poet
stringclasses 137
values | category
stringclasses 21
values | poem
stringlengths 9
18.7k
|
---|---|---|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রতুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
জননী এই আঙিনা–আজ
শরীর বটচারা
বাতাস পথবালক, আর
মেয়েটি লণ্ঠন!
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
কী দুর্গম চাঁদ তোর নৌকার কিনারে গেঁথে আছে!
অন্যদিকে কী সুন্দর মাঝি!
যার মুখ কঙ্কালের, যার বাহু জং-ধরা লোহার।
বল্, তোর মাঝিকে বল্, শুরু করতে লৌহের প্রহার।
অত যে দুর্মূল্য চাঁদ, সেও তো সুলভে ভাঙতে রাজি!
খণ্ডে খণ্ডে জলে পড়ছে, জল ছিটকে উঠছে দূরে কাছে…
বল তোর ইচ্ছে হয় না সেই দৃশ্যে দাঁড়াতে আবার
ওই উল্কাগুলি খেতে জলরাশি সরিয়ে যখন
রাক্ষুসে মাছের মুখ ভেসে উঠবে জলদেবতার?
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
পাখিটি আমাকে ডেকে বলল তার ডানার জখম
বলল যে কীভাবে তার পালকে সংসার পোড়া ছ্যাঁকা
কীভাবে পায়ের মধ্যে ফুটো করে ঢুকে এল চেন
ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটতে গিয়ে ঠোঁটের জখম
দ্যাখালো, বাইরে থেকে আমি নিজ ওষ্ঠ থেকে ওম
দিলাম, খাঁচার দরজা খুলে তাকে “বাঁচবিযদি আয়’,
বলে বার করে এনে রাখলাম আর একটা খাঁচায়
সেখানে দুজনে বন্দি পরস্পর দোষারোপ করি,
দোষারোপ করতে করতে বৃষ্টি আসে, সন্ধে হয়ে যায় …আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রপাখিটি আমাকে ডেকে বলল তার ডানার জখম
বলল যে কীভাবে তার পালকে সংসার পোড়া ছ্যাঁকা
কীভাবে পায়ের মধ্যে ফুটো করে ঢুকে এল চেন
ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটতে গিয়ে ঠোঁটের জখম
দ্যাখালো, বাইরে থেকে আমি নিজ ওষ্ঠ থেকে ওম
দিলাম, খাঁচার দরজা খুলে তাকে “বাঁচবিযদি আয়’,
বলে বার করে এনে রাখলাম আর একটা খাঁচায়
সেখানে দুজনে বন্দি পরস্পর দোষারোপ করি,
দোষারোপ করতে করতে বৃষ্টি আসে, সন্ধে হয়ে যায় …আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রপাখিটি আমাকে ডেকে বলল তার ডানার জখম
বলল যে কীভাবে তার পালকে সংসার পোড়া ছ্যাঁকা
কীভাবে পায়ের মধ্যে ফুটো করে ঢুকে এল চেন
ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটতে গিয়ে ঠোঁটের জখম
দ্যাখালো, বাইরে থেকে আমি নিজ ওষ্ঠ থেকে ওম
দিলাম, খাঁচার দরজা খুলে তাকে “বাঁচবিযদি আয়’,
বলে বার করে এনে রাখলাম আর একটা খাঁচায়
সেখানে দুজনে বন্দি পরস্পর দোষারোপ করি,
দোষারোপ করতে করতে বৃষ্টি আসে, সন্ধে হয়ে যায় …আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রপাখিটি আমাকে ডেকে বলল তার ডানার জখম
বলল যে কীভাবে তার পালকে সংসার পোড়া ছ্যাঁকা
কীভাবে পায়ের মধ্যে ফুটো করে ঢুকে এল চেন
ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটতে গিয়ে ঠোঁটের জখম
দ্যাখালো, বাইরে থেকে আমি নিজ ওষ্ঠ থেকে ওম
দিলাম, খাঁচার দরজা খুলে তাকে “বাঁচবিযদি আয়’,
বলে বার করে এনে রাখলাম আর একটা খাঁচায়
সেখানে দুজনে বন্দি পরস্পর দোষারোপ করি,
দোষারোপ করতে করতে বৃষ্টি আসে, সন্ধে হয়ে যায় …আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
বেতাল যে-গাছে থাকে সে-গাছের পাতাও নড়ে না
আমলকীতলার গন্ধে শোকপোড়া আলো
বেতাল আকাশপথে জোনাকি কুড়িয়ে হেরে ভূত
মরা মুখ উঠে এল রাতের জানলার বিপরীতে
আমলকীতলার বায়ু, হে ধায়, ঊনপঞ্চাশ দিকে
ধাক্কায় ফেলেছে তাকে জানলা থেকে খাড়া নর্দমায়
মাঝখানে পৃথিবী ঘোরে, সূর্য দাঁতে কামড়ে ঘোরে বায়ু
আমার একাকী মুখে জ্যোতিশ্চক্র বিদ্যুৎ ছেটায়
দ্বিখণ্ডিত করে দিয়ে উদয়অস্তের মধ্যভাগ
রক্ত ও আনন্দমাখা কবি হন পুনর্জাগরিত
পাড়ার লোকের তাতে বিস্ময় কাটে না, গালে হাত
আলোচনা করে তারা: আরে, আরে--কই
এ তো তেমনই বজ্জাত আছে--রোদবৃষ্টি খেয়ে ফেলছে
গাছপালা উড়িয়ে নিচ্ছে আগের মতোই!
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
ওরা তো জমি দিয়েছে স্বেচ্ছায়
ওরাতো ঘর ছেড়েছে স্বেচ্ছায়
লাঠির নিচে ওরা তো স্বেচ্ছায়
পেতেছে পিঠ, নীচু করেছে মাথা
তোমরা কেন দেখতে পাও না তা
দেখেছি, সবই দেখেছি স্বেচ্ছায়
বাধ্য হয়ে দেখেছি স্বেচ্ছায়
মানব অধিকারের শবদেহ
বানের জলে দেখেছি ভেসে যায়
রাজ-আদেশে হাতকড়া-পড়ানো
রক্তঝরা গণতন্ত্রটিকে
প্রহরীদল হাঁটিয়ে নিয়ে যায়
প্রহরীদল মশানে নিয়ে যায়
আমরা সব দাঁড়িয়ে রাজপথে
দেখেছি, শুধু দেখেছি — স্বেচ্ছায়
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল–ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে;
–’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।।
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
যেভাবে বৃষ্টির জল তোড়ে বয়ে যায় ঢালুদিকে
সেইভাবে, আমার জীবন আজ অধোগামী।সালোয়ার একটু উঁচু ক’রে
তুমি সেই জল ভেঙে ভেঙে রাস্তা পার হয়ে গেলে—
এত যত্নে, সাবধানে, যেন বা জলের গায়ে
আঘাত না লাগে!পড়ন্ত জীবন শুধু মনে রাখবে অপরূপ চলে যাওয়াটিকে।
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
তোমার প্রেমিক,তাঁর সাদা পাতলা দাড়ি--
ফরসা রং--হাসিখানি অপূর্ব সুন্দর
যখন ঘাঢ় ঘুরিয়ে হেসে তাকালেন
মুহূর্তে তোমার বুকে ঝড়এ ঝড় আমার জন্য কোনওদিন উঠবে না আর
'সাবধানে থাকবেন'--বলে চলে যেতে-যেতে
আমার বুক ফাঁক করে ভরে দিয়ে গেলে
একমুঠো ধকধকে অন্ধকার
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান
লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন
পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন।এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব
লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্কার করবে সেল
দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।কবিত্ব ফুড়ুত্ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম
পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
কলঙ্ক, আমি কাজলের ঘরে থাকি
কাজল আমাকে বলে সমস্ত কথা
কলঙ্ক, আমি চোট লেগে যাওয়া পাখি—
বুঝি না অবৈধতা।
কলঙ্ক, আমি বন্ধুর বিশ্বাসে
রাখি একমুঠো ছাই, নিরুপায় ছাই
আমি অন্যের নিঃশ্বাস চুরি ক’রে
সে-নিঃশ্বাসে কি নিজেকে বাঁচাতে চাই?
কলঙ্ক, আমি রামধনু জুড়ে জুড়ে
দিন কাটাতাম, তাই রাত কাটতো না
আজ দিন রাত একাকার মিশে গিয়ে
চিরজ্বলন্ত সোনা
কলঙ্ক, তুমি প্রদীপ দেখেছো? আর প্রদীপের বাটি?
জানো টলটল করে সে আমার বন্ধুর দুই চোখে?
আমি ও কাজল সন্তান তার, বন্ধুরা জল মাটি
ফিরেও দেখি না পথে পড়ে থাকা
বৈধ-অবৈধকে—
যে যার মতন রোদবৃষ্টিতে হাঁটি…আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রকলঙ্ক, আমি কাজলের ঘরে থাকি
কাজল আমাকে বলে সমস্ত কথা
কলঙ্ক, আমি চোট লেগে যাওয়া পাখি—
বুঝি না অবৈধতা।
কলঙ্ক, আমি বন্ধুর বিশ্বাসে
রাখি একমুঠো ছাই, নিরুপায় ছাই
আমি অন্যের নিঃশ্বাস চুরি ক’রে
সে-নিঃশ্বাসে কি নিজেকে বাঁচাতে চাই?
কলঙ্ক, আমি রামধনু জুড়ে জুড়ে
দিন কাটাতাম, তাই রাত কাটতো না
আজ দিন রাত একাকার মিশে গিয়ে
চিরজ্বলন্ত সোনা
কলঙ্ক, তুমি প্রদীপ দেখেছো? আর প্রদীপের বাটি?
জানো টলটল করে সে আমার বন্ধুর দুই চোখে?
আমি ও কাজল সন্তান তার, বন্ধুরা জল মাটি
ফিরেও দেখি না পথে পড়ে থাকা
বৈধ-অবৈধকে—
যে যার মতন রোদবৃষ্টিতে হাঁটি…আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রকলঙ্ক, আমি কাজলের ঘরে থাকি
কাজল আমাকে বলে সমস্ত কথা
কলঙ্ক, আমি চোট লেগে যাওয়া পাখি—
বুঝি না অবৈধতা।
কলঙ্ক, আমি বন্ধুর বিশ্বাসে
রাখি একমুঠো ছাই, নিরুপায় ছাই
আমি অন্যের নিঃশ্বাস চুরি ক’রে
সে-নিঃশ্বাসে কি নিজেকে বাঁচাতে চাই?
কলঙ্ক, আমি রামধনু জুড়ে জুড়ে
দিন কাটাতাম, তাই রাত কাটতো না
আজ দিন রাত একাকার মিশে গিয়ে
চিরজ্বলন্ত সোনা
কলঙ্ক, তুমি প্রদীপ দেখেছো? আর প্রদীপের বাটি?
জানো টলটল করে সে আমার বন্ধুর দুই চোখে?
আমি ও কাজল সন্তান তার, বন্ধুরা জল মাটি
ফিরেও দেখি না পথে পড়ে থাকা
বৈধ-অবৈধকে—
যে যার মতন রোদবৃষ্টিতে হাঁটি…আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রকলঙ্ক, আমি কাজলের ঘরে থাকি
কাজল আমাকে বলে সমস্ত কথা
কলঙ্ক, আমি চোট লেগে যাওয়া পাখি—
বুঝি না অবৈধতা।
কলঙ্ক, আমি বন্ধুর বিশ্বাসে
রাখি একমুঠো ছাই, নিরুপায় ছাই
আমি অন্যের নিঃশ্বাস চুরি ক’রে
সে-নিঃশ্বাসে কি নিজেকে বাঁচাতে চাই?
কলঙ্ক, আমি রামধনু জুড়ে জুড়ে
দিন কাটাতাম, তাই রাত কাটতো না
আজ দিন রাত একাকার মিশে গিয়ে
চিরজ্বলন্ত সোনা
কলঙ্ক, তুমি প্রদীপ দেখেছো? আর প্রদীপের বাটি?
জানো টলটল করে সে আমার বন্ধুর দুই চোখে?
আমি ও কাজল সন্তান তার, বন্ধুরা জল মাটি
ফিরেও দেখি না পথে পড়ে থাকা
বৈধ-অবৈধকে—
যে যার মতন রোদবৃষ্টিতে হাঁটি…আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
রেণু মা, আমার ঘরে তক্ষক ঢুকেছে
তক্-খো, তক্-খো–তার ডাক
রেনু মা, সংকেতগাছ দূরে দাঁড়িয়েছে
জ্যোৎস্না লেগে পুড়ে গেছে কাক
আমি সে-গাছের ডালে, দড়ি ভেবে, সর্প ধরে উঠি
সর্প থেকে বিষ খসে যায়
রেণু মা, তোমার হাতে তালি বাজে–রাতের আকাশে
ডানা মেলে জ্যোতির্ময় তক্ষক পালায়
|
জয় গোস্বামী
|
শোকমূলক
|
শক্তির মেয়ের সঙ্গে প্রেম করব স্বপ্ন ছিল যুবক বয়সে
শ্রোতার আসনে বসে মঞ্চে দেখা শক্তিকে দু’বার।
কন্যাটিকে একবারও নয়।
তবু ইচ্ছে,ইচ্ছে-সার,মন গাছের গোড়ায় ঢাললেই
ফুল ফুটতে দেরির কী আছে!
শক্তিদা বলার মতো সম্পর্ক যখন হল তখনও কবিকে সীমাহীন
দূরের সম্ভ্রমে রাখি।ভালোবাসি আরো সীমাহারা।
কর্মসূত্রে যে-সাক্ষাৎ,তাকে রেখে আসি কর্মস্থলে।
বাড়িতে একবার যাওয়া, জন্মদিন ভিড়ে সরগরম।
শুনেছি কন্যাটি পড়ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দু’বার যাদবপুরে তার আগেই মুখ পুড়িয়েছি
অতএব ওদিকে না… অনত্র সন্ধান করা ভাল…
দেখলাম একবার মাত্র।শেষযাত্রা চলেছে কবির…
ফুল ভরতি লরির ওপরে
ফাল্গুনের হেলে পড়া রোদ সে-দুহিতা
হাত দিয়ে আড়াল করছে বাবার মুখের সামনে থেকে…
সেই দেখা শ্রেষ্ঠ দেখা।শোকার্ত মুখটিও মনে নেই।
মনে আছে হাতখানি।জগতের সকল কবির
কন্যা সে-ই – সকলের আঘাত, বিপদ
আটকায় সে-হাতপাখা-আজ বুকুনেরই মুখে
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজাকে দেখতে পাই-
যখন বুকুন ওড়না দিয়ে
ট্যাক্সির জানলায় আসা রোদ থেকে আমাকে বাঁচায়।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রশক্তির মেয়ের সঙ্গে প্রেম করব স্বপ্ন ছিল যুবক বয়সে
শ্রোতার আসনে বসে মঞ্চে দেখা শক্তিকে দু’বার।
কন্যাটিকে একবারও নয়।
তবু ইচ্ছে,ইচ্ছে-সার,মন গাছের গোড়ায় ঢাললেই
ফুল ফুটতে দেরির কী আছে!
শক্তিদা বলার মতো সম্পর্ক যখন হল তখনও কবিকে সীমাহীন
দূরের সম্ভ্রমে রাখি।ভালোবাসি আরো সীমাহারা।
কর্মসূত্রে যে-সাক্ষাৎ,তাকে রেখে আসি কর্মস্থলে।
বাড়িতে একবার যাওয়া, জন্মদিন ভিড়ে সরগরম।
শুনেছি কন্যাটি পড়ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দু’বার যাদবপুরে তার আগেই মুখ পুড়িয়েছি
অতএব ওদিকে না… অনত্র সন্ধান করা ভাল…
দেখলাম একবার মাত্র।শেষযাত্রা চলেছে কবির…
ফুল ভরতি লরির ওপরে
ফাল্গুনের হেলে পড়া রোদ সে-দুহিতা
হাত দিয়ে আড়াল করছে বাবার মুখের সামনে থেকে…
সেই দেখা শ্রেষ্ঠ দেখা।শোকার্ত মুখটিও মনে নেই।
মনে আছে হাতখানি।জগতের সকল কবির
কন্যা সে-ই – সকলের আঘাত, বিপদ
আটকায় সে-হাতপাখা-আজ বুকুনেরই মুখে
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজাকে দেখতে পাই-
যখন বুকুন ওড়না দিয়ে
ট্যাক্সির জানলায় আসা রোদ থেকে আমাকে বাঁচায়।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
জানি যে আমাকে তুমি ঘৃণা করো, মেয়েদের ঘৃণা
যেখানে যেখানে পড়ে সে জায়গাটা কালো হয়ে যায়
নতুন অঙ্কুর উঠে দাঁড়াতে পারে না সোজা হয়ে
তোমার ঘেন্নার ভয়ে পালাতে পালাতে আমি এই
দিগন্তে শুয়েছি, সামনে সভ্যতা পর্যন্ত পড়ে থাকা
যতটা শরীর, তার কোথাও এক কণা শস্য নেই
শুধু কালো কালো দাগ পোড়া শক্ত ঝামা গুঁড়োমাটি
তাও তুমি আকাশপথে জলপথে বৃষ্টিপথে এসে
মুখে যে নিঃশ্বাস ফেলছ, না তাতে আবেশ, যৌনজ্বর
নেই, শান্ত ঘুম নেই—সে নিঃশ্বাসে কিছু নেই আর
তার শুধু ক্ষমতা আছে প্রেমিককে বন্ধ্যা করবার!
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
নৌকো থেকে বৈঠা পড়ে যায়
জলের তলায়
কালো ছাইরঙা জল একবার ঢেউ দিয়ে অন্ধকার
এখন কোথায় আছে সেই বৈঠাখানি?
দুটো কৌতুহলী মাছ, দু’ খণ্ড পাথর, লক্কড়, সাইকেল ভাঙা
গোল আংটির পাশে পাঁকে গাঁথা চারানা আট আনা। অন্ধকারে
ওদের চোখ জ্বলে। এই জলে থেকে থেকে
এখন ওরাও কোনো প্রাণী।
হারানো বৈঠার কাছে পৌঁছে দেখি, তার
দুধারে জন্মেছে পাখনা, পিঠে কাঁটা, নাকে খড়্গ, আর
খড়্গের রজ্জুর সঙ্গে বৃহৎ নৌকাটি বেঁধে নিয়ে
বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ঝাপসা জলমগ্ন ভূমণ্ডল পেরিয়া সে চলেছে আবার!
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
সিদ্ধি, জবাকুসুম সংকাশ
মাথার পিছনে ফেটে পড়েদপ করে জ্বলে পূর্বাকাশ
(…?) মাথায় রক্ত চড়েসিদ্ধি, মহাদ্যুতি–তার মুখে
চূর্ণ হয় যশের হাড়মাসহোমাগ্নিপ্রণীত দুটি হাত
আমাতে সংযুক্ত হয়, বলে:বল তুই এই জলেস্থানে
কী চাস? কেমনভাবে চাস?আমি নিরুত্তর থেকে দেখি
সূর্য ফেটে পড়ে পূর্ণ ছাইছাই ঘুরতে ঘুরতে পুনঃপুন
এক সূর্য সহস্র জন্মায়সূর্যে সূর্যে আমি দেখতে পাই
ক্ষণমাত্র লেখনী থামছে নাগণেশ, আমার সামনে বসে
লিপিবদ্ধ করছেন আকাশচক্রের পিছনে চক্রাকার
ফুটে উঠছে ব্রহ্মাজগৎএ দৃশ্যের বিবরণকালে
হে শব্দ, ব্রহ্মের মুখ, আমিশরীরে আলোর গতি পাই
তোমাকেও এপার ওপারভেদ করি, ফুঁড়ে চলে যাই…আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রসিদ্ধি, জবাকুসুম সংকাশ
মাথার পিছনে ফেটে পড়েদপ করে জ্বলে পূর্বাকাশ
(…?) মাথায় রক্ত চড়েসিদ্ধি, মহাদ্যুতি–তার মুখে
চূর্ণ হয় যশের হাড়মাসহোমাগ্নিপ্রণীত দুটি হাত
আমাতে সংযুক্ত হয়, বলে:বল তুই এই জলেস্থানে
কী চাস? কেমনভাবে চাস?আমি নিরুত্তর থেকে দেখি
সূর্য ফেটে পড়ে পূর্ণ ছাইছাই ঘুরতে ঘুরতে পুনঃপুন
এক সূর্য সহস্র জন্মায়সূর্যে সূর্যে আমি দেখতে পাই
ক্ষণমাত্র লেখনী থামছে নাগণেশ, আমার সামনে বসে
লিপিবদ্ধ করছেন আকাশচক্রের পিছনে চক্রাকার
ফুটে উঠছে ব্রহ্মাজগৎএ দৃশ্যের বিবরণকালে
হে শব্দ, ব্রহ্মের মুখ, আমিশরীরে আলোর গতি পাই
তোমাকেও এপার ওপারভেদ করি, ফুঁড়ে চলে যাই…আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
আমরা যেদিন আগুনের নদী থেকে
তুলে আনলাম মা’র ভেসে-যাওয়া দেহ
সারা গা জ্বলছে, বোন তোর মনে আছে
প্রতিবেশীদের চোখে ছিল সন্দেহদীর্ঘ চঞ্চু, রোঁয়া-ওঠা ঘাড় তুলে
এগিয়ে এসেছে অভিজ্ঞ মোড়লেরা
বলেছে, এ সভা বিধান দিচ্ছে শোনো
দাহ করবার অধিকারী নয় এরাসেই রাত্রেই পালিয়েছি গ্রাম ছেড়ে
কাঁধে মা’র দেহ, উপরে জ্বলছে চাঁদ
পথে পড়েছিল বিষাক্ত জলাভূমি
পথে পড়েছিল চুন লবণের খাদআমার আঙুল খসে গেছে, তোর বুক
শুকিয়ে গিয়েছে তীব্র চুনের ঝাঁঝে
আহার ছিল না, শৌচ ছিল না কারো
আমরা ছিলাম শববহনের কাজেযে দেশে এলাম,মরা গাছ চারিদিকে
ডাল থেকে ঝোলে মৃতপশুদের ছাল
পৃথিবীর শেষ নদীর কিনারে এসে
নামিয়েছি আজ জননীর কংকালবোন তোকে বলি, এ অস্থি পোড়াবো না
গাছের কোটরে রেখে যাবো এই হাড়
আমরা শিখি নি । পরে যারা আছে তারা
তারা শিখবে না এর ঠিক ব্যবহার?সারা গায়ে আজ ছত্রাক আমাদের
চোখ নেই, শুধু কোটর জ্বলছে ক্ষোভে
আমি ভুলে গেছি পুরুষ ছিলাম কিনা
তোর মনে নেই ঋতু থেমে গেছে কবেপূবদিকে সাদা করোটি রঙের আলো
পিছনে নামছে সন্ধ্যার মতো ঘোর
পৃথিবীর শেষ শ্মশানের মাঝখানে
বসে আছি শুধু দুই মৃতদেহ চোর।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রআমরা যেদিন আগুনের নদী থেকে
তুলে আনলাম মা’র ভেসে-যাওয়া দেহ
সারা গা জ্বলছে, বোন তোর মনে আছে
প্রতিবেশীদের চোখে ছিল সন্দেহদীর্ঘ চঞ্চু, রোঁয়া-ওঠা ঘাড় তুলে
এগিয়ে এসেছে অভিজ্ঞ মোড়লেরা
বলেছে, এ সভা বিধান দিচ্ছে শোনো
দাহ করবার অধিকারী নয় এরাসেই রাত্রেই পালিয়েছি গ্রাম ছেড়ে
কাঁধে মা’র দেহ, উপরে জ্বলছে চাঁদ
পথে পড়েছিল বিষাক্ত জলাভূমি
পথে পড়েছিল চুন লবণের খাদআমার আঙুল খসে গেছে, তোর বুক
শুকিয়ে গিয়েছে তীব্র চুনের ঝাঁঝে
আহার ছিল না, শৌচ ছিল না কারো
আমরা ছিলাম শববহনের কাজেযে দেশে এলাম,মরা গাছ চারিদিকে
ডাল থেকে ঝোলে মৃতপশুদের ছাল
পৃথিবীর শেষ নদীর কিনারে এসে
নামিয়েছি আজ জননীর কংকালবোন তোকে বলি, এ অস্থি পোড়াবো না
গাছের কোটরে রেখে যাবো এই হাড়
আমরা শিখি নি । পরে যারা আছে তারা
তারা শিখবে না এর ঠিক ব্যবহার?সারা গায়ে আজ ছত্রাক আমাদের
চোখ নেই, শুধু কোটর জ্বলছে ক্ষোভে
আমি ভুলে গেছি পুরুষ ছিলাম কিনা
তোর মনে নেই ঋতু থেমে গেছে কবেপূবদিকে সাদা করোটি রঙের আলো
পিছনে নামছে সন্ধ্যার মতো ঘোর
পৃথিবীর শেষ শ্মশানের মাঝখানে
বসে আছি শুধু দুই মৃতদেহ চোর।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রআমরা যেদিন আগুনের নদী থেকে
তুলে আনলাম মা’র ভেসে-যাওয়া দেহ
সারা গা জ্বলছে, বোন তোর মনে আছে
প্রতিবেশীদের চোখে ছিল সন্দেহদীর্ঘ চঞ্চু, রোঁয়া-ওঠা ঘাড় তুলে
এগিয়ে এসেছে অভিজ্ঞ মোড়লেরা
বলেছে, এ সভা বিধান দিচ্ছে শোনো
দাহ করবার অধিকারী নয় এরাসেই রাত্রেই পালিয়েছি গ্রাম ছেড়ে
কাঁধে মা’র দেহ, উপরে জ্বলছে চাঁদ
পথে পড়েছিল বিষাক্ত জলাভূমি
পথে পড়েছিল চুন লবণের খাদআমার আঙুল খসে গেছে, তোর বুক
শুকিয়ে গিয়েছে তীব্র চুনের ঝাঁঝে
আহার ছিল না, শৌচ ছিল না কারো
আমরা ছিলাম শববহনের কাজেযে দেশে এলাম,মরা গাছ চারিদিকে
ডাল থেকে ঝোলে মৃতপশুদের ছাল
পৃথিবীর শেষ নদীর কিনারে এসে
নামিয়েছি আজ জননীর কংকালবোন তোকে বলি, এ অস্থি পোড়াবো না
গাছের কোটরে রেখে যাবো এই হাড়
আমরা শিখি নি । পরে যারা আছে তারা
তারা শিখবে না এর ঠিক ব্যবহার?সারা গায়ে আজ ছত্রাক আমাদের
চোখ নেই, শুধু কোটর জ্বলছে ক্ষোভে
আমি ভুলে গেছি পুরুষ ছিলাম কিনা
তোর মনে নেই ঋতু থেমে গেছে কবেপূবদিকে সাদা করোটি রঙের আলো
পিছনে নামছে সন্ধ্যার মতো ঘোর
পৃথিবীর শেষ শ্মশানের মাঝখানে
বসে আছি শুধু দুই মৃতদেহ চোর।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রআমরা যেদিন আগুনের নদী থেকে
তুলে আনলাম মা’র ভেসে-যাওয়া দেহ
সারা গা জ্বলছে, বোন তোর মনে আছে
প্রতিবেশীদের চোখে ছিল সন্দেহদীর্ঘ চঞ্চু, রোঁয়া-ওঠা ঘাড় তুলে
এগিয়ে এসেছে অভিজ্ঞ মোড়লেরা
বলেছে, এ সভা বিধান দিচ্ছে শোনো
দাহ করবার অধিকারী নয় এরাসেই রাত্রেই পালিয়েছি গ্রাম ছেড়ে
কাঁধে মা’র দেহ, উপরে জ্বলছে চাঁদ
পথে পড়েছিল বিষাক্ত জলাভূমি
পথে পড়েছিল চুন লবণের খাদআমার আঙুল খসে গেছে, তোর বুক
শুকিয়ে গিয়েছে তীব্র চুনের ঝাঁঝে
আহার ছিল না, শৌচ ছিল না কারো
আমরা ছিলাম শববহনের কাজেযে দেশে এলাম,মরা গাছ চারিদিকে
ডাল থেকে ঝোলে মৃতপশুদের ছাল
পৃথিবীর শেষ নদীর কিনারে এসে
নামিয়েছি আজ জননীর কংকালবোন তোকে বলি, এ অস্থি পোড়াবো না
গাছের কোটরে রেখে যাবো এই হাড়
আমরা শিখি নি । পরে যারা আছে তারা
তারা শিখবে না এর ঠিক ব্যবহার?সারা গায়ে আজ ছত্রাক আমাদের
চোখ নেই, শুধু কোটর জ্বলছে ক্ষোভে
আমি ভুলে গেছি পুরুষ ছিলাম কিনা
তোর মনে নেই ঋতু থেমে গেছে কবেপূবদিকে সাদা করোটি রঙের আলো
পিছনে নামছে সন্ধ্যার মতো ঘোর
পৃথিবীর শেষ শ্মশানের মাঝখানে
বসে আছি শুধু দুই মৃতদেহ চোর।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো
বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?
