জাগ্রত কৃষক রক্ত ঝরে২অস্ত্র প্রয়োগের অধিকারী তুমি আর তোমার ক্যাডার আমরা শুধু খুন হতে পারি মুখ বুজে খুন হতে পারি এই একমাত্র অধআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১দলে দলে মোটর বাইকে ঢুকে পড়ে কারা ঢুকে পড়ে ভোর বেলা কারা ঢুকে পড়ে জানা যায় না কিন্তু তারই পরে এ গ্রামে, ও গ্রামে, ঘরে ঘরে অবাধে কৃষক-রক্ত ঝরে জাগ্রত কৃষক রক্ত ঝরে২অস্ত্র প্রয়োগের অধিকারী তুমি আর তোমার ক্যাডার আমরা শুধু খুন হতে পারি মুখ বুজে খুন হতে পারি এই একমাত্র অধআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১দলে দলে মোটর বাইকে ঢুকে পড়ে কারা ঢুকে পড়ে ভোর বেলা কারা ঢুকে পড়ে জানা যায় না কিন্তু তারই পরে এ গ্রামে, ও গ্রামে, ঘরে ঘরে অবাধে কৃষক-রক্ত ঝরে জাগ্রত কৃষক রক্ত ঝরে২অস্ত্র প্রয়োগের অধিকারী তুমি আর তোমার ক্যাডার আমরা শুধু খুন হতে পারি মুখ বুজে খুন হতে পারি এই একমাত্র অধআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
আমি কোনও দস্যুতা পারি নাবসে থাকি চুপ করে চেয়ারেতোমার জীবনে হয়তো এবার এমন কোনও লোক এসে গেছে যে অনেক সবলতা পারেশুভার্থী ছিলাম আর শুভার্থী থাকব চিরকাল চুপ করে গাছের তলায় ঝরে থাকব মরা একটা ডাল
জয় গোস্বামী
মানবতাবাদী
নিজের ছেলেকে খুন ক’রে ঐ দেখ, চলেছে অভাবী নিজের মেয়েকে বিক্রি ক’রে ঐ ফিরে যাচ্ছেন জননী ওদের সঞ্চয় থেকে ফেরার রাস্তায় পড়ে যায় অশ্রুর বদলে বালি, পয়সা ও রক্তের চাকতি–গোল তারপর সমস্ত জল। শুধু ওই গোল গোল পাথরে আগুন ধকধক করবে একদিন, আর সেই আগুনে পা ফেলে ক্রোধ শোক দগ্ধ এক জলে ডোবা দেশ পুনরায়, খুঁজে খুঁজে বেড়াবে পাগল
জয় গোস্বামী
চিন্তামূলক
আমাদের নীল মৃত্যুকাল আমাদের সাদা সন্তরণ আমাদের ঢেউগুচ্ছআমাদের এই নিচু জীবন জলে ফেলে দেওয়া শান্ত ঢিল ক্ষমাশীল ঢেউগুচ্ছগায়ে গায়ে ঘষা কালো জীবন হাতে মুখে হাতে মেখে নেওয়া ঈর্ষার কাঁচা রক্তআমাদের এই আলোজীবন কারো কাছে কিছু নেবে না আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শান্তিআমাদের এই ভাঙা জীবন পড়োশীর ঘর আলো করা কচিকাঁচাদের দঙ্গলআমাদের এই নীল মৃত্যুযান আমাদের সাদা সন্তরণ টেনে নেয় ঢেউগুচ্ছআমাদের এই চিরজীবন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনা বন্ধুর মতো বন্ধুআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রআমাদের নীল মৃত্যুকাল আমাদের সাদা সন্তরণ আমাদের ঢেউগুচ্ছআমাদের এই নিচু জীবন জলে ফেলে দেওয়া শান্ত ঢিল ক্ষমাশীল ঢেউগুচ্ছগায়ে গায়ে ঘষা কালো জীবন হাতে মুখে হাতে মেখে নেওয়া ঈর্ষার কাঁচা রক্তআমাদের এই আলোজীবন কারো কাছে কিছু নেবে না আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শান্তিআমাদের এই ভাঙা জীবন পড়োশীর ঘর আলো করা কচিকাঁচাদের দঙ্গলআমাদের এই নীল মৃত্যুযান আমাদের সাদা সন্তরণ টেনে নেয় ঢেউগুচ্ছআমাদের এই চিরজীবন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনা বন্ধুর মতো বন্ধুআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রআমাদের নীল মৃত্যুকাল আমাদের সাদা সন্তরণ আমাদের ঢেউগুচ্ছআমাদের এই নিচু জীবন জলে ফেলে দেওয়া শান্ত ঢিল ক্ষমাশীল ঢেউগুচ্ছগায়ে গায়ে ঘষা কালো জীবন হাতে মুখে হাতে মেখে নেওয়া ঈর্ষার কাঁচা রক্তআমাদের এই আলোজীবন কারো কাছে কিছু নেবে না আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শান্তিআমাদের এই ভাঙা জীবন পড়োশীর ঘর আলো করা কচিকাঁচাদের দঙ্গলআমাদের এই নীল মৃত্যুযান আমাদের সাদা সন্তরণ টেনে নেয় ঢেউগুচ্ছআমাদের এই চিরজীবন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনা বন্ধুর মতো বন্ধুআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রআমাদের নীল মৃত্যুকাল আমাদের সাদা সন্তরণ আমাদের ঢেউগুচ্ছআমাদের এই নিচু জীবন জলে ফেলে দেওয়া শান্ত ঢিল ক্ষমাশীল ঢেউগুচ্ছগায়ে গায়ে ঘষা কালো জীবন হাতে মুখে হাতে মেখে নেওয়া ঈর্ষার কাঁচা রক্তআমাদের এই আলোজীবন কারো কাছে কিছু নেবে না আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শান্তিআমাদের এই ভাঙা জীবন পড়োশীর ঘর আলো করা কচিকাঁচাদের দঙ্গলআমাদের এই নীল মৃত্যুযান আমাদের সাদা সন্তরণ টেনে নেয় ঢেউগুচ্ছআমাদের এই চিরজীবন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনা বন্ধুর মতো বন্ধুআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
জয় গোস্বামী
প্রেমমূলক
– ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’ বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে — ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’ বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান — ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’ পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি — ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’ পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা — ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’ কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেই বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও? — ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’
জয় গোস্বামী
রূপক
সমুদ্রে পা ডুবিয়ে ছপছপ যে-ধীবর হাঁটে মাথার টোকাটি উল্টে ধ’রে যে পায় টুপটাপ উল্কা। চাঁদ সমুদ্রের ছাদ ফুটো ক’রে একটি ঊষায় তার মাথাটি আগুন লেগে ফাটে তোমার ধৈর্য্যের ভাঙে বাঁধ আবার শতাব্দীকাল পরে রক্ত চলতে শুরু করে আমার ডানার শক্ত কাঠে…