বেণীমাধব, মোহনবাঁশি তমাল তরুমূলে
বাজিয়েছিলে, আমি তখন মালতী ইস্কুলে
ডেস্কে বসে অঙ্ক করি, ছোট্ট ক্লাসঘর
বাইরে দিদিমণির পাশে দিদিমণির বর
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি
আলাপ হলো, বেণীমাধব, সুলেখাদের বাড়িবেণীমাধব, বেণীমাধব, লেখাপড়ায় ভালো
শহর থেকে বেড়াতে এলে, আমার রঙ কালো
তোমায় দেখে এক দৌড়ে পালিয়ে গেছি ঘরে
বেণীমাধব, আমার বাবা দোকানে কাজ করে
কুঞ্জে অলি গুঞ্জে তবু, ফুটেছে মঞ্জরী
সন্ধেবেলা পড়তে বসে অঙ্কে ভুল করি
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন ষোল
ব্রীজের ধারে, বেণীমাধব, লুকিয়ে দেখা হলোবেণীমাধব, বেণীমাধব, এতদিনের পরে
সত্যি বলো, সে সব কথা এখনো মনে পড়ে?
সে সব কথা বলেছো তুমি তোমার প্রেমিকাকে?
আমি কেবল একটি দিন তোমার পাশে তাকে
দেখেছিলাম আলোর নীচে; অপূর্ব সে আলো!
স্বীকার করি, দুজনকেই মানিয়েছিল ভালো
জুড়িয়ে দিলো চোখ আমার, পুড়িয়ে দিলো চেখ
বাড়িতে এসে বলেছিলাম, ওদের ভালো হোক।রাতে এখন ঘুমাতে যাই একতলার ঘরে
মেঝের উপর বিছানা পাতা, জ্যোৎস্না এসে পড়ে
আমার পরে যে বোন ছিলো চোরাপথের বাঁকে
মিলিয়ে গেছে, জানি না আজ কার সঙ্গে থাকে
আজ জুটেছে, কাল কী হবে? – কালের ঘরে শনি
আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি
তবু আগুন, বেণীমাধব, আগুন জ্বলে কই?
কেমন হবে, আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই?কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুনবেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো
বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?
বেণীমাধব, মোহনবাঁশি তমাল তরুমূলে
বাজিয়েছিলে, আমি তখন মালতী ইস্কুলে
ডেস্কে বসে অঙ্ক করি, ছোট্ট ক্লাসঘর
বাইরে দিদিমণির পাশে দিদিমণির বর
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি
আলাপ হলো, বেণীমাধব, সুলেখাদের বাড়িবেণীমাধব, বেণীমাধব, লেখাপড়ায় ভালো
শহর থেকে বেড়াতে এলে, আমার রঙ কালো
তোমায় দেখে এক দৌড়ে পালিয়ে গেছি ঘরে
বেণীমাধব, আমার বাবা দোকানে কাজ করে
কুঞ্জে অলি গুঞ্জে তবু, ফুটেছে মঞ্জরী
সন্ধেবেলা পড়তে বসে অঙ্কে ভুল করি
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন ষোল
ব্রীজের ধারে, বেণীমাধব, লুকিয়ে দেখা হলোবেণীমাধব, বেণীমাধব, এতদিনের পরে
সত্যি বলো, সে সব কথা এখনো মনে পড়ে?
সে সব কথা বলেছো তুমি তোমার প্রেমিকাকে?
আমি কেবল একটি দিন তোমার পাশে তাকে
দেখেছিলাম আলোর নীচে; অপূর্ব সে আলো!
স্বীকার করি, দুজনকেই মানিয়েছিল ভালো
জুড়িয়ে দিলো চোখ আমার, পুড়িয়ে দিলো চেখ
বাড়িতে এসে বলেছিলাম, ওদের ভালো হোক।রাতে এখন ঘুমাতে যাই একতলার ঘরে
মেঝের উপর বিছানা পাতা, জ্যোৎস্না এসে পড়ে
আমার পরে যে বোন ছিলো চোরাপথের বাঁকে
মিলিয়ে গেছে, জানি না আজ কার সঙ্গে থাকে
আজ জুটেছে, কাল কী হবে? – কালের ঘরে শনি
আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি
তবু আগুন, বেণীমাধব, আগুন জ্বলে কই?
কেমন হবে, আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই?কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
তরঙ্গের বিশেষ কামিনী
দোলাচলে মরে বসুন্ধরা
কম্পন সাক্ষাত পাবে অগ্রে বা পশ্চাতে মিছে দাগ
নিশাবসনের শেষে একফোঁটা ফুল
কত হট্টরোল হৃদে কত হট্টরোল
অবিশ্বাসে পা রেখে দাঁড়িয়ে
দেখি দেশান্তরে যায় ধু ধু গাঁয়ে একমাত্র পথিক
তার কি সরল গৃহত্যাগ!
কোন পারে খুলে ধরো তিনতলা উচ্চ বাতায়ন
আলো এসে পড়েছে রাস্তায়
সেখানে কে কন্যা বসে চাঁদের চরকায় সুতো কাটে
বালকের ভ্রম হয় কিশোরের ভ্রম হয় যুবকেরও ভ্রম
এত শ্রম!সুতো ছানবার এত শ্রম!
চতুর্দিকে ঘুরে মরে,পায় না আশ্রম
অর্থের বাহিরদ্বার খুলে
কে দেয় উড়াল!
পাঠকের পক্ষীধরা জাল
পুরোপুরি ব্যর্থ হয় মানে কই মানে কই ব'লে
পশ্চাদ্ধাবনরত পাখিপড়া স্বভাবটি ম'লো!
কী হল কী হল
আমাদের হাত ফস্কে ভ্রমমধ্যে বিশেষ কামিনী
তরঙ্গ খেলায় কত তরঙ্গ খেলায়
আমি সে-তরঙ্গ দেখে একবারও থামিনি
জলছলোচ্ছলো তার তীর ঘেঁষে গ্রাম
হাসিরাশি কুড়োই ঝিনুক
এ লেখা সমুদ্র পেল কোন মন্ত্রে? কোথা সে-কৌতুক?
জল ছেড়ে উঠে এল এক বিশিষ্ট রচনা
তাকে চিনতে দেরি করলে হয়?
এক-এক বিস্ময় তার এক-এক গহনা
সকল গুছিয়ে তোলে তার চির রাঙা পরিধানে
কথা থেকে লুপ্ত করে মানে
তরঙ্গের বিশেষ কামিনী
দোলাচলে মরে বহু তারা
তারাসমগ্রের ছায়া জলে পড়বে এত বড় জল কোনখানে?
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
যে-লেখা পড়ে তোমাদের শুকনো চোখে জল আসবে
সেই লেখা আমার হাত থেকে বেরিয়ে
উড়ে ওই ডালে গিয়ে বসল।
এখন থেকে তাকে পড়তে শুরু করবে পাখিরা।
শুনে-শুনে মুখস্থ হয়ে যাবে গাছেদেরও।
কিন্তু গাছেরা তো কথা বলতে পারে না! কী হবে?
কী আবার হবে!
আমি আর বকুন, দিনে রাতে, কত গাছের গুঁড়িতে
কান রেখে শুনেছি
গাছ, মনে-মনে কবিতা বলছে…
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
(‘নন্দীগ্রামে, আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য, আজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ১৪ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্যের অংশ।)কপালে স্টিকার আঁটা : সুকুমার গিরি ।
বুকে মস্ত ছ্যাঁদা নিয়ে চিত হয়ে আছে
তমলুক হাস্পাতালে ।
ঢাক্তার বুঝেছেন
এ লোকটাকে বেডে তুলতে গেলেই
এক্ষুনি মরে যাবে ।
ঠিক । গেল তাই । কিন্তু, ছেলে তার
বুঝছে না এখনো ।
বলছে, ‘বাবু, পায়ে পড়ি,
বাবাকে বাঁচান’ ।
ডাক্তার কি করবে আর!
ওর ছেলে জানেও না
লিডারের কয়েকটি কথায়
নির্দেশিত আমাদের শোয়া বসা
হাঁটা চলা মরা আর বাঁচা—
আমাদের কাজ শুধু মর্গা আর হাসপাতালে
পুলিশের গুলি খাওয়া মৃতদেহ হয়ে
‘আইনশৃঙ্খলা’ রক্ষা করা।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র(‘নন্দীগ্রামে, আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য, আজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ১৪ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্যের অংশ।)কপালে স্টিকার আঁটা : সুকুমার গিরি ।
বুকে মস্ত ছ্যাঁদা নিয়ে চিত হয়ে আছে
তমলুক হাস্পাতালে ।
ঢাক্তার বুঝেছেন
এ লোকটাকে বেডে তুলতে গেলেই
এক্ষুনি মরে যাবে ।
ঠিক । গেল তাই । কিন্তু, ছেলে তার
বুঝছে না এখনো ।
বলছে, ‘বাবু, পায়ে পড়ি,
বাবাকে বাঁচান’ ।
ডাক্তার কি করবে আর!
ওর ছেলে জানেও না
লিডারের কয়েকটি কথায়
নির্দেশিত আমাদের শোয়া বসা
হাঁটা চলা মরা আর বাঁচা—
আমাদের কাজ শুধু মর্গা আর হাসপাতালে
পুলিশের গুলি খাওয়া মৃতদেহ হয়ে
‘আইনশৃঙ্খলা’ রক্ষা করা।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র(‘নন্দীগ্রামে, আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য, আজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ১৪ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্যের অংশ।)কপালে স্টিকার আঁটা : সুকুমার গিরি ।
বুকে মস্ত ছ্যাঁদা নিয়ে চিত হয়ে আছে
তমলুক হাস্পাতালে ।
ঢাক্তার বুঝেছেন
এ লোকটাকে বেডে তুলতে গেলেই
এক্ষুনি মরে যাবে ।
ঠিক । গেল তাই । কিন্তু, ছেলে তার
বুঝছে না এখনো ।
বলছে, ‘বাবু, পায়ে পড়ি,
বাবাকে বাঁচান’ ।
ডাক্তার কি করবে আর!
ওর ছেলে জানেও না
লিডারের কয়েকটি কথায়
নির্দেশিত আমাদের শোয়া বসা
হাঁটা চলা মরা আর বাঁচা—
আমাদের কাজ শুধু মর্গা আর হাসপাতালে
পুলিশের গুলি খাওয়া মৃতদেহ হয়ে
‘আইনশৃঙ্খলা’ রক্ষা করা।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র(‘নন্দীগ্রামে, আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য, আজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ১৪ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্যের অংশ।)কপালে স্টিকার আঁটা : সুকুমার গিরি ।
বুকে মস্ত ছ্যাঁদা নিয়ে চিত হয়ে আছে
তমলুক হাস্পাতালে ।
ঢাক্তার বুঝেছেন
এ লোকটাকে বেডে তুলতে গেলেই
এক্ষুনি মরে যাবে ।
ঠিক । গেল তাই । কিন্তু, ছেলে তার
বুঝছে না এখনো ।
বলছে, ‘বাবু, পায়ে পড়ি,
বাবাকে বাঁচান’ ।
ডাক্তার কি করবে আর!
ওর ছেলে জানেও না
লিডারের কয়েকটি কথায়
নির্দেশিত আমাদের শোয়া বসা
হাঁটা চলা মরা আর বাঁচা—
আমাদের কাজ শুধু মর্গা আর হাসপাতালে
পুলিশের গুলি খাওয়া মৃতদেহ হয়ে
‘আইনশৃঙ্খলা’ রক্ষা করা।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
স্বদেশমূলক
|
কে মেয়েটি হঠাৎ প্রণাম করতে এলে ?
মাথার ওপর হাত রাখিনি
তোমার চেয়েও সসংকোচে এগিয়ে গেছি
তোমায় ফেলে
ময়লা চটি, ঘামের গন্ধ নোংরা গায়ে,
হলভরা লোক, সবাই দেখছে তার মধ্যেও
হাত রেখেছ আমার পায়েআজকে আমি বাড়ি ফিরেও স্নান করিনি
স্পর্শটুকু রাখব বলে
তোমার হাতের মুঠোয় ভরা পুস্করিণী
পরিবর্তে কী দেব আর ? আমার শুধু
দু’ চার পাতা লিখতে আসাসর্বনাশের এপার ওপার দেখা যায় না
কিন্তু আমি দেখতে পেলাম, রাঙা আলোয়
দাঁড়িয়ে আছে সে-ছন্দ, সে-কীর্তিনাশা ।
অচেনা ওই মেয়ের চোখে যে পাঠাল
দু’-এক পলক বৃষ্টিভেজা বাংলা ভাষা ।কবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুনকে মেয়েটি হঠাৎ প্রণাম করতে এলে ?
মাথার ওপর হাত রাখিনি
তোমার চেয়েও সসংকোচে এগিয়ে গেছি
তোমায় ফেলে
ময়লা চটি, ঘামের গন্ধ নোংরা গায়ে,
হলভরা লোক, সবাই দেখছে তার মধ্যেও
হাত রেখেছ আমার পায়েআজকে আমি বাড়ি ফিরেও স্নান করিনি
স্পর্শটুকু রাখব বলে
তোমার হাতের মুঠোয় ভরা পুস্করিণী
পরিবর্তে কী দেব আর ? আমার শুধু
দু’ চার পাতা লিখতে আসাসর্বনাশের এপার ওপার দেখা যায় না
কিন্তু আমি দেখতে পেলাম, রাঙা আলোয়
দাঁড়িয়ে আছে সে-ছন্দ, সে-কীর্তিনাশা ।
অচেনা ওই মেয়ের চোখে যে পাঠাল
দু’-এক পলক বৃষ্টিভেজা বাংলা ভাষা ।কবি জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায় যেতেঃ এখানে ক্লিক করুন
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
— ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেইবলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন— ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেইবলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন— ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেইবলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন— ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেইবলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’কবি জয় গোস্বামীর আরও কবিতা পড়তেঃ এখানে ক্লিক করুন
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
কূর্ম চলেছেন। তাঁর পিঠ থেকে হঠাৎ
পৃথিবী গড়িয়ে পড়ে যায়
শূন্যে সে-গোলক ধরতে, ঘুম ভেঙে, শশক লাফায়
আকাশ ঝকঝক করে ওঠে
শ্বেতশুভ্র একটি উল্কায়
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
পশ্চিমে বাঁশবন। তার ধারে ধারে জল।
বিকেল দাঁড়াল ধানক্ষেতে।
জলে ভাঙা ভাঙা মেঘ। ফিরে আসছে মাছমারা বালকের দল।
খালি গা, কোমরে গামছা, লম্বা ছিপ, ঝুড়ি–
আবছা কোলাহল।
তোমার কি ইচ্ছে করে, এখন ওদের সঙ্গে যেতে?
কয়েদি উত্তর দেয় না। সে শুধু বিকেলটুকু
এঁকে রাখছে ঘরের মেঝেতে।
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
পোকা উঠেছে। গাছের কাণ্ডের গায়ে পোকা।
ধানবীজ হাতে ঢেলে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেখছে ধুতি ও ফতুয়াপরা চাষি
হাবলা গোবলা ছেলে দৌড়ে নেমে আসছে ঢালু পিচরাস্তা থেকে
ওরে পড়ে যাবি, ওরে পড়ে যাবি, ডাকতে ডাকতে আমি
বল্মীকের স্তূপ ভেঙে সমাজ সংসারে ছুটে আসি
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
জ্ঞানত কি আঘাত করেছি?
আমার তরফ থেকে কোন দুঃখ পৌঁছেছে কখনও?
ক্ষমা করতে পারলে না?
ছিঁড়ে ফেললে নাড়ি?
এত রক্ত এত রক্ত!দু'হাতে চেপেও
থামছে না যে!
তোমার প্রেমিককে বলে একবার পরামর্শ নাও
কী করে এ-রক্তপাত বন্ধ করতে পারি।
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
১বকুল শাখা পারুল শাখা
তাকাও কেন আমার দিকে?মিথ্যে জীবন কাটলো আমার
ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে –কী ক’রে আজ আবীর দেবো
তোমাদের ওই বান্ধবীকে !২শান্ত ব’লে জানতে আমায় ?
কলঙ্কহীন, শুদ্ধ ব’লে ?
কিন্তু আমি নরক থেকে
সাঁতরে এলামতখন আমার শরীর থেকে
গরম কাদা গড়িয়ে পড়ছে
রক্ত-কাদাহঠাৎ তোমায় দেখতে পেলাম
বালিকাদের গানের দলেসত্যি কিছু লুকোচ্ছি না ।প্রাচীন তপোবনের ধারে
তোমার বাড়িকখন যাবো ? – ঘুম পাচ্ছে –
বলো কখন মুখ রাখবো
তোমার কোলে !
বারণ করবে ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১বকুল শাখা পারুল শাখা
তাকাও কেন আমার দিকে?মিথ্যে জীবন কাটলো আমার
ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে –কী ক’রে আজ আবীর দেবো
তোমাদের ওই বান্ধবীকে !২শান্ত ব’লে জানতে আমায় ?
কলঙ্কহীন, শুদ্ধ ব’লে ?
কিন্তু আমি নরক থেকে
সাঁতরে এলামতখন আমার শরীর থেকে
গরম কাদা গড়িয়ে পড়ছে
রক্ত-কাদাহঠাৎ তোমায় দেখতে পেলাম
বালিকাদের গানের দলেসত্যি কিছু লুকোচ্ছি না ।প্রাচীন তপোবনের ধারে
তোমার বাড়িকখন যাবো ? – ঘুম পাচ্ছে –
বলো কখন মুখ রাখবো
তোমার কোলে !
বারণ করবে ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১বকুল শাখা পারুল শাখা
তাকাও কেন আমার দিকে?মিথ্যে জীবন কাটলো আমার
ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে –কী ক’রে আজ আবীর দেবো
তোমাদের ওই বান্ধবীকে !২শান্ত ব’লে জানতে আমায় ?
কলঙ্কহীন, শুদ্ধ ব’লে ?
কিন্তু আমি নরক থেকে
সাঁতরে এলামতখন আমার শরীর থেকে
গরম কাদা গড়িয়ে পড়ছে
রক্ত-কাদাহঠাৎ তোমায় দেখতে পেলাম
বালিকাদের গানের দলেসত্যি কিছু লুকোচ্ছি না ।প্রাচীন তপোবনের ধারে
তোমার বাড়িকখন যাবো ? – ঘুম পাচ্ছে –
বলো কখন মুখ রাখবো
তোমার কোলে !
বারণ করবে ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১বকুল শাখা পারুল শাখা
তাকাও কেন আমার দিকে?মিথ্যে জীবন কাটলো আমার
ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে –কী ক’রে আজ আবীর দেবো
তোমাদের ওই বান্ধবীকে !২শান্ত ব’লে জানতে আমায় ?
কলঙ্কহীন, শুদ্ধ ব’লে ?
কিন্তু আমি নরক থেকে
সাঁতরে এলামতখন আমার শরীর থেকে
গরম কাদা গড়িয়ে পড়ছে
রক্ত-কাদাহঠাৎ তোমায় দেখতে পেলাম
বালিকাদের গানের দলেসত্যি কিছু লুকোচ্ছি না ।প্রাচীন তপোবনের ধারে
তোমার বাড়িকখন যাবো ? – ঘুম পাচ্ছে –
বলো কখন মুখ রাখবো
তোমার কোলে !
বারণ করবে ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
স্বদেশমূলক
|
জগতে আনন্দযজ্ঞে
পেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
মিলেছি চোর সাধু ডাকাতপেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
জগতে আনন্দযজ্ঞে
জেনেছি নাচন কোঁদন সার
কিছুতেই টলবে না সংসারকিছুতেই টলবে না সংসার
জগতে আনন্দযজ্ঞে
রাখিনি গুড় গুড় ঢাক ঢাক
আমরা ভাত ছড়ালেই কাকআমরা ভাত ছড়ালেই কাক
জগতে আনন্দযজ্ঞে
যেখানে যা রাখবি তা রাখ
আমরা চিচিং চিচিং ফাঁকআমরা চিচিং চিচিং ফাঁক
আমাদের যা ইচ্ছে হোক গে
জগতে আনন্দযজ্ঞে
আমরা সব হারানো লোক
আকাশে ভাসিয়ে দিলাম চোখসাগরে ভাসিয়ে দিলাম চোখ
যা রে যা চোখ ভেসে যা দূর
আমার দূরের পলাশপুর
যেখানে বাংলাদেশের মন
ঘুমোলো মা-হারা ভাই বোনযেখানে সাত কাকে দাঁড় বায়
সুরের ময়ূরপঙ্খী না’য়
যেখানে হাওয়ায় হাওয়ায় ডাকে
ও গান মালঞ্চী কন্যাকে
মাধব মালঞ্চী কন্যাকেও তারে উড়িয়ে নিলো পাখা
ও তার বৃষ্টিতে মুখ ঢাকা
অঝোর বৃষ্টিতে মুখ ঢাকাতখন ভেসেছে নৌকাটি
হাওয়ায় ভেসেছে নৌকাটি
তলায় বাংলাদেশের মাটিমাটিতে আমরা কয়েকজন
আমরাই নির্ধনীয়ার ধন
পেয়েছি রাজকুমারীর মন
আরে যা রাজকুমারীর মনজানি না থাকবে কতক্ষণ
নাকি সে যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রজগতে আনন্দযজ্ঞে
পেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
মিলেছি চোর সাধু ডাকাতপেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
জগতে আনন্দযজ্ঞে
জেনেছি নাচন কোঁদন সার
কিছুতেই টলবে না সংসারকিছুতেই টলবে না সংসার
জগতে আনন্দযজ্ঞে
রাখিনি গুড় গুড় ঢাক ঢাক
আমরা ভাত ছড়ালেই কাকআমরা ভাত ছড়ালেই কাক
জগতে আনন্দযজ্ঞে
যেখানে যা রাখবি তা রাখ
আমরা চিচিং চিচিং ফাঁকআমরা চিচিং চিচিং ফাঁক
আমাদের যা ইচ্ছে হোক গে
জগতে আনন্দযজ্ঞে
আমরা সব হারানো লোক
আকাশে ভাসিয়ে দিলাম চোখসাগরে ভাসিয়ে দিলাম চোখ
যা রে যা চোখ ভেসে যা দূর
আমার দূরের পলাশপুর
যেখানে বাংলাদেশের মন
ঘুমোলো মা-হারা ভাই বোনযেখানে সাত কাকে দাঁড় বায়
সুরের ময়ূরপঙ্খী না’য়
যেখানে হাওয়ায় হাওয়ায় ডাকে
ও গান মালঞ্চী কন্যাকে
মাধব মালঞ্চী কন্যাকেও তারে উড়িয়ে নিলো পাখা
ও তার বৃষ্টিতে মুখ ঢাকা
অঝোর বৃষ্টিতে মুখ ঢাকাতখন ভেসেছে নৌকাটি
হাওয়ায় ভেসেছে নৌকাটি
তলায় বাংলাদেশের মাটিমাটিতে আমরা কয়েকজন
আমরাই নির্ধনীয়ার ধন
পেয়েছি রাজকুমারীর মন
আরে যা রাজকুমারীর মনজানি না থাকবে কতক্ষণ
নাকি সে যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রজগতে আনন্দযজ্ঞে
পেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
মিলেছি চোর সাধু ডাকাতপেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
জগতে আনন্দযজ্ঞে
জেনেছি নাচন কোঁদন সার
কিছুতেই টলবে না সংসারকিছুতেই টলবে না সংসার
জগতে আনন্দযজ্ঞে
রাখিনি গুড় গুড় ঢাক ঢাক
আমরা ভাত ছড়ালেই কাকআমরা ভাত ছড়ালেই কাক
জগতে আনন্দযজ্ঞে
যেখানে যা রাখবি তা রাখ
আমরা চিচিং চিচিং ফাঁকআমরা চিচিং চিচিং ফাঁক
আমাদের যা ইচ্ছে হোক গে
জগতে আনন্দযজ্ঞে
আমরা সব হারানো লোক
আকাশে ভাসিয়ে দিলাম চোখসাগরে ভাসিয়ে দিলাম চোখ
যা রে যা চোখ ভেসে যা দূর
আমার দূরের পলাশপুর
যেখানে বাংলাদেশের মন
ঘুমোলো মা-হারা ভাই বোনযেখানে সাত কাকে দাঁড় বায়
সুরের ময়ূরপঙ্খী না’য়
যেখানে হাওয়ায় হাওয়ায় ডাকে
ও গান মালঞ্চী কন্যাকে
মাধব মালঞ্চী কন্যাকেও তারে উড়িয়ে নিলো পাখা
ও তার বৃষ্টিতে মুখ ঢাকা
অঝোর বৃষ্টিতে মুখ ঢাকাতখন ভেসেছে নৌকাটি
হাওয়ায় ভেসেছে নৌকাটি
তলায় বাংলাদেশের মাটিমাটিতে আমরা কয়েকজন
আমরাই নির্ধনীয়ার ধন
পেয়েছি রাজকুমারীর মন
আরে যা রাজকুমারীর মনজানি না থাকবে কতক্ষণ
নাকি সে যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রজগতে আনন্দযজ্ঞে
পেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
মিলেছি চোর সাধু ডাকাতপেয়েছি হাত সাফাইয়ের হাত
জগতে আনন্দযজ্ঞে
জেনেছি নাচন কোঁদন সার
কিছুতেই টলবে না সংসারকিছুতেই টলবে না সংসার
জগতে আনন্দযজ্ঞে
রাখিনি গুড় গুড় ঢাক ঢাক
আমরা ভাত ছড়ালেই কাকআমরা ভাত ছড়ালেই কাক
জগতে আনন্দযজ্ঞে
যেখানে যা রাখবি তা রাখ
আমরা চিচিং চিচিং ফাঁকআমরা চিচিং চিচিং ফাঁক
আমাদের যা ইচ্ছে হোক গে
জগতে আনন্দযজ্ঞে
আমরা সব হারানো লোক
আকাশে ভাসিয়ে দিলাম চোখসাগরে ভাসিয়ে দিলাম চোখ
যা রে যা চোখ ভেসে যা দূর
আমার দূরের পলাশপুর
যেখানে বাংলাদেশের মন
ঘুমোলো মা-হারা ভাই বোনযেখানে সাত কাকে দাঁড় বায়
সুরের ময়ূরপঙ্খী না’য়
যেখানে হাওয়ায় হাওয়ায় ডাকে
ও গান মালঞ্চী কন্যাকে
মাধব মালঞ্চী কন্যাকেও তারে উড়িয়ে নিলো পাখা
ও তার বৃষ্টিতে মুখ ঢাকা
অঝোর বৃষ্টিতে মুখ ঢাকাতখন ভেসেছে নৌকাটি
হাওয়ায় ভেসেছে নৌকাটি
তলায় বাংলাদেশের মাটিমাটিতে আমরা কয়েকজন
আমরাই নির্ধনীয়ার ধন
পেয়েছি রাজকুমারীর মন
আরে যা রাজকুমারীর মনজানি না থাকবে কতক্ষণ
নাকি সে যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর যাবে বিসর্জন
ও ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ?আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
বাড়িটি আকাশে ফুটে আছে।
ছাদে ওই বালকবালিকা
নীচে দড়ি ফেলে ধরছে খেয়ানৌকো চাঁদ।
ক্রমশ গুটিয়ে তুলছে মেঘ থেকে আরো ঊর্ধ্বাকাশে
যা–ওদের কাছে যাবি? বিদ্যুতের মতো নীল কাছে?
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
কলঙ্ক, আমি কাজলের ঘরে থাকি
কাজল আমাকে বলে সমস্ত কথা
কলঙ্ক, আমি চোট লেগে যাওয়া পাখি—
বুঝি না অবৈধতা।
কলঙ্ক, আমি বন্ধুর বিশ্বাসে
রাখি একমুঠো ছাই, নিরুপায় ছাই
আমি অন্যের নিঃশ্বাস চুরি ক’রে
সে-নিঃশ্বাসে কি নিজেকে বাঁচাতে চাই?
কলঙ্ক, আমি রামধনু জুড়ে জুড়ে
দিন কাটাতাম, তাই রাত কাটতো না
আজ দিন রাত একাকার মিশে গিয়ে
চিরজ্বলন্ত সোনা
কলঙ্ক, তুমি প্রদীপ দেখেছো? আর প্রদীপের বাটি?
জানো টলটল করে সে আমার বন্ধুর দুই চোখে?
আমি ও কাজল সন্তান তার, বন্ধুরা জল মাটি
ফিরেও দেখি না পথে পড়ে থাকা
বৈধ-অবৈধকে—
যে যার মতন রোদবৃষ্টিতে হাঁটি…
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
আমি অযোগ্য তোমার
সম্পূর্ণই অযোগ্য তোমারপৃথিবীতে কোনও কাজে কারও যোগ্য নইতোমার সন্দেহ হত নিশ্চয়ই,তা সত্ত্বেও সৌজন্যবশেই
বলোনি আমাকে কোনওদিনআজকে একজন এসে সপ্তাহে দু'দিন তিনদিন
তোমাকে জলের মতো বুঝিয়ে দিতে পারলেন সবতাই তুমি ছেড়ে গেলে,যাও--জানলে না
এখনও তোমার জন্য কেঁপে কেঁপে ওঠে
আমার জীবন্ত এই শব।
|
জয় গোস্বামী
|
স্বদেশমূলক
|
কে মেয়েটি হঠাৎ প্রণাম করতে এলে ?
মাথার ওপর হাত রাখিনি
তোমার চেয়েও সসংকোচে এগিয়ে গেছি
তোমায় ফেলে
ময়লা চটি, ঘামের গন্ধ নোংরা গায়ে,
হলভরা লোক, সবাই দেখছে তার মধ্যেও
হাত রেখেছ আমার পায়ে
আজকে আমি বাড়ি ফিরেও স্নান করিনি
স্পর্শটুকু রাখব বলে
তোমার হাতের মুঠোয় ভরা পুস্করিণী
পরিবর্তে কী দেব আর ? আমার শুধু
দু’ চার পাতা লিখতে আসা
সর্বনাশের এপার ওপার দেখা যায় না
কিন্তু আমি দেখতে পেলাম, রাঙা আলোয়
দাঁড়িয়ে আছে সে-ছন্দ, সে-কীর্তিনাশা ।
অচেনা ওই মেয়ের চোখে যে পাঠাল
দু’-এক পলক বৃষ্টিভেজা বাংলা ভাষা ।
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
মাঠে বসে আছে জরদ্গব।
মাথায় পাহাড়।
সামনের থালায় মাটি। তৃণ।
সে খায়, থালায় গর্ত খুঁড়ে–
দইয়ের ভাঁড়ের মতো কেটে কেটে নামে–
আর ক্ষিদে শেষ হয় না–খনিজ সম্পদ
কমে আসে, আরো কম–সুড়ুৎ চুমুকে
জমানো তেলের গর্ভ খালি হয়ে যায়
কাদা-ঝোল মাখা হাতে, জরদ্গব, থাকা মনে ক’রে
খালি ফুটো পৃথিবী বাজায়!
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
বালি খোঁড়ে আমার বৃশ্চিক–
রৌদ্রে তার অসুবিধা হয়।
হাওয়ার, লোকের চাপে, বালি সরলে
সে বেরিয়ে আসে।
কাঁপাকাঁপা পায়ে
তটের পাথর খুঁজে তার নীচে সুড়ঙ্গ বানায়
শুধু রাত্রিবেলা তার আদিগন্ত ছড়ানো শরীর
ভেসে ওঠে সমুদ্রের উপর-আকাশে
তারকা নির্মিত দাড়া, অগ্নিময় দুটি পুচ্ছ-হুল
খেয়ালখুশিতে সে নাড়ায়
বসতি ঘুমোয়, শুধু জগতের সকল সমুদ্র যাত্রা থেকে
নাবিকরা তাকে দেখতে পায়।
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
জ্বলে 'ছ্যাৎ' আওয়াজে আমার
ঘুম ভাঙে
কোটি কোটি যুগ পরেকার
ঘুম,
যার মাথার ওপরে
হা করা আকাশগর্ত, লৌহমেঘ, আর
তার নিচে, ঘুরতে ঘুরতে, ক্রমশ তলিয়ে যাওয়া পৃথিবীর নিঃশব্দ চিৎকার।
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
ঘরে রাধাবিনোদ আকাশ
ঝুলনের চাঁদটি মেঝেতে
বিছানার পাশের লণ্ঠন
তার শুধু চক্ষু দপ্দপ্
অমাবস্যা পূর্ণিমা সড়ক
ফালাফালা ক’রে সারারাত
সে খুঁজে বেড়াচ্ছে একফালি
কবিতা লেখার যোগ্য শব!
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
আমরা যেদিন আগুনের নদী থেকে
তুলে আনলাম মা’র ভেসে-যাওয়া দেহ
সারা গা জ্বলছে, বোন তোর মনে আছে
প্রতিবেশীদের চোখে ছিল সন্দেহদীর্ঘ চঞ্চু, রোঁয়া-ওঠা ঘাড় তুলে
এগিয়ে এসেছে অভিজ্ঞ মোড়লেরা
বলেছে, এ সভা বিধান দিচ্ছে শোনো
দাহ করবার অধিকারী নয় এরাসেই রাত্রেই পালিয়েছি গ্রাম ছেড়ে
কাঁধে মা’র দেহ, উপরে জ্বলছে চাঁদ
পথে পড়েছিল বিষাক্ত জলাভূমি
পথে পড়েছিল চুন লবণের খাদআমার আঙুল খসে গেছে, তোর বুক
শুকিয়ে গিয়েছে তীব্র চুনের ঝাঁঝে
আহার ছিল না, শৌচ ছিল না কারো
আমরা ছিলাম শববহনের কাজেযে দেশে এলাম,মরা গাছ চারিদিকে
ডাল থেকে ঝোলে মৃতপশুদের ছাল
পৃথিবীর শেষ নদীর কিনারে এসে
নামিয়েছি আজ জননীর কংকালবোন তোকে বলি, এ অস্থি পোড়াবো না
গাছের কোটরে রেখে যাবো এই হাড়
আমরা শিখি নি । পরে যারা আছে তারা
তারা শিখবে না এর ঠিক ব্যবহার?সারা গায়ে আজ ছত্রাক আমাদের
চোখ নেই, শুধু কোটর জ্বলছে ক্ষোভে
আমি ভুলে গেছি পুরুষ ছিলাম কিনা
তোর মনে নেই ঋতু থেমে গেছে কবেপূবদিকে সাদা করোটি রঙের আলো
পিছনে নামছে সন্ধ্যার মতো ঘোর
পৃথিবীর শেষ শ্মশানের মাঝখানে
বসে আছি শুধু দুই মৃতদেহ চোর।
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
তমসা, আমার সীমা জল
জলের উপরকার চরে
একদিন বসেছিল পৃথিবীর মতো ভারী পাখি
ভূমিতলপিণ্ড তার চাপ
এতদিনে গলিয়ে দিয়েছে
যা গলেনি
ভূমির সমান ভারী পাপ
তার নীচে চাপা পড়ে আছে
নখচঞ্চুপালকের ধ্বংস অবশেষ
তমসা, আমার সীমাতীরে
এখন অরণ্যকূল, শান্ত গৃহসারি
স্নান আর কলহাস্য, নৌকা আর সাঁতারুর ঝাঁপ
যাদের অজ্ঞাতসারে রাত্রে মাঝে মাঝে জ্বলে ওঠে
আমার পিঠের বালি-কাদায় তারকাচিহ্ন–
দানবপক্ষীর পদচ্ছাপ!
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
আচমকা দ্বিতীয় থেকে
একজন তৃতীয় হয়ে গেলএতদিন সে-ই ছিল প্রেমিক।নতুনের আগমন হল অকস্মাৎ
(আমরা জানি না ঠিক-বেঠিক)যে লোক দ্বিতীয় থেকে তৃতীয়তে নেমেছে এখন
সে ঘুরে বেড়ায় রাস্তাঘাটেজ্ঞানশূন্য সে ভুলে বেড়ায়
দিগ্বিদিক
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
এই লেখা বুক ভেঙে লিখিতুমি তা বুঝবে না।জানি।ঠিকই।এখন তোমার চতুর্দিক
সদ্য পাওয়া প্রেমিকের আনন্দে উন্মাদ!তোমার কথার আলতো ঠেলা
আমাকে উপহার দিয়ে গেছে
কালো এক অন্ধকার খাদ।
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
তাকে ছেড়ে চলেছ সন্ধ্যায়
চাঁদ ওঠে।
চাঁদ উঠে যায়
গাছের মাথায়আর কোনও দায়
রইল না তোমারতোমার এই ছেড়ে যাওয়া
মহোল্লাসে উদযাপন কোরে
ঝোপঝাড়ে ঝিঁঝিপোকা ডাকে চমত্কারতোমার যাওয়ার পথে একদৃষ্টে তাকিয়ে
কেন যে বোকার মতো চোখ দিয়ে জল পড়ে এখনও
বৃদ্ধ লোকটার
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
মনে-মনে পুড়ে যাচ্ছি
বুঝতে পারছ না?একদিন তোমার ভরসা আমিই তো ছিলামপারি না ভিক্ষুক হতে জগত্সম্মুখেআজকে আমাকে তুমি তুষানলে বসিয়ে রেখেছবসে আছি দম চেপে
শেষ হয়ে আসা প্রাণটুকু
দুটি হাতে ধরে
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
চিনতে পেরে গেছে বলে যার জিভ
কেটে নিল ধর্ষণের পরে
দু’হাতে দু’টো পা ধরে
ছিঁড়ে ফেললো যার শিশুটিকে
ঘাড়ে দু’টো কোপ মেরে যার স্বামীকে
ফেলে রাখলো উঠোনের পাশে
মরা অবধি মুখে জল দিতে দিল না
সেই সব মেয়েদের ভেতরে
যে-শোকাগ্নি জ্বলছে
সেই আগুনের পাশে
এনে রাখো গুলির অর্ডার দেওয়া
শাসকের দু’ঘন্টা বিষাদ
তারপর মেপে দ্যাখো
কে বেশি কে কম
তারপর ভেবে দেখ
কারা বলেছিল
জীবন নরক করব, প্রয়োজনে
প্রাণে মারব, প্রাণে!এই ব’লে ময়ূর আজ
মুখে রক্ত তুলে
নেচে যায় শ্মশানে শ্মশানেআর সেই নৃত্য থেকে দিকে দিকে
ছিটকে পড়ে জ্বলন্ত পেখম ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রচিনতে পেরে গেছে বলে যার জিভ
কেটে নিল ধর্ষণের পরে
দু’হাতে দু’টো পা ধরে
ছিঁড়ে ফেললো যার শিশুটিকে
ঘাড়ে দু’টো কোপ মেরে যার স্বামীকে
ফেলে রাখলো উঠোনের পাশে
মরা অবধি মুখে জল দিতে দিল না
সেই সব মেয়েদের ভেতরে
যে-শোকাগ্নি জ্বলছে
সেই আগুনের পাশে
এনে রাখো গুলির অর্ডার দেওয়া
শাসকের দু’ঘন্টা বিষাদ
তারপর মেপে দ্যাখো
কে বেশি কে কম
তারপর ভেবে দেখ
কারা বলেছিল
জীবন নরক করব, প্রয়োজনে
প্রাণে মারব, প্রাণে!এই ব’লে ময়ূর আজ
মুখে রক্ত তুলে
নেচে যায় শ্মশানে শ্মশানেআর সেই নৃত্য থেকে দিকে দিকে
ছিটকে পড়ে জ্বলন্ত পেখম ।আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই (বা নব্বইয়ের বেশি)
তোমাকে হতেই হবে একদম প্রথম
তার বদলে মাত্র পঁচাশি!
পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম?
এই জন্য আমি রোজ মুখে রক্ত তুলে খেটে আসি?
এই জন্যে তোমার মা কাক ভোরে উঠে সব কাজকর্ম সেরে
ছোটবেলা থেকে যেতো তোমাকে ইস্কুলে পৌঁছে দিতে?
এই জন্য কাঠফাটা রোদ্দুরে কি প্যাচপ্যাচে বর্ষায়
সারাদিন বসে থাকতো বাড়ির রোয়াকে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে?
তারপর ছুটি হতে, ভিড় বাঁচাতে মিনিবাস ছেড়ে
অটো-অলাদের ঐ খারাপ মেজাজ সহ্য করে
বাড়ি এসে, না হাঁপিয়ে, আবার তোমার পড়া নিয়ে
বসে পড়তো, যতক্ষণ না আমি বাড়ি ফিরে
তোমার হোমটাস্ক দেখছি, তারপরে আঁচলে মুখ মুছে
ঢুলতো গিয়ে ভ্যাপসা রান্নাঘরে?
এই জন্যে? এই জন্যে হাড়ভাঙা ওভারটাইম করে
তোমার জন্য আন্টি রাখতাম?
মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার
হপ্তায় তিনদিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল?
বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার?
শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে
পাঠিয়েছি, জানিস না, কিরকম খরচাপাতি তার?
ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম!
কারো অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার।
রোজ যে যাস, দেখিস না কত সব বড় বড়
বাড়ি ও পাড়ায়
কত সব গাড়ি আসে, কত বড় আড়ি করে
বাবা মা-রা ছেলেমেয়েদের নিতে যায়?
আর ঐ গাড়ির পাশে, পাশে না পিছনে-
ঐ অন্ধকারটায়
রোজ দাঁড়াতে দেখিস না নিজের বাবাকে?
হাতে অফিসের ব্যাগ, গোপন টিফিন বাক্স, ঘেমো জামা, ভাঙা মুখ –
দেখতে পাসনা? মন কোথায় থাকে?
ঐ মেয়েগুলোর দিকে? যারা তোর সঙ্গে পড়তে আসে?
ওরা তোকে পাত্তা দেবে? ভুলেও ভাবিস না!
ওরা কত বড়লোক!
তোকে পাত্তা পেতে হলে থাকতে হবে বিদেশে, ফরেনে
এন আর আই হতে হবে! এন আর আই, এন আর আই!
তবেই ম্যাজিক দেখবি
কবিসাহিত্যিক থেকে মন্ত্রী অব্দি একডাকে চেনে
আমাদেরও নিয়ে যাবি, তোর মাকে, আমাকে
মাঝে মাঝে রাখবি নিজের কাছে এনে
তার জন্য প্রথম হওয়া দরকার প্রথমে
তাহলেই ছবি ছাপবে খবর কাগজ
আরো দরজা খুলে যাবে, আরো পাঁচ আরো পাঁচ
আরো আরো পাঁচ
পাঁচ পাঁচ করেই বাড়বে, অন্য দিকে মন দিস না,
বাঁচবি তো বাঁচার মত বাঁচ!
না বাপী না, না না বাপী, আমি মন দিই না কোনোদিকে
না বাপী না, না না আমি তাকাই না মেয়েদের দিকে
ওরা তো পাশেই বসে, কেমন সুগন্ধ আসে, কথা বলে, না না বাপী পড়ার কথাই
দেখি না, উত্তর দিই, নোট দিই নোট নিই
যেতে আসতে পথে ঘাটে
কত ছেলে মেয়ে গল্প করে
না বাপী না, আমি মেয়েদের সঙ্গে মিশতে যাই না কখোনো
যেতে আসতে দেখতে পাই কাদা মেখে কত ছেলে বল খেলছে মাঠে
কত সব দুষ্টু ছেলে পার্কে প্রজাপতি ধরছে
চাকা বা ডাঙ্গুলি খেলছে কত ছোটোলোক
না, আমি খেলতে যাই না কখোনো
খেলতে যাইনি। না আমার বন্ধু নেই
না বাপী না, একজন আছে, অপু, একক্লাসে পড়ে
ও বলে যে ওর বাবাও বলেছে প্রথম হতে
বলেছে, কাগজে ছবি, ওর বাবা, ওকে ….
হ্যাঁ বাপী হ্যা, না না বাপী, অপু বলেছে পড়াশোনা হয়নি একদম
বলেছে ও ব্যাক পাবে, ব্যাক পেলে ও বলেছে, বাড়িতে কোথায়
বাথরুম সাফ করার অ্যাসিড আছে ও জানে,
হ্যাঁ বাপী হ্যা, ও বলেছে,
উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..………………………………………………………………………………………….আবৃত্তি: আপন আহসান
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
কীভাবে এলাম এই শহরে, সে মস্ত ইতিহাস!
হামাগুড়ি দিয়ে আর ট্রেনের পিছনে ট্রেন ধরে
রেললাইনে হাতেপায়ে তালা ও শিকল বেঁধে শুয়ে
ট্রেন এসে পড়ামাত্র চক্ষের নিমিষে ড্রাইভারের
কেবিনের জানলা দিয়ে জনতার প্রতি হাত নেড়ে
টুপির ভেতর থেকে পায়রা খরগোশ ধরে, ছেড়ে,
মাথার এদিক দিয়ে রড ঢুকিয়ে ওদিকে বার করে
সম্মোহন করে নিজ সহকারিণীকে বাক্সে ভরে
সে-বাক্সের চারদিকে ঢুকিয়ে ষোলোটা তরোয়াল
টুং টাং লাইটার জ্বেলে বাক্সটি পুড়িয়ে ছাই করে
উড়ো মন্ত্র বলতে বলতে নেমে গিয়ে নিজে সে-মেয়েকে
দর্শক আসন থেকে বাহু ধরে মঞ্চে তুলে এনে
ম্যাজিকে প্রমাণ করে আমি হচ্ছি পয়লা নম্বর
তবেই শেষমেষ ডেকে জায়গা দিল আমাকে, শহর।
এখন ম্যাজিকই ধ্যান, জ্ঞান, বুদ্ধি, বাঁচামরা পেশা
ভোর থেকে হাতসাফাই, নিজের জিভ কেটে জোড়া দেওয়া
সন্ধ্যায় হাজির হওয়া মঞ্চে মঞ্চে ভরাভর্তি শো-এ
রাত্রিবেলা বাড়ি আসা ধুঁকে ধুঁকে করতালি সয়ে
ভোর থেকে প্র্যাকটিস শুরু, প্রত্যহ দাঁত দিয়ে ওই
কামড়ানো বুলেটে ধরা প্রাণ
একবার ফসকালে শেষ, মনে রেখো, ও ম্যাজিশিয়ান!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রকীভাবে এলাম এই শহরে, সে মস্ত ইতিহাস!
হামাগুড়ি দিয়ে আর ট্রেনের পিছনে ট্রেন ধরে
রেললাইনে হাতেপায়ে তালা ও শিকল বেঁধে শুয়ে
ট্রেন এসে পড়ামাত্র চক্ষের নিমিষে ড্রাইভারের
কেবিনের জানলা দিয়ে জনতার প্রতি হাত নেড়ে
টুপির ভেতর থেকে পায়রা খরগোশ ধরে, ছেড়ে,
মাথার এদিক দিয়ে রড ঢুকিয়ে ওদিকে বার করে
সম্মোহন করে নিজ সহকারিণীকে বাক্সে ভরে
সে-বাক্সের চারদিকে ঢুকিয়ে ষোলোটা তরোয়াল
টুং টাং লাইটার জ্বেলে বাক্সটি পুড়িয়ে ছাই করে
উড়ো মন্ত্র বলতে বলতে নেমে গিয়ে নিজে সে-মেয়েকে
দর্শক আসন থেকে বাহু ধরে মঞ্চে তুলে এনে
ম্যাজিকে প্রমাণ করে আমি হচ্ছি পয়লা নম্বর
তবেই শেষমেষ ডেকে জায়গা দিল আমাকে, শহর।
এখন ম্যাজিকই ধ্যান, জ্ঞান, বুদ্ধি, বাঁচামরা পেশা
ভোর থেকে হাতসাফাই, নিজের জিভ কেটে জোড়া দেওয়া
সন্ধ্যায় হাজির হওয়া মঞ্চে মঞ্চে ভরাভর্তি শো-এ
রাত্রিবেলা বাড়ি আসা ধুঁকে ধুঁকে করতালি সয়ে
ভোর থেকে প্র্যাকটিস শুরু, প্রত্যহ দাঁত দিয়ে ওই
কামড়ানো বুলেটে ধরা প্রাণ
একবার ফসকালে শেষ, মনে রেখো, ও ম্যাজিশিয়ান!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রকীভাবে এলাম এই শহরে, সে মস্ত ইতিহাস!
হামাগুড়ি দিয়ে আর ট্রেনের পিছনে ট্রেন ধরে
রেললাইনে হাতেপায়ে তালা ও শিকল বেঁধে শুয়ে
ট্রেন এসে পড়ামাত্র চক্ষের নিমিষে ড্রাইভারের
কেবিনের জানলা দিয়ে জনতার প্রতি হাত নেড়ে
টুপির ভেতর থেকে পায়রা খরগোশ ধরে, ছেড়ে,
মাথার এদিক দিয়ে রড ঢুকিয়ে ওদিকে বার করে
সম্মোহন করে নিজ সহকারিণীকে বাক্সে ভরে
সে-বাক্সের চারদিকে ঢুকিয়ে ষোলোটা তরোয়াল
টুং টাং লাইটার জ্বেলে বাক্সটি পুড়িয়ে ছাই করে
উড়ো মন্ত্র বলতে বলতে নেমে গিয়ে নিজে সে-মেয়েকে
দর্শক আসন থেকে বাহু ধরে মঞ্চে তুলে এনে
ম্যাজিকে প্রমাণ করে আমি হচ্ছি পয়লা নম্বর
তবেই শেষমেষ ডেকে জায়গা দিল আমাকে, শহর।
এখন ম্যাজিকই ধ্যান, জ্ঞান, বুদ্ধি, বাঁচামরা পেশা
ভোর থেকে হাতসাফাই, নিজের জিভ কেটে জোড়া দেওয়া
সন্ধ্যায় হাজির হওয়া মঞ্চে মঞ্চে ভরাভর্তি শো-এ
রাত্রিবেলা বাড়ি আসা ধুঁকে ধুঁকে করতালি সয়ে
ভোর থেকে প্র্যাকটিস শুরু, প্রত্যহ দাঁত দিয়ে ওই
কামড়ানো বুলেটে ধরা প্রাণ
একবার ফসকালে শেষ, মনে রেখো, ও ম্যাজিশিয়ান!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রকীভাবে এলাম এই শহরে, সে মস্ত ইতিহাস!
হামাগুড়ি দিয়ে আর ট্রেনের পিছনে ট্রেন ধরে
রেললাইনে হাতেপায়ে তালা ও শিকল বেঁধে শুয়ে
ট্রেন এসে পড়ামাত্র চক্ষের নিমিষে ড্রাইভারের
কেবিনের জানলা দিয়ে জনতার প্রতি হাত নেড়ে
টুপির ভেতর থেকে পায়রা খরগোশ ধরে, ছেড়ে,
মাথার এদিক দিয়ে রড ঢুকিয়ে ওদিকে বার করে
সম্মোহন করে নিজ সহকারিণীকে বাক্সে ভরে
সে-বাক্সের চারদিকে ঢুকিয়ে ষোলোটা তরোয়াল
টুং টাং লাইটার জ্বেলে বাক্সটি পুড়িয়ে ছাই করে
উড়ো মন্ত্র বলতে বলতে নেমে গিয়ে নিজে সে-মেয়েকে
দর্শক আসন থেকে বাহু ধরে মঞ্চে তুলে এনে
ম্যাজিকে প্রমাণ করে আমি হচ্ছি পয়লা নম্বর
তবেই শেষমেষ ডেকে জায়গা দিল আমাকে, শহর।
এখন ম্যাজিকই ধ্যান, জ্ঞান, বুদ্ধি, বাঁচামরা পেশা
ভোর থেকে হাতসাফাই, নিজের জিভ কেটে জোড়া দেওয়া
সন্ধ্যায় হাজির হওয়া মঞ্চে মঞ্চে ভরাভর্তি শো-এ
রাত্রিবেলা বাড়ি আসা ধুঁকে ধুঁকে করতালি সয়ে
ভোর থেকে প্র্যাকটিস শুরু, প্রত্যহ দাঁত দিয়ে ওই
কামড়ানো বুলেটে ধরা প্রাণ
একবার ফসকালে শেষ, মনে রেখো, ও ম্যাজিশিয়ান!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
ক্ষুধার শেষ ক্লান্তি, ক্ষার, ঘুমের শেষ জল–
যুদ্ধ, শেষ-খেলা
শেষরক্ত আকাশে পড়ে–রক্ত খেয়ে খেয়ে
সূর্য লাল ঢেলা
গোলায় পোড়া শহর, গাছ, পতাকা দিয়ে ঢাকা–
বিকেলবেলা কামানে নীল রঙ
সারাদিনের শিকার শেষ–আকাশে বেরিয়েছে
বেলুন হাতে, দেবদূতের সঙ।
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
জল থেকে ডাঙায় উঠে ওরা
পালিয়ে চলেছে আজীবন
এক যুগ থেকে অন্য যুগে
উড়ে আসে ক্ষেপনাস্ত্র, তীর
ছেলে বউ মেয়ে বুড়ো জননী ও শিশু কোলাহল
দাউদাউ উদ্ধাস্তু শিবির
|
জয় গোস্বামী
|
স্বদেশমূলক
|
১বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে,
রক্ত
গড়িয়ে পড়ছে…
কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে
বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : “রবি রে…”
উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটি প্রকাণ্ড হাহাকার
ঘুরে উঠল…
কে রবি? কে পুষ্পেন্দু? ভরত?
কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে? কাকে আর পাওয়া যায় নি?
কাকে শেশ দেখা গেছে
ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে?
রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সর লাশেদের ভিড়ে…২…বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে…
পিছনে কুকুর ছুটছে
ধর্, ধর্…
পিছনে শেয়াল
তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে
রাজ অনুচর
এই রক্ত ধরে রাখতে হবে
এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে
গড়ে উঠবে সারি সারি
কারখানা ঘর
তারপর
চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজবে
এ কাজ না যদি পার, রাজা
তাহলে
বণিক এসে তোমার গা থেকে
শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে৩আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে
প্রাণচিহ্নময় জনপদে
আমার গুরুত্ব ছিল…
গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে
রাস্তার দুপশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর
মাঠে
আমার গুরুত্ব ছিল…
আজ
আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত
হাড়িকাঠে!৪অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে
সূর্য উঠে আসে
বন্ধ থাকা ইশ্কুলের গায়ে ও মাথায়
রোদ পড়ে
রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা
কোদালে, বেলচায়
রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার
রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে…৫…না, না, না, না, না—
না বলে চিত্কার করছে গাছ
না বলে চিত্কার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া
না বলে চিত্কার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা
ভ্যান গাড়ি
আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ
ভেবে দেখছি না বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে
আমরা কি বিচারে বসতে পারি?৬তুমি কি খেজুরি? তুমি ভাঙাবেড়া?
সোনাচূড়া তুমি?
বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে ।
আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ
ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে ।৭আমরা পালিয়ে আছি
আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই
ইটভাটায়
মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধ্যেয় বেরোই
মন্টুর আড়তে—
মল্লিকের
বাইকের পিছন-সিটে বসে
আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায়
চলে যাই,
যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই ।
লোক মারতে হবে ।
আপাতত ইটভাঁটায়
লুকিয়ে রয়েছি…
অস্ত্র নিয়ে…
কখন অর্ডার আসে, দেখি ।৮পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা ।
সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল ।
ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে
ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে
রক্তিম পতাকটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল
তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে
দখল করেছ মুক্তাঞ্চল
পতাকাটি সেই রক্তবক্ষ পেতে ধারণ করলেন ।
তোমার কি মনে পড়ছে রাজা
শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ?
মনে পড়ছে আঠারো বছর আগে তিয়েন-আন-মেন?৯ভাসছে উপুর হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পড়া কালো প্যান্ট ।
কোন বাড়ির ছেলে?
নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে
তার মধ্যে নবই তো মাথা ।
একদিন নব-র মাথাও
গড়াবে খালের জলে,
ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা
এ এক পুরনো চক্র ।
এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা
তাঁদের কি হবে?
উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে
সেসব গর্দান আর মাথা
এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখ আজ
সে চক্র ভাঙার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম—
ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা ।১০অপূর্ব বিকেল নামছে ।
রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে ।
রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় ।
শোকাহত বাড়িটিতে
শুধু এক কাক এসে বসে ।
ডাকতে সাহস হয় না তারও ।
অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
যদি ঘুম ভেভে যায় তাঁর!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে,
রক্ত
গড়িয়ে পড়ছে…
কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে
বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : “রবি রে…”
উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটি প্রকাণ্ড হাহাকার
ঘুরে উঠল…
কে রবি? কে পুষ্পেন্দু? ভরত?
কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে? কাকে আর পাওয়া যায় নি?
কাকে শেশ দেখা গেছে
ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে?
রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সর লাশেদের ভিড়ে…২…বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে…
পিছনে কুকুর ছুটছে
ধর্, ধর্…
পিছনে শেয়াল
তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে
রাজ অনুচর
এই রক্ত ধরে রাখতে হবে
এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে
গড়ে উঠবে সারি সারি
কারখানা ঘর
তারপর
চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজবে
এ কাজ না যদি পার, রাজা
তাহলে
বণিক এসে তোমার গা থেকে
শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে৩আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে
প্রাণচিহ্নময় জনপদে
আমার গুরুত্ব ছিল…
গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে
রাস্তার দুপশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর
মাঠে
আমার গুরুত্ব ছিল…
আজ
আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত
হাড়িকাঠে!৪অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে
সূর্য উঠে আসে
বন্ধ থাকা ইশ্কুলের গায়ে ও মাথায়
রোদ পড়ে
রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা
কোদালে, বেলচায়
রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার
রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে…৫…না, না, না, না, না—
না বলে চিত্কার করছে গাছ
না বলে চিত্কার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া
না বলে চিত্কার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা
ভ্যান গাড়ি
আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ
ভেবে দেখছি না বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে
আমরা কি বিচারে বসতে পারি?৬তুমি কি খেজুরি? তুমি ভাঙাবেড়া?
সোনাচূড়া তুমি?
বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে ।
আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ
ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে ।৭আমরা পালিয়ে আছি
আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই
ইটভাটায়
মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধ্যেয় বেরোই
মন্টুর আড়তে—
মল্লিকের
বাইকের পিছন-সিটে বসে
আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায়
চলে যাই,
যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই ।
লোক মারতে হবে ।
আপাতত ইটভাঁটায়
লুকিয়ে রয়েছি…
অস্ত্র নিয়ে…
কখন অর্ডার আসে, দেখি ।৮পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা ।
সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল ।
ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে
ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে
রক্তিম পতাকটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল
তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে
দখল করেছ মুক্তাঞ্চল
পতাকাটি সেই রক্তবক্ষ পেতে ধারণ করলেন ।
তোমার কি মনে পড়ছে রাজা
শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ?
মনে পড়ছে আঠারো বছর আগে তিয়েন-আন-মেন?৯ভাসছে উপুর হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পড়া কালো প্যান্ট ।
কোন বাড়ির ছেলে?
নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে
তার মধ্যে নবই তো মাথা ।
একদিন নব-র মাথাও
গড়াবে খালের জলে,
ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা
এ এক পুরনো চক্র ।
এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা
তাঁদের কি হবে?
উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে
সেসব গর্দান আর মাথা
এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখ আজ
সে চক্র ভাঙার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম—
ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা ।১০অপূর্ব বিকেল নামছে ।
রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে ।
রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় ।
শোকাহত বাড়িটিতে
শুধু এক কাক এসে বসে ।
ডাকতে সাহস হয় না তারও ।
অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
যদি ঘুম ভেভে যায় তাঁর!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে,
রক্ত
গড়িয়ে পড়ছে…
কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে
বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : “রবি রে…”
উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটি প্রকাণ্ড হাহাকার
ঘুরে উঠল…
কে রবি? কে পুষ্পেন্দু? ভরত?
কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে? কাকে আর পাওয়া যায় নি?
কাকে শেশ দেখা গেছে
ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে?
রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সর লাশেদের ভিড়ে…২…বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে…
পিছনে কুকুর ছুটছে
ধর্, ধর্…
পিছনে শেয়াল
তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে
রাজ অনুচর
এই রক্ত ধরে রাখতে হবে
এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে
গড়ে উঠবে সারি সারি
কারখানা ঘর
তারপর
চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজবে
এ কাজ না যদি পার, রাজা
তাহলে
বণিক এসে তোমার গা থেকে
শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে৩আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে
প্রাণচিহ্নময় জনপদে
আমার গুরুত্ব ছিল…
গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে
রাস্তার দুপশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর
মাঠে
আমার গুরুত্ব ছিল…
আজ
আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত
হাড়িকাঠে!৪অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে
সূর্য উঠে আসে
বন্ধ থাকা ইশ্কুলের গায়ে ও মাথায়
রোদ পড়ে
রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা
কোদালে, বেলচায়
রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার
রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে…৫…না, না, না, না, না—
না বলে চিত্কার করছে গাছ
না বলে চিত্কার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া
না বলে চিত্কার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা
ভ্যান গাড়ি
আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ
ভেবে দেখছি না বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে
আমরা কি বিচারে বসতে পারি?৬তুমি কি খেজুরি? তুমি ভাঙাবেড়া?
সোনাচূড়া তুমি?
বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে ।
আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ
ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে ।৭আমরা পালিয়ে আছি
আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই
ইটভাটায়
মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধ্যেয় বেরোই
মন্টুর আড়তে—
মল্লিকের
বাইকের পিছন-সিটে বসে
আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায়
চলে যাই,
যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই ।
লোক মারতে হবে ।
আপাতত ইটভাঁটায়
লুকিয়ে রয়েছি…
অস্ত্র নিয়ে…
কখন অর্ডার আসে, দেখি ।৮পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা ।
সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল ।
ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে
ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে
রক্তিম পতাকটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল
তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে
দখল করেছ মুক্তাঞ্চল
পতাকাটি সেই রক্তবক্ষ পেতে ধারণ করলেন ।
তোমার কি মনে পড়ছে রাজা
শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ?
মনে পড়ছে আঠারো বছর আগে তিয়েন-আন-মেন?৯ভাসছে উপুর হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পড়া কালো প্যান্ট ।
কোন বাড়ির ছেলে?
নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে
তার মধ্যে নবই তো মাথা ।
একদিন নব-র মাথাও
গড়াবে খালের জলে,
ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা
এ এক পুরনো চক্র ।
এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা
তাঁদের কি হবে?
উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে
সেসব গর্দান আর মাথা
এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখ আজ
সে চক্র ভাঙার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম—
ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা ।১০অপূর্ব বিকেল নামছে ।
রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে ।
রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় ।
শোকাহত বাড়িটিতে
শুধু এক কাক এসে বসে ।
ডাকতে সাহস হয় না তারও ।
অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
যদি ঘুম ভেভে যায় তাঁর!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র১বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে,
রক্ত
গড়িয়ে পড়ছে…
কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে
বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : “রবি রে…”
উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটি প্রকাণ্ড হাহাকার
ঘুরে উঠল…
কে রবি? কে পুষ্পেন্দু? ভরত?
কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে? কাকে আর পাওয়া যায় নি?
কাকে শেশ দেখা গেছে
ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে?
রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সর লাশেদের ভিড়ে…২…বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে…
পিছনে কুকুর ছুটছে
ধর্, ধর্…
পিছনে শেয়াল
তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে
রাজ অনুচর
এই রক্ত ধরে রাখতে হবে
এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে
গড়ে উঠবে সারি সারি
কারখানা ঘর
তারপর
চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজবে
এ কাজ না যদি পার, রাজা
তাহলে
বণিক এসে তোমার গা থেকে
শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে৩আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে
প্রাণচিহ্নময় জনপদে
আমার গুরুত্ব ছিল…
গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে
রাস্তার দুপশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর
মাঠে
আমার গুরুত্ব ছিল…
আজ
আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত
হাড়িকাঠে!৪অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে
সূর্য উঠে আসে
বন্ধ থাকা ইশ্কুলের গায়ে ও মাথায়
রোদ পড়ে
রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা
কোদালে, বেলচায়
রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার
রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে…৫…না, না, না, না, না—
না বলে চিত্কার করছে গাছ
না বলে চিত্কার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া
না বলে চিত্কার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা
ভ্যান গাড়ি
আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ
ভেবে দেখছি না বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে
আমরা কি বিচারে বসতে পারি?৬তুমি কি খেজুরি? তুমি ভাঙাবেড়া?
সোনাচূড়া তুমি?
বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে ।
আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ
ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে ।৭আমরা পালিয়ে আছি
আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই
ইটভাটায়
মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধ্যেয় বেরোই
মন্টুর আড়তে—
মল্লিকের
বাইকের পিছন-সিটে বসে
আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায়
চলে যাই,
যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই ।
লোক মারতে হবে ।
আপাতত ইটভাঁটায়
লুকিয়ে রয়েছি…
অস্ত্র নিয়ে…
কখন অর্ডার আসে, দেখি ।৮পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা ।
সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল ।
ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে
ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে
রক্তিম পতাকটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল
তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে
দখল করেছ মুক্তাঞ্চল
পতাকাটি সেই রক্তবক্ষ পেতে ধারণ করলেন ।
তোমার কি মনে পড়ছে রাজা
শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ?
মনে পড়ছে আঠারো বছর আগে তিয়েন-আন-মেন?৯ভাসছে উপুর হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পড়া কালো প্যান্ট ।
কোন বাড়ির ছেলে?
নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে
তার মধ্যে নবই তো মাথা ।
একদিন নব-র মাথাও
গড়াবে খালের জলে,
ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা
এ এক পুরনো চক্র ।
এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা
তাঁদের কি হবে?
উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে
সেসব গর্দান আর মাথা
এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখ আজ
সে চক্র ভাঙার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম—
ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা ।১০অপূর্ব বিকেল নামছে ।
রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে ।
রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় ।
শোকাহত বাড়িটিতে
শুধু এক কাক এসে বসে ।
ডাকতে সাহস হয় না তারও ।
অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
যদি ঘুম ভেভে যায় তাঁর!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো
বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?
বেণীমাধব, মোহনবাঁশি তমাল তরুমূলে
বাজিয়েছিলে, আমি তখন মালতী ইস্কুলে
ডেস্কে বসে অঙ্ক করি, ছোট্ট ক্লাসঘর
বাইরে দিদিমণির পাশে দিদিমণির বর
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি
আলাপ হলো, বেণীমাধব, সুলেখাদের বাড়ি
বেণীমাধব, বেণীমাধব, লেখাপড়ায় ভালো
শহর থেকে বেড়াতে এলে, আমার রঙ কালো
তোমায় দেখে এক দৌড়ে পালিয়ে গেছি ঘরে
বেণীমাধব, আমার বাবা দোকানে কাজ করে
কুঞ্জে অলি গুঞ্জে তবু, ফুটেছে মঞ্জরী
সন্ধেবেলা পড়তে বসে অঙ্কে ভুল করি
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন ষোল
ব্রীজের ধারে, বেণীমাধব, লুকিয়ে দেখা হলো
বেণীমাধব, বেণীমাধব, এতদিনের পরে
সত্যি বলো, সে সব কথা এখনো মনে পড়ে?
সে সব কথা বলেছো তুমি তোমার প্রেমিকাকে?
আমি কেবল একটি দিন তোমার পাশে তাকে
দেখেছিলাম আলোর নীচে; অপূর্ব সে আলো!
স্বীকার করি, দুজনকেই মানিয়েছিল ভালো
জুড়িয়ে দিলো চোখ আমার, পুড়িয়ে দিলো চেখ
বাড়িতে এসে বলেছিলাম, ওদের ভালো হোক।
রাতে এখন ঘুমাতে যাই একতলার ঘরে
মেঝের উপর বিছানা পাতা, জ্যোৎস্না এসে পড়ে
আমার পরে যে বোন ছিলো চোরাপথের বাঁকে
মিলিয়ে গেছে, জানি না আজ কার সঙ্গে থাকে
আজ জুটেছে, কাল কী হবে? – কালের ঘরে শনি
আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি
তবু আগুন, বেণীমাধব, আগুন জ্বলে কই?
কেমন হবে, আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই?
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
প্রেম হবে বলে আজ এখানে এসেছি গাছে নতুন দোয়েল পাখি ডাকে
পুরনো দোয়েল শ্যামা নয়নে নয়ন রেখে কটুবাক্য বলে দিতে চায়
জলে দিতে চায় ওরা আমাকে হৃদয় আমি একলা শ্যামল মেয়ে হায়
পথ ভুলে এ-কোথায় এসে পড়লাম আজ শান্তিপুর ডুবু ডুবু নদে ভেসে যায়
ওলো ও তরুণগাছ সঙ্গ দেবে বলে শুধু পাতাভরা ডালখানি এনে
মাথায় বুলিয়ে কেন দিলে কেন দিলে আমি কোনো জন্ম দেখলাম না এমন পুষ্কর
গা ধুতে পারলাম না আমি জল ভরতেও নয় একী গো তোমার বিবেচনা
কী ঘরে ঘরের কাজ করি আমি কী প্রকারে মন রাখি পাঠে আজ
আমার যে গা ভরতি সোনা
খুলে খুলে পড়ে গেল বনমাঝে দস্যুদল আছোলা চালিয়ে দিলো বাঁশ–
পুলিশে উদ্ধার করল অজ্ঞান উপায়ে বলো হে প্রিয় পুলিশ
আমি তো সমস্ত ছেড়ে চলেই এসেছি আমি পা পিছলে পড়েছি
তোমার প্রণয়ে জল হাড়গোড় ভেঙেছি ওরে যত আছ হাড়গোড়
ভাঙা সব এসো পাছে পাছে
আসন গ্রহণ করো, প্রেম হবে প্রেম হবে, হরিনাম খাবলা খাবলা
হবে বলে নদীয়াসমাজে
ডাকো রে সকলে মিলি, খোঁড়া অন্ধ কানা ডাকো, যে আছ ক্ষুধার্ত পাখি
সব শালা ডাকো গাছে গাছে…
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
ওরা ভস্মমুখ। ওরা নির্বাপিত। ওরা
ধূম্রনাসা কাঠ
অনেক পাঁকের নীচে আধপোড়া কাঠ হয়ে ওরা
পালিয়ে ঘুরেছে কতক্ষণ।
এক একটি ক্ষণের সঙ্গে এক এক শতক পার হল
এখন আমার কাজ ওদের বিছানাগুলি খোঁড়া
ওদের সযত্নে শুইয়ে গায়ে চাপা দেওয়া
চাদর কম্বল নয়–মাটি
ওরা মা বাবার মতো। ওদের অস্থি-র খোঁজ পেতে
শত শত গোর গর্ত বাঙ্কার ফক্স-হোল খুঁড়ে খুঁড়ে
তাই এত ক্রোধ কান্না শোক ভস্ম ঘাঁটি।
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
আপনি যা বলবেন
আমি ঠিক তাই কোরবো
তাই খাবো
তাই পরবো
তাই গায়ে মেখে ব্যাড়াতে যাবো
কথাটি না বলে
বললে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকবো সারা রাত
তাই থাকবো
পরদিন যখন বলবেন
এবার নেমে এসো
তখন কিন্তু লোক লাগবে আমাকে নামাতে
একা একা নামতো পারবো না
ও টুকু পারি নি বলে
অপরাধ নেবেন না যেন
|
জয় গোস্বামী
|
শোকমূলক
|
—- ‘ভিতরে না…ভিতরে না… দেখো সাবধানে…’
—- ‘হ্যাঁ জানি। খেয়াল আছে। দেব না। দিচ্ছি না। ভয় নেই’
দাম্ভিক মেয়েটি ঠিক ওই সময় কত অসহায়
আমাকে বিশ্বাস করেছিল।নিজের আনন্দ রাখতে মারের সাবধান রইল না।
—- ‘যদি কিছু হয়ে যায়’
—- ‘ও কিছু হবে না।’ —- ‘ঠিক তো?’—- ‘না কিছু হবে না।’
শিকড় উপড়ে তুলতে দেরি হয়েছিল।ভাঙা গর্ভ থেকে টেনে বার করা অসমাপ্ত ফল
নার্সিংহোমের নীচে নর্দমার পাশে
ব্যান্ডেজ প্লাস্টারভাঙা তুলো রক্ত পলিথিনে
মিশে রইল জঞ্জালের মতো…আমার সাহস থাকলে ওর আজকে দশ বছর হত!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র—- ‘ভিতরে না…ভিতরে না… দেখো সাবধানে…’
—- ‘হ্যাঁ জানি। খেয়াল আছে। দেব না। দিচ্ছি না। ভয় নেই’
দাম্ভিক মেয়েটি ঠিক ওই সময় কত অসহায়
আমাকে বিশ্বাস করেছিল।নিজের আনন্দ রাখতে মারের সাবধান রইল না।
—- ‘যদি কিছু হয়ে যায়’
—- ‘ও কিছু হবে না।’ —- ‘ঠিক তো?’—- ‘না কিছু হবে না।’
শিকড় উপড়ে তুলতে দেরি হয়েছিল।ভাঙা গর্ভ থেকে টেনে বার করা অসমাপ্ত ফল
নার্সিংহোমের নীচে নর্দমার পাশে
ব্যান্ডেজ প্লাস্টারভাঙা তুলো রক্ত পলিথিনে
মিশে রইল জঞ্জালের মতো…আমার সাহস থাকলে ওর আজকে দশ বছর হত!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র—- ‘ভিতরে না…ভিতরে না… দেখো সাবধানে…’
—- ‘হ্যাঁ জানি। খেয়াল আছে। দেব না। দিচ্ছি না। ভয় নেই’
দাম্ভিক মেয়েটি ঠিক ওই সময় কত অসহায়
আমাকে বিশ্বাস করেছিল।নিজের আনন্দ রাখতে মারের সাবধান রইল না।
—- ‘যদি কিছু হয়ে যায়’
—- ‘ও কিছু হবে না।’ —- ‘ঠিক তো?’—- ‘না কিছু হবে না।’
শিকড় উপড়ে তুলতে দেরি হয়েছিল।ভাঙা গর্ভ থেকে টেনে বার করা অসমাপ্ত ফল
নার্সিংহোমের নীচে নর্দমার পাশে
ব্যান্ডেজ প্লাস্টারভাঙা তুলো রক্ত পলিথিনে
মিশে রইল জঞ্জালের মতো…আমার সাহস থাকলে ওর আজকে দশ বছর হত!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র—- ‘ভিতরে না…ভিতরে না… দেখো সাবধানে…’
—- ‘হ্যাঁ জানি। খেয়াল আছে। দেব না। দিচ্ছি না। ভয় নেই’
দাম্ভিক মেয়েটি ঠিক ওই সময় কত অসহায়
আমাকে বিশ্বাস করেছিল।নিজের আনন্দ রাখতে মারের সাবধান রইল না।
—- ‘যদি কিছু হয়ে যায়’
—- ‘ও কিছু হবে না।’ —- ‘ঠিক তো?’—- ‘না কিছু হবে না।’
শিকড় উপড়ে তুলতে দেরি হয়েছিল।ভাঙা গর্ভ থেকে টেনে বার করা অসমাপ্ত ফল
নার্সিংহোমের নীচে নর্দমার পাশে
ব্যান্ডেজ প্লাস্টারভাঙা তুলো রক্ত পলিথিনে
মিশে রইল জঞ্জালের মতো…আমার সাহস থাকলে ওর আজকে দশ বছর হত!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
সেই কবিতাটা বজ্জাত।
সংশোধন করার জন্যে যেই না কবিতাটার একটা জায়গা কেটেছি, অমনি সেই ফাঁক
দিয়ে একটা গাছ ডাল বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
‘কী রে, আম কুড়োতে যাবি না?’
আর একটা জায়গা কাটতেই সেখান
থেকে একটা মেয়ে মুখ বার করে বলল,
‘আমি কিন্তু কিছু জানি না! বিকেলে আমি জামা কিনতে যাবো ই যাবো!’
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে একটা স্পেস দিলাম।
কোনোমতে কয়েক চরণ এগোতে-না-এগোতেই
দেখি আমাকে কিছু না জানিয়েই নিচের স্তবক থেকে ওপরের স্ট্যাঞ্জায়
লতিয়ে উঠেছে লাউলতা পুঁইলতা মাধবীলতা-ও।
ওপরের থেকে ঝরে পড়ছে ঝুপ ঝুপ সাদা লেবু ফুল, গন্ধে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি নিচের স্তবকের ও দুটো শব্দ কাটতেই
সেখানে একটা জানলা ফুটে গেল।
জানলার বাইরে মাঠ আর মেঘ ফুটল।
মেঘে ফুটে গেল তারা।
এদিকে, বুকুনের জন্যে আনা তুলোর তৈরী তিনটে ভালুক ছানা জ্যান্ত হয়ে জানলা দিয়ে নেমে চলে যেতে থাকল মাঠের দিকে,
এই রে। এক্ষুনি তো বুকুন ওদের খুঁজে না পেয়ে মহা অনর্থ করবে!
ভয় পেয়ে আমি কারেকশন বন্ধ করে কবিতাটা
যেমনকে তেমনই রেখে দিলাম টেবিলে।
রেখে স্নান করতে গেলাম।
এসে দেখি ততক্ষণে ভালুকছানারা ফিরে এসে,
কবিতাটার মধ্যে একটা কাঠের বাড়ি বানাতে শুরু করেছে।
মেয়েটা নতুন জামা পরে দৌড়চ্ছে আমগাছতলায়।
আর কবিতাটার একদিকে একটা মাটির দাওয়া বেরিয়ে এসেছে,
সেখানে তিন ছেলেকে ভাত দিচ্ছেন মা, আর
বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে গেছে ভাঙ্গা পাঁচিল,
পোড়ো বাগান-
সেখান থেকে এগিয়ে আসা লেবু ফুল আর
ঝুমকো ফুল,
লাউলতা আর মাধবীলতা, কাঁটাবন আর
গোলাপবন,
আরো কী কী সব নাম না জানা গাছপাতায়
কবিতাটা আড়াল হয়ে গেছে একেবারে …
তা যাক গে। সেই বজ্জাত
কবিতাটা তো আর আমি
আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি না!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রসেই কবিতাটা বজ্জাত।
সংশোধন করার জন্যে যেই না কবিতাটার একটা জায়গা কেটেছি, অমনি সেই ফাঁক
দিয়ে একটা গাছ ডাল বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
‘কী রে, আম কুড়োতে যাবি না?’
আর একটা জায়গা কাটতেই সেখান
থেকে একটা মেয়ে মুখ বার করে বলল,
‘আমি কিন্তু কিছু জানি না! বিকেলে আমি জামা কিনতে যাবো ই যাবো!’
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে একটা স্পেস দিলাম।
কোনোমতে কয়েক চরণ এগোতে-না-এগোতেই
দেখি আমাকে কিছু না জানিয়েই নিচের স্তবক থেকে ওপরের স্ট্যাঞ্জায়
লতিয়ে উঠেছে লাউলতা পুঁইলতা মাধবীলতা-ও।
ওপরের থেকে ঝরে পড়ছে ঝুপ ঝুপ সাদা লেবু ফুল, গন্ধে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি নিচের স্তবকের ও দুটো শব্দ কাটতেই
সেখানে একটা জানলা ফুটে গেল।
জানলার বাইরে মাঠ আর মেঘ ফুটল।
মেঘে ফুটে গেল তারা।
এদিকে, বুকুনের জন্যে আনা তুলোর তৈরী তিনটে ভালুক ছানা জ্যান্ত হয়ে জানলা দিয়ে নেমে চলে যেতে থাকল মাঠের দিকে,
এই রে। এক্ষুনি তো বুকুন ওদের খুঁজে না পেয়ে মহা অনর্থ করবে!
ভয় পেয়ে আমি কারেকশন বন্ধ করে কবিতাটা
যেমনকে তেমনই রেখে দিলাম টেবিলে।
রেখে স্নান করতে গেলাম।
এসে দেখি ততক্ষণে ভালুকছানারা ফিরে এসে,
কবিতাটার মধ্যে একটা কাঠের বাড়ি বানাতে শুরু করেছে।
মেয়েটা নতুন জামা পরে দৌড়চ্ছে আমগাছতলায়।
আর কবিতাটার একদিকে একটা মাটির দাওয়া বেরিয়ে এসেছে,
সেখানে তিন ছেলেকে ভাত দিচ্ছেন মা, আর
বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে গেছে ভাঙ্গা পাঁচিল,
পোড়ো বাগান-
সেখান থেকে এগিয়ে আসা লেবু ফুল আর
ঝুমকো ফুল,
লাউলতা আর মাধবীলতা, কাঁটাবন আর
গোলাপবন,
আরো কী কী সব নাম না জানা গাছপাতায়
কবিতাটা আড়াল হয়ে গেছে একেবারে …
তা যাক গে। সেই বজ্জাত
কবিতাটা তো আর আমি
আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি না!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রসেই কবিতাটা বজ্জাত।
সংশোধন করার জন্যে যেই না কবিতাটার একটা জায়গা কেটেছি, অমনি সেই ফাঁক
দিয়ে একটা গাছ ডাল বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
‘কী রে, আম কুড়োতে যাবি না?’
আর একটা জায়গা কাটতেই সেখান
থেকে একটা মেয়ে মুখ বার করে বলল,
‘আমি কিন্তু কিছু জানি না! বিকেলে আমি জামা কিনতে যাবো ই যাবো!’
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে একটা স্পেস দিলাম।
কোনোমতে কয়েক চরণ এগোতে-না-এগোতেই
দেখি আমাকে কিছু না জানিয়েই নিচের স্তবক থেকে ওপরের স্ট্যাঞ্জায়
লতিয়ে উঠেছে লাউলতা পুঁইলতা মাধবীলতা-ও।
ওপরের থেকে ঝরে পড়ছে ঝুপ ঝুপ সাদা লেবু ফুল, গন্ধে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি নিচের স্তবকের ও দুটো শব্দ কাটতেই
সেখানে একটা জানলা ফুটে গেল।
জানলার বাইরে মাঠ আর মেঘ ফুটল।
মেঘে ফুটে গেল তারা।
এদিকে, বুকুনের জন্যে আনা তুলোর তৈরী তিনটে ভালুক ছানা জ্যান্ত হয়ে জানলা দিয়ে নেমে চলে যেতে থাকল মাঠের দিকে,
এই রে। এক্ষুনি তো বুকুন ওদের খুঁজে না পেয়ে মহা অনর্থ করবে!
ভয় পেয়ে আমি কারেকশন বন্ধ করে কবিতাটা
যেমনকে তেমনই রেখে দিলাম টেবিলে।
রেখে স্নান করতে গেলাম।
এসে দেখি ততক্ষণে ভালুকছানারা ফিরে এসে,
কবিতাটার মধ্যে একটা কাঠের বাড়ি বানাতে শুরু করেছে।
মেয়েটা নতুন জামা পরে দৌড়চ্ছে আমগাছতলায়।
আর কবিতাটার একদিকে একটা মাটির দাওয়া বেরিয়ে এসেছে,
সেখানে তিন ছেলেকে ভাত দিচ্ছেন মা, আর
বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে গেছে ভাঙ্গা পাঁচিল,
পোড়ো বাগান-
সেখান থেকে এগিয়ে আসা লেবু ফুল আর
ঝুমকো ফুল,
লাউলতা আর মাধবীলতা, কাঁটাবন আর
গোলাপবন,
আরো কী কী সব নাম না জানা গাছপাতায়
কবিতাটা আড়াল হয়ে গেছে একেবারে …
তা যাক গে। সেই বজ্জাত
কবিতাটা তো আর আমি
আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি না!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রসেই কবিতাটা বজ্জাত।
সংশোধন করার জন্যে যেই না কবিতাটার একটা জায়গা কেটেছি, অমনি সেই ফাঁক
দিয়ে একটা গাছ ডাল বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
‘কী রে, আম কুড়োতে যাবি না?’
আর একটা জায়গা কাটতেই সেখান
থেকে একটা মেয়ে মুখ বার করে বলল,
‘আমি কিন্তু কিছু জানি না! বিকেলে আমি জামা কিনতে যাবো ই যাবো!’
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে একটা স্পেস দিলাম।
কোনোমতে কয়েক চরণ এগোতে-না-এগোতেই
দেখি আমাকে কিছু না জানিয়েই নিচের স্তবক থেকে ওপরের স্ট্যাঞ্জায়
লতিয়ে উঠেছে লাউলতা পুঁইলতা মাধবীলতা-ও।
ওপরের থেকে ঝরে পড়ছে ঝুপ ঝুপ সাদা লেবু ফুল, গন্ধে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি নিচের স্তবকের ও দুটো শব্দ কাটতেই
সেখানে একটা জানলা ফুটে গেল।
জানলার বাইরে মাঠ আর মেঘ ফুটল।
মেঘে ফুটে গেল তারা।
এদিকে, বুকুনের জন্যে আনা তুলোর তৈরী তিনটে ভালুক ছানা জ্যান্ত হয়ে জানলা দিয়ে নেমে চলে যেতে থাকল মাঠের দিকে,
এই রে। এক্ষুনি তো বুকুন ওদের খুঁজে না পেয়ে মহা অনর্থ করবে!
ভয় পেয়ে আমি কারেকশন বন্ধ করে কবিতাটা
যেমনকে তেমনই রেখে দিলাম টেবিলে।
রেখে স্নান করতে গেলাম।
এসে দেখি ততক্ষণে ভালুকছানারা ফিরে এসে,
কবিতাটার মধ্যে একটা কাঠের বাড়ি বানাতে শুরু করেছে।
মেয়েটা নতুন জামা পরে দৌড়চ্ছে আমগাছতলায়।
আর কবিতাটার একদিকে একটা মাটির দাওয়া বেরিয়ে এসেছে,
সেখানে তিন ছেলেকে ভাত দিচ্ছেন মা, আর
বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে গেছে ভাঙ্গা পাঁচিল,
পোড়ো বাগান-
সেখান থেকে এগিয়ে আসা লেবু ফুল আর
ঝুমকো ফুল,
লাউলতা আর মাধবীলতা, কাঁটাবন আর
গোলাপবন,
আরো কী কী সব নাম না জানা গাছপাতায়
কবিতাটা আড়াল হয়ে গেছে একেবারে …
তা যাক গে। সেই বজ্জাত
কবিতাটা তো আর আমি
আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি না!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
ঘরের কুকুর ঢুকল ঘরে, গোঁফে সন্দেহের রোঁয়া
শুঁকে-শুঁকে ফিরে গেল। কোনও দেহ পড়ে নেই আর।
দ্যাখেনি সে,বারান্দায় কাটা মাথা রয়ে গেছে প্রভুজি, তোমার।
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
ভূপৃষ্ঠের ধাতব মলাটে
দাঁড়িয়েছে ইস্পাতের ঘাস
রাত্রি ঢেকে শুয়েছে আকাশ
না-পড়া বিদ্যুৎশাস্ত্র হাতে
ক্রীতদাস চলে যায় কারাগার হারাতে হারাতে
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো : ‘এই জীবন নিয়ে
তুমি কি করেছো এতদিন ?’— তাহলে আমি বলবো
একদিন বমি করেছিলাম, একদিন ঢোঁক
গিলেছিলাম, একদিন আমি ছোঁয়া মাত্র জল
রুপান্তরিত হয়েছিল দুধে, একদিন আমাকে দেখেই
এক অপ্সরার মাথা ঘুরে গিয়েছিল একদিন
আমাকে না বলেই আমার দুটো হাত
কদিনের জন্য উড়ে গেছিল হাওয়ায়
একদিন মদ হিসেবে ঢুকেছিলাম এক
জবরদস্ত মাতালের পেটে, একদিন সম্পূর্ণ
অন্যভাবে বেরিয়ে এসেছিলাম এক
রূপসীর শোকাশ্রুরুপে, আর তৎক্ষণাৎ
আহা উহু আহা উহু করতে করতে আমাকে
শুষে নিয়েছিল বহুমূল্য মসলিন
একদিন গায়ে হাত তুলেছিলাম
একদিন পা তুলেছিলাম
একদিন জিভ ভেঙিয়েছিলাম
একদিন সাবান মেখেছিলাম
একদিন সাবান মাখিয়েছিলাম যদি
বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করুন আমার মৃত্যুকে
একদিন কা কা করে ডেকে বেরিয়েছিলাম সারাবেলা
একদিন তাড়া করেছিলাম স্বয়ং কাকতাড়ুয়াকেই
একদিন শুয়োর পুষেছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন ছাগল
একদিন দোদোমা ফাটিয়েছিলাম, একদিন চকলেট
একদিন বাঁশি বাজিয়েছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন রাধাকেও
একদিন আমার মুখ আমি আচ্ছা ক’রে গুঁজে দিয়েছিলাম
একজনের কোলে আর আমার বাকি শরীরটা তখন
কিনে নিয়েছিল অন্য কেউ কে তা আমি এখনো জানি না যদি
বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করো গিয়ে তোমার…
একদিন আমার শরীর ছিল তরুণ পাতায় ভরা
আর আমার আঙুল ছিল লম্বা সাদা বকফুল
আমার চুল ছিল একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ
হাওয়া এলেই যেখানে খুশি উড়ে যাবে, কেবল সেইজন্য—
একদিন মাঠের পর মাঠে আমি ছিলাম বিছিয়ে রাখা ঘাস
তুমি এসে শরীর ঢেলে দেবে, কেবল সেইজন্য—
আর সমস্ত নিষেধের বাইরে ছিল
আমার দুটো চোখ
এ নদী থেকে ও নদী থেকে সেই সে নদীতে
কেবলই ভেসে বেড়াতো তারা
সেই রকমই কোনো নদীর উপর, রোগা একটা সাঁকোর মতো
একদিন আমি পেতে রেখেছিলাম আমার সাষ্টাঙ্গ শরীর
যাতে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারে লোক
কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই
যাতে ওপার থেকে এপারে চলে আসতে পারে লোক
কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন এপার থেকে
ওপারে চলে গিয়েছিল আসগর আলি মণ্ডলরা বাবুল ইসলামরা
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন ওপার থেকে
এপারে চলে এসেছিল তোমার নতুন শাড়ি-পরা মা,
টেপ-জামা-পরা আমার সান্তুমাসী
একদিন সংবিধান লিখতে লিখতে একটু
তন্দ্রা এসে গিয়েছিল আমার দুপুরের ভাত-ঘুম মতো এসেছিল একটু
আর সেই ফাঁকে কারা সব এসে ইচ্ছে মতো
কাটাকুটি করে গিয়েছে দেহি পদপল্লব মুদারম্
একদিন একদম ন্যাংটো হয়ে
ছুটতে ছুটতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে আমি পেশ করেছিলাম
বাজেট
একদিন হাঁ করেছিলাম একদিন হাঁ বন্ধ করেছিলাম
কিন্তু আমার হা-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না
কিন্তু আমার না-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না
একদিন দুই গাল বেয়ে ঝরঝর ক’রে রক্তগড়ানো অবস্থায়
জলে কাদায় ধানক্ষেত পাটক্ষেতের মধ্যে
হাতড়ে হাতড়ে আমি খুঁজে ফিরেছিলাম আমার উপড়ে নেওয়া চোখ
একদিন পিঠে ছরা-গাঁথা অবস্থায়
রক্ত কাশতে কাশতে আমি আছড়ে এসে পরেছিলাম দাওয়ায়
আর দলবেঁধে, লণ্ঠন উঁচু করে, আমায় দেখতে এসেছিল গ্রামের লোক
একদিন দাউদাউ ক’রে জ্বলতে থাকা ঝোপঝাড় মধ্য থেকে
সারা গায়ে আগুন নিয়ে আমি ছুটে বেরিয়েছিলাম আর
লাফ দিয়েছিলাম পচা পুকুরে
পরদিন কাগজে সেই খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম
উত্তেজিত হয়েছিলাম। অশ্রুপাত করেছিলাম, লোক জড়ো করেছিলাম,
মাথা ঘামিয়েছিলাম আর সমবেত সেই মাথার ঘাম
ধরে রেখেছিলাম দিস্তে দিস্তে দলিলে—যাতে
পরবর্তী কেউ এসে গবেষণা শুরু করতে পারে যে
এই দলিলগুলোয় আগুন দিলে ক’জনকে পুড়িয়ে মারা যায়
মারো মারো মারো
স্ত্রীলোক ও পুরুষলোকের জন্যে আয়ত্ত করো দু ধরনের প্রযুক্তি
মারো মারো মারো
যতক্ষণ না মুখ দিয়ে বমি করে দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড
মারো মারো মারো
যতক্ষণ না পেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পেটের বাচ্চা
মারো মারো মারো মারো মারো-ও-ও-ও
এইখানে এমন এক আর্তনাদ ব্যবহার করা দরকার
যা কানে লাগলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে মাথার খুলি
এইখানে এমন এক সঙ্গম ব্যাবহার করা দরকার
যার ফলে অর্ধেক শরীর চিরকালের মতো পুঁতে যাবে ভূগর্ভে আর
দ্রুত কয়লা হয়ে যাবে
এইখানে এমন এক থুতু নিক্ষেপ করা দরকার
যে-থুতু মুখ থেকে বেরোনো মাত্রই বিদীর্ণ হবে অতিকায় নক্ষত্ররুপে
এইখানে এমন এক গান ব্যাবহার করা দরকার যা গাইবার সময়
নায়ক-নায়িকা শূনে উঠে গিয়ে ভাসতে থাকবে আর তাদের
হাত পা মুণ্ডু ও জননেন্দিয়গুলি আলাদা আলাদা হয়ে আসবে
ও প্রতিটি প্রতিটির জন্যে কাঁদবে প্রতিটি প্রতিটিকে আদর করবে ও
একে অপরের নিয়ে কী করবে ভেবে পাবে না, শেষে
পূর্বের অখণ্ড চেহারায় ফিরে যাবে
এইখানে এমন এক চুম্বন-চেষ্টা প্রয়োগ করা দরকার, যার ফলে
‘মারো’ থেকে ‘ও’ অক্ষর
‘বাচাও’ থেকে ‘ও’ অক্ষর
তীব্র এক অভিকর্ষজ টানে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে
পরস্পরের দিকে ছুটে যাবে এবং এক হয়ে যেতে চাইবে
আর আবহমানকালের জন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার মুখ
আকাশের দিকে উত্তোলিত তাদের গোল হয়ে থাকা হাঁ
একটি অনন্ত ‘ও’ ধ্বনিতে স্তব্ধ হয়ে থাকবে
আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো শত শত লাইন ধ’রে তুমি
মিথ্যে লিখে গিয়েছো কেন ?
যদি জিগ্যেস করো একজন কবির কাজ কী হওয়া উচিত
কেন তুমি এখনো শেখোনি ?—তাহলে
আমি শুধু বলবো একটি কণা,
বলবো, বালির একটি কণা থেকে আমি জন্মেছিলাম, জন্মেছিলাম
লবণের একটি দানা থেকে—আর অজানা অচেনা এক বৃষ্টিবিন্দু
কত উঁচু সেই গাছের পাতা থেকেও ঠিক দেখতে পেয়েছিল আমাকে
আর ঝরেও পড়েছিল আমার পাশে—এর বেশি আমি আর
কিচ্ছু জানি না……
আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো কোন্ ব্যূহ কোন্ অন্ধকুপ
রাষ্টের কোন্ কোন্ গোপন প্রণালীর ভেতর তুমি ঘুরে
বেরিয়েছো তুমি বেড়াতে গিয়েছো কোন্ অস্ত্রাগারে তুমি চা খেয়েছো এক কাপ
তুমি মাথা দিয়ে ঢুঁসিয়েছো কোন্ হোর্ডিং কোন্ বিজ্ঞাপন কোন্ ফ্লাইওভার
তোমার পায়ের কাছে এসে মুখ রেখেছে কোন্ হরিণ
তোমার কাছে গলা মুচড়ে দেওয়ার আবেদন এনেছে কোন্
মরাল
তাহলে আমি বলবো
মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর
আমি কেবল উড়েই বেড়াইনি
হাজার হাজার বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় আমি
লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে বেরিয়েছি মাঠে আর জনপদে
আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো :
তুমি একই বৃন্তে ক’টি কুসুম
তুমি শাণ্ডিল্য না ভরদ্বাজ
তুমি দুর্লভ না কৈবর্ত
তুমি ব্যাটারি না হাত-বাক্স
তুমি পেঁপে গাছ না আতা গাছ
তুমি চটি পায়ে না জুতো পায়ে
তুমি চণ্ডাল না মোছরমান
তুমি মরা শিলা না জ্যান্ত শিলা
তা হলে আমি বলবো সেই রাত্রির কথা, যে-রাত্রে
শান্ত ঘাসের মাঠ ফুঁড়ে নিঃশব্দে নিঃশব্দে
চতুর্দিকে মাটি পাথর ছিটকোতে ছিটকোতে তীব্রগতিতে আমি উড়তে দেখেছিলাম
এক কুতুন মিনার, ঘূর্ণ্যমান কুতুব মিনার
কয়েক পলকে শূনে মিলিয়ে যাবার আগে
আকাশের গায়ে তার ধাবমান আগুনের পুচ্ছ থেকে আমি সেদিন
দুদিকে দু’হাত ভাসিয়ে দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম ফেনায় তোলপাড় এই
সময় গর্ভে……
আজ আমি দূরত্বের শেষ সমুদ্রে আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায়
আজ আমি সমুদ্রের সেই সূচনায় আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায়
যা-কিছু শরীর অশরীর তা-ই আজ আমার মধ্যে জেগে উঠছে প্রবল প্রাণ
আজ আমি দুই পাখনায় কাটতে কাটতে চলেছি সময়
অতীত আর ভবিষ্যৎ দুই দিকে কাটতে কাটতে চলেছি সময় এক অতিকায় মাছ
আমার ল্যাজের ঝাপটায় ঝাপটায় গড়ে উঠছে জলস্তম্ভ ভেঙে পরছে জলস্তম্ভ
আমার নাক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ফোয়ারায় উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে জ্বলন্ত মেঘপুঞ্জ
আমার নাসার উপরকার খড়্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি
যার অপরপ্রান্ত উঠে গেছে অনেক অনেক উপরে
এই পৃথিবী ও সৌরলোকের আকর্ষণসীমার বাইরে
যেখানে প্রতি মুহূর্তে ফুলে ফুলে উঠছে অন্ধকার ঈথার
সেইখানে, একটি সৌরদ্বীপ থেকে আরেক সৌরদ্বীপের মধ্যপথে
দুলতে দুলতে, ভাসতে ভাসতে চলেছে একটি আগ্নেয় নৌকা……
এর বেশি আর কিছুই আমি বলতে পারবো না
আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো : ‘এই জীবন নিয়ে
তুমি কি করেছো এতদিন ?’— তাহলে আমি বলবো
একদিন বমি করেছিলাম, একদিন ঢোঁক
গিলেছিলাম, একদিন আমি ছোঁয়া মাত্র জল
রুপান্তরিত হয়েছিল দুধে, একদিন আমাকে দেখেই
এক অপ্সরার মাথা ঘুরে গিয়েছিল একদিন
আমাকে না বলেই আমার দুটো হাত
কদিনের জন্য উড়ে গেছিল হাওয়ায়
একদিন মদ হিসেবে ঢুকেছিলাম এক
জবরদস্ত মাতালের পেটে, একদিন সম্পূর্ণ
অন্যভাবে বেরিয়ে এসেছিলাম এক
রূপসীর শোকাশ্রুরুপে, আর তৎক্ষণাৎ
আহা উহু আহা উহু করতে করতে আমাকে
শুষে নিয়েছিল বহুমূল্য মসলিন
একদিন গায়ে হাত তুলেছিলাম
একদিন পা তুলেছিলাম
একদিন জিভ ভেঙিয়েছিলাম
একদিন সাবান মেখেছিলাম
একদিনা সাবান মাখিয়েছিলাম যদি
বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করুন আমার মৃত্যুকে
একদিন কা কা করে ডেকে বেরিয়েছিলাম সারাবেলা
একদিন তাড়া করেছিলাম স্বয়ং কাকতাড়ুয়াকেই
একদিন শুয়োর পুষেছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন ছাগল
একদিন দোদোমা ফাতিয়েছিলাম, একদিন চকলেট
একদিন বাঁশি বাজিয়েছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন রাধাকেও
একদিন আমার মুখ আমি আচ্ছা ক’রে গুঁজে দিয়েছিলাম
একজনের কোলে আর আমার বাকি শরীরটা তখন
কিনে নিয়েছিল অন্য কেউ কে তা আমি এখনো জানি না যদি
বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করো গিয়ে তোমার…
একদিন আমার শরীর ছিল তরুণ পাতায় ভরা
আর আমার আঙুল ছিল লম্বা সাদা বকফুল
আমার চুল ছিল একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ
হাওয়া এলেই যেখানে খুশি উড়ে যাবে, কেবল সেইজন্য—
একদিন মাঠের পর মাঠে আমি ছিলাম বিছিয়ে রাখা ঘাস
তুমি এসে শরীর ঢেলে দেবে, কেবল সেইজন্য—
আর সমস্ত নিষেধের বাইরে ছিল
আমার দুটো চোখ
এ নদী থেকে ও নদী থেকে সে নদীতে
কেবলই ভেসে বেড়াতো তারা
সেই রকমই কোনো নদীর উপর, রোগা একটা সাঁকোর মতো
একদিন আমি পেতে রেখেছিলাম আমার সাষ্টাঙ্গ শরীর
যাতে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারে লোক
কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই
যাতে ওপার থেকে এপারে চলে আসতে পারে লোক
কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন এপার থেকে
ওপারে চলে গিয়েছিল আসগর আলি মণ্ডলরা বাবুল ইসলামরা
সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন ওপার থেকে
এপারে চলে এসেছিল তোমার নতুন শাড়ি-পরা মা,
তেপ-জামা-পরা আমার সান্তুমাসী
একদিন সংবিধান লিখতে লিখতে একটু
তন্দ্রা এসে গিয়েছিল আমার দুপুরের ভাত-ঘুম মতো এসেছিল একটু
আর সেই ফাঁকে কারা সব এসে ইচ্ছে মতো
কাটাকুটি করে গিয়েছে দেহি পদপল্লব মুদারম্
একদিন একদম ন্যাংটো হয়ে
ছুটতে ছুটতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে আমি পেশ করেছিলাম
বাজেট
একদিন হাঁ করেছিলাম একদিন হাঁ বন্ধ করেছিলাম
কিন্তু আমার হা-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না
কিন্তু আমার না-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না
একদিন দুই গাল বেয়ে ঝরঝর ক’রে রক্তগড়ানো অবস্থায়
জলে কাদায় ধানক্ষেত পাটক্ষেতের মধ্যে
হাতড়ে হাতড়ে আমি খুঁজে ফিরেছিলাম আমার উপড়ে নেওয়া চোখ
একদিন পিঠে ছরা-গাঁথা অবস্থায়
রক্ত কাশতে কাশতে আমি আছড়ে এসে পরেছিলাম দাওয়ায়
আর দলবেঁধে, লণ্ঠন উঁচু করে, আমায় দেখতে এসেছিল গ্রামের লোক
একদিন দাউদাউ ক’রে জ্বলতে থাকা ঝোপঝাড় মধ্য থেকে
সারা গায়ে আগুন নিয়ে আমি ছুটে বেরিয়েছিলাম আর
লাফ দিয়েছিলাম পচা পুকুরে
পরদিন কাগজে সেই খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম
উত্তেজিত হয়েছিলাম। অশ্রুপাত করেছিলাম, লোক জড়ো করেছিলাম,
মাথা ঘামিয়েছিলাম আর সমবেত সেই মাথার ঘাম
ধরে রেখেছিলাম দিস্তে দিস্তে দলিলে—যাতে
পরবর্তী কেউ এসে গবেষণা শুরু করতে পারে যে
এই দলিলগুলোয় আগুন দিলে ক’জনকে পুড়িয়ে মারা যায়
মারো মারো মারো
স্ত্রীলোক ও পুরুষলোকের জন্যে আয়ত্ত করো দু ধরনের প্রযুক্তি
মারো মারো মারো
যতক্ষণ না মুখ দিয়ে বমি করে দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড
মারো মারো মারো
যতক্ষণ না পেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পেটের বাচ্চা
মারো মারো মারো মারো মারো-ও-ও-ও
এইখানে এমন এক আর্তনাদ ব্যাবহার করা দরকার
যা কানে লাগলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে মাথার খুলি
এইখানে এমন এক সঙ্গম ব্যাবহার করা দরকার
যার ফলে অর্ধেক শরীর চিরকালের মতো পুঁতে যাবে ভূগর্ভে আর
দ্রুত কয়লা হয়ে যাবে
এইখানে এমন এক থুতু নিক্ষেপ করা দরকার
যে-থুতু মুখ থেকে বেরোনো মাত্রই বিদীর্ণ হবে অতিকায় নক্ষত্ররুপে
এইখানে এমন এক গান ব্যাবহার করা দরকার যা গাইবার সময়
নায়ক-নায়িকা শূনে উঠে গিয়ে ভাসতে থাকবে আর তাদের
হাত পা মুণ্ডু ও জননেন্দিয়গুলি আলাদা আলাদা হয়ে আসবে
ও প্রতিটি প্রতিটির জন্যে কাঁদবে প্রতিটি প্রতিটিকে আদর করবে ও
একে অপরের নিয়ে কী করবে ভেবে পাবে না, শেষে
পূর্বের অখণ্ড চেহারায় ফিরে যাবে
এইখানে এমন এক চুম্বন-চেষ্টা প্রয়োগ করা দরকার, যার ফলে
‘মারো’ থেকে ‘ও’ অক্ষর
‘বাচাও’ থেকে ‘ও’ অক্ষর
তীব্র এক অভিকর্ষজ টানে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে
পরস্পরের দিকে ছুটে যাবে এবং এক হয়ে যেতে চাইবে
আর আবহমানকালের জন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার মুখ
আকাশের দিকে উত্তোলিত তাদের গোল হয়ে থাকা হাঁ
একটি অনন্ত ‘ও’ ধ্বনিতে স্তব্ধ হয়ে থাকবে
আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো শত শত লাইন ধ’রে তুমি
মিথ্যে লিখে গিয়েছো কেন ?
যদি জিগ্যেস করো একজন কবির কাজ কী হওয়া উচিত
কেন তুমি এখনো শেখোনি ?—তাহলে
আমি শুধু বলবো একটি কণা,
বলবো, বালির একটি কণা থেকে আমি জন্মেছিলাম, জন্মেছিলাম
লবণের একটি দানা থেকে—আর অজানা অচেনা এক বৃষ্টিবিন্দু
কত উঁচু সেই গাছের পাতা থেকেও ঠিক দেখতে পেয়েছিল আমাকে
আর ঝরেও পড়েছিল আমার পাশে—এর বেশি আমি আর
কিচ্ছু জানি না……
আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো কোন্ ব্যূহ কোন্ অন্ধকুপ
রাষ্টের কোন্ কোন্ গোপন প্রণালীর ভেতর তুমি ঘুরে
বেরিয়েছো তুমি বেড়াতে গিয়েছো কোন্ অস্ত্রাগারে তুমি চা খেয়েছো এক
কাপ
তুমি মাথা দিয়ে ঢুঁসিয়েছো কোন্ হোর্ডিং কোন্ বিজ্ঞাপন কোন্ ফ্লাইওভার
তোমার পায়ের কাছে এসে মুখ রেখেছে কোন্ হরিণ
তোমার কাছে গলা মুচড়ে দেওয়ার আবেদন এনেছে কোন্
মরাল
তাহলে আমি বলবো
মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর
আমি কেবল উড়েই বেড়াইনি
হাজার হাজার বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় আমি
লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে বেরিয়েছি মাঠে আর জনপদে
আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো :
তুমি একই বৃন্তে ক’টি কুসুম
তুমি শাণ্ডিল্য না ভরদ্বাজ
তুমি দুর্লভ না কৈবর্ত
তুমি ব্যাটারি না হাত-বাক্স
তুমি পেঁপে গাছ না আতা গাছ
তুমি চটি পায়ে না জুতো পায়ে
তুমি চণ্ডাল না মোছরমান
তুমি মরা শিলা না জ্যান্ত শিলা
তা হলে আমি বলবো সেই রাত্রির কথা, যে-রাত্রে
শান্ত ঘাসের মাঠ ফুঁড়ে নিঃশব্দে নিঃশব্দে
চতুর্দিকে মাটি পাথর ছিটকোতে ছিটকোতে তীব্রগতিতে আমি উড়তে
দেখেছিলাম
এক কুতুন মিনার, ঘূর্ণ্যমান কুতুব মিনার
কয়েক পলকে শূনে মিলিয়ে যাবার আগে
আকাশের গায়ে তার ধাবমান আগুনের পুচ্ছ থেকে আমি সেদিন
দুদিকে দু’হাত ভাসিয়ে দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম ফেনায় তোলপাড়
এই
সময় গর্ভে……
আজ আমি দূরত্বের শেষ সমুদ্রে আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায়
আজ আমি সমুদ্রের সেই সূচনায় আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায়
যা-কিছু শরীর অশরীর তা-ই আজ আমার মধ্যে জেগে উঠছে প্রবল প্রাণ
আজ আমি দুই পাখনায় কাটতে কাটতে চলেছি সময়
অতীত আর ভবিষ্যৎ দুই দিকে কাটতে কাটতে চলেছি সময় এক অতিকায়
মাছ
আমার ল্যাজের ঝাপটায় ঝাপটায় গড়ে উঠছে জলস্তম্ভ ভেঙে পরছে
জলস্তম্ভ
আমার নাক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ফোয়ারায় উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে জ্বলন্ত
মেঘপুঞ্জ
আমার নাসার উপরকার খড়্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি
যার অপরপ্রান্ত উঠে গেছে অনেক অনেক উপরে
এই পৃথিবী ও সৌরলোকের আকর্ষণসীমার বাইরে
যেখানে প্রতি মুহূর্তে ফুলে ফুলে উঠছে অন্ধকার ঈথার
সেইখানে, একটি সৌরদ্বীপ থেকে আরেক সৌরদ্বীপের মধ্যপথে
দুলতে দুলতে, ভাসতে ভাসতে চলেছে একটি আগ্নেয় নৌকা……
এর বেশি আর কিছুই আমি বলতে পারবো না ।
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
জানি যে আমাকে তুমি ঘৃণা করো, মেয়েদের ঘৃণা
যেখানে যেখানে পড়ে সে জায়গাটা কালো হয়ে যায়
নতুন অঙ্কুর উঠে দাঁড়াতে পারে না সোজা হয়ে
তোমার ঘেন্নার ভয়ে পালাতে পালাতে আমি এই
দিগন্তে শুয়েছি, সামনে সভ্যতা পর্যন্ত পড়ে থাকা
যতটা শরীর, তার কোথাও এক কণা শস্য নেই
শুধু কালো কালো দাগ পোড়া শক্ত ঝামা গুঁড়োমাটি
তাও তুমি আকাশপথে জলপথে বৃষ্টিপথে এসে
মুখে যে নিঃশ্বাস ফেলছ, না তাতে আবেশ, যৌনজ্বর
নেই, শান্ত ঘুম নেই—সে নিঃশ্বাসে কিছু নেই আর
তার শুধু ক্ষমতা আছে প্রেমিককে বন্ধ্যা করবার!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রজানি যে আমাকে তুমি ঘৃণা করো, মেয়েদের ঘৃণা
যেখানে যেখানে পড়ে সে জায়গাটা কালো হয়ে যায়
নতুন অঙ্কুর উঠে দাঁড়াতে পারে না সোজা হয়ে
তোমার ঘেন্নার ভয়ে পালাতে পালাতে আমি এই
দিগন্তে শুয়েছি, সামনে সভ্যতা পর্যন্ত পড়ে থাকা
যতটা শরীর, তার কোথাও এক কণা শস্য নেই
শুধু কালো কালো দাগ পোড়া শক্ত ঝামা গুঁড়োমাটি
তাও তুমি আকাশপথে জলপথে বৃষ্টিপথে এসে
মুখে যে নিঃশ্বাস ফেলছ, না তাতে আবেশ, যৌনজ্বর
নেই, শান্ত ঘুম নেই—সে নিঃশ্বাসে কিছু নেই আর
তার শুধু ক্ষমতা আছে প্রেমিককে বন্ধ্যা করবার!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রজানি যে আমাকে তুমি ঘৃণা করো, মেয়েদের ঘৃণা
যেখানে যেখানে পড়ে সে জায়গাটা কালো হয়ে যায়
নতুন অঙ্কুর উঠে দাঁড়াতে পারে না সোজা হয়ে
তোমার ঘেন্নার ভয়ে পালাতে পালাতে আমি এই
দিগন্তে শুয়েছি, সামনে সভ্যতা পর্যন্ত পড়ে থাকা
যতটা শরীর, তার কোথাও এক কণা শস্য নেই
শুধু কালো কালো দাগ পোড়া শক্ত ঝামা গুঁড়োমাটি
তাও তুমি আকাশপথে জলপথে বৃষ্টিপথে এসে
মুখে যে নিঃশ্বাস ফেলছ, না তাতে আবেশ, যৌনজ্বর
নেই, শান্ত ঘুম নেই—সে নিঃশ্বাসে কিছু নেই আর
তার শুধু ক্ষমতা আছে প্রেমিককে বন্ধ্যা করবার!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্রজানি যে আমাকে তুমি ঘৃণা করো, মেয়েদের ঘৃণা
যেখানে যেখানে পড়ে সে জায়গাটা কালো হয়ে যায়
নতুন অঙ্কুর উঠে দাঁড়াতে পারে না সোজা হয়ে
তোমার ঘেন্নার ভয়ে পালাতে পালাতে আমি এই
দিগন্তে শুয়েছি, সামনে সভ্যতা পর্যন্ত পড়ে থাকা
যতটা শরীর, তার কোথাও এক কণা শস্য নেই
শুধু কালো কালো দাগ পোড়া শক্ত ঝামা গুঁড়োমাটি
তাও তুমি আকাশপথে জলপথে বৃষ্টিপথে এসে
মুখে যে নিঃশ্বাস ফেলছ, না তাতে আবেশ, যৌনজ্বর
নেই, শান্ত ঘুম নেই—সে নিঃশ্বাসে কিছু নেই আর
তার শুধু ক্ষমতা আছে প্রেমিককে বন্ধ্যা করবার!আরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
স্নেহসবুজ দিন
তোমার কাছে ঋণ
বৃষ্টিভেজা ভোর
মুখ দেখেছি তোর
মুখের পাশে আলো
ও মেয়ে তুই ভালো
আলোর পাশে আকাশ
আমার দিকে তাকা–
তাকাই যদি চোখ
একটি দীঘি হোক
যে-দীঘি জ্যোৎস্নায়
হরিণ হয়ে যায়
হরিণদের কথা
জানুক নীরবতা–
নীরব কোথায় থাকে
জলের বাঁকে বাঁকে
জলের দোষ? — নাতো!
হাওয়ায় হাত পাতো!
হাওয়ার খেলা? সেকি!
মাটির থেকে দেখি!
মাটিরই গুণ? — হবে!
কাছে আসুক তবে!
কাছে কোথায়? — দূর!
নদী সমুদ্দুর
সমুদ্র তো নোনা
ছুঁয়েও দেখবো না
ছুঁতে পারিস নদী–
শুকিয়ে যায় যদি?
শুকিয়ে গেলে বালি
বালিতে জল ঢালি
সেই জলের ধারা
ভাসিয়ে নেবে পাড়া
পাড়ার পরে গ্রাম
বেড়াতে গেছিলাম
গ্রামের কাছে কাছে
নদীই শুইয়ে আছে
নদীর নিচে সোনা
ঝিকোয় বালুকণা
সোনা খুঁজতে এসে
ডুবে মরবি শেষে
বেশ, ডুবিয়ে দিক
ভেসে উঠবো ঠিক
ভেসে কোথায় যাবো?
নতুন ডানা পাবো
নামটি দেবো তার
সোনার ধান, আর
বলবোঃ শোন, এই
কষ্ট দিতে নেই
আছে নতুন হাওয়া
তোমার কাছে যাওয়া
আরো সহজ হবে
কত সহজ হবে
ভালোবাসবে তবে? বলো
কবে ভালোবাসবে?
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
পাখিটি আমাকে ডেকে বলল তার ডানার জখম
বলল যে কীভাবে তার পালকে সংসার পোড়া ছ্যাঁকা
কীভাবে পায়ের মধ্যে ফুটো করে ঢুকে এল চেন
ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটতে গিয়ে ঠোঁটের জখম
দ্যাখালো, বাইরে থেকে আমি নিজ ওষ্ঠ থেকে ওম
দিলাম, খাঁচার দরজা খুলে তাকে “বাঁচবিযদি আয়’,
বলে বার করে এনে রাখলাম আর একটা খাঁচায়
সেখানে দুজনে বন্দি পরস্পর দোষারোপ করি,
দোষারোপ করতে করতে বৃষ্টি আসে, সন্ধে হয়ে যায় …
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
মিত্রা দিদি, তোমাকে নিয়ে কাব্য
লেখেনি কোন পুরুষ কোন দিন।
গলির মোড়ে বাজেনি সম্মিলিত
শীৎকার, বখাটে ছেলেদের।
তোমাকে দেখতে আসেনি পাত্রপক্ষ,
এসেছিল শুধু মেপে নিতে,
তোমার বুক, চুল, নিতম্ব
যাবতীয় সব শারিরিক।
কত বার গেছ তুমি কামরূপ-কামাক্ষা ?
কত বার ছুঁয়েছ তুমি কাম পীঠে সিঁদুর ?
কত বার পাল্টেছ জ্যোতিষি তুমি ?
কত বার করিয়েছ জাদুটোনা ?
কত যুগ উপবাসী তুমি ঢেলেছ দুগ্ধ,
সুগঠিত শিবলিঙ্গে ?
সে খবর জানে শুধু,
একলা রাতের পাশ বালিশ।
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
আমি তো আকাশসত্য গোপন রাখিনি
খুলে দ্যাখো পাখির কঙ্কাল।
নীচের প্রান্তরে উড়ত পাখি ও পাখিনী
অনেক উপরে ঢালু বাটির মতন শূন্য ধ’রে
আমি তার ছায়াচিত্র তুলে রাখতাম।
এ দৃশ্য যে দেখেছিল তার মধ্যে থেকে আজ আর
আলো অব্দি বেরোতে পারে না।
সেখানে দিবস রাত্রি নেই, শুধু জমে থাকা
থলথলে অন্ধকার সময় একতাল।
তার চারিদিকে আজ শেষ হয়ে যাওয়া
জ্যোতিষ্ককোটর ভরা ছাই।
আমি দীর্ঘাকার প্রভা নিয়ে
তার বৃত্তপথ থেকে, ধীরে ধীরে, দূরতম শূন্যে সরে যাই…
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
চিনতে পেরে গেছে বলে যার জিভ
কেটে নিল ধর্ষণের পরে
দু’হাতে দু’টো পা ধরে
ছিঁড়ে ফেললো যার শিশুটিকে
ঘাড়ে দু’টো কোপ মেরে যার স্বামীকে
ফেলে রাখলো উঠোনের পাশে
মরা অবধি মুখে জল দিতে দিল না
সেই সব মেয়েদের ভেতরে
যে-শোকাগ্নি জ্বলছে
সেই আগুনের পাশে
এনে রাখো গুলির অর্ডার দেওয়া
শাসকের দু’ঘন্টা বিষাদ
তারপর মেপে দ্যাখো
কে বেশি কে কম
তারপর ভেবে দেখ
কারা বলেছিল
জীবন নরক করব, প্রয়োজনে
প্রাণে মারব, প্রাণে!
এই ব’লে ময়ূর আজ
মুখে রক্ত তুলে
নেচে যায় শ্মশানে শ্মশানে
আর সেই নৃত্য থেকে দিকে দিকে
ছিটকে পড়ে জ্বলন্ত পেখম |
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
রাস্তায় পড়েছে ব্রিজ–জল নেই–বালি
রাস্তায় পড়েছে শুকনো ধুলো ও আগাছা ভরা বিরাট ইঁদারা
শ্মশান? পড়েছে তাও–
চিতায় চাদর ঢেকে শুনেছিল যারা
তারা কাজে বেরিয়েছে প্রান্তরে, কামান গাড়ি ঠেলে
হঠাৎ কোথায় হাওয়া? চাপাচুপি খড়ের নিঃশ্বাস?
কবরে, বোমার গর্তে ঝুঁকে ঝুঁকে দেখি
মা, আর মায়ের হাতে মুখ চাপা অনাথ।
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
স্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
গায়ে চাঁদের আলোকার্নিশের ফণীমনসা
ছাদের কোণে ঘরকাঁটায় বেঁধা কতকালের
শুকোনো সব পাখিওদের গলায় ফিসফিসোয়
বাতাস, ডাক, স্বরমরা ময়ূর দাঁড়িয়ে–গায়ে
ফুটফুট জোনাকিশিকল গেঁথে ঝোলানো চাঁদ,
পেণ্ডুলাম, কালোহেলানো গাছ, গলতে থাকা
ইটকাঠের বাড়িস্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
স্পষ্ট চোখ, খোলাআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র স্বপ্নে তোকে বাড়ির দিকে এগিয়ে দিতে যাই
স্বপ্নে এসে দাঁড়াই পাড়ার মোড়ে
কখন তুই ফিরবি ভেবে চারিদিকে তাকাই
টান লাগাই তোর বিনুনি ধরে।স্বপ্নে আমি ভিক্টোরিয়ায় তোর পাশে দাঁড়াই
স্বপ্নে বসি ট্যাক্সিতে তোর পাশে
স্বপ্নে আমি তোর হাত থেকে বাদাম ভাজা খাই
কাঁধ থেকে তোর ওড়না লুটোয় ঘাসে।তুলতে গেলি – কনুই ছুঁলো হাত
তুলতে গেলি – কাঁধে লাগলো কাঁধ
সরে বসব? আকাশভরা ছাতে
মেঘের পাশে সরে বসল চাঁদ।ক’টা বাজলো? উঠে পড়লি তুই
সব ঘড়িকে বন্ধ করল কে?
রাগ করবি? হাতটা একটু ছুঁই?
বাড়ির দিকে এগিয়ে দিচ্ছি তোকে…স্বপ্নে তোকে এগিয়ে দিই যদি
তোর বরের তাতে কি যায় আসে?
সত্যি বলছি, বিশ্বাস করবি না
স্বপ্নে আমার চোখেও জল আসে!স্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
গায়ে চাঁদের আলোকার্নিশের ফণীমনসা
ছাদের কোণে ঘরকাঁটায় বেঁধা কতকালের
শুকোনো সব পাখিওদের গলায় ফিসফিসোয়
বাতাস, ডাক, স্বরমরা ময়ূর দাঁড়িয়ে–গায়ে
ফুটফুট জোনাকিশিকল গেঁথে ঝোলানো চাঁদ,
পেণ্ডুলাম, কালোহেলানো গাছ, গলতে থাকা
ইটকাঠের বাড়িস্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
স্পষ্ট চোখ, খোলাআরও পড়ুনঃ জয় গোস্বামী কবিতা সমগ্র স্বপ্নে তোকে বাড়ির দিকে এগিয়ে দিতে যাই
স্বপ্নে এসে দাঁড়াই পাড়ার মোড়ে
কখন তুই ফিরবি ভেবে চারিদিকে তাকাই
টান লাগাই তোর বিনুনি ধরে।স্বপ্নে আমি ভিক্টোরিয়ায় তোর পাশে দাঁড়াই
স্বপ্নে বসি ট্যাক্সিতে তোর পাশে
স্বপ্নে আমি তোর হাত থেকে বাদাম ভাজা খাই
কাঁধ থেকে তোর ওড়না লুটোয় ঘাসে।তুলতে গেলি – কনুই ছুঁলো হাত
তুলতে গেলি – কাঁধে লাগলো কাঁধ
সরে বসব? আকাশভরা ছাতে
মেঘের পাশে সরে বসল চাঁদ।ক’টা বাজলো? উঠে পড়লি তুই
সব ঘড়িকে বন্ধ করল কে?
রাগ করবি? হাতটা একটু ছুঁই?
বাড়ির দিকে এগিয়ে দিচ্ছি তোকে…স্বপ্নে তোকে এগিয়ে দিই যদি
তোর বরের তাতে কি যায় আসে?
সত্যি বলছি, বিশ্বাস করবি না
স্বপ্নে আমার চোখেও জল আসে!
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
স্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
গায়ে চাঁদের আলো
কার্নিশের ফণীমনসা
ছাদের কোণে ঘর
কাঁটায় বেঁধা কতকালের
শুকোনো সব পাখি
ওদের গলায় ফিসফিসোয়
বাতাস, ডাক, স্বর
মরা ময়ূর দাঁড়িয়ে–গায়ে
ফুটফুট জোনাকি
শিকল গেঁথে ঝোলানো চাঁদ,
পেণ্ডুলাম, কালো
হেলানো গাছ, গলতে থাকা
ইটকাঠের বাড়ি
স্বপ্নে মরা ময়ূর, তার
স্পষ্ট চোখ, খোলা
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
মন পুড়ে খাক হলে কি থাকে? অঙ্গারমন পুড়ে খাক,শুধু অঙ্গার অঙ্গার
তুমি সেই আঙরাটুকু তুলে নাও
চিতা থেকে মাটির সরায়
ঠেলে দাও নদীর জোয়ারেপ্রেমের শান্তির ঘট
লাঠির আঘাতে চূর্ণ করে
চলে আসো পিছনে না-দেখেভাঙা ঘট থেকে জল গড়ায় গড়ায় এঁকেবেঁকে
প্রেমের শ্মশানে
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
ভরন্ত C.C.D থেকে বেরিয়ে এল প্রেমিক-প্রেমিকা...
দেখামাত্র শ্বাস আটকে আসে!
এখন নিশ্চয় সে-ও কোনও C.C.D-তে বসে
তার নব্যপুরুষকে নিয়ে
মোবাইলে ছবি তুলছে--- যেমন আমার ছবি তুলত একদিনদেখতে দেখতে আমার চোখের সামনে ভিড় করা C.C.D
একটা হানাবাড়ি।সব আলো নিভে গেছে,আবছা অন্ধকার
চারপাশে কেউ নেই----এমনকী ওয়েটারও নয়এক কাপ চা হাতে নিয়ে বসে আছি প্রেতরূপী আমি
|
জয় গোস্বামী
|
মানবতাবাদী
|
(‘কার কী ক্ষমতা আছে দেখি এবার । ওরা মাঠে নামছে । আমরাও নামব । …কার কী ক্ষমতা দেখি…অতীতেও এমন অবস্থা হয়েছে । তবে এখন আমাদের ক্ষমতা অনেক বেশি’ রবিবার ১১ মার্চ ২০০৭, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সমাবেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের অংশ ।)
গুলি লেগে পড়ে গেল ।
তুলে ধরতে যাচ্ছে তার বউ ।
বন্দুক উঁচিয়ে ধরো ।
বলো— ‘না, তুলবি না—’
বলো— ‘যা সরে যা বলছি—’ তাও
যদি না শোনে তাহলে
স্বামীর সাহায্যকারী হাতদুটোয়
সোজা গুলি করো ।
যে-নারী ধর্ষণ করতে বাধা দিচ্ছে তার
যৌনাঙ্গে লাঠির মাথা সোজা ভরে দাও
যন্ত্রণায় সে যখন দয়া চায়, গালাগালি করে
তার সামনে তার শিশুটিকে দু’পা ধরে
দুই দিকে টানো,
টানো,
যতক্ষণ না সোজাসুজি ছিঁড়ে যাচ্ছে
টানো!
একে বলে সোজা কথা ।
এরই নাম ক্ষমতা দেখানো!
|
জয় গোস্বামী
|
চিন্তামূলক
|
হৃদপিণ্ড–এক ঢিবি মাটি
তার উপরে আছে খেলবার
হাড়। পাশা। হাড়।
হৃদপিণ্ড, মাটি এক ঢিবি
তার উপরে শাবল কোদাল চালাবার
অধিকার, নিবি?
চাবড়ায় চাবড়ায় উঠে আসা
মাটি মাংস মাটি মাংস মাটি–
পাশা। হাড়। পাশা।
দূরে ক্ষতবিক্ষত পৃথিবী
জলে ভেসে রয়েছে এখনো–
তাকে একমুঠো, একমাটি
হৃদপিণ্ড, দিবি?
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
একটি শেষমুহূর্তের নারীসিন্ধুতট
অন্যটিতে আরম্ভের ডানা ছড়ানো ঈগল
ছোঁ মেরে ওঠে আবার, তার নখে সরীসৃপ
পায়ের গোছে শিকল
একটি শুভ আরম্ভের মাঙ্গলিক ঘট
ঘটের নীচে সাপের চোখ, মণি
বুড়ো আঙুল কেটে দেওয়ার পরেও বাকি থাকে
কলম, তর্জনী
মাটির কান, মাটির নীচে রক্ত চলাচল–
ভূর্গভের হৃদয় নড়ে–ওষ্ঠ? নড়ে তা-ও!
দুঃখ তার কণ্ঠা ক্ষুর দিয়ে
ফাঁক করেছে–খাও
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
সেই কবিতাটা বজ্জাত।
সংশোধন করার জন্যে যেই না কবিতাটার একটা জায়গা কেটেছি, অমনি সেই ফাঁক
দিয়ে একটা গাছ ডাল বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
‘কী রে, আম কুড়োতে যাবি না?’
আর একটা জায়গা কাটতেই সেখান
থেকে একটা মেয়ে মুখ বার করে বলল,
‘আমি কিন্তু কিছু জানি না! বিকেলে আমি জামা কিনতে যাবো ই যাবো!’
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে একটা স্পেস দিলাম।
কোনোমতে কয়েক চরণ এগোতে-না-এগোতেই
দেখি আমাকে কিছু না জানিয়েই নিচের স্তবক থেকে ওপরের স্ট্যাঞ্জায়
লতিয়ে উঠেছে লাউলতা পুঁইলতা মাধবীলতা-ও।
ওপরের থেকে ঝরে পড়ছে ঝুপ ঝুপ সাদা লেবু ফুল, গন্ধে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি নিচের স্তবকের ও দুটো শব্দ কাটতেই
সেখানে একটা জানলা ফুটে গেল।
জানলার বাইরে মাঠ আর মেঘ ফুটল।
মেঘে ফুটে গেল তারা।
এদিকে, বুকুনের জন্যে আনা তুলোর তৈরী তিনটে ভালুক ছানা জ্যান্ত হয়ে জানলা দিয়ে নেমে চলে যেতে থাকল মাঠের দিকে,
এই রে। এক্ষুনি তো বুকুন ওদের খুঁজে না পেয়ে মহা অনর্থ করবে!
ভয় পেয়ে আমি কারেকশন বন্ধ করে কবিতাটা
যেমনকে তেমনই রেখে দিলাম টেবিলে।
রেখে স্নান করতে গেলাম।
এসে দেখি ততক্ষণে ভালুকছানারা ফিরে এসে,
কবিতাটার মধ্যে একটা কাঠের বাড়ি বানাতে শুরু করেছে।
মেয়েটা নতুন জামা পরে দৌড়চ্ছে আমগাছতলায়।
আর কবিতাটার একদিকে একটা মাটির দাওয়া বেরিয়ে এসেছে,
সেখানে তিন ছেলেকে ভাত দিচ্ছেন মা, আর
বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে গেছে ভাঙ্গা পাঁচিল,
পোড়ো বাগান-
সেখান থেকে এগিয়ে আসা লেবু ফুল আর
ঝুমকো ফুল,
লাউলতা আর মাধবীলতা, কাঁটাবন আর
গোলাপবন,
আরো কী কী সব নাম না জানা গাছপাতায়
কবিতাটা আড়াল হয়ে গেছে একেবারে …
তা যাক গে। সেই বজ্জাত
কবিতাটা তো আর আমি
আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি না!
|
জয় গোস্বামী
|
রূপক
|
আমাকে প্রত্যেকবার কেটে
পশুরক্ত পাওয়া যাবে–পর্বতচূড়ায়
পা থেকে আমার ধড় উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখলেই
পাখিরা চিৎকার করবে–লাল হবে আকাশ
সমুদ্রের জলে
আমার মহিষমুণ্ড, বেঁকে যাওয়া শিঙ
দেখা দেবে সূর্যের বদলে!
|
জয় গোস্বামী
|
প্রেমমূলক
|
সেই শেষ চুম্বন আমারসেই শেষ
চুম্বন আমারতারপর অন্য কারও জন্য ওই ঠোঁটঅন্য কারও জন্য ওই স্রোত...
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
ছড়া
|
তোমার কাছে আমিই দুষ্টু
ভালো যে আর সবাই ।
মিত্তিরদের কালু নিলু
ভারি ঠাণ্ডা ক - ভাই !
যতীশ ভালো , সতীশ ভালো ,
ন্যাড়া নবীন ভালো ,
তুমি বল ওরাই কেমন
ঘর করে রয় আলো ।
মাখন বাবুর দুটি ছেলে
দুষ্টু তো নয় কেউ —
গেটে তাদের কুকুর বাঁধা
করতেছে ঘেউ ঘেউ ।
পাঁচকড়ি ঘোষ লক্ষ্মী ছেলে ,
দত্তপাড়ার গবাই ,
তোমার কাছে আমিই দুষ্টু
ভালো যে আর সবাই ।
তোমার কথা আমি যেন
শুনি নে কক্খনোই ,
জামাকাপড় যেন আমার
সাফ থাকে না কোনোই !
খেলা করতে বেলা করি ,
বৃষ্টিতে যাই ভিজে ,
দুষ্টুপনা আরো আছে
অমনি কত কী যে !
বাবা আমার চেয়ে ভালো ?
সত্যি বলো তুমি ,
তোমার কাছে করেন নি কি
একটুও দুষ্টুমি ?
যা বল সব শোনেন তিনি ,
কিচ্ছু ভোলেন নাকো ?
খেলা ছেড়ে আসেন চলে
যেমনি তুমি ডাকো ? (শিশু ভোলানাথ কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
সনেট
|
মা কেহ কি আছ মোর , কাছে এসো তবে ,
পাশে বসে স্নেহ ক’রে জাগাও আমায় ।
স্বপ্নের সমাধি – মাঝে বাঁচিয়া কী হবে ,
যুঝিতেছি জাগিবারে — আঁখি রুদ্ধ হায় ,
ডেকো না ডেকো না মোরে ক্ষুদ্রতার মাঝে ,
স্নেহময় আলস্যেতে রেখো না বাঁধিয়া ,
আশীর্বাদ করে মোরে পাঠাও গো কাজে —
পিছনে ডেকো না আর কাতরে কাঁদিয়া ।
মোর বলে কাহারেও দেব না কি বল!
মোর প্রাণে পাবে না কি কেহ নবপ্রাণ
করুণা কি শুধু ফেলে নয়নের জল ,
প্রেম কি ঘরের কোণে গাহে শুধু গান!
তবেই ঘুচিবে মোর জীবনের লাজ
যদি মা করিতে পারি কারো কোনো কাজ । (কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
রূপক
|
যে ফুল এখনো কুঁড়ি
তারি জন্মশাখে
রবি নিজ আশীর্বাদ
প্রতিদিন রাখে। (স্ফুলিঙ্গ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
প্রকৃতিমূলক
|
আমারে ফিরায়ে লহ অয়ি বসুন্ধরে,
কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে,
বিপুল অঞ্চল-তলে। ওগো মা মৃন্ময়ী,
তোমার মৃত্তিকা-মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই;
দিগ্বিদিকে আপনারে দিই বিস্তারিয়া
বসন্তের আনন্দের মতো; বিদারিয়া
এ বক্ষপঞ্জর, টুটিয়া পাষাণ-বন্ধ
সংকীর্ণ প্রাচীর, আপনার নিরানন্দ
অন্ধ কারাগার, হিল্লোলিয়া, মর্মরিয়া,
কম্পিয়া, স্খলিয়া, বিকিরিয়া, বিচ্ছুরিয়া,
শিহরিয়া, সচকিয়া আলোকে পুলকে
প্রবাহিয়া চলে যাই সমস্ত ভূলোকে
প্রান্ত হতে প্রান্তভাগে, উত্তরে দক্ষিণে,
পুরবে পশ্চিমে– শৈবালে শাদ্বলে তৃণে
শাখায় বল্কলে পত্রে উঠি সরসিয়া
নিগূঢ় জীবনরসে; যাই পরশিয়া
স্বর্ণশীর্ষে আনমিত শস্যক্ষেত্রতল
অঙ্গুলির আন্দোলনে; নব পুষ্পদল
করি পূর্ণ সংগোপনে সুবর্ণলেখায়
সুধাগন্ধে মধুবিন্দুভারে; নীলিমায়
পরিব্যাপ্ত করি দিয়া মহাসিন্ধুনীর
তীরে তীরে করি নৃত্য স্তব্ধ ধরণীর,
অনন্ত কল্লোলগীতে; উল্লসিত রঙ্গে
ভাষা প্রসারিয়া দিই তরঙ্গে তরঙ্গে
দিক-দিগন্তরে; শুভ্র-উত্তরীয়প্রায়
শৈলশৃঙ্গে বিছাইয়া দিই আপনায়
নিষ্কলঙ্ক নীহারের উত্তুঙ্গ নির্জনে,
নিঃশব্দ নিভৃতে।
যে ইচ্ছা গোপনে মনে
উৎসসম উঠিতেছে অজ্ঞাতে আমার
বহুকাল ধ’রে, হৃদয়ের চারি ধার
ক্রমে পরিপূর্ণ করি বাহিরিতে চাহে
উদ্বেল উদ্দাম মুক্ত উদার প্রবাহে
সিঞ্চিতে তোমায়– ব্যথিত সে বাসনারে
বন্ধমুক্ত করি দিয়া শতলক্ষ ধারে
দেশে দেশে দিকে দিকে পাঠাব কেমনে
অন্তর ভেদিয়া! বসি শুধু গৃহকোণে
লুব্ধ চিত্তে করিতেছি সদা অধ্যয়ন,
দেশে দেশান্তরে কারা করেছে ভ্রমণ
কৌতূহলবশে; আমি তাহাদের সনে
করিতেছি তোমারে বেষ্টন মনে মনে
কল্পনার জালে।
সুদুর্গম দূরদেশ–
পথশূন্য তরুশূন্য প্রান্তর অশেষ,
মহাপিপাসার রঙ্গভূমি; রৌদ্রালোকে
জ্বলন্ত বালুকারাশি সূচি বিঁধে চোখে;
দিগন্তবিস্তৃত যেন ধুলিশয্যা-‘পরে
জ্বরাতুরা বসুন্ধরা লুটাইছে পড়ে
তপ্তদেহ, উষ্ণশ্বাস বহ্নিজ্বালাময়,
শুষ্ককণ্ঠ, সঙ্গহীন, নিঃশব্দ, নির্দয়।
কতদিন গৃহপ্রান্তে বসি বাতায়নে
দূরদূরান্তের দৃশ্য আঁকিয়াছি মনে
চাহিয়া সম্মুখে; চারি দিকে শৈলমালা,
মধ্যে নীল সরোবর নিস্তব্ধ নিরালা
স্ফটিকনির্মল স্বচ্ছ; খণ্ড মেঘগণ
মাতৃস্তনপানরত শিশুর মতন
পড়ে আছে শিখর আঁকড়ি; হিমরেখা
নীলগিরিশ্রেণী-‘পরে দূরে যায় দেখা
দৃষ্টিরোধ করি, যেন নিশ্চল নিষেধ
উঠিয়াছে সারি সারি স্বর্গ করি ভেদ
যোগমগ্ন ধূর্জটির তপোবন-দ্বারে।
মনে মনে ভ্রমিয়াছি দূর সিন্ধুপারে
মহামেরুদেশে– যেখানে লয়েছে ধরা
অনন্তকুমারীব্রত, হিমবস্ত্রপরা,
নিঃসঙ্গ, নিঃস্পৃহ, সর্ব-আভরণহীন;
যেথা দীর্ঘরাত্রিশেষে ফিরে আসে দিন
শব্দশূন্য সংগীতবিহীন; রাত্রি আসে,
ঘুমাবার কেহ নাই, অনন্ত আকাশে
অনিমেষ জেগে থাকে নিদ্রাতন্দ্রাহত
শূন্যশয্যা মৃতপুত্রা জননীর মতো।
নূতন দেশের নাম যত পাঠ করি,
বিচিত্র বর্ণনা শুনি, চিত্ত অগ্রসরি
সমস্ত স্পর্শিতে চাহে– সমুদ্রের তটে
ছোটো ছোটো নীলবর্ণ পর্বতসংকটে
একখানি গ্রাম, তীরে শুকাইছে জাল,
জলে ভাসিতেছে তরী, উড়িতেছে পাল,
জেলে ধরিতেছে মাছ, গিরিমধ্যপথে
সংকীর্ণ নদীটি চলি আসে কোনোমতে
আঁকিয়া বাঁকিয়া; ইচ্ছা করে, সে নিভৃত
গিরিক্রোড়ে সুখাসীন ঊর্মিমুখরিত
লোকনীড়খানি হৃদয়ে বেষ্টিয়া ধরি
বাহুপাশে। ইচ্ছা করে, আপনার করি
যেখানে যা-কিছু আছে; নদীস্রোতোনীরে
আপনারে গলাইয়া দুই তীরে তীরে
নব নব লোকালয়ে করে যাই দান
পিপাসার জল, গেয়ে যাই কলগান
দিবসে নিশীথে; পৃথিবীর মাঝখানে
উদয়সমুদ্র হতে অস্তসিন্ধু-পানে
প্রসারিয়া আপনারে, তুঙ্গ গিরিরাজি
আপনার সুদুর্গম রহস্যে বিরাজি,
কঠিন পাষাণক্রোড়ে তীব্র হিমবায়ে
মানুষ করিয়া তুলি লুকায়ে লুকায়ে
নব নব জাতি। ইচ্ছা করে মনে মনে,
স্বজাতি হইয়া থাকি সর্বলোকসনে
দেশে দেশান্তরে; উষ্ট্রদুগ্ধ করি পান
মরুতে মানুষ হই আরব-সন্তান
দুর্দম স্বাধীন; তিব্বতের গিরিতটে
নির্লিপ্ত প্রস্তরপুরী-মাঝে, বৌদ্ধমঠে
করি বিচরণ। দ্রাক্ষাপায়ী পারসিক
গোলাপকাননবাসী, তাতার নির্ভীক
অশ্বারূঢ়, শিষ্টাচারী সতেজ জাপান,
প্রবীণ প্রাচীন চীন নিশিদিনমান
কর্ম-অনুরত– সকলের ঘরে ঘরে
জন্মলাভ করে লই হেন ইচ্ছা করে।
অরুগ্ণ বলিষ্ঠ হিংস্র নগ্ন বর্বরতা–
নাহি কোনো ধর্মাধর্ম, নাহি কোনো প্রথা,
নাহি কোনো বাধাবন্ধ, নাই চিন্তাজ্বর,
নাহি কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব, নাই ঘর পর,
উন্মুক্ত জীবনস্রোত বহে দিনরাত
সম্মুখে আঘাত করি সহিয়া আঘাত
অকাতরে; পরিতাপ-জর্জর পরানে
বৃথা ক্ষোভে নাহি চায় অতীতের পানে,
ভবিষ্যৎ নাহি হেরে মিথ্যা দুরাশায়–
বর্তমান-তরঙ্গের চূড়ায় চূড়ায়
নৃত্য করে চলে যায় আবেগে উল্লাসি–
উচ্ছৃঙ্খল সে-জীবন সেও ভালোবাসি;
কত বার ইচ্ছা করে সেই প্রাণঝড়ে
ছুটিয়া চলিয়া যাই পূর্ণপালভরে
লঘু তরী-সম।
হিংস্র ব্যাঘ্র অটবীর
আপন প্রচণ্ড বলে প্রকাণ্ড শরীর
বহিতেছে অবহেলে; দেহ দীপ্তোজ্জ্বল
অরণ্যমেঘের তলে প্রচ্ছন্ন-অনল
বজ্রের মতন, রুদ্র মেঘমন্দ্র স্বরে
পড়ে আসি অতর্কিত শিকারের ‘পরে
বিদ্যুতের বেগে; অনায়াস সে মহিমা,
হিংসাতীব্র সে আনন্দ, সে দৃপ্ত গরিমা,
ইচ্ছা করে একবার লভি তার স্বাদ।
ইচ্ছা করে, বারবার মিটাইতে সাধ
পান করি বিশ্বের সকল পাত্র হতে
আনন্দমদিরাধারা নব নব স্রোতে।
হে সুন্দরী বসুন্ধরে, তোমা পানে চেয়ে
কত বার প্রাণ মোর উঠিয়াছে গেয়ে
প্রকাণ্ড উল্লাসভরে; ইচ্ছা করিয়াছে–
সবলে আঁকড়ি ধরি এ বক্ষের কাছে
সমুদ্রমেখলাপরা তব কটিদেশ;
প্রভাত-রৌদ্রের মতো অনন্ত অশেষ
ব্যাপ্ত হয়ে দিকে দিকে, অরণ্যে ভূধরে
কম্পমান পল্লবের হিল্লোলের ‘পরে
করি নৃত্য সারাবেলা, করিয়া চুম্বন
প্রত্যেক কুসুমকলি, করি’ আলিঙ্গন
সঘন কোমল শ্যাম তৃণক্ষেত্রগুলি,
প্রত্যেক তরঙ্গ-‘পরে সারাদিন দুলি’
আনন্দ-দোলায়। রজনীতে চূপে চূপে
নিঃশব্দ চরণে, বিশ্বব্যাপী নিদ্রারূপে
তোমার সমস্ত পশুপক্ষীর নয়নে
অঙ্গুলি বুলায়ে দিই, শয়নে শয়নে
নীড়ে নীড়ে গৃহে গৃহে গুহায় গুহায়
করিয়া প্রবেশ, বৃহৎ অঞ্চলপ্রায়
আপনারে বিস্তারিয়া ঢাকি বিশ্বভূমি
সুস্নিগ্ধ আঁধারে।
আমার পৃথিবী তুমি
বহু বরষের, তোমার মৃত্তিকাসনে
আমারে মিশায়ে লয়ে অনন্ত গগনে
অশ্রান্ত চরণে করিয়াছ প্রদক্ষিণ
সবিতৃমণ্ডল, অসংখ্য রজনীদিন
যুগযুগান্তর ধরি আমার মাঝারে
উঠিয়াছে তৃণ তব, পুষ্প ভারে ভারে
ফুটিয়াছে, বর্ষণ করেছে তরুরাজি
পত্রফুলফল গন্ধরেণু। তাই আজি
কোনো দিন আনমনে বসিয়া একাকী
পদ্মাতীরে, সম্মুখে মেলিয়া মুগ্ধ আঁখি
সর্ব অঙ্গে সর্ব মনে অনুভব করি–
তোমার মৃত্তিকা-মাঝে কেমনে শিহরি
উঠিতেছে তৃণাঙ্কুর, তোমার অন্তরে
কী জীবনরসধারা অহর্নিশি ধরে
করিতেছে সঞ্চরণ, কুসুমমুকুল
কী অন্ধ আনন্দভরে ফুটিয়া আকুল
সুন্দর বৃন্তের মুখে, নব রৌদ্রালোকে
তরুলতাতৃণগুল্ম কী গূঢ় পুলকে
কী মূঢ় প্রমোদরসে উঠে হরষিয়া–
মাতৃস্তনপানশ্রান্ত পরিতৃপ্ত-হিয়া
সুখস্বপ্নহাস্যমুখ শিশুর মতন।
তাই আজি কোনো দিন– শরৎ-কিরণ
পড়ে যবে পক্কশীর্ষ স্বর্ণক্ষেত্র-‘পরে,
নারিকেলদলগুলি কাঁপে বায়ুভরে
আলোকে ঝিকিয়া, জাগে মহাব্যাকুলতা–
মনে পড়ে বুঝি সেই দিবসের কথা
মন যবে ছিল মোর সর্বব্যাপী হয়ে
জলে স্থলে, অরণ্যের পল্লবনিলয়ে,
আকাশের নীলিমায়। ডাকে যেন মোরে
অব্যক্ত আহ্বানরবে শত বার করে
সমস্ত ভুবন; সে বিচিত্র সে বৃহৎ
খেলাঘর হতে, মিশ্রিত মর্মরবৎ
শুনিবারে পাই যেন চিরদিনকার
সঙ্গীদের লক্ষবিধ আনন্দ-খেলার
পরিচিত রব। সেথায় ফিরায়ে লহ
মোরে আরবার; দূর করো সে বিরহ
যে বিরহ থেকে থেকে জেগে ওঠে মনে
হেরি যবে সম্মুখেতে সন্ধ্যার কিরণে
বিশাল প্রান্তর, যবে ফিরে গাভীগুলি
দূর গোষ্ঠে–মাঠপথে উড়াইয়া ধূলি,
তরুঘেরা গ্রাম হতে উঠে ধূমলেখা
সন্ধ্যাকাশে; যবে চন্দ্র দূরে দেয় দেখা
শ্রান্ত পথিকের মতো অতি ধীরে ধীরে
নদীপ্রান্তে জনশূন্য বালুকার তীরে,
মনে হয় আপনারে একাকী প্রবাসী
নির্বাসিত, বাহু বাড়াইয়া ধেয়ে আসি
সমস্ত বাহিরখানি লইতে অন্তরে–
এ আকাশ, এ ধরণী, এই নদী-‘পরে
শুভ্র শান্ত সুপ্ত জ্যোৎস্নারাশি। কিছু নাহি
পারি পরশিতে, শুধু শূন্যে থাকি চাহি
বিষাদব্যাকুল। আমারে ফিরায়ে লহ
সেই সর্ব-মাঝে, যেথা হতে অহরহ
অঙ্কুরিছে মুকুলিছে মুঞ্জরিছে প্রাণ
শতেক সহস্ররূপে, গুঞ্জরিছে গান
শতলক্ষ সুরে, উচ্ছ্বসি উঠিছে নৃত্য
অসংখ্য ভঙ্গিতে, প্রবাহি যেতেছে চিত্ত
ভাবস্রোতে, ছিদ্রে ছিদ্রে বাজিতেছে বেণু
দাঁড়ায়ে রয়েছ তুমি শ্যাম কল্পধেনু,
তোমারে সহস্র দিকে করিছে দোহন
তরুলতা পশুপক্ষী কত অগণন
তৃষিত পরানি যত, আনন্দের রস
কত রূপে হতেছে বর্ষণ, দিক দশ
ধ্বনিছে কল্লোলগীতে। নিখিলের সেই
বিচিত্র আনন্দ যত এক মুহূর্তেই
একত্রে করিব আস্বাদন, এক হয়ে
সকলের সনে। আমার আনন্দ লয়ে
হবে না কি শ্যামতর অরণ্য তোমার,
প্রভাত-আলোক-মাঝে হবে না সঞ্চার
নবীন কিরণকম্প? মোর মুগ্ধ ভাবে
আকাশ ধরণীতল আঁকা হয়ে যাবে
হৃদয়ের রঙে– যা দেখে কবির মনে
জাগিবে কবিতা, প্রেমিকের দু-নয়নে
লাগিবে ভাবের ঘোর, বিহঙ্গের মুখে
সহসা আসিবে গান। সহস্রের সুখে
রঞ্জিত হইয়া আছে সর্বাঙ্গ তোমার
হে বসুধে, জীবস্রোত কত বারম্বার
তোমারে মণ্ডিত করি আপন জীবনে
গিয়েছে ফিরেছে, তোমার মৃত্তিকাসনে
মিশায়েছে অন্তরে প্রেম, গেছে লিখে
কত লেখা, বিছায়েছে কত দিকে দিকে
ব্যাকুল প্রাণের আলিঙ্গন; তারি সনে
আমার সমস্ত প্রেম মিশায়ে যতনে
তোমার অঞ্চলখানি দিব রাঙাইয়া
সজীব বরনে; আমার সকল দিয়া
সাজাব তোমারে। নদীজলে মোর গান
পাবে না কি শুনিবারে কোনো মুগ্ধ কান
নদীকূল হতে? উষালোকে মোর হাসি
পাবে না কি দেখিবারে কোনো মর্তবাসী
নিদ্রা হতে উঠি? আজ শতবর্ষ পরে
এ সুন্দর অরণ্যের পল্লবের স্তরে
কাঁপিবে না আমার পরান? ঘরে ঘরে
কত শত নরনারী চিরকাল ধ’রে
পাতিবে সংসারখেলা, তাহাদের প্রেমে
কিছু কি রব না আমি? আসিব না নেমে
তাদের মুখের ‘পরে হাসির মতন,
তাদের সর্বাঙ্গ-মাঝে সরস যৌবন,
তাদের বসন্তদিনে অকস্মাৎ সুখ,
তাদের মনের কোণে নবীন উন্মুখ
প্রেমের অঙ্কুররূপে; ছেড়ে দিবে তুমি
আমারে কি একেবারে ওগো মাতৃভূমি–
যুগযুগান্তের মহা মৃত্তিকা-বন্ধন
সহসা কি ছিঁড়ে যাবে? করিব গমন
ছাড়ি লক্ষ বরষের স্নিগ্ধ ক্রোড়খানি?
চতুর্দিক হতে মোরে লবে না কি টানি
এই সব তরু লতা গিরি নদী বন,
এই চিরদিবসের সুনীল গগন,
এ জীবনপরিপূর্ণ উদার সমীর,
জাগরণপূর্ণ আলো, সমস্ত প্রাণীর
অন্তরে অন্তরে গাঁথা জীবন-সমাজ?
ফিরিব তোমারে ঘিরি, করিব বিরাজ
তোমার আত্মীয়-মাঝে; কীট পশু পাখি
তরু গুল্ম লতা রূপে বারম্বার ডাকি
আমারে লইবে তব প্রাণতপ্ত বুকে;
যুগে যুগে জন্মে জন্মে স্তন দিয়ে মুখে
মিটাইবে জীবনের শত লক্ষ ক্ষুধা
শত লক্ষ আনন্দের স্তন্যরসসুধা
নিঃশেষে নিবিড় স্নেহে করাইয়া পান।
তার পরে ধরিত্রীর যুবক সন্তান
বাহিরিব জগতের মহাদেশ-মাঝে
অতি দূর দূরান্তরে জ্যোতিষ্কসমাজে
সুদুর্গম পথে। এখনো মিটে নি আশা,
এখনো তোমার স্তন-অমৃত-পিপাসা
মুখেতে রয়েছে লাগি, তোমার আনন
এখনো জাগায় চোখে সুন্দর স্বপন,
এখনো কিছুই তব করি নাই শেষ,
সকলি রহস্যপূর্ণ, নেত্র অনিমেষ
বিস্ময়ের শেষতল খুঁজে নাহি পায়,
এখনো তোমার বুকে আছি শিশুপ্রায়
মুখপানে চেয়ে। জননী, লহ গো মোরে
সঘনবন্ধন তব বাহুযুগে ধরে–
আমারে করিয়া লহ তোমার বুকের–
তোমার বিপুল প্রাণ বিচিত্র সুখের
উৎস উঠিতেছে যেথা, সে গোপন পুরে
আমারে লইয়া যাও– রাখিয়ো না দূরে।
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
ভক্তিমূলক
|
প্রেমের আদিম জ্যোতি আকাশে সঞ্চরে
শুভ্রতম তেজে,
পৃথিবীতে নামে সেই নানা রূপে রূপে
নানা বর্ণে সেজে।
(স্ফুলিঙ্গ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
প্রকৃতিমূলক
|
হৃদয় আজি মোর কেমনে গেল খুলি!
জগত আসি সেথা করিছে কোলাকুলি!
ধরায় আছে যত মানুষ শত শত
আসিছে প্রাণে মোর,হাসিছে গলাগলি।
এসেছে সখা সখী বসিয়া চোখাচোখি,
দাঁড়ায়ে মুখোমুখি হাসিছে শিশুগুলি।
এসেছে ভাই বোন পুলকে ভরা মন,
ডাকিছে, ‘ভাই ভাই’ আঁখিতে আঁখি তুলি।
সখারা এল ছুটে, নয়নে তারা ফুটে,
পরানে কথা উঠে-- বচন গেল ভুলি।
সখীরা হাতে হাতে ভ্রমিছে সাথে সাথে,
দোলায় চড়ি তারা করিছে দোলাদুলি।
শিশুরে লয়ে কোলে জননী এল চলে,
বুকেতে চেপে ধরে বলিছে ‘ঘুমো ঘুমো’।
আনত দু’নয়ানে চাহিয়া মুখপানে
বাছার চাঁদমুখে খেতেছে শত চুমো।
পুলকে পুরে প্রাণ, শিহরে কলেবর,
প্রেমের ডাক শুনি এসেছে চরাচর--
এসেছে রবি শশী,এসেছে কোটি তারা,
ঘুমের শিয়রেতে জাগিয়া থাকে যারা।
পরান পুরে গেল হরষে হল ভোর
জগতে যারা আছে সবাই প্রাণে মোর।প্রভাত হল যেই কী জানি হল এ কী!
আকাশপানে চাই কী জানি কারে দেখি!
প্রভাতবায়ু বহে কী জানি কী যে কহে,
মরমমাঝে মোর কী জানি কী যে হয়!
এসো হে এসো কাছে সখা হে এসো কাছে--
এসো হে ভাই এসো,বোসো হে প্রাণময়।
পুরব-মেঘমুখে পড়েছে রবিরেখা,
অরুণরথচূড়া আধেক যায় দেখা।
তরুণ আলো দেখে পাখির কলরব--
মধুর আহা কিবা মধুর মধু সব!
মধুর মধু আলো, মধুর মধু বায়,
মধুর মধু গানে তটিনী বয়ে যায়!
যে দিকে আঁখি চায় সে দিকে চেয়ে থাকে,
যাহারি দেখা পায় তারেই কাছে ডাকে,
নয়ন ডুবে যায় শিশির-আঁখি-ধারে,
হৃদয় ডুবে যায় হরষ-পারাবারে।
আয় রে আয় বায়ু, যা রে যা প্রাণ নিয়ে,
জগত-মাঝারেতে দে রে তা প্রসারিয়ে।
ভ্রমিবি বনে বনে, যাইবি দিশে দিশে,
সাগরপারে গিয়ে পুরবে যাবি মিশে।
লইবি পথ হতে পাখির কলতান,
যূথীর মৃদুশ্বাস, মালতীমৃদুবাস--
অমনি তারি সাথে যা রে যা নিয়ে প্রাণ।
পাখির গীতধার ফুলের বাসভার
ছড়াবি পথে পথে হরষে হয়ে ভোর,
অমনি তারি সাথে ছড়াবি প্রাণ মোর।
ধরারে ঘিরি ঘিরি কেবলি যাবি বয়ে
ধরার চারি দিকে প্রাণেরে ছড়াইয়ে।পেয়েছি এত প্রাণ যতই করি দান
কিছুতে যেন আর ফুরাতে নারি তারে।
আয় রে মেঘ, আয় বারেক নেমে আয়,
কোমল কোলে তুলে আমারে নিয়ে যা রে!
কনক-পাল তুলে বাতাসে দুলে দুলে
ভাসিতে গেছে সাধ আকাশ-পারাবারে।আকাশ, এসো এসো, ডাকিছ বুঝি ভাই--
গেছি তো তোরি বুকে, আমি তো হেথা নাই।
প্রভাত-আলো-সাথে ছড়ায় প্রাণ মোর,
আমার প্রাণ দিয়ে ভরিব প্রাণ তোর।ওঠো হে ওঠো রবি,আমারে তুলে লও,
অরুণতরী তব পুরবে ছেড়ে দাও,
আকাশ-পারাবার বুঝি হে পার হবে--
আমারে লও তবে, আমারে লও তবে।জগৎ আসে প্রাণে, জগতে যায় প্রাণ
জগতে প্রাণে মিলি গাহিছে একি গান!
কে তুমি মহাজ্ঞানী, কে তুমি মহারাজ,
গরবে হেলা করি হেসো না তুমি আজ।
বারেক চেয়ে দেখো আমার মুখপানে--
উঠেছে মাথা মোর মেঘের মাঝখানে,
আপনি আসি উষা শিয়রে বসি ধীরে
অরুণকর দিয়ে মুকুট দেন শিরে,
নিজের গলা হতে কিরণমালা খুলি
দিতেছে রবি-দেব আমার গলে তুলি!
ধূলির ধূলি আমি রয়েছি ধূলি-’পরে,
জেনেছি ভাই বলে জগৎ চরাচরে।
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
চিন্তামূলক
|
বিকেলবেলার দিনান্তে মোর
পড়ন্ত এই রোদ
পুবগগনের দিগন্তে কি
জাগায় কোনো বোধ।
লক্ষকোটি আলোবছর-পারে
সৃষ্টি করার যে বেদনা
মাতায় বিধাতারে
হয়তো তারি কেন্দ্র-মাঝে
যাত্রা অামার হবে—
অস্তবেলার আলোতে কি
আভাস কিছু রবে। (স্ফুলিঙ্গ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
নীতিমূলক
|
বাহিরে বস্তুর বোঝা,
ধন বলে তায়।
কল্যাণ সে অন্তরের
পরিপূর্ণতায়। (স্ফুলিঙ্গ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
মানবতাবাদী
|
সংগ্রামমদিরাপানে আপনা-বিস্মৃত
দিকে দিকে হত্যা যারা প্রসারিত করে
মরণলোকের তারা যন্ত্রমাত্র শুধু,
তারা তো দয়ার পাত্র মনুষ্যত্বহারা!
সজ্ঞানে নিষ্ঠুর যারা উন্মত্ত হিংসায়
মানবের মর্মতন্তু ছিন্ন ছিন্ন করে
তারাও মানুষ বলে গণ্য হয়ে আছে!
কোনো নাম নাহি জানি বহন যা করে
ঘৃণা ও আতঙ্কে মেশা প্রবল ধিক্কার--
হায় রে নির্লজ্জ ভাষা! হায় রে মানুষ!
ইতিহাসবিধাতারে ডেকে ডেকে বলি--
প্রচ্ছন্ন পশুর শান্তি আর কত দূরে
নির্বাপিত চিতাগ্নিতে স্তব্ধ ভগ্নস্তূপে!
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
নীতিমূলক
|
নর কহে, বীর মোরা যাহা ইচ্ছা করি।
নারী কহে জিহ্বা কাটি, শুনে লাজে মরি!
পদে পদে বাধা তব, কহে তারে নর।
কবি কহে, তাই নারী হয়েছে সুন্দর। (কণিকা কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
সনেট
|
রোগীর শিয়রে রাত্রে একা ছিনু জাগি
বাহিরে দাঁড়ানু এসে ক্ষণেকের লাগি।
শান্ত মৌন নগরীর সুপ্ত হর্ম্য-শিরে
হেরিনু জ্বলিছে তারা নিস্তব্ধ তিমিরে।
ভূত ভাবী বর্তমান একটি পলকে
মিলিল বিষাদস্নিগ্ধ আনন্দপুলকে
আমার অন্তরতলে; অনির্বচনীয়
সে মুহূর্তে জীবনের যত-কিছু প্রিয়,
দুর্লভ বেদনা যত, যত গত সুখ,
অনুদ্গত অশ্রুবাষ্প, গীত মৌনমূক
আমার হৃদয়পাত্রে হয়ে রাশি রাশি
কী অনলে উজ্জ্বলিল। সৌরভে নিশ্বাসি
অপরূপ ধূপধূম উঠিল সুধীরে
তোমার নক্ষত্রদীপ্ত নিঃশব্দ মন্দিরে। (উৎসর্গ কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
প্রেমমূলক
|
থাক্ থাক্ চুপ কর্ তোরা , ও আমার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে ।
আবার যদি জেগে ওঠে বাছা কান্না দেখে কান্না পাবে যে ।
কত হাসি হেসে গেছে ও , মুছে গেছে কত অশ্রুধার ,
হেসে কেঁদে আজ ঘুমাল , ওরে তোরা কাঁদাস নে আর ।কত রাত গিয়েছিল হায় , বসেছিল বসন্তের বায় ,
পুবের জানালাখানি দিয়ে চন্দ্রালোক পড়েছিল গায় ;
কত রাত গিয়েছিল হায় , দূর হতে বেজেছিল বাঁশি ,
সুরগুলি কেঁদে ফিরেছিল বিছানার কাছে কাছে আসি ।
কত রাত গিয়েছিল হায় , কোলেতে শুকানো ফুলমালা
নত মুখে উলটি পালটি চেয়ে চেয়ে কেঁদেছিল বালা ।
কত দিন ভোরে শুকতারা উঠেছিল ওর আঁখি -‘ পরে ,
সমুখের কুসুম – কাননে ফুল ফুটেছিল থরে থরে ।
একটি ছেলেরে কোলে নিয়ে বলেছিল সোহাগের ভাষা ,
কারেও বা ভালোবেসেছিল , পেয়েছিল কারো ভালোবাসা !
হেসে হেসে গলাগলি করে খেলেছিল যাহাদের নিয়ে
আজো তারা ওই খেলা করে , ওর খেলা গিয়েছে ফুরিয়ে ।
সেই রবি উঠেছে সকালে ফুটেছে সুমুখে সেই ফুল ,
ও কখন খেলাতে খেলাতে মাঝখানে ঘুমিয়ে আকুল ।
শ্রান্ত দেহ , নিস্পন্দ নয়ন , ভুলে গেছে হৃদয় – বেদনা ।
চুপ করে চেয়ে দেখো ওরে , থামো থামো , হেসো না কেঁদো না । (কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
ভক্তিমূলক
|
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে ॥
বাসনার বশে মন অবিরত ধায় দশ দিশে পাগলের মতো,
স্থির-আঁখি তুমি মরমে সতত জাগিছ শয়নে স্বপনে ॥
সবাই ছেড়েছে, নাই যার কেহ, তুমি আছ তার আছে তব স্নেহ--
নিরাশ্রয় জন, পথ যার গেহ, সেও আছে তব ভবনে।
তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর,সমুখে অনন্ত জীবনবিস্তার--
কালপারাবার করিতেছ পার কেহ নাহি জানে কেমনে ॥
জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি, তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যত পাই তোমায় আরো তত যাচি, যত জানি তত জানি নে।
জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর লোকলোকান্তরে যুগযুগান্তর--
তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই, কোনো বাধা নাই ভুবনে ॥(রচনাকাল: 1887)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
চিন্তামূলক
|
ওরে আমার কর্মহারা, ওরে আমার সৃষ্টিছাড়া,
ওরে আমার মন রে, আমার মন।
জানি নে তুই কিসের লাগিকোন্ জগতে আছিস জাগি–
কোন্ সেকালের বিলুপ্ত ভুবন।
কোন্ পুরানো যুগের বাণী অর্থ যাহার নাহি জানি
তোমার মুখে উঠছে আজি ফুটে।
অনন্ত তোর প্রাচীন স্মৃতি কোন্ ভাষাতে গাঁথছে গীতি,
শুনে চক্ষে অশ্রুধারা ছুটে।
আজি সকল আকাশ জুড়ে যাচ্ছে তোমার পাখা উড়ে,
তোমার সাথে চলতে আমি নারি।
তুমি যাদের চিনি ব’লে টানছ বুকে, নিচ্ছ কোলে,
আমি তাদের চিনতে নাহি পারি।আজকে নবীন চৈত্রমাসে পুরাতনের বাতাস আসে,
খুলে গেছে যুগান্তরের সেতু।
মিথ্যা আজি কাজের কথা, আজ জেগেছে যে-সব ব্যথা
এই জীবনে নাইকো তাহার হেতু।
গভীর চিত্তে গোপন শালা সেথা ঘুমায় যে রাজবালা
জানি নে সে কোন্ জনমের পাওয়া।
দেখে নিলেম ক্ষণেক তারে, যেমনি আজি মনের দ্বারে
যবনিকা উড়িয়ে দিল হাওয়া।
ফুলের গন্ধ চুপে চুপে আজি সোনার কাঠি-রূপে
ভাঙালো তার চিরযুগের ঘুম।
দেখছে লয়ে মুকুর করে আঁকা তাহার ললাট-‘পরে
কোন্ জনমের চন্দনকুঙ্কুম।আজকে হৃদয় যাহা কহে মিথ্যা নহে, সত্য নহে,
কেবল তাহা অরূপ অপরূপ।
খুলে গেছে কেমন করে আজি অসম্ভবের ঘরে
মর্চে-পড়া পুরানো কুলুপ।
সেথায় মায়াদ্বীপের মাঝে নিমন্ত্রণের বীণা বাজে,
ফেনিয়ে ওঠে নীল সাগরের ঢেউ,
মর্মরিত-তমাল-ছায়ে ভিজে চিকুর শুকায় বায়ে–
তাদের চেনে, চেনে না বা কেউ।
শৈলতলে চরায় ধেনু, রাখালশিশু বাজায় বেণু,
চূড়ায় তারা সোনার মালা পরে।
সোনার তুলি দিয়ে লিখা চৈত্রমাসের মরীচিকা
কাঁদায় হিয়া অপূর্বধন-তরে।গাছের পাতা যেমন কাঁপে দখিনবায়ে মধুর তাপে
তেমনি মম কাঁপছে সারা প্রাণ।
কাঁপছে দেহে কাঁপছে মনে হাওয়ার সাথে আলোর সনে,
মর্মরিয়া উঠছে কলতান।
কোন্ অতিথি এসেছে গো, কারেও আমি চিনি নে গো
মোর দ্বারে কে করছে আনাগোনা।
ছায়ায় আজি তরুর মূলে ঘাসের ‘পরে নদীর কূলে
ওগো তোরা শোনা আমায় শোনা–
দূর-আকাশের-ঘুম-পাড়ানি মৌমাছিদের-মন-হারানি
জুঁই-ফোটানো ঘাস-দোলানো গান,
জলের-গায়ে-পুলক-দেওয়া ফুলের-গন্ধ-কুড়িয়ে-নেওয়া
চোখের পাতে-ঘুম-বোলানো তান।শুনাস নে গো ক্লান্ত বুকের বেদনা যত সুখের দুখের —
প্রেমের কথা– আশার নিরাশার।
শুনাও শুধু মৃদুমন্দ অর্থবিহীন কথার ছন্দ,
শুধু সুরের আকুল ঝংকার।
ধারাযন্ত্রে সিনান করি যত্নে তুমি এসো পরি
চাঁপাবরন লঘু বসনখানি।
ভালে আঁকো ফুলের রেখা চন্দনেরই পত্রলেখা,
কোলের ‘পরে সেতার লহো টানি।
দূর দিগন্তে মাঠের পারে সুনীল-ছায়া গাছের সারে
নয়নদুটি মগ্ন করি চাও।
ভিন্নদেশী কবির গাঁথা অজানা কোন্ ভাষার গাথা
গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া গাও। (উৎসর্গ কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
রূপক
|
চেনাশোনার সাঁঝবেলাতে
শুনতে আমি চাই--
পথে পথে চলার পালা
লাগল কেমন, ভাই।
দুর্গম পথ ছিল ঘরেই,
বাইরে বিরাট পথ--
তেপান্তরের মাঠ কোথা-বা,
কোথা-বা পর্বত।
কোথা-বা সে চড়াই উঁচু,
কোথা-বা উতরাই,
কোথা-বা পথ নাই।
মাঝে-মাঝে জুটল অনেক ভালো--
অনেক ছিল বিকট মন্দ,
অনেক কুশ্রী কালো।
ফিরেছিলে আপন মনের
গোপন অলিগলি,
পরের মনের বাহির-দ্বারে
পেতেছে অঞ্জলি।
আশাপথের রেখা বেয়ে
কতই এলে গেলে,
পাওনা ব'লে যা পেয়েছ
অর্থ কি তার পেলে।
অনেক কেঁদে-কেটে
ভিক্ষার ধন জুটিয়েছিলে
অনেক রাস্তা হেঁটে।
পথের মধ্যে লুঠেল দস্যু
দিয়েছিল হানা,
উজাড় করে নিয়েছিল
ছিন্ন ঝুলিখানা।
অতি কঠিন আঘাত তারা
লাগিয়েছিল বুকে--
ভেবেছিলুম, চিহ্ন নিয়ে
সে সব গেছে চুকে।
হাটে-বাটে মধুর যাহা
পেয়েছিলুম খুঁজি,
মনে ছিল, যত্নের ধন
তাই রয়েছে পুঁজি।
হায় রে ভাগ্য, খোলো তোমার ঝুলি।
তাকিয়ে দেখো, জমিয়েছিলে ধূলি।
নিষ্ঠুর যে ব্যর্থকে সে
করে যে বর্জিত,
দৃঢ় কঠোর মুষ্টিতলে
রাখে সে অর্জিত
নিত্যকালের রতন-কণ্ঠহার;
চিরমূল্য দেয় সে তারে
দারুণ বেদনার।
আর যা-কিছু জুটেছিল
না চাহিতেই পাওয়া--
আজকে তারা ঝুলিতে নেই,
রাত্রিদিনের হাওয়া
ভরল তারাই, দিল তারা
পথে চলার মানে,
রইল তারাই একতারাতে
তোমার গানে গানে।
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
হাস্যরসাত্মক
|
মেছুয়াবাজার থেকে
পালোয়ান চারজন
পরের ঘরেতে করে
জঞ্জাল-মার্জন।
ডালায় লাগিয়ে চাপ
বাক্সো করেছে সাফ,
হঠাৎ লাগালো গুঁতো
পুলিসের সার্জন।
কেঁদে বলে, “আমাদের
নেই কোনো গার্জন,
ভেবেছিনু হেথা হয়
নৈশবিদ্যালয়–
নিখর্চা জীবিকার
বিদ্যা-উপার্জন।’ (খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
সনেট
|
কেমন সুন্দর আহা ঘুমায়ে রয়েছে
চাঁদের জোছনা এই সমুদ্রবেলায়!
এসো প্রিয়ে এইখানে বসি কিছুকাল;
গীতস্বর মৃদু মৃদু পশুক শ্রবণে!
সুকুমার নিস্তব্ধতা আর নিশীথিনী–
সাজে ভালো মর্ম-ছোঁয়া সুধা-সংগীতেরে।
বইস জেসিকা, দেখো, গগন-প্রাঙ্গণ
জলৎ কাঞ্চন-পাতে খচিত কেমন!
এমন একটি নাই তারকামণ্ডল
দিব্য গীত যে না গায় প্রতি পদক্ষেপে!
অমর আত্মাতে হয় এমনি সংগীত।
কিন্তু ধূলিময় এই মর্ত্য-আবরণ
যতদিন রাখে তারে আচ্ছন্ন করিয়া
ততদিন সে সংগীত পাই না শুনিতে।William Shakespeare
(অনুবাদ কবিতা)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
নীতিমূলক
|
কহিল ভিক্ষার ঝুলি, হে টাকার তোড়া,
তোমাতে আমাতে, ভাই, ভেদ অতি থোড়া—
আদান-প্রদান হোক। তোড়া কহে রাগে,
সে থোড়া প্রভেদটুকু ঘুচে যাক আগে। (কণিকা কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
সনেট
|
চৈত্রের মধ্যাহ্নবেলা কাটিতে না চাহে।
তৃষাতুরা বসুন্ধরা দিবসের দাহে।
হেনকালে শুনিলাম বাহিরে কোথায়
কে ডাকিল দূর হতে, “পুঁটুরানী, আয়।”
জনশূন্য নদীতটে তপ্ত দ্বিপ্রহরে
কৌতুহল জাগি উঠে স্নেহকণ্ঠস্বরে।
গ্রন্থখানি বন্ধ করি উঠিলাম ধীরে,
দুয়ার করিয়া ফাঁক দেখিনু বাহিরে।
মহিষ বৃহৎকায় কাদামাখা গায়ে
স্নিগ্ধনেত্রে নদীতীরে রয়েছে দাঁড়ায়ে।
যুবক নামিয়া জলে ডাকিছে তাহায়
স্নান করাবার তরে, “পুঁটুরানী, আয়!”
হেরি সে যুবারে—হেরি পুঁটুরানী তারি
মিশিল কৌতুকে মোর স্নিগ্ধ সুধাবারি। (চৈতালি কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
চিন্তামূলক
|
স্তব্ধ যাহা পথপার্শ্বে, অচৈতন্য, যা রহে না জেগে
ধূলিবিলুন্ঠিত হয় কালের চরণঘাত লেগে।
যে নদীর ক্লান্তি ঘটে মধ্যপথে সিন্ধু-অভিসারে
অবরুদ্ধ হয় পঙ্কভারে।
নিশ্চল গৃহের কোণে নিভৃতে স্তিমিত যেই বাতি
নির্জীব আলোক তার লুপ্ত হয় না ফুরাতে রাতি।
পান্থের অন্তরে জ্বলে দীপ্ত আলো জাগ্রত নিশীথে,
জানে না সে আঁধারে মিশিতে। (স্ফুলিঙ্গ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
হাস্যরসাত্মক
|
খুদিরাম ক’সে টান
দিল থেলো হুঁকোতে–
গেল সারবান কিছু
অন্তরে ঢুকোতে।
অবশেষে হাঁড়ি শেষ করি রসগোল্লার
রোদে বসে খুদুবাবু গান ধরে মোল্লার;
বলে, “এতখানি রস
দেহ থেকে চুকোতে
হবে তাকে ধোঁয়া দিয়ে
সাত দিন শুকোতে।’ (খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
ভক্তিমূলক
|
কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই-
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
পুরনো আবাস ছেড়ে যাই যবে
মনে ভেবে মরি কী জানি কী হবে,
নূতনের মাঝে তুমি পুরাতন
সে কথা যে ভুলে যাই।
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।জীবনে মরণে নিখিল ভুবনে
যখনি যেখানে লবে,
চির জনমের পরিচিত ওহে,
তুমিই চিনাবে সবে।
তোমারে জানিলে নাহি কেহ পর,
নাহি কোন মানা, নাহি কোন ডর,
সবারে মিলায়ে তুমি জাগিতেছ-
দেখা যেন সদা পাই।
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
প্রকৃতিমূলক
|
আমার যৌবনস্বপ্নে যেন ছেয়ে আছে বিশ্বের আকাশ ।
ফুলগুলি গায়ে এসে পড়ে রূপসীর পরশের মতো ।
পরানে পুলক বিকাশিয়া বহে কেন দক্ষিণা বাতাস
যেথা ছিল যত বিরহিণী সকলের কুড়ায়ে নিশ্বাস !
বসন্তের কুসুমকাননে গোলাপের আঁখি কেন নত ?
জগতের যত লাজময়ী যেন মোর আঁখির সকাশ ?
কাঁপিছে গোলাপ হয়ে এসে , মরমের শরমে বিব্রত !
প্রতি নিশি ঘুমাই যখন পাশে এসে বসে যেন কেহ ,
সচকিত স্বপনের মতো জাগরণে পলায় সলাজে ।
যেন কার আঁচলের বায় উষার পরশি যায় দেহ ,
শত নূপুরের রুনুঝুনু বনে যেন গুঞ্জরিয়া বাজে ।
মদির প্রাণের ব্যাকুলতা ফুটে ফুটে বকুলমুকুলে ;
কে আমারে করেছে পাগল — শূন্যে কেন চাই আঁখি তুলে !
যেন কোন্ উর্বশীর আঁখি চেয়ে আছে আকাশের মাঝে ! (কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ)
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
প্রেমমূলক
|
হে পুষ্পচয়িনী,
ছেড়ে আসিয়াছ তুমি কবে উজ্জয়িনী
মালিনীছন্দের বন্ধ টুটে।
বকুল উৎফুল্ল হয়ে উঠে
আজো বুঝি তব মুখমদে।
নূপুররণিত পদে।
আজো বুঝি অশোকের ভাঙাইবে ঘুম।
কী সেই কুসুম
যা দিয়ে অতীত জন্মে গণেছিলে বিরহের দিন।
বুঝি সে-ফুলের নাম বিস্মৃতিবিলীন
ভর্তৃপ্রসাদন ব্রতে যা দিয়ে গাঁথিতে মালা
সাজাইতে বরণের ডালা।
মনে হয় যেন তুমি ভুলে-যাওয়া তুমি--
মর্ত্যভূমি
তোমারে যা ব'লে জানে সেই পরিচয়
সম্পূর্ণ তো নয়।
তুমি আজ
করেছ যে-অঙ্গসাজ
নহে সদ্য আজিকার।
কালোয় রাঙায় তার
যে ভঙ্গীটি পেয়েছে প্রকাশ
দেয় বহুদূরের আভাস।
মনে হয় যেন অজানিতে
রয়েছ অতীতে। মনে হয় যে-প্রিয়ের লাগি
অবন্তীনগরসৌধে ছিলে জাগি,
তাহারি উদ্দেশে
না জেনে সেজেছ বুঝি সে-যুগের বেশে।
মালতীশাখার 'পরে
এই-যে তুলেছ হাত ভঙ্গীভরে
নহে ফুল তুলিবার প্রয়োজনে,
বুঝি আছে মনে
যুগ-অন্তরাল হতে বিস্মৃত বল্লভ
লুকায়ে দেখিছে তব সুকোমল ও-করপল্লব।
অশরীরী মুগ্ধনেত্র যেন গগনে সে
হেরে অনিমেষে
দেহভঙ্গিমার মিল লতিকার সাথে
আজি মাঘীপূর্ণিমার রাতে।
বাতাসেতে অলক্ষিতে যেন কার ব্যাপ্ত ভালোবাসা
তোমার যৌবনে দিল নৃত্যময়ী ভাষা।
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
ভক্তিমূলক
|
আকাশে ছড়ায়ে বাণী
অজানার বাঁশি বাজে বুঝি।
শুনিতে না পায় জন্তু,
মানুষ চলেছে সুর খুঁজি।
|
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.